উর্মি খাসনবিশ: কালো টাকার রমরমা রুখতে দেশের অভ্যন্তরেই সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ তাতে প্রাথমিকভাবে কিছু সমস্যার সম্মুখীন হলেও দেশের সুঠাম অর্থনীতির কথা ভেবে মোদির পদক্ষেপকে সায় দিয়েছেন দেশের সিংহভাগ মানুষ৷ দেশের ভবিষ্যতের কথা ভেবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যাঙ্ক কিংবা এটিএমের লাইনের বাইরে অপেক্ষা করছেন বহু মানুষ৷ তা সত্ত্বেও গোটা অবস্থা সম্পর্কে তাঁদের বিশেষ অভিযোগ নেই৷ উল্টে মোদির সাহসিকতার তারিফ করছেন তাঁরা৷ এমন অবস্থায় এই সাধারণ মানুষকেই ঢাল করে রাজনীতির ময়দানে সরব হচ্ছেন বিরোধী দলগুলি৷ তাঁদের দাবি, আচমকা দেশে ৫০০ ও ১০০০ টাকা বাতিল হয়ে যাওয়ার ঘটনায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ, খুচরো ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন- এমন বহু দাবি তুলে পথে নেমেছে বিরোধী দলগুলি৷ প্রায় একই সুরে মোদির বিরোধিতা করছেন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা৷
নোট বাতিলকে কেন্দ্র করে দেশে যে কঠিন রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে, তাতে কেবল এবং কেবল সাধারণ মানুষের উন্নতির কথা ভাবা হচ্ছে, এমন ভাবনা নিখাদ মনেও বোধহয় ভাবা সম্ভব নয়৷ কেবল সাধারণ মানুষের উন্নতির জন্য রাজনৈতিক দলগুলি ক্ষমতার লড়াইয়ে মেতে ওঠে এমনটাও মেনে নেওয়া সম্ভব নয়৷ তবে আচমকা সাধারণ মানুষকে শিখন্ডি খাড়া করে এত দামামা কেন?
একটু খুঁটিয়ে লক্ষ্য করলে দেখবেন, সামনেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নির্বাচন৷ আর এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে লোকচক্ষুর আড়ালে চলে টাকার খেলা৷ তাই আচমকা দেশে ৫০০, ১০০০ টাকার নোট বাতিল হয়ে যাওয়ার ঘটনায় বহু ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তির ক্ষমতার পকেটে যে বড়সড় টান পরছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না৷ আগামী বছর উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচন৷ শোনা যায়, সেই নির্বাচনে নাকি হাওয়ায় টাকা ওড়ে৷ বাড়ি প্রতি নাকি সেই সময় রাজনৈতিক দলগুলি টাকা এবং চাল বিলোয়৷ অর্থ এবং খাবারের টোপ দিয়ে ভোট কেনা হয় সেখানে৷ যদিও ভোট কেনার মতো বেআইনি কাজ যে রাজনৈতিক দলগুলি করে থাকে, সেকথা প্রকাশ্যে আলোচনা করা হয় না৷ ক্ষমতার লড়াইয়ে টিকে থাকতে গিয়ে যে অসাংবিধানিক পন্থা অবলম্বন করেন রাজনৈতিক নেতারা সে খবর বা তথ্য কোনও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বইয়েও থাকে না৷
কিন্তু কালো টাকার রমরমা রুখতে প্রধানমন্ত্রীর এই মাস্টারস্ট্রোক ভোট কেনার রাস্তাতেও কমবেশি বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ ৫০০, ১০০০ টাকার নোট বাতিল হয়ে যাওয়ায় রীতিমতো চোখে সরষেফুল দেখছেন রাজনৈতিক নেতারা৷ এমন অবস্থায় মেজাজ হারিয়ে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী একবার বিবৃতিতে বলেও ফেলেছেন, “কালো টাকা ভাল”! তিনি আরও বলেন, “কালো টাকায় দেশের অর্থনীতির কোনও ক্ষতি হয় না৷”
খুব স্বাভাবিকভাবেই নানা প্রশ্ন জাগে অখিলেশবাবুর এই মন্তব্যকে ঘিরে৷ সেটি হল, কালো টাকা দেশের অর্থনীতির ক্ষতি না করলেও কোনও ভাল করে কি? টাকার মালিকরা সরকারের কর ফাঁকি দিলে দেশের কোনও ক্ষতি হয়না? আর কালো টাকা কি আদৌ আম আদমির কোনও কাজে আসে? তবে যে টাকা আম আদমির কাজে লাগে না, সেই টাকায় নিষেধাজ্ঞা জারি হলে, আম আদমির ক্ষতি হয় কেমন করে? নোট বাতিল হওয়ায় প্রাথমিকভাবে মানুষ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন সত্যিই৷ কিন্তু এতে তাঁদের পকেটে বিশেষ টান পড়ছে বা অর্থনৈতিকভাবে তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, এমনটা কিন্তু নয়৷
তবে সমস্যাটা কোথায়? রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের নোট বাতিল ইস্যুকে কেন্দ্র করে এত ডামাডোলই বা কেন? প্রসঙ্গত, চলতি মাসেই রাজ্যের তিন জায়গায় উপনির্বাচন৷ তমলুক, কোচবিহার এবং মন্তেশ্বরে এখন চলছে ভোটের শেষ পর্বের প্রস্তুতি৷ একদিকে যখন উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে উত্তাল রাজ্যে প্রস্তুতি নিচ্ছে দলগুলি, অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় দিল্লির দরবারে নোট বাতিল ইস্যুকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন৷ সাধারণ মানুষের পক্ষ নিয়ে নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন৷ কিন্তু আবারও একই প্রশ্ন মাথায় আসে, ঠিক কতটা ক্ষতি হচ্ছে সাধারণ মানুষের?
আর একটা প্রশ্নও ঘুরেফিরে আসছে, সেটা হল, নারদ-কাণ্ডও এই বছরেরই ঘটনা না?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.