রিল-নির্মাণের তাড়নায় যদি কারও ক্ষতি হয়, প্রাণ যায়, সেটিকে ‘কোল্যাটারাল ড্যামেজ’ বলে গণ্য করার নমনীয়তায় এবার রাশ টানা দরকার।
সমুদ্রে এসইউভি নামিয়ে কী করে তা টেনে তোলা যায়, এই মর্মে ‘রিল’ (Reel) তৈরি করতে গিয়ে সদ্য িবপাকে পড়েছিল ভারতের দুই যুবক। গাড়ি দু’টি ভেসেই যাচ্ছিল জলস্রোতে। স্থানীয়দের ঐকান্তিক চেষ্টায় শেষরক্ষা হয়। প্রাণেও বঁাচে যুবকরা। সাম্প্রতিকের আর একটি ঘটনায় গাড়ি-সহ একজনের মৃত্যু হয় গার্ডওয়াল ভেঙে খাদে পড়ে। এর জন্যও দায়ী রিল-নির্মাণের অদম্য উচ্চাকাঙ্ক্ষা। যার মৃত্যু হয়, সে গাড়ি চালাতে জানত না। কিন্তু কী করে গাড়িটিকে পিছিয়ে নিয়ে যেতে হবে, তার রিল তুলতে গিয়ে ঘটে যায় মর্মান্তিক পরিণতি। সঙ্গীটি অসহায়ভাবে দেখে, একটি জলজ্যান্ত জীবনের অপমৃত্যু।
রিল দেখার উন্মাদনাকে রিল-নির্মাণের তাড়নার সঙ্গে মিলিয়েই বিচার করতে হবে। রিল যদি না বানানো হয়, তাহলে তো দেখার ঘরেও ঢুঢু। চমকপ্রদ, হইচই ফেলা, ‘ভাইরাল’ হতে পারে এমন কনটেন্টের রিল বানাতে গিয়ে রিল-নির্মাতারা যে পরিমাণ প্রাণের ঝুঁকি নেয়, তা কখনও কখনও বাস্তব বুদ্ধির অগম্য। খবরে তাই প্রায় ঝলকায়: রিল বানাতে মুখর তাজা তরুণ-তরুণীদের মৃত্যুসংবাদ। এ নিয়ে বলা-কওয়া কম হচ্ছে না, তাত্ত্বিক আলোচনার অন্ত নেই, সাবধানবাণী নিয়ত ঠুসে দেওয়া হচ্ছে মগজে, তা-ও নেশার ঘোর কাটছে কই? এই ইউটিউবার প্রজন্ম যেন রিলের জগতে খুঁজে পেয়েছে অস্তিত্বের স্বীকৃতি, প্রতিভার তৃপ্তি।
রাজস্থানে সম্প্রতি একটি আত্মহননের ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে রিল তৈরির বিড়ম্বনা। প্রতাপ রাম, ৬৩ বছরের এক বৃদ্ধ, আত্মহত্যা করেছেন, আর কারণ খুঁজতে গিয়ে উঠে এসেছে যে-যুক্তি, তা অত্যন্ত হতাশাজনক। প্রতাপ রাম এলাকায় ‘ভাঙ্গারওয়ালা বাবা’ বলে পরিচিত ছিলেন। তিনি ঠেলাগাড়িতে বাতিল আবর্জনা ও জঞ্জাল সংগ্রহ ও বিক্রি করে পেট চালাতেন। সাম্প্রতিকে, তঁাকে নিয়ে একজন ভ্লগার রিল তৈরি করেন, সেটি ছড়িয়ে পড়তে প্রতাপ রামের পরিচিতি বাড়ে। কিন্তু অন্য ইউটিউবার ও সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের দৌরাত্ম্যও বাড়ে পাল্লা দিয়ে। অভিযোগ, তরুণ প্রজন্মের কিছু প্রতিনিধি প্রতাপ রামকে প্রচণ্ড উত্ত্যক্ত করতে থাকায়, তিনি আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছিলেন। গাছে উঠে গলায় দড়ি দেন, অভিযোগ, এ ঘটনা নিরালায় ঘটেনি, ঘটেছে জনসমক্ষে।
পুলিশ আইনি পদক্ষেপ করেছে। সমালোচনা চলছে। কিন্তু এর থেকে শেখার মতো মানসিকতা আছে তো তরুণ প্রজন্মের? অল্পে বিখ্যাত হতে ও ব্যাঙ্ক-ব্যালেন্স সমৃদ্ধ করতে যারা সচেষ্ট, তারা কি নীতি-নিয়মের তোয়াক্কা করে? তারা কি ভাবে, শর্টকাট বলে কিছু হয় না? তারা কি বোঝে, অনুমতি ছাড়া অন্যের ভিডিও করা যায় না, বা তা সামাজিক মাধ্যমে আপলোড করাও অনুচিত? এমন নয়, রিল মাত্রই খারাপ। বাতিল জঞ্জাল সংগ্রহ করে সমুদ্র সৈকতকে পরিচ্ছন্ন করে তোলার রিলও পাওয়া যায়। কিন্তু তা হয়তো মনে দাগ কাটে না, বিকোয় কম। উদ্ভট রসের ভিয়েন চড়াতে না-পারলে, জীবন হয়তো-বা বৃথা!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.