Advertisement
Advertisement

Breaking News

Electoral Bond

বিশ্বাসে মেলায় বন্ড, তর্কে?

নির্বাচনী বন্ড মূলত ক্ষমতাসীন দলের কোষাগারকে পুষ্ট করেছে কেন?

Supreme Court demanded accountability from SBI regarding election bonds
Published by: Kishore Ghosh
  • Posted:March 18, 2024 2:30 pm
  • Updated:March 18, 2024 2:31 pm  

স্টেট ব্যাঙ্কের পাঠানো দু’টি তালিকার একটিতে জানানো হয়, কোন-কোন সংস্থা কত টাকার বন্ড কিনেছে। অপরটিতে জানানো হয়, কোন-কোন রাজনৈতিক দল কত টাকা পেয়েছে। কিন্তু কোন দলকে সরাসরি কোন সংস্থা কত টাকা দিয়েছে সেটা বোঝা যায়নি। স্টেট ব্যাঙ্কের এহেন ভূমিকায় ক্ষুব্ধ সুপ্রিম কোর্ট। আজ, ১৮ মার্চ, এই বিষয়ে ‘এসবিআই’-কে জবাব দিতে বলা হয়েছে। লিখছেন সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়। 

ভোটের দামামা বেজেছে। কারও অজানা নয়– ভোটে লড়তে রাজনৈতিক দলগুলির বিপুল অর্থের প্রয়োজন হয়। কিন্তু অর্থ সংগ্রহের স্বচ্ছতা নিয়ে কয়েক বছর আগে প্রশ্ন তোলেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। আর, স্বচ্ছভাবে রাজনীতিতে অর্থের প্রবেশ ঘটাতে ‘নির্বাচনী বন্ড’ চালু করতে উদ্যোগী হন৷

Advertisement

সেইমতো নির্বাচনী বন্ড চালু হলে এত দিন যে ব্যবস্থা চলছিল, তাতে স্টেট ব্যাঙ্কের থেকে কোনও ব্যক্তি বা সংস্থা বন্ড কিনে সেটিকে তার পছন্দের কোনও রাজনৈতিক দলের কাছে জমা দিত। গ্রহীতা ওই বন্ড স্টেট ব্যাঙ্কে ভাঙিয়ে অর্থ সংগ্রহ করত। তবে বন্ড যিনি কিনছেন তঁার সম্পর্কে গ্রহীতা এবং আয়কর কর্তৃপক্ষ ছাড়া আর কেউ কিছু জানতে পারত না। ফলে এই বন্ডের সমর্থকদের যুক্তি, এই পদ্ধতিতে ওই ব্যক্তি বা সংস্থা নির্ভয়ে পছন্দের রাজনৈতিক দলকে অর্থ দিতে পারছে এবং যে রাজনৈতিক দলকে দিচ্ছে না তাদের কোনওরকম রোষের মুখে পড়ার আশঙ্কা থাকছে না।

 

[আরও পড়ুন: বিজেপির টিকিটে লড়বেন! লোকসভা নির্বাচনের আগে ইস্তফা তেলেঙ্গানার রাজ্যপালের]

কিন্তু সমালোচকরা উল্টে প্রশ্ন তোলেন– নির্বাচনী বন্ড মূলত ক্ষমতাসীন দলের কোষাগারকে পুষ্ট করেছে কেন? এই বন্ড মূলত কর্পোরেটরা কেন কিনছে– আদর্শগত কারণে না কি সুবিধা পাওয়ার লোভে? বন্ডের নেপথ্যে কোনও সুবিধা দেওয়ার তথ্যটা জানা থাকলে শাসকের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি হত। এই বন্ডের নিয়ম পদ্ধতিতে সেটা সম্ভব হচ্ছিল না। আবার, এই বন্ড মারফত বিরোধী দলকে কিছু দিলে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে সেটা জানা কঠিন নয়, যেহেতু শাসকের অর্থমন্ত্রকের অধীন স্টেট ব্যাঙ্ক এবং আয়কর বিভাগ।

এই বন্ডকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়। অবশেষে ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনী বন্ড ব্যবস্থাকে ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দেয় সুপ্রিম কোর্ট। সেই সঙ্গে প্রধান বিচারপতি ডি. ওয়াই. চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ স্টেট ব্যাঙ্ককে এতদিন পর্যন্ত কত নির্বাচনী বন্ড বিক্রি হয়েছে, কারা কিনেছে এবং কোন রাজনৈতিক দল নির্বাচনী বন্ড থেকে কত টাকা পেয়েছে– সেই সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। স্টেট ব্যাঙ্কের কাছ থেকে সেইমতো তথ্য পেলে নির্বাচন কমিশনকে যাবতীয় তথ্য প্রকাশ করতে বলা হয়েছিল।

একদিকে নির্বাচনী বন্ড থেকে আর্থিকভাবে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পেয়েছে বিজেপি, অন্যদিকে বন্ডের মাধ্যমে টাকা দিয়ে কোন শিল্পগোষ্ঠী কতটা সুবিধা পেয়েছে, সেটাও জানাজানি হলে ভোটের আগে চরম বেকায়দায় পড়তে হবে বিজেপির পাশাপাশি শাসক-বন্ধু কর্পোরেট লবিকে। তথ্য বিশ্লেষণ করলে নির্বাচনী বন্ড নামক এই চঁাদার অর্থের বিনিময়ে টেবিলের তলা দিয়ে কর্পোরেট সংস্থাকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার নেপথ্য কাহিনি উঠে আসতেই পারে। সেক্ষেত্রে, এহেন পরিস্থিতি এড়াতে মোদি সরকার অন্য কোনও পন্থা অবলম্বন করবে বলে মনে করা হচ্ছিল। সুপ্রিম কোর্টের রায়কে খারিজ করতে অডিন্যান্স জারি করতে পারে বলে আশঙ্কা করেছিল বিরোধীদের একাংশ। কারণ, অতীতে কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকা বহু সরকারকে সুপ্রিম কোর্টের রায়কে অকেজো করতে অর্ডিন্যান্স আনতে দেখা গিয়েছে। একইসঙ্গে আশঙ্কা ছিল স্টেট ব্যাঙ্কের ভূমিকা নিয়েও– যতই হোক সংস্থাটির টিকি বাধা আছে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের কাছে। ফলে, মোদি সরকার এসবিআই-কে প্রভাবিত করতে পারে। সেক্ষেত্রে শাসকের ডিফেন্ডার হয়ে স্টেট ব্যাঙ্ক অবতীর্ণ হতে পারে বলে অনেকের মনে হয়েছিল। অর্থাৎ এসবিআই বন্ড-তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনওরকম গড়িমসি করতে পারে কিংবা কোনও অজুহাত দেখাতে পারে। কয়েক দিনের মধ্যে স্টেট ব্যাঙ্কের আচরণে সেটাই প্রতিফলিত হল দেশে।

 

[আরও পড়ুন: ফের সুপ্রিম তোপে SBI, নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য প্রকাশে ডেডলাইন বাঁধল শীর্ষ আদালত]

বন্ড তথ্য জমা দেওয়ার জন্য অতিরিক্ত সময় চেয়ে আর্জি জানায় এসবিআই, যাতে কোনওভাবেই লোকসভা নির্বাচনের আগে কে কোন দলকে কত দিয়েছে, সেই তথ্য জানা না যায়। স্টেট ব্যাঙ্কের আর্জি খারিজ করে সুপ্রিম কোর্ট। দেশের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পঁাচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ স্টেট ব্যাঙ্ককে নির্দেশ দেয়, একদিনের মধ্যে অর্থাৎ মঙ্গলবার ১২ মার্চে নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য নির্বাচন কমিশনে জমা দিতে। ওদিন বিচারপতিদের বেঞ্চ ক্ষুব্ধ হয়ে জানায়, এবার সময়মতো তথ্য জমা না-দিলে অন্যথায় ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করা হবে। তবে সুপ্রিম কোর্টের ধমক খেয়ে পরের দিনেই বন্ড সংক্রান্ত তথ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে তুলে দেয় স্টেট ব্যাঙ্ক।

স্টেট ব্যাঙ্কের কাছ থেকে নির্বাচনী বন্ডের তথ্য পেতেই নির্বাচন কমিশন বন্ডের ক্রেতা এবং প্রাপক দলের লম্বা তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে। সেই তথ্যে উঠে এসেছে বন্ড মারফত মোট ১২,৭৬৯ কোটি টাকা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তহবিলে জমা পড়েছে। মোট চঁাদার প্রায় অর্ধেক ৬০৬১ কোটি টাকা ঝুলিতে নিয়ে তালিকায় শীর্ষে বিজেপি। ব্যবধান অনেকটা থাকলেও ১৬১০ কোটি টাকা পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে তৃণমূল কংগ্রেস। ১৪২২ কোটি টাকা পেয়ে তৃতীয় কংগ্রেস। অন্যদিকে দাতা হিসেবে ১,৩৬৮ কোটি টাকার নির্বাচনী বন্ড কিনে তালিকায় শীর্ষে বিতর্কিত লটারি ব্যবসায়ী মার্টিন সান্তিয়াগোর সংস্থা ‘ফিউচার গেমিং অ্যান্ড হোটেল সার্ভিসেস’। তালিকায় দু’-নম্বরে ৯৬৬ কোটি টাকার নির্বাচনী বন্ড কেনা ‘মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড’।

৪১০ কোটি টাকার বন্ড কেনা ‘কুইক সাপ্লাই চেন প্রাইভেট লিমিটেড’ তৃতীয়। বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, এমন কিছু সংস্থা নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে অনুদান দিয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে সরাসরি তদন্ত করছিল বিভিন্ন কেন্দ্রীয় এজেন্সি। এমনকী, কয়েকটি সংস্থা বন্ডের মাধ্যমে চঁাদা দেওয়ার পর হঠাৎ করেই তাদের বিরুদ্ধে তদন্তের গতি কমে গিয়েছে। আবার দেখা গিয়েছে, এমন কিছু সংস্থা মোটা
অঙ্কের চঁাদা দিয়েছে, যারা বড় বড় সরকারি প্রকল্পের বরাত পেয়েছে।

 

[আরও পড়ুন: ফের সুপ্রিম তোপে SBI, নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য প্রকাশে ডেডলাইন বাঁধল শীর্ষ আদালত]

কিন্তু আবার তথ্য বিশ্লেষণ করতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, তথ্য দিলেও স্টেট ব্যাঙ্ক নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত তথ্য একপ্রকার আড়াল করার চেষ্টা করেছে। এমনভাবে তথ্য দিয়েছে যাতে কোন দল কোন ব্যবসায়িক সংস্থার থেকে কত টাকা পেয়েছে সেটা সরাসরি জানা যাচ্ছে না। পাঠানো দু’টি তালিকার একটিতে জানানো হয়, কোন-কোন সংস্থা কত টাকার বন্ড কিনেছে। অপরটিতে জানানো হয়, কোন-কোন রাজনৈতিক দল কত টাকা পেয়েছে। কিন্তু তথ্যে বন্ডটিকে চিহ্নিত করার নিদিষ্ট নম্বর দেওয়া নেই। ফলে কোন দলকে সরাসরি কোন সংস্থা কত টাকা দিয়েছে সেটা বোঝা যায়নি। স্টেট ব্যাঙ্কের এহেন ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হয়ে নোটিশ জারি করে সুপ্রিম কোর্ট। আদালত স্পষ্ট করে স্টেট ব্যাঙ্ককে জানিয়েছে, এই তথ্য অসম্পূর্ণ এবং বন্ডের নম্বর জানাতেই হবে। ১৮ মার্চ, অর্থাৎ আজ, এই বিষয়ে এসবিআই-কে জবাব দিতে বলা হয়েছে। এভাবে আদালতে বারবার ভর্ৎসনার মুখে পড়ে দেশের প্রাচীন এই সংস্থাটির ভাবমূর্তি যে নষ্ট হচ্ছে, সেটা স্টেট ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ কবে বুঝবে?

(মতামত নিজস্ব)
লেখক সাংবাদিক
[email protected]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement