সুপর্ণা মজুমদার: যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই৷ কিন্তু সহ্যেরও তো ক্ষমতা থাকা চাই৷ ভোররাতের ঘুঁটঘুঁটে কালো অন্ধকারে সাপের মতো নিঃশব্দে ঘুমন্ত কিছু সৈন্যের উপর হামলা করা কোন রাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা রক্ষা করে? প্রশ্নের উত্তর শুধুমাত্র গুটিকয়েক স্বনামধন্য ব্যক্তিই দিতে পারবে৷ বিপ্লবের নামে সন্ত্রাস যাদের সনাতন প্রথা৷ বিক্ষোভের নামে ভূস্বর্গকে যারা কারফিউর নরকে পরিণত করতে পারে৷
কতই বা বয়স ছিল ছেলেগুলোর৷ ২৫, ৩০ কিংবা তার একটু বেশি? এসেছিল পাঞ্জাব, সিন্ধ, গুজরাট, মারাঠা, উৎকল ও বঙ্গ থেকে৷ তরুণ মনের স্বপ্নগুলো মনের কোণেই লুকিয়ে রেখে পড়েছিল ভিনরাজ্যে৷ কেন? ১২৫ কোটির সীমান্ত রক্ষা করার জন্য৷
যোদ্ধা যুদ্ধ সামনে থেকে করে৷ কিন্তু ওরা অনুপ্রবেশ করতে জানে, ওরা জলপথে এসে নিরীহ মানুষ মারতে পারে, বন্দি করে রাখতে পারে, হাত-পা বাঁধা সাংবাদিকের মাথা কাটতে পারে৷ কিন্তু বুক চিতিয়ে লড়াই করতে পারে না৷ যদি তা পারত, তাহলে আজ হাওড়া ও সাগরের ২৫ বছরের ছেলে দুটো বেঁচে থাকতেন৷ বেঁচে থাকত উরির বাকি সৈন্যরাও৷ কেউ হয়তো ছেলের পরীক্ষার আগে ফিরে আসতে পারতেন, কেউ হয়তো বাড়ি এসে বিয়েটা সেরে ফেলতে পারতেন৷
এটা যদি ওঁরা বুঝতেন৷ তাহলে যুগ যুগ ধরে ভারতবর্ষকে সন্ত্রাসের বোঝা মাথায় নিয়ে চলতে হত না৷ উপত্যকাটা ভূস্বর্গ হয়ে একান্ত আপন হয়ে থাকতে পারত৷ নিরীহ মানুষগুলো শিকারা বেয়ে আবার ডাল লেকের সৌন্দর্য দেখিয়ে গর্বিত হতে পারতেন৷
অবশ্য পারারও একটি সীমারেখা রয়েছে৷ যা লঙ্ঘন করলে সহ্যের বাঁধ ভাঙবেই৷ প্রতিশোধের জোয়ারে ভেসে যাবে সন্ত্রাসতন্ত্রের ‘পাক’ ভূমি৷ কিন্তু আখেরে লাভটা কার হবে? না এই পারের, না ওই পারের৷
যুদ্ধ হতেই পারে৷ ভারতও তৈরি পৃথ্বি, রাফালের সম্ভার নিয়ে৷ পাকিস্তানের ভরসা চিনের দাক্ষিণ্য৷ পরমাণুর ক্ষমতার ঢাক দুই দেশই কিছুটা রাখ, কিছু থাক করে পিটিয়ে রেখেছে৷ রক্ত ঝরবে৷ কিন্তু, রক্তের লাল রঙের সৌজন্যে কি কোনও দিন শান্তি ফিরেছে? তার রঙ যে সাদা৷ তাই সাদামাটা জীবন একটা কথাই জানে৷ সবচেয়ে বড় বিপ্লব জীবন বাঁচিয়েই সাধন করা যেতে পারে, জীবন নিয়ে নয়৷
জীবনের মূল্য সেই জনই জানে, যেই জন ভালবাসতে জানে, ভালবাসতে শেখাতে জানে৷ জ্ঞান শিক্ষার মাধ্যমে আসে৷ যুদ্ধের মাধ্যমে আসেওনি, আসবেও না৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.