Advertisement
Advertisement
Political Violence

পণ করেছি ‘ওয়েপন’

রাজনৈতিক স্থবিরতা কি রাজনৈতিক হিংসার পথ প্রস্তুত করে?

Why is political violence increasing day by day

ফাইল ছবি

Published by: Biswadip Dey
  • Posted:May 16, 2024 4:15 pm
  • Updated:May 16, 2024 4:15 pm  

রাজনৈতিক স্থবিরতা কি রাজনৈতিক হিংসার পথ প্রস্তুত করে? প্রবল রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা কি সংঘাতের কট্টর সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দেয়? শুধু নির্বাচন নয়, সারা বছরই কেন খবরের শিরোনামে রাজনৈতিক হিংসা বড় জায়গা জুড়ে থাকে? লিখছেন দেবাশিস কর্মকার

ভারতীয় গণতন্ত্রের প্রাণবন্ত প্রেক্ষাপটকে বারবার বিব্রত করেছে রাজনৈতিক হিংসা। এমনি সময়ে তো বটেই, নির্বাচনের আগে ও পরে তা আরও তীব্র হতে দেখা যায়। বহুদলীয় ব‌্যবস্থায় ভিন্ন মত ও আদর্শ প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ‌্য থাকবে, বলা বাহুল্য। তবে তার জন‌্য রক্তারক্তি হবে কেন? যদি না নেপথ্যে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলটি মূল লক্ষ্য হয়ে দঁাড়ায়। সারা দেশেই এর কম-বেশি দৃষ্টান্ত আছে। দুর্ভাগ্য, পিছিয়ে নেই পশ্চিমবঙ্গ। এখানে অশান্ত রাজনীতির একটি ঐতিহাসিক উত্তরাধিকার রাজনৈতিক হিংসার সংস্কৃতিতে পর্যবসিত হয়েছে। নিয়মিত তাই খবরের শিরোনামে রাজনৈতিক সংঘর্ষ বড় জায়গা জুড়ে থাকে।

Advertisement

বঙ্গের রাজনৈতিক হিংসার স্তরগুলিকে বুঝতে হলে– এই রাজ্যের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বুননের দিকে মনোযোগ দিতে হয়। বিভিন্ন মতাদর্শগত স্রোত এবং আন্দোলনের ব্যাপকতা স্বতঃই রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে আমাদের টেনে নিয়ে গিয়েছে। এর শিকড়ে হয়তো রয়েছে স্বায়ত্তশাসনের দাবি, ন্যায়বিচারের কামনা, মতাদর্শগত আধিপত্য প্রতিষ্ঠার দুর্মর বাসনা। মনে রাখতে হবে, প্রাক্‌-স্বাধীনতার সময় থেকে অবিভক্ত বাংলা ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র রূপে আবির্ভূত হয়েছিল। পরে, স্বাধীনতা-উত্তর সময়েও পশ্চিমবঙ্গ গণ-আন্দোলন এবং বিবিধ রাজনৈতিক উত্থানের সাক্ষী। গণ-আন্দোলনের ঢেউটি আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে অর্জন করেছি– এমন বললে ভুল বলা হয় না। নকশাল আন্দোলন, কৃষি অসন্তোষ এবং মার্কসবাদের মতাদর্শগত প্রবাহ রাষ্ট্রক্ষমতাকে বারবার চ্যালেঞ্জ করেছে একটা সময়ে। বামপন্থী দলগুলির নেতৃত্বে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন রাজনৈতিক বক্তব‌্য গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। উভয়ের সূত্রেই গেরস্থ আঙিনায় গড়িয়েছে রক্ত।

[আরও পড়ুন: দিঘার পথে দুর্ঘটনায় স্বজনহারাদের পাশে মুখ্যমন্ত্রী, আর্থিক সাহায্যের আশ্বাস]

সাতের দশকে কংগ্রেসের আধিপত্য থেকে বামফ্রন্টের আধিপত্যে রূপান্তর– পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক গতিপথে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়। বাম-জমানায় মানুষকে রাজনৈতিকভাবে সচেতন করার দাবি উত্থিত হয় ঠিকই, তবে তা রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও দলগত দ্বন্দ্বের ভিতও কিন্তু তৈরি করেছে। জনসমর্থন এবং জোর খাটানোর কৌশলের সংমিশ্রণে ক্ষমতায় পার্টির দখলদারি সুসংহত হয়েছে। তা যেমন বিরোধীদের মধ্যে অসন্তোষ ও প্রতিরোধের বীজ বপন করেছিল, তেমনই হিংসা এবং পালটা হিংসার একটি চক্রের দিকে আমাদের ঠেলেও দিয়েছিল। ধারাবাহিক শাসনে সেই দলগত দ্বন্দ্ব এবং উত্তেজনার উত্তরাধিকার রয়ে গিয়েছে।

বামফ্রন্ট-বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে উত্থান ঘটে তৃণমূল কংগ্রেসের। দশক ঘুরতে না ঘুরতে দলটি ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট সরকারকে নির্বাচনের মাধ‌্যমে উৎখাত করে ক্ষমতায় আসে। বাংলার রাজনীতিতে সে আর-এক মোড়। তৃণমূল সুপ্রিমোর প্রতি বারবার শারীরিক আক্রমণ সমর্থন করে এই কথাটিকে যে, মত-বদলের পথটি মসৃণ নয়। কায়েমি ক্ষমতার বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুললেই হিংসার ভেজানো দরজাটি উন্মুক্ত হয়। রাজনৈতিক প্রশ্নের জবাব রাজনৈতিকভাবে নয়, পেশির জোরে দেওয়াই যে শাসকের ধর্ম, সামনে আসে তা-ও।

[আরও পড়ুন: সিপিএমই চায়নি ছোট দল সংসদে যাক! জোট ‘ঘেঁটে’ বিস্ফোরক নওশাদ]

রাজনৈতিক স্থবিরতা কি রাজনৈতিক হিংসার পথ প্রস্তুত করে? প্রবল রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা কি সংঘাতের কট্টর সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দেয়? নিন্দুকদের মতে, রাজনৈতিক হিংসায় পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান মোটেও নীচের দিকে নয়। তবে কি কালক্রমে রাজনৈতিক হিংসার স্বাভাবিকীকরণ ঘটেছে? দেশের অন্যান্য প্রান্তের বিক্ষিপ্ত রাজনৈতিক হিংসার বিপরীতে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিসরটিকে দ্বন্দ্ব ও পেশিশক্তির জোড়কলমে চিহ্নিত করা যেতে পারে– যেখানে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাজনৈতিক হিংসা বিস্তৃত স্থান জুড়ে আছে। এবং রাজনৈতিক হিংসা ঘিরে ‘দায় এড়ানোর সংস্কৃতি’-টি সময় বিশেষে এই সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে, জাগিয়ে দিয়েছে, প্রতিশোধ এবং পাল্টা-শোধের বলয় তৈরি করে রাজনৈতিক হিংসাকে জনমানসে কিছুতেই আবছা হতে দেয়নি।

বাংলায় এক সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল ‘ইজম’-এর। এখন রাজনৈতিক হিংসার অন্যতম ছলনাময় রূপ– পরিচয়ের রাজনীতি। যা রাজনৈতিক দলগুলির কাছে ‘রাজনৈতিক অস্ত্র’ সম। জনসমর্থন জোগাড় করতে এবং ক্ষমতাকে পুঞ্জীভূত রাখতে সম্প্রদায়, বর্ণ এবং ভাষাগত পরিচয়কে ‘ইনস্ট্রুমেন্ট’ রূপে ব্যবহার হয়। জনগোষ্ঠীর অন্তর্বর্তী সংহতি ও সম্মিলিত সত্তার বোধকে ক্ষুণ্ণ করতে পারলে– কাজটি তো আরও সহজ।

হিন্দি-সহ অন্যান্য ভারতীয় ভাষায় তৈরি পপুলার সিনেমায় আমরা দেখি– রাজনীতি এবং সংগঠিত অপরাধের রেখাটি ক্রমে সূক্ষ্ম হচ্ছে। তখন আইনের শাসন ম্রিয়মাণ হয়ে ধরা পড়ে। মাথা চাড়া দেয় সমাজ-রাজনৈতিক হিংসার দঁাত-নখ, যা গণতান্ত্রিক কাঠামোর ক্ষয় ঘটায়, নাগরিকদের আস্থাকে দুরমুশ করে। রাজনৈতিক হিংসার বিরুদ্ধে প্রতিরোধের হাতিয়ার হোক– রাষ্ট্রের ইনক্লুসিভ মানসিকতা, শাসকের রাজধর্ম পালনের নির্মল অঙ্গীকার, সংবিধানের রক্ষাকবচ।

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement