Advertisement
Advertisement

Breaking News

Modi 3.0

‘কৃষকবন্ধু’ হওয়ার চেষ্টা

গ্রামের কৃষক পরিবারের কল্যাণের কথা বিচার করে তৃতীয় ইনিংস শুরু করছেন মোদি।

What is the biggest challenge before the Modi 3.0

ফাইল ছবি।

Published by: Biswadip Dey
  • Posted:June 11, 2024 2:42 pm
  • Updated:June 11, 2024 2:47 pm  

মোদি সরকারের সামনে এবার সবচেয়ে বড় চ‌্যালেঞ্জ ভোগ‌্যপণ‌্যর চাহিদা বাড়িয়ে অর্থনীতিকে ঘুরে দঁাড় করানো। গ্রামের কৃষক পরিবারের কল‌্যাণের কথা বিচার করে তিনি তৃতীয় ইনিংস শুরু করছেন। লিখলেন সুতীর্থ চক্রবর্তী

তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসে নরেন্দ্র মোদির প্রথম ফাইল স্বাক্ষরের বিষয়টি বেশ বার্তাবহ। তৃতীয় দফার সূচনা তিনি করেছেন ‘প্রধানমন্ত্রী কিষান সম্মান নিধি’-র ১৭তম কিস্তিটি প্রদান সংক্রান্ত ফাইলে স্বাক্ষর করে। প্রথম পঁাচ বছরের শেষ লগ্নে এসে মোদি এই প্রকল্পটি চালু করেছিলেন। এই প্রকল্পে দেশের কৃষক পরিবারকে বছরে তিন কিস্তিতে মোট ৬ হাজার টাকা দেওয়া হয়। ’১৯-এর লোকসভা ভোটের অাগে এই প্রকল্প চালু করে মোদি হাতে গরম ফল পেয়েছিলেন। সে-কারণে দ্বিতীয় দফার পঁাচ বছরে তিনি এই প্রকল্পের উপভোক্তার সংখ‌্যা বাড়িয়েছিলেন। এখন এই প্রকল্পে ৯ কোটি ৩০ লক্ষ কৃষক পরিবার উপকৃত হয়। যার মধে‌্য ২ কোটি কৃষক পরিবার শুধু উত্তরপ্রদেশের।

Advertisement

২০২৪-এর লোকসভা ভোটে যে মোদি (PM Modi) এই প্রকল্পের দৃশ‌্যত কোনও সুফল পেয়েছেন, এমনটা বলার সুযোগ নেই। কারণ, এই ভোটে মোদির প্রতি বিমুখ হয়েছেন প্রধানত গ্রামাঞ্চলের কৃষক পরিবারের ভোটাররাই। এই বিমুখতা অাবার সবচেয়ে বেশি উত্তরপ্রদেশেই (Uttar Pradesh)। গ্রামাঞ্চলে এবার বিজেপির ভোট কমেছে প্রায় অাড়াই শতাংশ। উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, পাঞ্জাব, হরিয়ানা এসব রাজে‌্য কৃষকদের ক্ষোভই বিজেপির ভোট কমার পিছনে প্রধান কারণ। পাঞ্জাবের কৃষক পরিবারের বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষোভ কতটা গভীর, তা বোঝা গেল চণ্ডীগড় বিমানবন্দরে এক পাঞ্জাবি তরুণী জওয়ানের হাতে বিজেপির সদ‌্য নির্বাচিত সেলিব্রিটি সাংসদ কঙ্গনা রানাওয়াতের চড় খাওয়ার ঘটনায়।

[আরও পড়ুন: ‘প্রতিযোগিতা মানেই যুদ্ধ নয়’, নয়া সরকারকে ইঙ্গিতপূর্ণ বার্তা মোহন ভাগবতের]

কৃষি অাইনের বিরুদ্ধে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থানের কৃষকদের দীর্ঘ অান্দোলন মোদি সরকারের একসময় ঘুম কেড়ে নিয়েছিল। মোাদি সরকারের পিঁয়াজ রফতানি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মহারাষ্ট্রের কৃষকরা অান্দোলনে নেমেছিল। মহারাষ্ট্রে বিজেপির ফলে এর প্রভাবও পড়েছে। নূ‌্যনতম সহায়ক মূল‌্য অাইনের দাবিতে পাঞ্জাব, হরিয়ানার কৃষকদের অান্দোলন তো থামার কোনও লক্ষণই নেই। সেনায় নিয়োগে মোদি সরকারের ‘অগ্নিবীর প্রকল্প’-ও হিন্দি বলয়ের রাজ‌্যগুলিতে কৃষক পরিবারে যথেষ্ট ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। নীতীশ কুমারের মতো শরিক ইতিমধে‌্য ‘অগ্নিবীর প্রকল্প’ বন্ধ করার দাবিও তুলেছেন।

সব মিলিয়ে মোদি সরকারকে তৃতীয় দফা শুরুই করতে হচ্ছে দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের কৃষক পরিবারের ক্ষোভ-বিক্ষোভকে সামনে রেখে। সে-কারণেই নর্থ ব্লকে নিজের ঘরে ঢুকেই মোদি অাগে টেনে নিয়েছেন ‘কিষান সম্মান নিধি’-র ফাইলটা। মোদি প্রতীকী রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন। তঁার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সবসময় নানা প্রতীকের ব‌্যবহার থাকে। সেসব দিয়ে তিনি সমাজের নানা অংশকে বার্তা দেন। গ্রামের কৃষক পরিবারের কল‌্যাণের কথা বিচার করেই তিনি তৃতীয় ইনিংস শুরু করছেন, নিশ্চিত করেই এইরকম একটা বার্তা দেওয়াই মোদির লক্ষ‌্য। মোদির এই পদক্ষেপকে যথারীতি প্রবল অাক্রমণে বিদ্ধ করেছে কংগ্রেস। তাদের বক্তব‌্য ‘কিষান সম্মান নিধি’-র ১৭তম কিস্তির টাকা একমাস অাগেই কৃষকদের পাওনা হয়ে গিয়েছিল। এর মধে‌্য নতুনত্ব কিছু নেই। এটা মোদির রাজনৈতিক চমক ছাড়া কিছু নয়।

[আরও পড়ুন: NEET কাউন্সেলিংয়ে স্থগিতাদেশের আর্জি খারিজ, কী জানাল সুপ্রিম কোর্ট?]

মোদির এই ‘চমকের রাজনীতি’-র অাড়ালে তৃতীয় পর্বের সূচনা ‘কিষান সম্মান নিধি’-র ফাইল ‘রিলিজ’ করার মধে‌্য একটি অর্থনৈতিক তাৎপর্যও লুকিয়ে রয়েছে। এই দফায় ৯ কোটি ৩০ লক্ষ পরিবারকে ২ হাজার টাকা করে মোট ২০ হাজার কোটি টাকা গ্রামীণ উপভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছে সরকার। গ্রামীণ অর্থনীতিতে একলপ্তে এতগুলি টাকা পৌঁছে যাওয়ার অার্থিক সুফল রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের এই ‘কিষান সম্মান নিধি’-র অাদলে রাজে‌্য ‘কৃষক বন্ধু’ প্রকল্প রয়েছে। ‘কৃষক বন্ধু’ প্রকল্পেও রাজ‌্য সরকার বছরে ৫ হাজার টাকা নগদ কৃষক পরিবারগুলিকে পৌঁছে দেয়। রাজ‌্য সরকারের ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্পে সোয়া ২ কোটি মহিলা প্রতি মাসে হাজার টাকা করে পাচ্ছেন। এঁদের সিংহভাগ গ্রামের বাসিন্দা। অন‌্যান‌্য রাজে‌্যও নানা ধরনের ‘ডাইরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফার’ প্রকল্পে গ্রামে নগদ টাকা পৌঁছয়। গ্রামে এই নগদ টাকা পৌঁছনোর গুরুত্ব এখন দেশের অর্থনীতিতে সর্বাধিক। গ্রামীণ অর্থনীতিতে নগদ টাকা পৌঁছনোর মধ‌্য দিয়েই দেশে ভোগ‌্যপণে‌্যর চাহিদা বাড়তে পারে। মোদি সরকারের সামনে এবার সবচেয়ে বড় চ‌্যালেঞ্জ ভোগ‌্যপণ‌্যর চাহিদা বাড়িয়ে অর্থনীতিকে ঘুরে দঁাড় করানো।

সরকারের প্রথম সিদ্ধান্তে গ্রামীণ উপভোক্তাদের হাতে ২০ হাজার কোটি টাকা পৌঁছে দেওয়াও মোদির একটা বার্তা। ভোটের প্রচার শুরু হওয়ার সময়ই গবেষণা সংস্থা ‘সিএসডিএস’ তাদের সমীক্ষায় বলেছিল এবারের ভোট রুটি-রুজির ইসু‌্যতে হতে চলেছে। রামমন্দির কোনও ইসু‌্য নয়। দীর্ঘ তিন মাসের ভোট পর্বে সিএসডিএস-এর দাবি সত‌্য প্রমাণিত হয়েছে। মূল‌্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, কৃষকদের ক্ষোভ, অার্থিক অস‌াম‌্য, ‘অগ্নিবীর প্রকল্প’ ইত‌্যাদিই লোকসভা ভোটে প্রধান ‘ফ‌্যাক্টর’ হয়েছে। রামমন্দির উদ্বোধনের একমাসের মধে‌্য ভোট সেরে ফেলতে পারলে ফল কী হতে পারত, তা নিয়ে অার অালোচনা করে লাভ নেই।

পাক-অধিকৃত কাশ্মীর উদ্ধার অভিযানে নেমে ভোটে গেলে কী হতে পারত, তা নিয়েও এখন অালোচনা বৃথা। মোদির ‘ঘৃণা ভাষণ’ যে ভোট অানতে বিশেষ কার্যকর হয়নি, সেটা বাস্তব। শরিকদের নিয়ে গঠিত জোট সরকারের ‘অ‌্যাজেন্ডা’ যে অর্থনীতির পুনরুদ্ধারই, সে-কথাই যেন সরকারের প্রথম সিদ্ধান্তের বার্তা। গ্রামীণ বাজারের পরিসর বৃদ্ধি করে এখন সরকারকে বেসরকারি লগ্নির পথ যে কোনও উপায়ে প্রশস্ত করতে হবে। শরিকদের বুঝিয়ে জমি অধিগ্রহণ অাইন ও শ্রম অাইনের সংস্কার করতে হবে। জিএসটি ব‌্যবস্থার অারও সরলীকরণ করে সাধারণ মানুষের উপর করের বোঝা কমাতে হবে। ভূ-রাজনীতিকে নিজেদের অনুকূলে রেখে রফতানি বাড়ানোর কৌশল গ্রহণ করতে হবে। তৃতীয় পর্বে মোদি সরকারের সামনে এগুলিই অাপাতত গুরুত্বপূর্ণ কাজ বলে বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিচ্ছেন। মোদির প্রথম সিদ্ধান্তে হয়তো সেই বার্তাই নিহিত।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement