Advertisement
Advertisement
Kamala Harris

বুনো ওলের মুখে বাঘা তেঁতুল

বাইডেনের পরিবর্তে কমলা হ্যারিসের নাম উচ্চারিত হতেই সাড়া মার্কিন ভোটরঙ্গ মঞ্চে।

Since Biden has stepped down, is the pressure on Trump increasing
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:July 23, 2024 1:38 pm
  • Updated:July 23, 2024 1:44 pm  

মার্কিন প্রেসিডেন্টের লড়াই থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন জো বাইডেন। ডেমোক্র্যাট প্রার্থী এবার কমলা হ্যারিস। তাঁর নামটি উচ্চারিত হতেই মার্কিন ভোটরঙ্গ মঞ্চে সাড়া পড়ে গিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লড়াই হবে তুল্যমূল্য। কোন কোন কারণে কমলা হ্যারিস এত গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠলেন? লিখছেন সুমন ভট্টাচার্য

প্রথম ‘কৃষ্ণাঙ্গ’ মহিলা, তথা দক্ষিণ-এশীয় বংশোদ্ভূত নারী-প্রতিনিধি হিসাবে কমলা হ্যারিস কি ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হবেন? আর, ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আগামী মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে চ্যালেঞ্জ করবেন? সেই প্রশ্নের উত্তর হয়তো পাওয়া যাবে বৃহস্পতিবার ভোরে, মার্কিন মুলুকে ডেমোক্র্যাটদের চূড়ান্ত সভার পরে। কিন্তু যে-লড়াইটাকে একতরফা ভাবা হচ্ছিল, মনে করা হচ্ছিল অতি দক্ষিণপন্থীদের ‘আইকন’ হিসাবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে ফিরে আসা শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা মাত্র– আচমকা জো বাইডেনের সরে দঁাড়ানো ও বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে এগিয়ে দেওয়ার ফলে আপাতত সব রাজনৈতিক সমীকরণকে গুলিয়ে দিয়েছে।

Advertisement

বয়সের ভারে ন্যুব্জ জো বাইডেন কতখানি ট্রাম্পের আগ্রাসী রাজনীতির মোকাবিলা করতে পারবেন, তা নিয়ে যখন প্রত্যেকে চিন্তিত ছিল, এমনকী ডেমোক্র্যাট শিবিরও মুষড়ে পড়েছিল, সেখানে ৫৯ বছর বয়সি কমলা হ্যারিসের নামটাই ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বয়সের মাপকাঠিতে প্রশ্নচিহ্নের সামনে দঁাড় করিয়ে দিয়েছে। মনে রাখতে হবে, যখন রিপাবলিকান পার্টির ভিতরে ট্রাম্প বনাম নিকি হ্যালি-র লড়াই চলছিল, তখন এই রিপাবলিকান মহিলাও বার বার বলেছিলেন যে, ট্রাম্প আবার প্রেসিডেন্ট হলে, হোয়াইট হাউসে তিনি যখন ঢুকবেন, তখন তঁারও বয়স ৮০ পেরিয়ে যাবে।

[আরও পড়ুন: সেনাপ্রধানের সফর শেষে রক্তাক্ত ভূস্বর্গ, পরপর দুদিন সেনাকে লক্ষ্য করে জঙ্গি হামলা]

শুধু কি বয়সের দিক থেকে ‘অ্যাডভান্টেজ’ পাচ্ছেন কমলা হ্যারিস (Kamala Harris)? মার্কিন মুলুকের শক্তিশালী ‘লবি’ হিসাবে পরিচিত ইহুদিদের কাছে টানতে যদি ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) উৎসাহী হয়ে থাকেন, তাহলে কমলা হ্যারিস তো বিয়েই করেছেন একজন ইহুদিকে। ডগলাস এমফ-কে ইজরায়েলের সংবাদমহল এতটাই তারকা ও মার্কিন ক্ষমতার অলিন্দের প্রভাবশালী বলে মনে করে যে, তঁাকে নিয়ে নিয়মিত ফিচার প্রকাশ করে থাকে। কমলা হ্যারিস যখন ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে ছিলেন, তখন তঁার এই ‘কালার্ড উইমেন আইডেন্টিটি’ অর্থাৎ অশ্বেতাঙ্গ মহিলা হিসাবে আমেরিকার ক্ষমতার শীর্ষ স্তরে পৌঁছে যাওয়ার সম্ভাবনাটি ডেমোক্র্যাটদের দিকে মহিলা ভোটের (বিশেষ করে অশ্বেতাঙ্গ মহিলাদের) ঢল নামিয়ে দিয়েছিল। এবার যদি তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘চ্যালেঞ্জার’ হন, তাহলে মহিলা ভোটাররা যে ডেমোক্র্যাটদের দিকেই ঝুঁকবে– এমন সম্ভাবনা অনেক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞই দেখতে পাচ্ছেন। অশ্বেতাঙ্গ মার্কিন যুব সম্প্রদায়, যঁারা জো বাইডেনের মধ্যে প্রগতিশীলতা বা কোনও আশার আলোই দেখতে পাচ্ছিলেন না, তঁারা হয়তো কমলা হ্যারিসকে ‘নিজেদের লোক’ বলে মনে করতে পারেন।

কমলা হ্যারিসকে এগিয়ে দিয়ে ডেমোক্র্যাট শিবিরও যে চাঙ্গা, সেটা চঁাদা আসার পরিমাণ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। ডেমোক্র্যাট দলের ফান্ড ম্যানেজাররা উৎসাহের সঙ্গে জানিয়েছেন, হ্যারিসের নাম সামনে আসার পরেই একদিনে ৬০ মিলিয়ন ডলার চঁাদা এসেছে। তাহলে ধরে নিতে হয়, অতি দক্ষিণপন্থী ‘আইকন’ ডোনাল্ড ট্রাম্পের (বিশেষত, পেনসিলভেনিয়ায় ট্রাম্পের উপর গুলিচালনার ঘটনার পরেই তঁার ‘অ্যাপ্রুভাল রেটিং’ যেভাবে চড়চড়িয়ে বাড়ছিল) বিপরীতে প্রার্থী হিসেবে জো বাইডেন টিকতে পারবেন না, বরং খড়কুটোর মতো উড়ে যাবেন– এই আশঙ্কা তীব্রভাবেই ছিল।

[আরও পড়ুন: জম্মুতে ঘাঁটি গেড়েছে অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত ৪০ পাক জঙ্গি! সতর্ক সেনা

ডোনাল্ড ট্রাম্প বনাম কমলা হ্যারিসের লড়াই হলে তাতে অন্য পরিপ্রেক্ষিতও থাকবে। ইতিমধ্যেই ডেমোক্র্যাটরা মনে করিয়ে দিয়েছেন– কমলা হ্যারিসের প্রাথমিক পরিচিতি তৈরি হয়েছিল একজন সফল আইনজীবী, ও কড়া সরকারি কৌশলী রূপে। ‘কালার্ড উইমেন’ কমলা হ্যারিস আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার কথা বলেন, আর বিপরীতে ট্রাম্প আইনের চোখে ‘অপরাধী’। অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের লড়াই এমন দু’জনের মধ্যে হবে, যেখানে একজন আইনের হাতকে শক্তিশালী করার কথা বলছেন, মহিলাদের আইনি অধিকারের জন্য সর্বস্ব বাজি রাখতে পারেন, এবং এর বিপরীতে থাকছেন একজন ধনকুবের– যিনি নিজের যৌন সংসর্গের ‘কিস্‌সা’ গোপন রাখতে বেআইনি পথ বেছে নেন। রক্ষণশীল, মধ্যবিত্ত মার্কিন মূল্যবোধের ভোটারদের কাছেও কমলা হ্যারিসের অন্যরকম আবেদন থাকতে পারে, যঁাকে সদা বিতর্কিত ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে অতিক্রম করে যাওয়া সহজ হবে না। এসব বিভিন্ন উপাদানের কারণে (‘এক্স ফ্যাক্টর’) আচমকা কমলা হ্যারিসের নাম এসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দঁাড়িপাল্লাকে তুল্যমূল্যের জায়গায় নিয়ে গিয়েছে।

বিল ক্লিনটনের সহধর্মিণী হয়ে হোয়াইট হাউসে থাকার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও, সর্বোপরি আমেরিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সমর্থন নিয়েও, হিলারি ক্লিনটন কিন্তু পারেননি আমেরিকার শাসনতন্ত্রে পৌরুষের আধিপত্যের কাচের দেওয়াল ভাঙতে। ২০১৬-তে তঁাকে হারিয়ে দিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। অভিযোগ– তাতে সহায়তা করেছিল রুশ হ্যাকাররা। এখনও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থারা তদন্ত করছে ২০১৬-র প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে কতটা প্রভাবিত করেছিলেন রুশ একনায়ক ভ্লাদিমির পুতিন। এবারের ভোটে কমলা হ্যারিস কি পারবেন হিলারি না-পারাকে বাস্তবায়িত করতে?

তঁার ভরসা হতে পারে ‘এক্স ফ্যাক্টরস’। তিনি ইহুদি ভোট টানতে সক্ষম, দক্ষিণ-এশীয়দেরও আশা-ভরসার কেন্দ্র। গত কয়েক মাসে প্যালেস্তাইন ইস্যুতে বিভিন্ন আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র আন্দোলনে উত্তাল হয়েছে। প্রগতিশীল এবং বামপন্থীরা জো বাইডেনকে নিশানা করেছিলেন। এই ন্যারেটিভ থেকে বেরিয়ে কমলা হ্যারিস অন্য ধরনের রাজনীতির কথাও বলতে পারেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেকে ‘অভিবাসন বিরোধী’, তথা ‘শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদের প্রতিভূ’ রূপে প্রতিষ্ঠা করতে চান। এর প্রতিস্পর্ধায় ‘কালার্ড উইমেন’-ই তো যোগ্য জবাব! ঠিক যেন বুনো ওলের প্রতিষেধক বাঘা তেঁতুল!
(মতামত নিজস্ব)

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement