Advertisement
Advertisement
Mumbai Drug Bust

মাদক না নিলে কি তারকা হওয়া যায় না?

বলিউড আর মাদক যেন সমার্থক হয়ে উঠছে।

What could be the main reason of drug addiction in Bollywood। Sangbad Pratidin
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:October 3, 2021 3:22 pm
  • Updated:October 3, 2021 4:52 pm  

বিশ্বদীপ দে: রবিবাসরীয় ছুটির সকালে আচমকাই গোটা দেশের চোখ আটকে গেল টিভির পর্দা কিংবা মোবাইলের স্ক্রিনে। মুম্বইয়ের প্রমোদতরীতে রেভ পার্টির (Rave Party) ঘটনায় আটক হয়েছেন শাহরুখ খানের (Shah Rukh Khan) ছেলে আরিয়ান খান (Aryan Khan)। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে তাঁর মোবাইল। তদন্তকারীদের নজরে তাঁর হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট। গত কয়েকদিনের মধ্যে কার কার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন তারকাপুত্র, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গত বছরের জুন মাসে এমনই এক রবিবারে সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছিল। আর তারপর থেকে গত বছরখানেক ধরে বারবার বলিউডের সঙ্গে মাদকের অপ্রতিরোধ্য যোগ সামনে এসেছে। আর প্রশ্ন উঠেছে, স্টারডমের ঝলমলে আলোর নিচেই এত অন্ধকার! কেন? কেন তারকা বৃত্তের সঙ্গে এমন নিবিড় যোগ মাদকের? তারকা হয়ে উঠতে গেলে কি মাদক খেতেই হবে?

সুশান্ত সিংয়ের মৃত্যুর তদন্ত শুরু হওয়ার পর ক্রমেই সেই তদন্তের আরেকটা শাখা জন্ম নিয়েছিল। আর তা একেবারেই মাদক কারবার সংক্রান্ত। সুশান্ত-বান্ধবী রিয়া চক্রবর্তী ছিলেন এই মামলার অন্যতম অভিযুক্ত। আর জেরার মুখে তিনি কার্যত ‘বোমা’ ফাটিয়ে বলেন, তদন্ত করলে দেখা যাবে বলিউডের ৭০ শতাংশ তারকাই হয় মাদক নেন, নয়তো মাদক আনান! এমন সব তারকার নাম নেন তিনি, যা শুনে তদন্তকারীদের চোখ কপালে উঠে যায়! সেই তারকাদের কয়েক জন ২০০ কোটির ক্লাবেরও সদস্য বলে জানা যায়।

Advertisement

[আরও পড়ুন: মুম্বইয়ের ক্রুজে রেভ পার্টির ঘটনায় আটক শাহরুখপুত্র আরিয়ান, নজরে হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট]

পরের কয়েক মাসে আরও ঢেউ আছড়ে পড়েছে আরবসাগরে। সারা আলি খান, দীপিকা পাড়ুকোনের মতো বড় নামের পাশাপাশি বলিউডের দ্বিতীয় সারির অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নাম উঠে এসেছে মাদক যোগের মামলায়। অর্জুন রামপাল থেকে কমেডিয়ান ভারতী সিং, ‘বিগ বস’-এর প্রতিযোগী- বলিউড থেকে দক্ষিণ ভারতীয় অভিনেতা-অভিনেত্রী- তালিকা রীতিমতো লম্বা।
মনে করা যেতে পারে গত বছরের অক্টোবরে অক্ষয় কুমারের উদ্ধৃতির কথা। ‘খিলাড়ি’ কুমার সরাসরি মেনে নিয়েছিলেন বলিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অনেক খারাপ দিক রয়েছে। যার অন্যতম মাদক কেলেঙ্কারি। তাঁর সাফ কথা ছিল, ”আমি আমার হৃদয়ে হাত রেখে বলতে পারি, মাদক সমস্যা যে বলিউডে নেই সেই মিথ্যে আমি বলতে পারব না।”

অক্ষয়ের ওইটুকু স্বীকারোক্তিই প্রমাণ করে দেয় বলিউডের কতটা গভীরে চারিয়ে গিয়েছে এই বিষ। আসলে সুশান্তের মৃত্যুই এমন একটা দরজা খুলে দিয়েছে যার থেকে মুখ ঘুরিয়ে রাখা আর মেগাস্টারদের পক্ষেও সম্ভব নয়। রবিবার আরিয়ান খানের আটক হওয়া সেই বছর পেরনো বিতর্কের নয়া অধ্যায়। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, এসবই হিমশৈলের চূড়ামাত্র। ঠিকমতো ঘাঁটতে পারলে আরও অনেক অন্ধকারই উঠে আসবে হাতে।

[আরও পড়ুন: জলে ভাসছে ব্রেকফাস্ট, সুইমিং পুলে ডুবে মালদ্বীপে দিন শুরু রাজ-শুভশ্রীর]

আর এপ্রসঙ্গেই মনে পড়ছে টলিউডের এক অভিনেত্রীর কথা। গত বছর মাদক কেলেঙ্কারি নিয়ে যখন উত্তাল বিনোদন দুনিয়া, তখন আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল হয়তো টালিগঞ্জেও রয়েছে সেই ছায়া। কিন্তু টলিউডের সেই অভিনেত্রী সমস্ত অভিযোগকে উড়িয়ে কটাক্ষের সুরে বলেছিলেন, আর যাই হোক এখানে অত দামি নেশা করার ক্ষমতা নেই কারও। তিনি ঠিক বলছেন কি বলছেন না, তার চেয়েও জরুরি তাঁর ব্যাখ্যাটা। টাকা। অঢেল টাকা আর প্রাচুর্যই জীবনের গভীরে একটা ফাঁকা আর ফাঁপা জায়গা তৈরি করে দেয়। সেই শূন্যস্থানেই এসে জমে মাদকের অন্ধকার। অন্যদিকে থেকে যায় স্টারডম ধরে রাখার চাপ। কিংবা মাথার উপর থেকে আলোকবৃত্ত সরে যাওয়ার যন্ত্রণা। 

সত্যজিৎ রায়ের ‘নায়ক’ ছবিতে উচ্চাকাক্ষ্ঙী অরিন্দমের কাছে শঙ্করদা জানতে চেয়েছিলেন, তার কি তারকা হওয়ার বাসনা রয়েছে? নাকি লেজবিশিষ্ট ধুমকেতু? তাঁর ওই ব্যাঙ্গের আড়ালেই হয়তো রয়ে গিয়েছে আসল সত্যিটা। বলিউড গত কয়েক দশকে আরও ধনী হয়েছে। আরও বেশি টাকা আর বৈভবের জন্ম হয়েছে মায়ানগরীতে। আর সেই মায়ার আড়ালেই ক্রমশ গাঢ় হয়েছে ছায়া। একদিকে খ্যাতি ও অর্থ ধরে রাখার চাপ, একাকিত্ব কিংবা অঢেল প্রাচুর্যের আড়ালে থাকা ‘একটা চাই’ হাহাকার কিংবা হয়তো আরও নানা ফ্যাক্টর। যার অন্যতম বিপন্নতাও। সব ফ্যাক্টর সবার ক্ষেত্রে কার্যকর নয়। তারকার অবসাদ আর তারকা-পুত্রের স্টাইল স্টেটমেন্টের অঙ্ক এক সমীকরণে মিলবে না। কিন্তু সেই সব অঙ্ক জমে তৈরি হয়েছে বিরাট এক অন্ধকার হিমশৈল। যে অন্ধকার থেকে বলিউডের মুক্তি নেই। রবিবারের সকাল আবার সেই কথা বুঝিয়ে দিয়ে গেল।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement