Advertisement
Advertisement

Breaking News

PM Modi

ঘৃণাভাষণের ট্র্যাডিশন চলছে

খোদ প্রধানমন্ত্রীর মুখে এই ধরনের ভাষা অনেককেই বিস্মিত করেছে।

The way PM Modi using religious polarization in the election campaign is unimaginable
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:May 14, 2024 1:49 pm
  • Updated:May 14, 2024 1:49 pm  

নির্বাচনী প্রচারে প্রধানমন্ত্রী যেভাবে মেরুকরণকে হাতিয়ার করছেন, তা অভাবনীয়। ভোটে নগ্নভাবে ধর্মের কার্ড খেলার জন্য বম্বে হাই কোর্ট একদা বাল ঠাকরে ও তঁার চিকিৎসক রমেশ প্রভুর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিয়েছিল। কিন্তু তা থেকে শিক্ষা কতটা নিয়েছে রাজনীতির জগৎ? লিখছেন সুতীর্থ চক্রবর্তী

ব‌্যক্তিগত চিকিৎসক রমেশ প্রভুর হয়ে ভোট চাইতে গিয়ে হিন্দু-মুসলমান বিভাজন করার চেষ্টা করেছিলেন প্রয়াত শিবসেনা প্রধান বাল ঠাকরে। এই অভিযোগে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ছয় বছরের জন‌্য ভোটাধিকার হারিয়েছিলেন তিনি। ঠাকরেকে এই ধরনের বিভাজনমূলক প্রচারে বাধা না দেওয়ায় প্রভুও ছয় বছরের জন‌্য ভোটাধিকার এবং ভোটে প্রার্থী হওয়ার অধিকার হারান। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাম্প্রতিক ভোটপ্রচারের উল্লেখ করে ইতিমধে‌্যই বালাসাহেবের পুত্র উদ্ধব ঠাকরে প্রশ্ন তুলেছেন, কেন নরেন্দ্র মোদির (PM Modi) বিরুদ্ধে একইরকম শাস্তির ব‌্যবস্থা করবে না নির্বাচন কমিশন?

Advertisement

১৯৮৭ সালে মহারাষ্ট্রের একটি উপনির্বাচনে ডা. রমেশ প্রভু প্রার্থী হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন বাল ঠাকরের ব‌্যক্তিগত চিকিৎসক। প্রভুর প্রচারে ঠাকরে (Bal Thackeray) নগ্নভাবে হিন্দুত্বের কার্ড খেলেছিলেন। যদিও ওই কেন্দ্রে কোনও মুসলিম প্রার্থী ছিলেন না, তবুও ঠাকরে মন্তব‌্য করেছিলেন, প্রভুর পরাজয় হলে হিন্দুদের বিপদ হবে। ঠাকরের বিভাজনমূলক মন্তবে‌্যর বিরুদ্ধে বম্বে হাই কোর্টে মামলা করেছিলেন কংগ্রেস প্রার্থী প্রভাকর কুন্তে। বম্বে হাই কোর্ট প্রভুর নির্বাচন বাতিল করেছিল এবং ঠাকরের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছিল। মামলা সুপ্রিম কোর্টে গড়ায়। ১৯৯৫ সালে একটি ঐতিহাসিক নির্দেশে সুপ্রিম কোর্ট বম্বে হাই কোর্টের রায়কে বহাল রাখে।

[আরও পড়ুন: ফের অস্বস্তিতে রাজ্যপাল, এবার নৃত্যশিল্পীকে ধর্ষণের অভিযোগে নবান্নে জমা পড়ল তদন্ত রিপোর্ট]

সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের উল্লেখ করে রায়ে বলেছিল, ‘একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতার এই ধরনের ভাষণে আমরা আমাদের উদ্বেগ প্রকাশ না করে থাকতে পারি না। নির্বাচনী প্রচারে একদল লোককে বোঝানোর জন্য ব্যবহৃত ভাষায় সংযমের অভাব এবং তাতে ব্যবহার করা অবমাননাকর শব্দ সত্যিই নিন্দনীয়। এই রায় শুধুমাত্র নির্বাচনী প্রচারে শালীনতা এবং নৈতিকতা বজায় রাখার জন্যই নয়, আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ হিসাবে গড়ে ওঠা মূল্যবোধ রক্ষার জন্য এবং একটি ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্যও অপরিহার্য। বর্তমান মামলায় উল্লিখিত আপত্তিকর ভাষণগুলি আমাদের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে লালিত মূল্যবোধগুলিকে পরিত্যাগ করেছে এবং এসব ভাষণে ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিকে ধ্বংস করার প্রবণতা রয়েছে। আমরা প্রবল আশা নিয়ে বলছি যে আমাদের পর্যবেক্ষণ ভবিষ্যতের নির্বাচনী প্রচারে কিছুটা প্রভাব ফেলবে। সবাই সতর্ক হবে।’ (সূত্র: ‘দ‌্য ওয়‌্যার’)

তিন দশক আগে সুপ্রিম কোর্টের করা এই পর্যবেক্ষণ যে দেশের রাজনৈতিক নেতারা বিস্মৃত হয়েছেন, তা এবারের নির্বাচনী প্রচারে বোঝাই যাচ্ছে। প্রথম দফার ভোটের পর মোদি তঁার প্রচারে যেভাবে মেরুকরণের হাতিয়ার প্রয়োগ করছেন, তা অভাবনীয়। উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া ও হুগলিতে একই দিনে অল্প সময়ের ব‌্যবধানে চারটি সভায় মোদি প্রকাশে‌্য হিন্দু-মুসলমান বিভাজনের রাজনীতি করেছেন বলে অভিযোগ। খোদ প্রধানমন্ত্রীর মুখে এই ধরনের ভাষা অনেককেই বিস্মিত করেছে। কংগ্রেসের ইস্তাহারে কোথাও বলা নেই যে এসসি, এসটি ও ওবিসিদের শিক্ষা এবং সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ তুলে দিয়ে ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণ চালু করা হবে। অথচ, ১৯৯৫ সালে করা কর্নাটক সরকারের একটি সিদ্ধান্তকে তুলে এনে মোদি সভায় বলেছেন, কংগ্রেস ওবিসিদের সংরক্ষণ মুসলিমদের দিয়ে দেবে। এক তৃণমূল বিধায়কের করা একটি বিতর্কিত ভাষণকে সামনে এনে তিনি সভায় এ রাজে‌্যর হিন্দুদের অবস্থা নিয়ে মন্তব‌্য করেছেন। যা স্তম্ভিত করেছে সবাইকে।

[আরও পড়ুন: কাঁথিতে বিজেপির প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপিই! আদি-নব্য কাঁটা চিন্তা বাড়াচ্ছে গেরুয়া শিবিরে]

সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) পর্যবেক্ষণকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন (Election Commission) কেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে এসব বিভাজন সৃষ্টিকারী প্রচারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করছে না, সেই প্রশ্ন খুব জোরালোভাবে উঠতে শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রী দ্বিতীয় দফার ভোটের আগে যখন প্রচারে বলেছিলেন কংগ্রেস বড়লোকদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে মুসলিমদের মধে‌্য বণ্টন করে দেবে, তখন তঁার বিরুদ্ধে ঘৃণাভাষণের অভিযোগ এনে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানায় সিপিএম। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন সামান‌্য ভর্ৎসনার রাস্তাতেও যায়নি। কমিশনের পক্ষ থেকে একটি শোকজের চিঠি পাঠানো হয়েছিল শুধুমাত্র বিজেপি সভাপতির কাছে।

প্রশ্ন উঠেছে, কমিশন যদি এতটাই নিষ্ক্রিয় থাকে, তাহলে আদর্শ আচরণবিধি রাখার প্রয়োজনটা কোথায় রয়েছে? প্রথম দফার ভোটের ১১ দিন পর কেন ভোটদানের হার প্রকাশ করা হল? এই প্রশ্ন তোলায় কমিশন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের বিরুদ্ধে কড়া চিঠি দিয়েছে। কমিশন অভিযোগ তুলেছে, খাড়গে এসব প্রশ্ন তুলে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন নিয়ে সংশয় তৈরি করছেন। অথচ, কমিশন এই জবাব দিতে পারেনি, কেন ভোট শেষ হওয়ার পর ১১ দিন লাগল চূড়ান্ত ভোটের হার জানাতে? কেন্দ্রওয়াড়ি ভোটদানের হারও কমিশন প্রকাশ করতে পারেনি। এ নিয়ে বিরোধীরা প্রশ্ন তুললে, কমিশনের পক্ষ থেকে সাফাই দেওয়া হয়েছে, রাজনৈতিক দলের এজেন্টদের ভোট শেষ হওয়ার পর ১৭সি সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। সেখান থেকেই তো হিসাব পাওয়া সম্ভব কোন বুথে কত ভোট পড়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক দলের দেওয়া হিসাবের উপর কেন সাধারণ মানুষকে নির্ভর করতে হবে? স্বচ্ছ ও অবাধ নির্বাচনের উপর জনগণের আস্থা তৈরির দায়িত্ব তো কমিশনের। ভোট সুষ্ঠুভাবে হচ্ছে না, জনগণের মধে‌্য এই ধরনের বিশ্বাস তৈরি হয়ে গেলে নির্বাচনী ব‌্যবস্থার উপরই নিস্পৃহতা জন্মাবে। যার জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হবে গণতান্ত্রিক ব‌্যবস্থাই।

গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে কমিশনের নিরপেক্ষ অবস্থান জরুরি। এবারের ভোটের গোড়া থেকেই কমিশনের নিরপেক্ষতা রক্ষার প্রশ্নটি সামনে এলেও পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন হয়নি। যেভাবে কমিশনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ঘৃণাভাষণ চলছে, তা অবশ‌্যই দেশের ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক কাঠামোটিকে রক্ষার ক্ষেত্রে বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। সুপ্রিম কোর্টের অাশা ছিল, বাল ঠাকরের মতো নেতার ছ’বছরের জন‌্য ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া সব রাজনৈতিক নেতাকে শিক্ষা দেবে। শীর্ষ অাদালতের সেই অাশা যে দুরাশাই, তা বার বার প্রমাণিত হয়ে চলেছে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement