Advertisement
Advertisement

Breaking News

রাজায়-রাজায়, ট্রাম্পের সফরে আমেরিকা দেখল মজবুত ভারত

গত ২০ বছরে পাঁচ মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফর দেখল দেশ।

Trump visit depicts India's growing importance in the world
Published by: Monishankar Choudhury
  • Posted:February 26, 2020 3:54 pm
  • Updated:February 26, 2020 3:54 pm  

সুতীর্থ চক্রবর্তী: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘এয়ারফোর্স ওয়ান’ পালাম বিমানবন্দর থেকে ওয়াশিংটনের উদ্দেশে ডানা মেলতেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি টুইটে লিখলেন, এটি একটি যুগান্তকারী সফর ছিল। মোদি যথার্থই লিখেছেন। কারণ ৩৬ ঘন্টার সফরে মোদিকে ঘরোয়া ও বিশ্ব রাজনীতিতে যে সম্ভ্রমের জায়গায় ট্রাম্প প্রতিষ্ঠা করে দিয়ে গেলেন তা অভাবনীয়। বারাক ওবামার সঙ্গেও মোদি ব্যক্তিগত সম্পর্কের একটি রসায়ন গড়েছিলেন। কিন্তু তা এই সাফল্যের ভগ্নাংশও এনে দিতে পারেনি।

হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র যেদিন বলেছিলেন ট্রাম্প ভারত সফরে গিয়ে ধর্মীয় স্বাধীনতার কথা বলবেন, সেদিন থেকেই দিল্লির সাউথ ও নর্থ ব্লকের কর্তাদের ঘুম চলে গিয়েছিল। কেউই ভাবতে পারেননি ট্রাম্পের আস্তিনে তাঁদের জন্য এতো বড় সার্টিফিকেট লুকানো আছে। সিএএ ও দিল্লির দাঙ্গার বাজারে পৃথিবীর প্রাচীনতম ও সবচেয়ে শক্তিশালী গণতন্ত্রের শীর্ষনেতা যদি ভারতের ধর্মীয় স্বাধীনতার বাতাবরণের পক্ষে মুক্তকন্ঠে সওয়াল করেন তা হলে তার চেয়ে স্বস্তির ব্যাপার নর্থ ও সাউথ ব্লকের কর্তাদের কাছে আর কী হতে পারে!

Advertisement

২২ হাজার কোটি টাকার প্রতিরক্ষা চুক্তির প্রতিদান হিসাবে কি ট্রাম্পের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে এই সার্টিফিকেট? যেটা এই মূহুর্তে খুব জরুরি ভারতের কাছে। লকহিড মার্টিনের ২৪টি মাল্টি রোল হেলিকপ্টার ও বোয়িংয়ের ছটি অ্যাপাচে হেলিকপ্টার বিক্রি ভোটে কতটা মাইলেজ দিতে পারে ট্রাম্পকে? প্রতিরক্ষায় ২২ হাজার কোটি টাকাটা তেমন কোনও বড় অঙ্ক নয়। তবুও দিনের শেষে ট্রাম্প একজন সফল ব্যবসায়ীও, এই কথাটা মাথায় রাখা দরকার। অঙ্ক যত ছোটই হোক, মার্কিন যুদ্ধ অর্থনীতিকে পুষ্ট করতে তারও যে যথেষ্ট গুরুত্ব আছে সেটা বোঝেন ট্রাম্প। আহমেদাবাদের মোতেরা স্টেডিয়াম থেকে ট্রাম্প যে ভাষণ দিলেন তার নির্যাস কী? একেবারেই সোজাসাপ্টাভাবে ট্রাম্প বিজ্ঞাপন করলেন মার্কিন সমরাস্ত্রের। তার আগে বার্তা দুটি। এক, নাম না করে চিনের আর্থিক প্রগতিকে কটাক্ষ। মানুষকে জোর করে, চাপ দিয়ে কাজ করিয়ে উন্নয়নের নীতিকে আমেরিকা সমর্থন করে না। গণতান্ত্রিক পথে, দেশবাসীর স্বপ্ন নির্মাণের মধ্যে দিয়ে ভারতের অর্থনৈতিক প্রগতিই মার্কিন সম্ভ্রম আদায় করে। দুই, পাকিস্তান আমেরিকার ভাল বন্ধু হলেও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভারতের লড়াইয়ের পাশেই দৃঢ়ভাবে রয়েছে ওয়াশিংটন। অর্থাৎ, চিন ও পাকিস্তান নয়, ভারতই এই মুহূর্তে আমেরিকার প্রকৃত কৌশলগত অংশীদার। আমেরিকা যেমন ভারতের সমরাস্ত্রের বরাত চায়, বিশাল ভোগ্যপণ্যের বাজারের অংশ চায়, তেমন ভারতও সুযোগ নিক পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতির সাহায্য নেওয়ার। ভারত তার রপ্তানি বাড়াক। দ্রুত গতিতে চাঙ্গা হচ্ছে মার্কিন অর্থনীতি। এর লাভ ভারতও নিক। বস্তুত, এমন সোজাসাপ্টা কথা অতীতের কোনও মার্কিন প্রেসিডেন্টই বলেননি।

স্বাধীনতার পর ২০০০ সাল পর্যন্ত ৫৩ বছরের ইতিহাসে মাত্র তিনজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ভারত সফর করেছেন। কিন্তু গত ২০ বছরে ভারত পাঁচ মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফর দেখল। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের সঙ্গে সঙ্গে ঠাণ্ডাযুদ্ধের অবসান বিশ্ব রাজনীতির সমস্ত সমীকরণ বদলে দিয়েছে। এই বদলের প্রতিফলন ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে সুস্পষ্ট। অন্যদিকে আমেরিকার প্রতিস্পর্ধী শক্তি হিসাবে চিনের উত্থান ভারতের সামনে এনে দিয়েছে দরকষাকষির এই অভূতপূর্ব সুযোগ। ফলে কৌশলগত অংশীদার হিসাবে ভারতের গুরুত্ব আমেরিকার কাছে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় চিনের আগ্রাসী নীতিকে প্রতিহত করতে আমেরিকার প্রয়োজন ভারতের সহযোগিতা, আবার ভারতের প্রয়োজন লকহিড মার্টিনের মাল্টি রোল হেলিকপ্টার, যা চিনা সাবমেরিনকে চাপে রাখবে। সংঘাত কাটিয়ে পারস্পরিক স্বার্থগুলি এক বিন্দুতে এলে নতুন পরিস্থিতির জন্ম দেয়।এক্ষেত্রে তাই ঘটছে। ফলে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে ভারতের হাহুতাশ করার কোনও জায়গা নেই। ট্রাম্প বলে গিয়েছেন এই বছরের শেষেই হয়তো ভারত-মার্কিন বাণিজ্য চুক্তি হবে। বস্তুত এটা হতেই হবে। এটা এখন অনিবার্য একটি ঘটনা।

দর কষাকষির ক্ষেত্রে মোদিকে কড়া লোক বলেছেন ট্রাম্প। আমেরিকানরা ভারতীয় বলতে গুজরাটি ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে বোঝেন। ট্রাম্পও তার বাইরে নন। তবে ভারতের কূটনৈতিক সাফল্য এটাই যে, প্রভু-ভৃত্যের জমানা শেষের বার্তা আজ পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিধর দেশকেও দেওয়া গিয়েছে। ভারতের শুল্ক প্রাচীর নিয়ে বার বার ট্রাম্প অনুযোগ করছেন। কিন্তু ভারত অনড়। দুধের বাজার খুলে দেওয়ার জন্য আমেরিকার চাপের মুখে এখনও নত হননি মোদি।

হার্লে ডেভিডসনের শুল্কে কিছুটা ছাড়, আরও বেশি মার্কিন কোম্পানির তেল কেনা, এইসব কিছু আগামি দিনে ঘটতেই পারে। বিনিময়ে মার্কিন জেনারালাইজড সিস্টেম অফ প্রেফারেন্সে ভারতের ফেরত আসার মতো ঘটানা ঘটতে পারে। এগুলো এখন অনিবার্য প্রক্রিয়া হয়ে উঠছে। প্রাথমিক বিচারে বলা যায়, ট্রাম্প সফরের কূটনৈতিক সাফল্য ভারতের কাছে অপরিসীম। ডেমোক্রেটদের দিকে ঝুঁকে থাকা ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিনীদের ভোট না পেলেও ট্রাম্প নভেম্বরের ভোটে সম্ভবত জিতবেন। ভারতকে এখন পুরোমাত্রায় সুযোগ নিতে হবে পরিবর্তিত এই পরিস্থিতির।

[আরও পড়ুন: তালিবানের সঙ্গে শান্তি চুক্তি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে আশ্বস্ত করলেন ট্রাম্প]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement