কানাডার একাংশ দাবানলে বিধ্বস্ত। কিন্তু সেই সংক্রান্ত খবরের সব লিংক ‘মেটা’ ব্লক করেছে। কেন? নেপথ্যে চলছে স্বার্থের কোন খেলা?
ধোঁয়া দেখলে বুঝতে হবে আগুন আছে। এমন অনুমান প্রত্যক্ষ প্রমার দিকে আমাদের ঠেলে দেয়। তা, সেই ‘ধোঁয়া’-র দুর্লক্ষণ ধরা পড়েছিল তখনই, কানাডা সরকার যখন ‘অনলাইন নিউজ অ্যাক্ট’ আইন পাস করে ‘মেটা’ এবং ‘গুগ্ল’-কে তাদের অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ‘খবর’ পরিবেশনের সুবাদে পাওয়া বিজ্ঞাপনী অর্থ-মুনাফা নিউজ পাবলিশার্সদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ এখন মেটা-র আওতায়। অন্যদিকে, সার্চ ইঞ্জিনের বাজারে গুগ্লের একাধিপত্যের ধারে-কাছে কেউ নেই। ফলে, লভ্যাংশ ভাগ করে নেওয়ার আইনি সদুপদেশ যে মেটা ও গুগ্লের মতো অতিকায় টেক-দৈত্যর ভাল লাগবে না, তা বুঝতে জ্ঞানবৃদ্ধ হওয়ার দরকার নেই। ফলে, এদের তরফেও হুঁশিয়ারি দেওয়া ছিল। বলা হয়, এমন আইন বলবৎ হলে কানাডার কোনও ‘খবর’ আর মেটা এবং গুগ্লে পাওয়া যাবে না। মুষ্টিমেয় যে-কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে চুক্তি রয়েছে, সেগুলির মান্যতাও প্রশ্নের মুখে পড়বে। কিন্তু কানাডা সরকার হয় এটিকে হুমকি বলে মনেই করেনি। বা, তাতে আমল দেয়নি। বরং আস্তে আস্তে পরিকল্পিত লক্ষ্যে এগিয়েছে।
আগস্ট মাসের গোড়ায় ‘দ্য ইকোনমিক টাইমস’ বিশেষ প্রতিবেদনে জানিয়েছিল যে, কানাডায় ‘অনলাইন নিউজ অ্যাক্ট’ আইনে বাস্তবায়িত হওয়ার ফলে মেটা তাদের রণকৌশল আরও শাণিত করছে। স্থির করেছে, খবর পরিবেশন করে বিজ্ঞাপন-বাবদ-পাওয়া মুনাফার লভ্যাংশ তারা কানাডীয় সংবাদ সংস্থাগুলির সঙ্গে ভাগ করে নেবে না। অদূর ভবিষ্যতে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম-সহ মেটার অন্য কোনও প্ল্যাটফর্মে কানাডা-সংক্রান্ত কোনও খবর মিলবে না, তা স্পষ্ট।
সেটা ছিল ধোঁয়ার গন্ধ। অবশেষ আগুনের অস্তিত্ব মিলল তাতাপোড়া ও ধ্বংসচিত্র সমেত। কানাডার একাংশ এখন দাবানলে বিপর্যস্ত। কিন্তু সেই সংক্রান্ত খবরের লিংক মেটার কোনও প্ল্যাটফর্মে নেই। প্রতিটি লিংক মেটার তরফে ‘ব্লকড’। মানুষ দিশাহারা। নেটিজেনদের একাংশ ক্ষুণ্ণ। কিন্তু এই নিবন্ধ যখন লিখিত হচ্ছে, তখনও পর্যন্ত মেটার সিদ্ধান্তে কোনও পরিবর্তন এসেছে বলে জানা যায়নি। কানাডার দাবানল নিয়ে মেটার প্রতিটি প্ল্যাটফর্ম নির্বাক, নির্দয়, নির্মম।
বর্তমান দশকের এই ঘটনাটি ভবিষ্যতে মোড়-ঘোরানো অভিঘাত বলে চিহ্নিত হলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। মানুষের ভোগান্তির দিনে দূরে সরে গিয়ে মেটা সম্ভবত প্রমাণ করতে চাইছে তাদের অপরিহার্যতা। তবে কানাডার সরকার ও সেখানকার সংবাদমাধ্যম এই অসহযোগিতার তোয়াক্কা না-করে যদি নিজ-লক্ষ্যে অবিচল থাকে, তাহলে আগামী দিনে মেটার পলিসিতে যে রূপান্তর ঘটবে না, তা কি জোর দিয়ে বলা যায়? আর, খবর পরিবেশন করে পাওয়া মুনাফার টাকা যদি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে ভাগ করে নিতে হয়, তাহলে পরিবেশিত সংবাদের গুণমান নিয়েও আশাবাদী হওয়ার কারণ থাকছে। অধর্সত্য ও অসত্য খবরের কয়েদ ভেঙে জাগ্রত হোক চতুর্থ স্তম্ভের রণভেদি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.