Advertisement
Advertisement
Bread

হাউমাউপাউ! বাঙালির প্রিয় ব্রেড অ্যান্ড বাটার এখন মহার্ঘ

পাউরুটির দাম একলাফে বাড়ল চার টাকা।

The price of bread increased by Rupees 4
Published by: Kishore Ghosh
  • Posted:January 5, 2025 9:21 pm
  • Updated:January 5, 2025 9:22 pm  

মধ‌্যবিত্তর কপালে ভাঁজ। পাউরুটির দাম একলাফে বাড়ল চার টাকা। বাঙালির প্রিয়
‘ব্রেড অ‌্যান্ড বাটার’ এখন মহার্ঘ। 

মধ‌্যবিত্ত বাঙালি চিরদিন-ই মাথার ঘাম পায়ে ঝরিয়েছে তার প্রত‌্যহের ‘ব্রেড অ‌্যান্ড বাটার’ জোগাড় করতে। সেই কোন আদ্যিকাল থেকে বাঙালির সকাল শুরু হয় টোস্ট, মাখন, চা আর খবরের কাগজ দিয়ে। বাঙালির জীবনযুদ্ধ ‘ব্রেড অ‌্যান্ড বাটারের ডেলি লড়াই’। এই লড়াইয়ে সম্ভবত আরও হিমশিম খাওয়াবে বর্ধিত পাউরুটির দাম। একলাফে তা চার টাকা বাড়ল। কোনও কোনও বাঙালি-মন নিশ্চয়ই এই মুহূর্তে স্মরণ করছে সেই অবিকল্প বাঙালিকে, যিনি অন্তিম রোগশয‌্যায় শুয়ে বাঁকা হাসি নিয়ে ভাবতে পেরেছিলেন বাঙালির ‘ব্রেড অ‌্যান্ড বাটার’-এর দৌড় একদিন হাঁপাতে-হাঁপাতে আছড়ে পড়বে পাউরুটি আর ঝোলাগুড়ের দীনাশ্রয়ে।

Advertisement

পাউরুটি যে বাঙালি জীবনে এবং সংসারে অচিরে অব‌্যর্থ ভূমিকা নিতে চলেছে, তা ঠাকুরবাড়ির বিলাসী পরিসরে প্রথম বুঝেছিলেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘ছেলেবেলা’ বইটিতে বর্ণনা করেছেন তাঁর বারো বছরের বালক মনের চাপা কষ্ট ও ঈর্ষার কথা, যখন তিনি দেখছেন নতুন বউঠান ভোরবেলা জ্যোতিদাদার জন‌্য তৈরি করছেন গরম টোস্ট, যার গায়ে মাখন মাখিয়ে তিনি জ্যোতিদাদাকে কত যত্ন করে দেবেন, চা বা কফির সঙ্গে। বাঙালির সকালের মাখন দেওয়া টোস্টের সঙ্গে যে বাঙালি স্ত্রীর অনুষঙ্গ জড়িয়ে থাকে, বুঝেছিলেন সত‌্যজিৎ রায়। তাই তাঁর ‘ব‌্যাচেলর’ ফেলুদার চায়ের সঙ্গে সবসময় ডালমুট, বা লালমোহনবাবুর পাড়ার গরম শিঙাড়া। কিন্তু কক্ষনও নয় মাখন-মাখানো টোস্ট (ব্যতিক্রম: ‘সোনার কেল্লা’ সিনেমা)।

তবে নিজের টোস্টে কী নিখুঁত বিভঙ্গে এবং মগ্নতার সঙ্গে মাখন মাখান অাগাথা ক্রিস্টির অনন‌্য গোয়েন্দা আরকিউল পয়রো, তা দেখেছি সিনেমার পর্দায়, পড়েছি ক্রিস্টির বর্ণনায়। স্লাইসড ব্রেড-কে বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার মাহাত্ম‌্য এবং স্লাইস করার যন্ত্রটি আবিষ্কার করেন ১৯২৮ সালে অটো ফ্রেডেরিক রোওয়েডার। ১৯৩৩ সালের মধ্যে এই আবিষ্কার বিশ্বের সংসারে নিয়ে আসে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। আগে কিন্তু ‘ব্রেড’ যে ছুরি দিয়ে কেটে খাওয়া হত, তা নয়। শক্ত রুটি ভেঙে বা দাঁত দিয়ে ছিঁড়ে খাওয়া হত।

যিশু খ্রিস্টের ‘লাস্ট সাপার’-এর রাত। তিনি শিষ‌্যদের সঙ্গে খেতে বসেছেন তঁার শেষ খাওয়া। তিনি নিজের হাতে রুটি ভেঙে-ভেঙে শিষ‌্যদের দিয়ে বললেন, এই ব্রেড আমার দেহ। আর এই লাল ওয়াইন আমার রক্ত। আমি পিতার কাছে অঙ্গীকারবদ্ধ আমার রক্ত ঝরাব, ‘আনটু রেমিশন অফ সিনস’, পাপ না শেষ হওয়া পর্যন্ত। ‘ব্রেকিং দ‌্য ব্রেড’ এই যুগজয়ী শব্দবন্ধ তাই চিরকালীন। বেক করা এই শক্ত রুটির জন্ম অবশ‌্য যিশুর জন্মর দশ হাজার বছর আগে। ইজিপ্টে এই রুটি খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তারপর ছড়িয়ে পড়ে ইউরোপে। ভারতে ‘রোটি’ বা ‘চাপাটি’ বলতে যা বুঝি, তা হরপ্পা সভ‌্যতার দান। তবে আমাদের ‘রুটি’, আর ইউরোপের ‘ব্রেড’-এর আকাশপাতাল তফাত। কিন্তু কলকাতার অফিসপাড়ায় সবথেকে জনপ্রিয় স্ট্রিট ফুড সেকা পাউরুটি, গায়ে মাখনস্পর্শ, উপরে ঝুরো চিনির চাদর। বা পাউরুটির সঙ্গে ঘুগনি। তবে স্লাইস্‌ড ব্রেড নয়। লম্বা করে ফালা করা। যা স্বাদে ও স্মৃতিতে অনন্য।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement