Advertisement
Advertisement

Breaking News

Emoji

চাপা হাসি, মাপা কান্না

আমাদের আবেগ বা অনুভূতি প্রকাশের এই ভাষিক উপাদানটির ভূমিকা ব্যাপকতর।

Why are we not keeping track of emoji history। Sangbad Pratidin
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:April 13, 2023 2:37 pm
  • Updated:April 13, 2023 2:38 pm  

সর্বক্ষণের সাধারণ লিখিত আলাপচারিতার যে-জগৎ বর্তমানে আমাদের চারপাশে গড়ে উঠেছে, সেখানে ‘ইমোটিকন’ কিংবা উন্নত রূপে যা ‘ইমোজি’, তা এক অপরিহার্য অঙ্গ। মেল, মেসেজ, হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক– সর্বত্র তার বর্ণময় উপস্থিতি। অথচ লেখ্য ভাষার ক্ষেত্রে সেটির গুরুত্ব কিংবা তার ইতিহাসের দিকটি আমরা বড় একটা নজর করি না। লিখলেন সুস্নাত চৌধুরী

‘The Guardian’ পত্রিকা ২০০১ সালে খানিক মজাচ্ছলেই আয়োজন করে কবিতা রচনার বিচিত্র এক প্রতিযোগিতা। সেখানে নিয়ম ছিল, কবিতাটি লিখতে হবে ‘এসএমএস’-এর মাধ্যমে এবং তা মোবাইল ফোন থেকেই মেসেজ করে পত্রিকার দপ্তরে পাঠাতে হবে। অর্থাৎ, সেকেলে ‘আনস্মার্ট’ ফোনের সীমাবদ্ধতা মেনে লেখাটি ১৬০ ক্যারেক্টারের মধ্যে হওয়া বাধ্যতামূলক। এমন অভিনব প্রতিযোগিতায় সাড়া মেলে ব্যাপক– কবিতা জমা পড়ে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার। কাব্যগুণের বিচারে শীর্ষস্থানাধিকারী না হলেও এসএমএস-এর সর্বাপেক্ষা সৃজনশীল ব্যবহারের জন্য বিশেষ পুরস্কার পান বছর তিরিশের জুলিয়া বার্ড। ‘দ্য গার্ডিয়ান’ তাঁর বার্তাকাব্যটির প্রসঙ্গে লেখে– “most creative use of SMS ‘shorthand’ in a poem.” বার্ডের কবিতার শেষ পঙ্‌ক্তিটি ছিল– ‘wen he :-)s @ me.’ অর্থাৎ, মান্য রীতিতে যা দাঁড়ায় এইরকম– ‘when he smiles at me.’

Advertisement

ভাষার লেখ্য রূপটি অর্থবোধ্য করে তুলতে এবং পড়ার মধ্যে বিরতি নির্দেশে যতিচিহ্ন বা বিরামচিহ্নের ভূমিকার কথা আমরা জানি। কিন্তু বার্ড যতিচিহ্নের ব্যবহারে একটি চিত্ররূপ নির্মাণ করেন। কোলন, হাইফেন ও প্রথম বন্ধনীর শেষ বক্ররেখাটি একযোগে প্রয়োগ করে, মাত্র তিনটি ক্যারেক্টারের মাধ্যমে হাসি বা ‘smile’ শব্দটি প্রতিস্থাপিত করা হয়। বৈদ্যুতিন মাধ্যমের সাধারণ কথোপকথনে আমরাও হামেশা এমন ব্যবহার করি বটে, তবে লেখার প্রমিত রীতিতে আবেগ প্রকাশে যতিচিহ্নের এই ধরনের সম্মিলিত প্রয়োগ এখনও সিদ্ধ নয়।

[আরও পড়ুন: বিদেশি অনুদানে গরমিলের অভিযোগ, ফের BBC’র বিরুদ্ধে তদন্ত কেন্দ্রের, এবার আসরে ED]

ইমোটিকন। ‘ইমোশন’ ব্যক্ত করার ‘আইকন’। হাসি, আহ্লাদ, দুঃখ, বিস্ময়, ক্রোধ ইত্যাদি আবেগ খুব সহজে দৃশ্যগতভাবে ফুটিয়ে তুলতে প্রধানত চিহ্ন, কখনও বা দু’-একটি হরফ ও সংখ্যার একত্র অবস্থান। বিস্ময়সূচক চিহ্ন কিংবা প্রশ্নবোধক চিহ্নের মাধ্যমেও কোনও বক্তব্যের অন্তর্নিহিত ভাব বোঝানো সম্ভব, কিন্তু তারা দৃশ্যত ও প্রত্যক্ষভাবে কোনও ভাব ফুটিয়ে তোলে না। চিহ্নগুলির সম্পর্কে আগাম অবহিত না হলে ভাবটি চিনে নেওয়া যায় না। ইমোটিকন কিন্তু তা নয়, তার অবয়বই তার ভাবকে স্পষ্ট করে দেয়। কম্পিউটার বা মোবাইল আসার পর এর চল বেশ বাড়লেও ক্রমে প্রযুক্তিগত উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে সেই জায়গা দখল করে ইমোজি। এখনও বৈদ্যুতিন বাক্যালাপে তারই আধিপত্য। কিন্তু পিছু ফিরে দেখলে বুঝতে পারা যায়, যতিচিহ্নাদির মাধ্যমে তৈরি ইমোটিকনের এমন চাপা হাসি মাপা কান্না খুব অল্পদিনের ঘটনা ছিল না। নতুন কোনও ব্যাপার তো নয়ই।

মনে করা হয়, কম্পিউটারের ‘আস্‌কি’ (ASCII) হরফে প্রথম ইমোটিকন ব্যবহারের কৃতিত্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্কট ফাহ্‌লম্যান-এর। ১৯৮২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের বুলেটিন বোর্ডে পাঠানো এক বৈদ্যুতিন বার্তায় তিনি দু’টি ইমোটিকন ব্যবহার করেন। গুরুগম্ভীর বিষয়ের সঙ্গে মজার চুটকি যাতে গুলিয়ে না যায়, তাই ‘:-)’ চিহ্নসমষ্টি ব্যবহারের প্রস্তাব দেন। এদের ‘joke markers’ বলেন। একইসঙ্গে যেগুলি মজার কথা নয়, তাদের ক্ষেত্রে ‘:-(’ ব্যবহারের প্রস্তাব করেন তিনি। এই ঘটনা স্মরণে রেখে ২০০৭ সালে ইমোটিকনের রজতজয়ন্তী বর্ষও পালিত হয়।

[আরও পড়ুন: জাল ওষুধ তৈরির অভিযোগ, ১৮ ফার্মা কোম্পানির লাইসেন্স বাতিল করল কেন্দ্র]

অবশ্য মুদ্রিত মাধ্যমের নিরিখে দেখলে এসব মজারু মুখব্যাদানের ইতিহাস আরও পুরনো। ১৮৮১ সালের ৫ মার্চ পোল্যান্ডের ‘Kurjer Warszawski’ পত্রিকাতেই সম্ভবত প্রথম ইমোটিকন বা তার আদিরূপটি ছাপা হয়। ওদিন দৈনিক সংবাদপত্রটির পাঁচের পাতায় জায়গা পায় বিবিধ চিহ্ন সাজিয়ে তৈরি অমন আটটি মুখভঙ্গি। এর দিন কয়েক পর, ৩০ মার্চ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ‘Puck’ পত্রিকাতেও ‘Typographical Art’ শিরোনামে প্রকাশিত হয় একই ধরনের ইমোটিকন। আনন্দ, বিষাদ, উদাসীনতা ও বিস্ময়– এই চারপ্রকার অনুভূতি সেখানে উঠে আসে টাইপোগ্রাফির কারসাজিতে। ব্যঙ্গকৌতুকধর্মী পত্রিকাটি উক্ত ছবি চারটির সঙ্গে যে সংক্ষিপ্ত অনুচ্ছেদটি জুড়ে দেয়, তা-ও আকর্ষণে কম কিছু নয়– ‘We wish it to be distinctly understood that the letterpress department of this paper is not going to be trampled on by any tyranical crowd of artists in existence. We mean to let the public see that we can lay out, in our own typographical line, all the
cartoonists that ever walked. For fear of startling the public we will give only a small specimen of the artistic achievements within our grasp, by way of a first instalment. The following are from Studies in Passions and Emotions. No copyright.’

সর্বক্ষণের সাধারণ লিখিত আলাপচারিতার যে-জগৎ বর্তমানে আমাদের চারপাশে গড়ে উঠেছে, সেখানে এই ইমোটিকন কিংবা উন্নতরূপে যা ‘ইমোজি’, তা এক অপরিহার্য অঙ্গ। মেল, মেসেজ, হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক– সর্বত্র তার বর্ণময় উপস্থিতি। অথচ লেখ্য ভাষার ক্ষেত্রে সেটির গুরুত্ব কিংবা তার ইতিহাসের দিকটি আমরা বড় একটা নজর করি না। ব্রিটিশ ভাষাতাত্ত্বিক ডেভিড ক্রিস্টাল ‘txtng: the gr8 db8’ বইয়ে ইমোটিকনের বিভিন্ন পরিপ্রেক্ষিত তুলে ধরেছেন। বাংলা বা ইংরেজি পড়ার মতো বাম থেকে ডানে দেখা ‘ইমোটিকন,’ যেমন 🙂 (হাসি), 😉 (চোখ টেপা), :-@ (আর্তনাদ) কিংবা জাপানি ভাষার মতো খাড়া উপর-নিচে দেখা (*o*) (বিস্মিত), (^_^) (মনোরম) ইমোটিকনের দৃষ্টান্ত দিয়ে ‘পিক্টোগ্রাম’ হিসাবে তার প্রাসঙ্গিকতা বিচার করেছেন। বুঝতে পারা যায়, আমাদের আবেগ বা অনুভূতি প্রকাশের এই ভাষিক উপাদানটিকে আপাতভাবে যত তুচ্ছই মনে হোক না কেন, বাস্তবে তার ভূমিকা ব্যাপকতর ও বহুমুখী।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement