Advertisement
Advertisement

Breaking News

Unemployment

দেশে ৩৪ বছরের বেকার ৩৬ শতাংশ, চিন্তা বাড়াচ্ছে একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষা

কর্মহীনতার পরিসংখ্যান দুবছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

Unemployment rate of 15 to 34-year-olds is roughly 36 percent in India। Sangbad Pratidin
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:December 8, 2023 5:04 pm
  • Updated:December 8, 2023 5:04 pm

বেকারত্বর প্রকোপের মধ্যে চিন্তা বাড়াচ্ছে একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষা, যা বলছে কর্মহীনতার পরিসংখ‌্যান দুবছরেরও অধিক সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ। নিঃসন্দেহে কর্মসংস্থান যে কোনও সরকারের জন‌্যই কঠিন চ‌্যালেঞ্জ। একমাত্র সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও তার বাস্তবায়নই কমাতে পারে বেকারত্বর প্রকোপ। লিখলেন মতিউর রহমান

বেকারত্বর আগুনে হাওয়ায় দিন-দিন শুকিয়ে যাচ্ছে তারুণে‌্যর সবুজ, যা অত‌্যন্ত দুর্ভাগে‌্যর বিষয়। বর্তমানে দেশ জুড়ে কর্মহীনতার দীর্ঘ মিছিল। এরই মধে‌্য শাসকের চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে বেকারত্ব নিয়ে অর্থনীতি-বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ‘সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমি’ বা ‘সিএমআইই’-র সাম্প্রতিক পরিসংখ‌্যান।

Advertisement

মুম্বই-ভিত্তিক অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থার এই পরিসংখ‌্যান বলছে, অক্টোবরে ভারতে বেকারত্বর হার ছুঁয়েছে ১০.০৫ শতাংশ। যা দুবছরেরও অধিক সময়ের মধে‌্য সবচেয়ে বেশি। ১ লক্ষ ৭০ হাজারের বেশি পরিবার নিয়ে করা এই সমীক্ষায় স্পষ্ট, এর জন‌্য দায়ী মূলত গ্রামাঞ্চলে কাজের অভাব, যা সার্বিক বেকারত্বর হারকে ১১ শতাংশের কাছে নিয়ে গিয়েছে। শহরে একটু কমলেও তা ৮ শতাংশের বেশি। ‘সিএমআইই’-র দাবি, বৃষ্টির ঘাটতিতে গ্রামাঞ্চলে কৃষিকাজে ধাক্কা বেকারত্ব বৃদ্ধির বড় কারণ। অন‌্যান‌্য জায়গাতেও চাহিদা অনুযায়ী যথেষ্ট কাজ তৈরি হচ্ছে না। অর্থনীতিবিদদের মত, ‘এল নিনো’-র কারণে এ-বছর বর্ষা ভাল হয়নি।

Advertisement

[আরও পড়ুন: টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন: বাতিল মহুয়া মৈত্রর সাংসদ পদ]

ফলে চাষবাস, বিক্রিবাটা কম হওয়ায় গ্রামীণ বেকারত্বের হারও বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের সিংহভাগ মানুষ গ্রামাঞ্চলে বসবাস করে। সেখানে কৃষি উৎপাদন ও বাণিজ‌্য মার খাওয়ায় তার প্রভাব দেশের অর্থনীতির উপর পড়েছে, বেকারত্বের হার ত্বরান্বিত হয়েছে। এদিকে দেশে বিভিন্ন পণ্যের চড়া মূল‌্যবৃদ্ধিও ঘটেছে। তার উপর বেকারত্বের সংকট মূল‌্যবৃদ্ধির আশঙ্কাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

কিছু দিন আগে বেকারত্ব বিষয়ে বিশ্ব ব‌্যাঙ্কের যে-তথ‌্য সামনে আসে, তাতেও দেশের করুণ দৃশ‌্য ফুটে উঠেছে। ২০২২ সালে শুধু তরুণদের বেকারত্বর হার বিশ্বে সর্বোচ্চ ছিল ভারতে। অর্থাৎ, দেশে ২২ শতাংশর বেশি তরুণ কর্মহীন। ভুটান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান এই মাপকাঠিতে ভারতের চেয়ে ভাল অবস্থায় রয়েছে।

[আরও পড়ুন: কেমন দেখতে হবে বুলেট ট্রেনের স্টেশন? ভিডিও প্রকাশ রেলমন্ত্রীর]

বর্তমান বিজেপি সরকারের আমলে দেশে বেকারত্ব ও আর্থিক সংকট ক্রমশ হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। এমনিতেই দেশে এখন বেকারত্ব ৫০ বছরের মধে‌্য সর্বোচ্চ। তার মধে‌্য গত অক্টোবরের হার দুবছরে সর্বোচ্চ। ‘সিএমআইই’-র তথ‌্য অনুযায়ী কেবল অক্টোবর মাসে ১ কোটি তরুণের কর্মজগতে প্রবেশ করার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু সে-পরিমাণে কাজের সুযোগ তৈরি না হওয়ায় কয়েক লক্ষ তরুণ বেকারত্বের খাতায় নাম লিখিয়েছে।

কিছু কাল আগের তথ‌্য ঘঁাটলে দেখা যাচ্ছে, ভারতে ১৫ থেকে ৩৪ বছর বয়সি বেকারের হার কম-বেশি ৩৬ শতাংশ। শিক্ষিতদের মধে‌্য বেকারত্বের হার প্রায় ৪০ শতাংশ! দেশে আর্থিক কর্মকাণ্ড বেড়েছে। আর্থিক বৃদ্ধির পূর্বাভাস ৬ শতাংশর বেশি। ভারতের মাথায় উঠছে বিশ্বের দ্রুততম বৃদ্ধির অর্থনীতি হওয়ার শিরোপা। কিন্তু এসবের প্রভাব পড়ছে না কর্মসংস্থানে। বরং অনিশ্চয়তা ও চড়া বৃদ্ধির আবহে নানা সংস্থা তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রেখেছে। কারণ খরচে রাশ টানা। একাংশ আবার উৎসবের মরশুম পেরিয়ে যাওয়ার পর ফের একদফা কর্মী ছঁাটাইয়ের পরিকল্পনা করছে। গ্রামাঞ্চলেও ১০০ দিনের কাজে আর্থিক বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়ায় তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে।

সামনেই লোকসভা ভোট। এখন দেখার, নির্বাচনের আগে বেকারত্ব ও মূল‌্যবৃদ্ধির এই জোড়া ফলা কেন্দ্রীয় সরকার কীভাবে সামলায়। দেশের অার্থ-সামাজিক যে কোনও বিষয়ের আলোচনা ও বিশ্লেষণে উঠে আসে শাসক শিবিরের ভাবনার অভিমুখ। আমাদের দেশের ৮০ শতাংশর বেশি মানুষ যেহেতু কৃষির উপর নির্ভরশীল এবং একটা বিরাট অংশের মানুষ বেকার কর্মহীন, কেন্দ্রীয় সরকার সেদিকে দৃষ্টি দিয়ে দারিদ্র ও বেকারত্বর প্রকোপ কমাতে পারত। প্রয়োজন ছিল সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করে তার বাস্তবায়ন। কিন্তু সে-বিষয়ে সরকারের ভাবনা ও দৃষ্টিভঙ্গির দৈন‌্য রয়েছে।

একাংশর অভিযোগ, বর্তমান সরকার পুঁজিবাদ তথা কর্পোরেট তোষণ ও উমেদারিতে বিশ্বাসী। তাদের জন‌্য ঢালাও কর ছাড় ও অন‌্যান‌্য সুযোগ-সুবিধার বন্দোবস্ত করতে তারা সদা তৎপর। কৃষকদের ঋণ মকুব, বেকারদের জন‌্য কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অর্থ বরাদ্দে সরকারের যত কার্পণ‌্য– অন‌্য দিকে দেশের ধনকুবেররা কোটি কোটি টাকা কর ফঁাকি দিলে বা কয়েক হাজার কোটি টাকা ব‌্যাঙ্ক থেকে লোন নিয়ে তা পরিশোধ না করে দেশান্তরি হলেও কোনও হেলদোল নেই তাদের। দেশে অর্থনৈতিক বিকাশ ঘটছে না তা নয়, কিন্তু সেই প্রগতির ক্ষীর খাচ্ছে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ। অন‌্যদিকে দরিদ্র পিছিয়ে পড়া মানুষ, বেকারদের পাতে পড়ছে না তার ছিটেফেঁাটাও।

নিঃসন্দেহে, বেকারত্ব ও কর্মসংস্থান যে কোনও সরকারের জন‌্য কঠিন চ‌্যালেঞ্জ। সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও তার বাস্তবায়নই পারে বেকারত্বর প্রকোপ কমাতে। প্রয়োজন, গ্রামীণ স্তরে ১০০ দিনের কাজ-সহ অন‌্যান‌্য কর্মসূচির মাধ‌্যমে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রকে সম্প্রসারিত করা। ব‌্যাঙ্ক, রেল, পোস্ট অফিস-সহ বিভিন্ন বিভাগে যে শূন‌্যপদ রয়েছে, তাতে দ্রুত নিয়োগের ব‌্যবস্থা এবং নতুন শূন‌্যপদ সৃষ্টি করা। বেসরকারি স্তরে শিল্প কারখানায় যাতে নিয়োগের পরিবেশ তৈরি হয়, তা-ও নিশ্চিত করতে হবে। বেকারত্বর কারণে দেশের যৌবন যদি অশক্ত হয়ে পড়ে, এক ভঙ্গুর দুর্বল দেশ দেখে যেতে হবে আমাদের।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ