৫০ বছরে পা দিল ‘শোলে’। যে সিনেমার ভিলেন থেকে ঘোড়া– প্রত্যেকে বিখ্যাত। পরিচালক, নায়ক, ভিলেন: সমস্বরে এঁদের নাম কোনও সিনেমার সাফল্যের সঙ্গে উচ্চারিত হচ্ছে, সচরাচর দেখা যেত না, অন্তত ‘শোলে’-র আগে। কেন এত জনপ্রিয় হয়েছিল ‘শোলে’?
প্রথম দু’-সপ্তাহে সিনেমাটি এমনই মন্দা ব্যবসা দিয়েছিল যে, প্রযোজক ভাবতে বসেছিলেন, তাহলে কি কিছু দৃশ্য অন্যরকম করে ‘শুট’ করে নিলে ভাল হয়, বিশেষত, সমাপ্তি অংশটি, যেখানে নায়কপ্রতিম চরিত্র মরেই যাচ্ছে! নায়কের সঙ্গে নায়িকার মিলনেই চিত্রনাট্য সুখের হয়, আর বিনোদনকামী দর্শক মনে করে পয়সা উসুল হল! সেখানে এই সিনেমায় দুঃখী নায়িকা কিনা আরও রোদন-ভরা জীবনের দিকে ধাবিত হল! পরিচালক যখন মনস্থির করেই বসেছেন, নায়ককে মরতে দেওয়া যাবে না, তখনই বাতাসে নড়ল ধর্মের কল। এই ‘ধর্ম’-র দেবতা এন্টারটেনমেন্ট। তৃতীয় সপ্তাহ থেকে বাতিলপ্রায় সিনেমা গতি নিল। ‘ওয়ার্ড অফ মাউথ’ বলে ইংরেজিতে একটি কথা আছে। প্রশংসা মুখে-মুখে ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা। লোকমুখে আস্তে আস্তে ঘনাল প্রশংসার মেঘ। তারপর শুরু হল অবিশ্রান্ত বর্ষণ। হলের পর হলে, সপ্তাহর পর সপ্তাহ জুড়ে, ক্রমাগত চলতে থাকল এই সিনেমার গুণকীর্তন।
কী নাম এই সিনেমার? ‘শোলে’। পরিচালক, নায়ক, ভিলেন: সমস্বরে এঁদের নাম কোনও সিনেমার সাফল্যের সঙ্গে উচ্চারিত হচ্ছে, সচরাচর দেখা যেত না, অন্তত ‘শোলে’-র আগে। তারপর জনপ্রিয়তা যত বাড়তে থাকল, দেখা গেল, ‘শোলে’-র প্রতিটি ক্যারিক্টারই জিনিয়াস। কমিক রিলিফে থাকা ‘সুরমা ভুপালি’ থেকে ঘোড়া ‘বাসন্তী’ পর্যন্ত। তুচ্ছাতিতুচ্ছ ঘটনা, অকিঞ্চিৎতম ডায়লগ, বিস্মৃতপ্রায় চরিত্র সবই দর্শকদের স্মৃতিতে অতিজীবিত হয়ে উঠতে থাকল– বারবার দর্শনের ফলে। বক্স অফিসে এমনই শোরগোল ফেলল যে, ‘অল টাইম ব্লকবাস্টার’ তালিকায় হেলায় নাম উঠিয়ে ফেলল ‘শোলে’। পাথুরে প্রমাণ না হলেও বাস্তবের কাছাকাছি তথ্য বলছে– ১৯৭৫ সালে মুক্তির পরের প্রথম দৌড়ে ‘শোলে’ ব্যবসা করেছিল প্রায় ১৫০ মিলিয়ন। ডলার নয়, টাকা। এবং বলা হয়, সেই বছর কেন্দ্রীয় বাজেটে বরাদ্দ হওয়া টাকার তুলনায় এই অঙ্কটা অনেকাংশেই বেশি। কেন এতখানি ‘হিট’ করেছিল, কী রহস্য বুকের মাঝে লুকিয়ে রেখে ‘শোলে’ এসে পড়ল ৫০ বছরের পূর্তিতে!
২০১৫ সালে ‘বিবিসি’-তে ‘শোলে: দ্য স্টার ওয়ার্স অফ বলিউড?’ শীর্ষক একটি নিবন্ধ লিখেছিলেন রাহুল ভার্মা। সেখানে উদ্ধৃত করেছিলেন ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটির ‘বলিউড স্কলার’ রাজিন্দার দুধ্রা-র বিশ্লেষণ। ‘আল্টিমেট মসালা ফিল্ম’ বলতে যা বোঝায় ‘শোলে’-য় সেসবই রয়েছে। বন্ধুত্ব, প্রতিশোধ, রোমান্স, মেলোড্রামা। তৎসহ দুর্দান্ত অ্যাকশন। কিন্তু এর তলে-তলে সক্রিয় ছিল আরও একটি ঐতিহাসিক কারণ। ১৯৭৫ সালের জুনে ভারতে জারি হয়েছিল ‘জরুরি অবস্থা’। আইন ও প্রশাসন, ন্যায়বিচার ও প্রতিশোধস্পৃহার মাঝে দোদুল্যমান ভারতীয় রাজনীতি ও সমাজ তাই এমন এক স্বপ্নিল টোটকার সন্ধানে ছিল, যা অবিশ্বাসের আবহটাকে কাটিয়ে, খেলিয়ে তুলবে বিনোদনের অক্সিজেন। ‘শোলে’-র আগুন এজন্যই কখনও নেভে না। মনে রাখতে হবে, ‘শোলে’-র সময়েই কিন্তু শ্যাম বেনেগাল সক্রিয়: সামন্তশাসনের দাঁত-নখ ভেঙে সত্য ‘ভারত’ খুঁজতে। এ-ও কি সমাপতন মাত্র?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.