প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ মানুষ নিহত হয়েছিলেন যাঁর হাতে, তাঁকে মহিমান্বিত করার মধ্যে দিয়ে কী প্রমাণ করতে চাইলেন বলিউডের এই ফ্লপ জুটি? সমালোচনায় দীপেন্দু পাল
নাচন-কোদন অনেক হল! ফুটফুটে পুত্রসন্তানের জন্ম দিলেন ৪৬ বছরের সাজিদ আলি খান ও তাঁর ৩৬ বছরের স্ত্রী করিনা কাপুর খান৷ হাসপাতাল থেকে ফলাও করে প্রেস বিবৃতি এল, ছেলের নাম তৈমুর আলি খান পতৌদি৷ সদ্যোজাতের নাম দেখেশুনে অনেকেই ভ্রু কুঁচকেছেন৷ যে দেশে একসময় সন্তানদের নাম কৃষ্ণ, কৃষ্ণা, রাম, লক্ষ্মন, সীতা রাখার রেওয়াজ ছিল, সেখানে এখন সন্তানের নাম বাছতে বসে মনে পড়ল চতুর্দশ শতকের এক অত্যাচারী তুর্কী-মোঙ্গল সেনাধ্যক্ষের নাম? এ প্রশ্ন যে আমার একার নয়, সেটা যাঁরা কিঞ্চিত দেশ-বিদেশের খোঁজখবর রাখেন তাঁরা যাবতীয় সমালোচনা চাক্ষুষ করেছেন৷
এখন প্রশ্ন হল, সেলেব্রিটি হলেই কি এমন কিছু করতেই হবে যাতে খবরে থাকা যায়? আর সেই পাবলিসিটি স্টান্টের গায়ে যদি একটু দেশবিরোধী গন্ধ মাখিয়ে দেওয়া যায় তাহলে তো পোয়াবারো৷ অতি সইফ-ভক্তরাও নিশ্চয় এই দাবি করবেন না যে এরকম কিছু না করলেও সইফ আলি খান সংবাদ শিরোনামে আসতে পারবেন! বা করিনাকে নিয়ে কয়েশো শব্দ খরচ করত একটিও সংবাদমাধ্যম৷ হ্যাঁ, একজন চিত্রতারকার সন্তান প্রসবের খবর কোনও আম ফিল্মি কাগজে জায়গা পেলেও প্রথম পাতায় উঠে আসবে না৷ তার জন্য দেশবিরোধী কোনও বক্তব্য পেশ করতে হবে৷ যেমনটা করতে গিয়ে আমির বা শাহরুখ খান বেশ বেকায়দায় পড়ে গিয়েছিলেন৷ বিজ্ঞাপন থেকে বাদ পড়েছেন সলমন, করণ জোহরকে মুচলেকা দিয়ে নিজের সিনেমা রিলিজ করতে হয়েছে৷ সস্তা জনপ্রিয়তা পাওয়ার সেই রাস্তাতেই হাঁটলেন ‘সইফিনা’ জুটি৷ বলিউডের অন্দরে ঘোরাফেরা করলেও দু’জনেই শেষ কবে ‘হিট’ সিনেমা করেছিলেন, মনে করতে বসলে অনেক পিছিয়ে যেতে হবে৷ তাই দুজনে ঠিক করলেন, সন্তানের নামের উপর বাজি ধরবেন৷
Kareena Kapoor holding baby Taimur is the best thing you’ll see today! pic.twitter.com/v67V041sPA
— Kareena Kapoor Khan (@KareenaOnline) December 21, 2016
কেন দুজন ফ্লপ চিত্রতারকার সন্তানের নাম নিয়ে এতগুলো শব্দ খরচ করলাম এবার সেই কথায় আসি! আজ থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচশো বছর আগে যে মানুষটি গোটা বিশ্ব শাসন করার মিশন শুরু করেছিলেন, যাঁর সম্বল বলতে ছিল কিছু গবাদি পশু আর মধ্য এশিয়ায় কিছু জমিজমা, তাঁর নামকে গৌরবান্বিত না করলেই চলছিল না? অর্ধেক পৃথিবী জয় করতে গিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছেন কত শহর, কত জনপদ। তার সেনারা যে স্থানই জয় করত সেখানেই ধ্বংসযজ্ঞের প্রলয় তুলত। তৈমুরের বাহিনীর হাতে ১ কোটি ৭০ লাখ মানুষ নিহত হয়েছিলেন বলে অসমর্থিত সূত্রের দাবি৷ ওই দাবি সত্যি হলে সেই সময়ের পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার শতকরা পাঁচ ভাগ তৈমুর-বাহিনীর হাতে প্রাণ হারিয়েছিলেন। যার জন্য ইতিহাসে তৈমুরের এক নাম ‘নিষ্ঠুর শাসক’ বা জগতের ত্রাস। একটি সূত্র বলছে, ছোটবেলায় একটি ভেড়া চুরি করতে গিয়ে আহত হন যার ফলে তাঁর একটি পা অকেজো হয়ে যায়। তাই ‘খোঁড়া রাজা’ নামেও ইতিহাসে তিনি কুখ্যাত৷ এখানেই বোধহয় সইফের একটি যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছেন৷ বিশাল ভরদ্বাজ পরিচালিত সিনেমায় সইফ এক খোঁড়ার ভূমিকায় অভিনয় করে প্রশংসা কুড়িয়ে পান৷ তাই কি তৈমুরের প্রতি সইফের এই দুর্বলতা?
U r either illiterate or arrogant @KareenaOnline. By naming yr son #Taimur u hv ensured he’ll be equated to a mass murderer of Indians 4ever https://t.co/j98m5ekk1Q
— Tarek तारिक Fatah (@TarekFatah) December 20, 2016
তবে দেশজুড়ে অনেক ‘বোদ্ধা’ই অবশ্য এই মতামতের প্রতি আপত্তি জানাবেন৷ তাঁরা দাবি করবেন, তৈমুরের আরেক মানে লোহা৷ আচ্ছা, বলুন তো? যাঁদের বড় পর্দায় দেখে একেবারে তৃণমূল স্তরের মানুষ ‘নায়ক’ বলে ভাবেন, তাঁদের হাঁটার ভঙ্গি, চাহনি অনুকরণের চেষ্টা করেন, তাঁদের কি আরেকটু সতর্ক হওয়া উচিত নয়? তাঁরা তো পাবলিক ফিগার৷ মানছি, সইফের সেই জনপ্রিয়তা নেই৷ তিনি ইন্ড্রাস্ট্রির বুড়ো ঘোড়ার তালিকায় পড়বেন আর কয়েকদিনের মধ্যেই৷ কিন্তু তবু তাঁর বিজ্ঞাপন টিভিতে দেখানো হয়, সিনেমা হলে মুক্তি পায় তাঁর স্ত্রীর সিনেমা৷ তাঁরাই যদি এভাবে অত্যাচারী, নৃশংস, স্বৈরাচারী শাসকের নামকে জনপ্রিয় করে চেষ্টা করেন তাহলে সমালোচনা তো করতেই হয়৷ সইফ-করিনার এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ভবিষ্যতে দেশের সনাতনপন্থীরা কী পদক্ষেপ করেন, সেটাই এখন দেখার! তবে এটাও ঠিক, এক নবজাতকের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়াতে এত কড়া কড়া কথা জমা পড়ছে, সেটাও কাম্য নয়৷ সে বেচারার কী দোষ? সে তো জানেই না তার নাম নিয়ে বাবা-মা জুয়ার বাজি ধরে ফেলেছে!
This Indian Muslim has something to say on Saif Ali Khan naming his son #TaimurAliKhan. pic.twitter.com/vVZb3cBNKM
— Sonam Mahajan (@AsYouNotWish) December 20, 2016
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.