Advertisement
Advertisement

রাম মন্দির তো হল, এবার কি তালিকায় কাশী-মথুরা?

'বাবরি তো ঝাকি হ্যায়, মথুরা কাশী বাকি হ্যায়।'

The Ayodhya verdict and the future of these Indian mosques
Published by: Monishankar Choudhury
  • Posted:November 9, 2019 3:03 pm
  • Updated:November 9, 2019 3:30 pm  

মণিশংকর চৌধুরি: ‘বাবরি তো ঝাকি হ্যায়, মথুরা কাশী বাকি হ্যায়।’ নয়ের দশকে করসেবকদের এই হুঙ্কার ভোলার নয়। তারপর কেটে গিয়েছে আড়াই দশকেরও বেশি সময়। যথারীতি ‘করেঙ্গে-মরেঙ্গে’ তর্জনের পর কিছুটা ঝিমিয়ে পড়েছিল হিন্দু-মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের ‘অতি আগ্রাসী’ গোষ্ঠী। ধর্মীয় উন্মাদনার আগুন ধিকিধিকি জ্বললেও, তা লেলিহান শিখায় পরিণত হয়নি। শনিবার বাবরি মামলার রায় বেরনোর পর স্বাভাবিকভাবেই ফের বাড়ছে উত্তেজনা। এবার প্রশ্নের মুখে দেশের অন্যান্য বিখ্যাত মসজিদগুলির ভবিষ্যৎ।

গত মাসেই ‘অল ইন্ডিয়া আখড়া পরিষদ’ সাফ জানিয়েছে, রাম মন্দিরের নির্মাণ শেষ হলে মথুরা ও কাশীর মন্দিরগুলিকে ‘মুক্ত’ করা হবে। সংগঠনটির সভাপতি মহন্ত নরেন্দ্র গিরির কথায়, ‘অযোধ্যার মতোই কাশী ও মথুরাতে হিন্দুদের পবিত্র মন্দির ভেঙে মসজিদ গড়া হয়। হারানো সেই জায়গা ফিরে পেতে হবে। রাম জন্মভূমির মতোই এই দুই জায়গাও হিন্দুদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র। আমরা এর দখল নেবই।’ তাৎপর্যপূর্ণভাবে, মধ্যস্থতা চলাকালীন অযোধ্যার বদলে কাশী ও মথুরা থেকে হিন্দুদের দাবি তুলে নেওয়ার কথা বলেছিল সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড।

Advertisement

উল্লেখ্য, কাশী বা বারাণসীর বিখ্যাত বিশ্বনাথ মন্দিরের গায়েই রয়েছে জ্ঞানবাপী মসজিদ। ঐতিহাসিকদের একাংশের মতে, একাধিকবার বিদেশি হানাদারদের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় মন্দিরটি। ১৬৬৯ সালে মূল মন্দিরটি দখল করে জ্ঞানবাপী মসজিদ তৈরি করেন মোঘল বাদশাহ ঔরঙ্গজেব। এখনও মসজিদের দেওয়ালে হিন্দু দেবদেবীর ছবি দেখা যায়। অষ্টাদশ শতকে হিন্দুদের আবেগকে মান্যতা দিয়ে মসজিদের কাছেই আজকের বিশ্বনাথ মন্দিরটি তৈরি করেন মারাঠা রাজ্য মালওয়ার রানি অহল্যাবাই হোলকর।

এবার বর্তমানে ফিরে আসা যাক। ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কাশী বিশ্বনাথ করিডর নির্মাণের কাজ শুরু করেন। প্রায় ৬০০ কোটি টাকার ওই প্রকল্পে বিশ্বনাথ মন্দির থেকে গঙ্গার ঘাট পর্যন্ত সড়ক সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়। ফলে জ্ঞানবাপী মসজিদের আশপাশের বেশ কিছু বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়। মসজিদের কেয়ারটেকার সাইদ ইয়াসিন ‘The Wire’-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলন যে চারপাশ ফাঁকা হয়ে যাওয়ায় জমায়েতের আশঙ্কা বেড়েছে। বাবরি ধংসের আগেও এভাবেই বিতর্কিত কাঠামোটির চারপাশ খালি করা হয়েছিল।

আসা যাক মথুরায়। আধ্যাত্মিক শহরটিতে রয়েছে বেশ কয়েকটি প্রাচীন মন্দির । হিন্দুদের বিশ্বাস, ওই জায়গাটি  শ্রীকৃষ্ণের জন্মস্থান। সেই মন্দির চত্বরেই রয়েছে শাহি ঈদগাহ মসজিদ। ইতিহাসবিদদের একাংশের দাবি, প্রাচীন কেশবনাথ মন্দির ভেঙেই মসজিদটি তৈরি করেন ঔরঙ্গজেব। ১৯৩৫ সালে ওই মন্দির চত্বরের মালিকানা মথুরার রাজার হাতে সঁপে দেয় এলাহাবাদ হাই কোর্ট। পর্যায়ক্রমে সেই সত্ব বর্তায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদের ঘনিষ্ঠ শ্রী কৃষ্ণভূমি ট্রাস্টের হাতে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই দুই ধর্মের মানুষের মধ্যে তৈরি হয় সংঘাত। অবশেষে ১৯৬৮ সালে এক চুক্তির মাধ্যমে জমির মালিকানা হিন্দুদের হাতে থাকলেও মসজিদটির রক্ষণাবেক্ষণ করার অধিকার পায় মুসলিম পক্ষ।

সব মিলিয়ে, মথুরা ও কাশী নিয়ে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলির আস্ফালন বরাবরই রয়েছে। শুধু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উন্মাদনার আগুন কিছুটা ছাইচাপা পড়েছিল। আজ অযোধ্যা মামলায় শীর্ষ আদালতের রায়দান সেই আগুন উসকে দেবে কি না, তা সময়ই বলবে।

[আরও পড়ুন: সাফ রাম মন্দির তৈরির রাস্তা, বিতর্কিত জমির দখল পেল রাম জন্মভূমি ন্যাস]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement