Advertisement
Advertisement

Breaking News

Srijit Mukherji

সোশাল মিডিয়া ট্রায়াল যেন খাপ পঞ্চায়েত, বলছেন সৃজিত

'সোশাল মিডিয়া এটিকেট কতজন জানি', প্রশ্ন পরিচালকের।

Srijit Mukherji opens up on Social media trial
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:April 25, 2024 9:15 pm
  • Updated:April 25, 2024 9:15 pm

‘ব্যানড’। বোরিয়া মজুমদারের নতুন বইয়ের উদ্বোধনে এসেছিলেন সৃজিত মুখোপাধ্যায় (Srijit Mukherji)। খোলামেলা সাক্ষাৎকারে জানালেন, তঁাকেও নানা সময় ট্রোলিংয়ের মুখে পড়তে হয়েছে, কিন্তু বোরিয়া মজুমদারের অভিজ্ঞতার সঙ্গে তা তুলনীয় নয়। সৃজিত মনে করেন– আড়ালে থেকে, পরিচয় লুকিয়ে যারা এভাবে আক্রমণ করে, তারা আসলে ভীরু। কথায় ভাস্কর লেট

বোরিয়া মজুমদারের (Boria Majumdar) নতুন বইটির শিরোনাম ‘ব্যানড’। আর, উপশিরোনামে লেখা: ‘আ সোশাল মিডিয়া ট্রায়াল’। দু’টি শব্দই এই সময়ের অতি আলোচিত এলিমেন্ট। আপনার কী অভিমত এই বিষয়ে?

Advertisement

‘ব্যান’ করা মানে তো কারও উপর ‘নিষেধাজ্ঞা’ চাপিয়ে দেওয়া। তা যে কতভাবে আমাদের জীবনকে খণ্ডিত করে, তার অজস্র নজির আছে। ‘ব্যান’ করার মধ্যে একটা আধিপত্যকামী ক্ষমতাও কাজ করে। ‘ক্যানসেল কালচার’ বলে একটা শব্দবন্ধ এখন খুবই চালু। যা ওই ‘ব্যান’ করারই সমার্থক। বোরিয়ার ক্ষেত্রে ব্যানিংয়ের ফতোয়া এসেছিল প্রতিষ্ঠানের সূত্রে। একাধিক মিটিং, ডিসকাশন ও ডিসিপ্লিনারি কমিটির সিদ্ধান্তের মাধ্যমে। আমার কাছে কিন্তু বেশি ভয়াবহ বলে মনে হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ার ট্রায়ালকে। মিডিয়া ট্রায়াল ব্যাপারটাই সাংঘাতিক। আর, সোশাল মিডিয়া ট্রায়াল যেন আরও এককাঠি এগিয়ে। খাপ পঞ্চায়েতের সঙ্গে অনায়াসে এর তুলনা করা যায়। খাপ পঞ্চায়েতে তা-ও কিছু মুখকে আমরা নির্দিষ্ট করতে পারব, চিনতে পারব। সোশাল মিডিয়ার ট্রায়ালের যারা হোতা, তারা অনেকেই তো ফেসলেস ফেস। যে অ্যাটিটিউড ও আগ্রাসন নিয়ে তারা খেলা শুরুর আগেই খেলার ফল ঘোষণা করে দেয়, তা খাপ পঞ্চায়েতের কাজকর্মের চেয়ে কোনও অংশে কম যায় না। সঙ্গে চলে সত্যিটাকে চেপে দেওয়ার চেষ্টা। আমার নিজের বেশ কয়েকটা অভিজ্ঞতা হয়েছে এমন সোশ্যাল মিডিয়া ট্রায়ালের। যেমন, আমার একটা অনুষ্ঠানের ক্লিপ এডিট করে ‘ভাইরাল’ করে দেওয়া হয়েছিল, যেখানে আমি ইংরেজিতে কথা বলছি বলে দেখা গিয়েছে। আসল সত্যিটা হল, আমি কিন্তু বাংলাতেও কথা বলেছিলাম। সেটা বেমালুম চেপে যাওয়া হয়। তারপর পুরো ব্যাপারটা আমার বাংলা ভাষার প্রতি প্রেমের দিকে গড়িয়ে যায়। ‘ফেলুদা’ বানানটা ‘এফ’ দিয়ে হবে, না কি ‘পিএইচ’ দিয়ে হবে, তা নিয়েও একটা সোশ্যাল মিডিয়া ট্রায়াল হয়েছিল। তবে বোরিয়ার সঙ্গে যা হয়েছে তার সঙ্গে আমার এসব অভিজ্ঞতা কোনওভাবেই তুলনীয় নয়। বোরিয়া দোষী কি দোষী নয়– সেটুকু জানার বা খতিয়ে দেখার অপেক্ষা না করে কিছু মানুষ তাদের মতামত দিয়ে দিয়েছিল। কুৎসিত ভাষায় আক্রমণ করা হয়েছিল বোরিয়ার পরিবারকে। সেখানে তার মা আছে, স্ত্রী আছে, বাচ্চা একটা মেয়ে আছে। এদের মনের উপর সেসব নোংরা কথাবার্তার কী প্রভাব পড়বে, একবারও কেউ ভেবে দেখেনি। এমনকী, বোরিয়ার বক্তব্য শোনারও দরকার মনে করেনি কেউ। এই যে একপক্ষ ক্রমাগত বলে গেল নিজের মতো করে, আর অন্যপক্ষের মুখ খোলার সুযোগই নেই– এই অসাম্যটা সোশ্যাল মিডিয়া ট্রায়ালের সবচেয়ে খারাপ দিক।

নিরপেক্ষতার জায়গাটা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল!

একদমই তাই। আমি খুব খুশি, বোরিয়া একটা বই লিখে নিজের কথা বলার চেষ্টা করেছে। আত্মপক্ষ সমর্থনের এর চেয়ে ভাল উপায় হয়তো হয় না। পাল্টা গলাবাজি না করে, খারাপ কথা না বলে, কাউকে অপমান না করে বই লিখে নিজেকে প্রকাশ করার মধ্যে একটা উচ্চতা আছে। কিন্তু বই লেখার অবকাশ তো সবসময় হয় না।

সোশাল মিডিয়া (Social Media) এখন আমাদের জীবনের সঙ্গে আঠার মতো জড়িয়ে গিয়েছে। প্রতি মুহূর্তের চলাফেরায় যেন সে আমাদের সঙ্গী। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়া কেমন করে ব্যবহার করতে হয়, সেই বিষয়ে কি আমরা আদৌ সচেতন?

না, নই তো। সোশাল মিডিয়া এটিকেট বলতে যা বোঝায়, তা আমরা কতজন জানি, বা জানলেও মেনে চলি? সোশাল মিডিয়া ব্যবহারের যথাযথ প্রশিক্ষণ সিংহভাগ মানুষের নেই। সুলভে ইন্টারনেট আছে, হাতে ফোন আছে, আর ফোনে আছে কিপ্যাড। বেশ, অমনি আমার কিছু-না-কিছু বলার অধিকার তৈরি হয়ে গেল! কয়েক দিন আগে আমি চন্দ্রিলের একটা বক্তব্য শুনছিলাম। ও যেটা বলেছে একদম ঠিক। আমরা অভ্যাসের এমনই দাস হয়ে গিয়েছি যে, সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে যদি মনে হয়, কাউকে তো ফেসবুকে গালমন্দ করা হল না, কটু কথা বলা হল না, তখন পুরো আগ্রহটা গিয়ে পড়ে ওই গালমন্দ করার দিকেই। গালমন্দের পর্বটা চুকে গেলে যেন শান্তি!

যেরকম ভাষায় ট্রোল করা হয়, তা মাঝে মাঝেই শালীনতার সব সীমা অতিক্রম করে যায়। নোংরা কথাগুলো বাংলায় বললে যতটা খারাপ লাগে, ইংরেজিতে বললে একটু বেশি মধুর মনে হয়– এই যা তফাত। কিন্তু সোশাল মিডিয়ায় ভাষার ব্যবহারের মধ্যে দিয়ে যে অপমান ও অমর্যাদা করা হয় অন্যদের, সেটার সমাধান কি আর ইংরেজির বদলে বাংলা, বা বাংলার বদলে ইংরেজি দিয়ে হয়?

কখনওই হয় না। ট্রোলের ভাষা ভীষণ আগ্রাসী। যারা প্রয়োগ করে সেই ভাষা, তারা যে ভেতরের রাগ, ঘেন্না, জিঘাংসা সব ঢেলে দিচ্ছে বুঝতে অসুবিধা হয় না। তবে, ভাষার প্রয়োগের চেয়েও আমার কাছে জরুরি হল, ভাষার প্রয়োগ ঘটানোর সময়ে তুমি কতখানি ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ ও পরিসরের বাইরে থাকতে পারছ। যেমন ধরো, কারও কোনও কাজ সম্বন্ধে আমি হয়তো বললাম– ওঁর এই কাজটা আমার ড্যাশ ড্যাশ ড্যাশের মতো লেগেছে। এবং অন্য একজন হয়তো বলল, উনি এই কাজটা করেছেন। উনি একজন ড্যাশ ড্যাশ ড্যাশ। দুটোর মধ্যে কিন্তু মাত্রাগত তফাত রয়েছে। কারও কাজের সমালোচনা করা এক জিনিস, আর কাজটাকে বাদ দিয়ে যিনি কাজটা করেছেন, তার সমালোচনা করা অন্য জিনিস। বোরিয়ার বেলায় সোশাল মিডিয়া ট্রায়াল প্রচণ্ড ব্যক্তিগত দিকে চলে গিয়েছিল। ওঁর প্রয়াত বাবাকে টেনে আনা হয়েছিল। আমি মনে করি, এগুলো আসলে হয় একধরনের ভীরুতা থেকে। হয় আমাদের সেই মানুষটার সামনে এসে কথা বলার যুক্তি ও সাহস নেই। নয়তো নেই আমাদের আর্টিকুলেশন।

তার মানে সোশাল মিডিয়া কোথাও গিয়ে একটা ঢাল হয়ে দঁাড়াচ্ছে, যার আড়ালে থেকে যাকে-যা-ইচ্ছা বলা যায়?

কারেক্ট! আমাকে যারা আড়ালে থেকে ট্রোল করে, দেখেছি, সামনে এলেই তারা কেমন ভিজে বিড়ালের মতো হয়ে যায়। তাদের আচার-আচরণ বদলে যায় একদম। তখন মনে হয়, তাদের মধ্যে একধরনের স্প্লিট পার্সোনালিটি আছে হয়তো। নয়তো আড়ালে এত আগ্রাসী, সামনাসামনি এত মৃদু-মন্দ স্বভাব হয় কী করে! আসলে, এই যে আড়ালে থেকে ইন্দ্রজিতের মতো আক্রমণ করা, এর মধ্যে অ্যানোনিমিটি আছে। অজ্ঞাতকুলশীল হয়ে আকথা-কুকথা বললে ধরা পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। আর, সেটাই আড়ালে থেকে ট্রোল যারা করে, তাদের প্রধান শক্তি।

এই বিষয়ে সৃজিত মুখোপাধ্যায় সিনেমা বানাবেন– এমনটা কি আমরা আশা করতে পারি?

এটা সিনেমার ‘বিষয়’ হিসাবে দারুণ। ব্যবহার ও মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তনের অনেকগুলো দিককে তুলে ধরা যাবে। আপনি বললেন, এবার ভাবব, আমি কখনও এটা নিয়ে সিনেমা করব কি না। (হাসি)

‘ব্যানড’ বইটাতে ১২টি অধ্যায় আছে। কোনওটার নাম ‘দ্য ক্রিকেটার অ্যান্ড মি’, কোনওটার নাম ‘সোশাল স্টিগমা’। আপনার কোন অধ্যায়টি সবচেয়ে ভাল লেগেছে?

আলাদা করে কোনও অধ্যায়ের নাম না-করে আমি পুরো বইটার কথাই বলব। সুচিন্তিত ও সুগঠিতভাবে বইটি লেখা হয়েছে। বোরিয়া নিজের দিকটা যেমন জানিয়েছে, তেমনই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখেও দঁাড়াতে চেয়েছে। এই বইটির সাহিত্যগুণ নিশ্চয় আছে। কিন্তু আমি সমগ্র বইটিকে বিচার করতে চাইব সংবাদগুণের দিক থেকে।

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement