কুণাল ঘোষ: করোনা (Covid) সংক্রমণের সংখ্যা হু-হু করে বাড়ছে। আমি নিজেও আক্রান্ত। তা সত্ত্বেও খুব স্পষ্টভাবে বলছি, টিভি-কাগজ-সোশ্যাল মিডিয়ার সংখ্যাতত্ত্ব দেখে অকারণ বেশি ভয় পাবেন না। সতর্ক থাকুন। বিধি মানুন। কিন্তু আতঙ্কিত হবেন না। আতঙ্ক ছড়াবেন না।
করোনাকে গত দেড়-দু’ বছর নানাভাবে দেখলাম। সাংবাদিক হিসেবে— খবর, রোগী ও চিকিৎসকের সাক্ষাৎকার, পরিস্থিতির বিশ্লেষণ। রাজনীতিবিদ বা সমাজসেবী হিসাবে— রোগীভর্তি, হাসপাতালে যোগাযোগ, ডাক্তারবাবুদের সঙ্গে কথা, মহল্লা স্যানিটাইজ, সহযোগিতা শিবির ইত্যাদি। আর এখন, গত ক’দিন দেখছি আক্রান্ত রোগী হিসাবে। কথা বলেছি একাধিক চিকিৎসকের সঙ্গে যাঁরা সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে লড়ছেন।
সবটা মিলিয়ে আমার অভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষণ— এবারের করোনাকে এড়িয়ে চলুন। কিন্তু ভয় পাবেন না।
আপনার যদি রিপোর্ট পজিটিভও আসে, চিন্তা কম করুন। সিটি ভ্যালু বা সংক্রমণের মাত্রা অনুযায়ী ডাক্তারবাবু বলে দেবেন কী দরকার। অন্য সমস্যা না থাকলে হাসপাতাল পর্যন্তও গড়াবে না বিষয়টা। বাড়িতে নিয়ম মেনে থাকুন।
এবারের করোনার কামড় কম। উপসর্গ সাধারণ জ্বরজারির। প্রবল শ্বাসকষ্ট, হাসপাতালে বেড ক্রাইসিস, রেমডিসিভিরের (Remdesivir) খোঁজ, আইসিইউ (ICU), পরিচিতজন থেকে দূরে— এসব এবার অতীত। এসব প্রায় নেই। তাহলে বাড়তি ভয় কীসের? ভাইরাসের মতিগতি বুঝতে যে প্রথম দিককার অনিশ্চয়তা, সেটাও কাটছে। এখন ছবিটা অনেক স্পষ্ট। বিধি মানুন। মাস্ক পরুন। স্যানিটাইজার রাখুন। আতঙ্ক ঝেড়ে ফেলুন।
আসলে এক মজাদার বিষয় চলছে। মেট্রো রেলের তিনটে সমান্তরাল লাইনের মতো। একদিকে, ওষুধ ও চিকিৎসা নিয়ে গবেষণা। আজ এটা ভাল তো কাল ওটা খারাপ। আজ এই থেরাপি তো কাল ওটা বাদ। এটাও ঘটনা যে ভাইরাসের চরিত্রবদলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গবেষকরা সঠিক উপসংহারের সময়ও পাচ্ছেন কম। অনেকটাই হয়তো, আশা করি, সম্ভবতর উপর চলছে। অন্যদিকে, সংবাদমাধ্যমে দিনভর তথ্য ও বিশিষ্টদের আলোচনা। কে ঠিক কোন হিডেন অ্যাজেন্ডায় কী সুরে বলছেন, সে সব এখানে না-লেখাই ভাল। আর তৃতীয়, আসল আক্রান্তদের মধ্যে দাঁড়িয়ে চিকিৎসার লড়াই। কেউ মানুন বা না-ই মানুন, তিনটি চলছে মূলত আলাদাভাবে। পারস্পরিক যোগাযোগ যতটা থাকা উচিত, নেই। এর মধ্যে যাঁরা একেবারে আক্রান্তের সঙ্গে থেকে লড়ছেন, তাঁদের কথা হল— এবার ব্যাপ্তি বেশি। কামড় কম। ডাক্তারদের মধ্যেও পজিটিভ বেশি। তাই চাপ। কিন্তু জটিল শারীরিক অবস্থা প্রায় নেই। বরং একাংশ ভয় দেখানোর ভাব করে তথ্য পরিবেশন করছেন বলে একটা বাড়তি গেল গেল রব।
বস্তুত আগে পজিটিভ হলেই যে উদ্বেগ ছিল, এবার তা একেবারেই নেই। ফলে মানুষকে ভীত-সন্ত্রস্ত করে পরিস্থিতিকে অন্যভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা আজ না হলে কাল মানুষ ধরে ফেলবেন। মানুষকে বলা দরকার, ছড়াচ্ছে খুব। কটা দিন সাবধানে থাকুন। বিধি মেনে চলা অভ্যেস করুন। এবার কিন্তু পজিটিভ হলেও ভয় কম। ডাক্তারবাবুর কথা শুনুন। হয়তো হাসপাতালেও যেতে হবে না। পজিটিভ থাকলে বাড়িতে কী করবেন, কোন ওষুধ খাবেন, সব ডাক্তারবাবু বলে দেবেন।
এবার টেস্ট করালেই প্রায় সবার পজিটিভ। ধরা যাক টেস্ট হয়নি যে বিরাট সংখ্যার, তাতেও বহু পজিটিভ। আমরা মাস্ক ও অন্য সাবধানতা রাখি। ডাক্তারবাবু যাঁদের ক্ষেত্রে হাসপাতাল বা বিশেষ নির্দেশ দেবেন, মানি। এখন হাসপাতালও তো দু’-চারদিনে ধাক্কা কমিয়ে বাড়িতে গিয়ে নিভৃতবাসের কথা বলছে। বাকিরা আতঙ্কহীন মনে সাবধানতার সঙ্গে কাটান।
আগেরবার যে ফোনগুলি আসছিল, এবার শুভ ইঙ্গিত, ফোন নেই। শ্বাসকষ্ট, ভর্তি করিয়ে দিন। বেড পাচ্ছি না। রেমডিসিভির কোথায় পাব? এমনকী, মৃত্যুর পরেও- একটিবার কি দেখতে পাব না? না, ভয়ংকর সেই ফোনগুলি এখন নেই। কোথাও একটা সমস্যার চরিত্রবদল চলছে। এটা স্বস্তির।
বরং আমরা সামাজিক কর্তব্যপালনে জোর দিই।
যদি কোনও এলাকায় কোনও বয়স্ক বা অসুস্থ গৃহবন্দি থাকেন, তাঁকে খাবার, ওষুধ ও অন্যান্য সামগ্রী পৌঁছে দিতে হবে। প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, ক্লাব, সমিতি— সবাই আগে এই বিষয়টিতে অগ্রাধিকার দিন। করোনা হলে কামড় কম। কিন্তু যাতে না হয় বা না ছড়ায়, সেই পদক্ষেপে জোর থাকুক।
আবার বলছি, করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দেখে এবার ভয় পাবেন না। এরকম জ্বরজারি আপনি অনেক কাটিয়েছেন। পজিটিভ এলেও আতঙ্ক নয়। ডাক্তারবাবুকে বলুন। পরামর্শ মানুন। সাবধানে থাকুন।
আমার অভিজ্ঞতা, উপসর্গ ভালই ছিল। প্রবল কাঁপুনি দিয়ে হাল্কা জ্বর, গা-ব্যথা, তার পর গলা ব্যথা ও গলা বসে যাওয়া। প্রথমে ম্যালেরিয়া টেস্ট, সেটা নাকচ হওয়ায় কোভিড। সংক্রমণের মাত্রা একটু বেশি, আমার সুগার ও প্রেশার জনিত সমস্যা থাকায় চিকিৎসকের পরামর্শ, চেস্ট পরীক্ষা এবং দু’-তিনদিন ভর্তি থেকে সংক্রমণ একটু কমিয়ে নেওয়া। ওই পর্যন্তই। গন্ধ বা মুখে স্বাদ অটুট আছে। আমার বা কারও কারও উপসর্গ দেখা গিয়েছে। অধিকাংশ তো উপসর্গহীন। কিন্তু উপসর্গ হলেও তা জ্বর বা ঠান্ডা লাগা। তার বেশি জল গড়াচ্ছে না। ফলে সকাল থেকে সংক্রমণের বড় বড় পরিসংখ্যানে প্রভাবিত না হয়ে আসুন ভাবি, এই ঝামেলাটা কমবেশি বহন করেই এগোতে হবে। অর্থনীতি চালু রাখতেই হবে। স্কুল-কলেজ খুলতে হবে। এই মুহূর্তে, বেশি ভয় না। আতঙ্ক না। আসুন বিধি মানি। এবং অদূর ভবিষ্যতে জীবনযাত্রা সচল রাখার মানসিকতা তৈরি করি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.