Advertisement
Advertisement

পাকিস্তানি শিল্পীদের তাড়ানোই উরি হামলার প্রত্যুত্তর?

আমার দেশে আমি পারছি না, ওদিকে ওরা করে-কম্মে খাবে, তাও কি মেনে নেওয়া যায়?

Shall Pakistani Artists Leave India? Would The Problem Then Be Solved?
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:September 26, 2016 4:09 pm
  • Updated:September 26, 2016 4:11 pm  

চার দিকে একটা রব উঠেছে, পাকিস্তানিরা ভারত ছাড়ো! তা, পাকিস্তানি এবং সব মুসলমানরা এদেশ ছেড়ে চলে গেলেই কি দুই দেশের সব সমস্যা মিটে যাবে? না কি কূটনীতির সমস্যা থেকে বিনোদন জগতকে দূরে রাখাই বাঞ্ছনীয়? কিন্তু, সাধারণ মানুষ কী ভাবে বাঁচে? উত্তর খুঁজলেন অনির্বাণ চৌধুরী

নাহ্! আর পারা যাচ্ছে না! সনাতন ভারতীয় সংস্কৃতি বলে বটে, ক্ষমাতেই লুকিয়ে আছে সব সমস্যার সমাধান, কিন্তু মার খেয়ে আর কত দিন কাটবে? পাকিস্তানিরা কাঁটাতার পেরিয়ে এসে গুলি চালাবে, এদেশে শহিদের সংখ্যা বাড়াবে আর আমরা মুখ বুজে থাকব? তাও কি হয়?
তবে আমরা তো ভাল, তাই ওদের মতো রাতের আঁধারে গিয়ে জনাকতককে মেরে আসব না! আমরা সহনশীল, তাই কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদীদেরও কিছু বলব না! স্রেফ ঢিট করে রাখব দিনের পর দিন কারফিউ জারি করে! আর সব ব্যাটাকে ছেড়ে ধরব বেঁড়ে ব্যাটাদের! এদেশে যে পাকিস্তানিরা আছে, বড়পর্দায়-ছোটপর্দায় মুখ দেখাচ্ছে, তাদের ঝেঁটিয়ে বিদায় করার ধুয়ো তুলব! আমার দেশে আমি পারছি না, ওদিকে ওরা করে-কম্মে খাবে, তাও কি মেনে নেওয়া যায়?
না কি মেনে নিয়েছি কোনও দিনও? আমি না হোক, আমার পূর্বপুরুষরা তো গলা ফাটিয়েছেন সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই! রাজনীতির কেকের বড় টুকরোটা মুসলমানদের পাতে গেলে কি আর ছেড়ে কথা বলেছি তখন? সেই ১৯৪৭-এর সময় থেকেই তো বলে আসছি, এ দেশে নয়, ও দেশে যাও! তফাত চাই, তফাত! হিন্দুতে আর মুসলমানে তফাত! জলে আর পানিতে তফাত! চিতার আগুনে আর গোরের মাটিতে তফাত! এত কিছু তফাত নিয়ে কি আর সাম্যাবস্থা আসে? আসে না যখন, তখন ভাগাভাগিই ভাল! আর, তার পরেও যদি এদেশের মাটি আঁকড়ে পড়ে থাকো?
তবে মাথা নিচু করে থাকো! হ্যাঁ, ঘরে আগুন লাগলে তোমাদের হাঁক দেব বইকি! জল ঢালার জন্য! না এলে? তখন গলা ফাটিয়ে বলব, এদেশে যখন আছো, তখন এতটুকু কৃতজ্ঞতা বোধও কি থাকবে না?
মানে, পুরোটাই গরজের সম্বন্ধ! তা, গরজ কি আর তোমাদেরও নেই? ওটা না থাকলে আর তোমরাই বা আছো কেন এদেশে? ওদেশে গিয়ে তো থাকলেই পারো!
হ্যাঁ, আমার দেশে আমি সব হিন্দুকেও সমান মর্যাদা দিই না বটে, তবে তাতে কী বা এসে যায়? গরিবরা আবার মানুষ না কি? আমি গাড়ি করে ঘুরছি, ভাল জামা পরছি, টাকা-পয়সার চিন্তা নেই বলে বিনোদনে মন দিচ্ছি, জীবন তো একেই বলে! যাদের এসবের কিছুই নেই, তাদের নিয়ে আর ভাবনা-চিন্তাটাই বা কী! যেমন আছে, থাকবে! দিনের দিন খেতে পাবে বা পাবে না! আর না খেতে পেয়ে রাস্তায় চোখ উলটে পড়ে থাকলেই বা কী! স্রেফ নাকে-মুখে রুমাল চাপা দিয়ে পাশ কাটিয়ে যাব! রুমালে ঢালা দামি সুগন্ধির ওইটাই তো গুণ! সব ভুলিয়ে মনটাকে কেমন ফুরফুরে করে দেয়!
এসবের মাঝে সত্যি বলছি, গোলাগুলি বড় উপদ্রব! নিজের পয়সা খরচ করে ছবি দেখতে যাব বলে ঠিক করেছি, এখন সেটায় পাকিস্তানি তারা আছে বলে যদি বন্ধ হয়ে যায়, তবে তো মুশকিল! তার চেয়ে ওরা না থাকলেই ল্যাঠা চুকে যায়! তাই মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা যখন বলছে ওদের দরজা দেখাও, সঙ্গে সঙ্গে সায় দিচ্ছি! গেলে যাবে, আমাদের কি আর সুঅভিনেতার অভাব আছে? মানছি, শিল্পীদের আসা-যাওয়া বন্ধ হয়ে গেলে দুই দেশেরই ক্ষতি! ওদেশের গুলাম আলি এদেশে আসতে না পারলে আমরা চমৎকার একটা সময় পাব না! কিন্তু তাতে কী! দরকারে এক-দু’ পাত্তর গলায় ঢেলে সিডি চালিয়েই গান শুনব! কিন্তু, সহজে মুখ খুলব না!
তাতে ভয়ের কারণ আছে বলে? আসলে আমারও তো বাবা আছে, যার গায়ের জোর বেশি, সে যদি এখন এসে ক্যাঁক করে টুঁটি চিপে ধরে? তখন আমিই বা যাব কোথায়? পড়ে পড়ে মার খাব? লাগবে না?
লাগবে তো বটেই! শরীরেও লাগবে, মনটাও বড় কম বেইজ্জত হবে না! ফলে শক্তের ভক্ত আর নরমের যম হয়েই থাকব! ভ্যালেন্টাইন্স দিনটায় ছেলে-মেয়েকে সাবধান করে দেব- খবরদার না! পার্কে বা রেস্তোরাঁয় হাত ধরে বসার কথা ভুলে যাও! মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনার হাত থেকে খুউব সাবধান! যা করার, ঘরের ভিতরেই করো! ওদের ঘাঁটিও না! এভাবেই স্রেফ চোখ বুজে কাটিয়ে দেব জীবনটা! ওটা একটাই, তাই ছিনিমিনি খেলে লাভ নেই!
আর যদি পাকিস্তানিরা তারারা শেষ পর্যন্ত এদেশে থেকেই যায়? স্পাই অপবাদ দিয়ে দু-চারটে লেখার অযোগ্য খারাপ কথা যে বলব না, তা কিন্তু নয়! তবে পাকিস্তানি মেয়ের খোলা শরীর তারিয়ে তারিয়ে দেখতেও ছাড়ব না! অবশ্য, পাকিস্তানি পুরুষগুলোকে দেখে আমাদের মেয়েরা যদি আদেখলাপনা করে, সেটা একটু হজম করে নেব ঠারে-ঠোরে! কখনই যদি উদার না হই, চলবে কী করে! শেষ পর্যন্ত তো আর ভারতের মেয়ের সঙ্গে পাকিস্তানের ছেলের বা পাকিস্তানের ছেলের সঙ্গে ভারতের মেয়ের বিয়ে দেব না! কী বলছেন? সানিয়া মির্জার বিয়ের কথা? আহা, ওটা তো দুই মুসলমান পরিবারের ব্যাপার! তাছাড়া সেলিব্রিটি, ফলে কিছু বলার প্রশ্নই উঠছে না!
মোদ্দা কথা, যেমন আছি, তেমনই থাকব! আমার কী! যুদ্ধ বাধলেও আমার খাওয়া-পরার তো আর অভাব হবে না! ফলে, বিনোদন জগৎ তো বটেই, অন্য সমস্যা নিয়েও তেমন মাথা ঘামাব না! ওটার জন্য রাজনীতিকরা তো আছেনই! তাঁরা যা ঠিক করবেন, তাই হবে! দরকার মতো তাঁদেরও একটু-আধটু সমালোচনা করতেই পারি, তা বলে সব ভুলে এক হয়ে যাব? তা আবার হয় না কি?
কাশ্মীর? ওটার বেশির ভাগটাই তো আমাদের দখলে! যেটুকু বাইরের কবজায় রয়েছে, একদিন নিশ্চয়ই আমাদের হবে! এখনই ওটা নিয়ে ভেবে লাভ কী! পুজো আসছে, পুজো! তার পাঁচ দিনের সাজগোজ নিয়ে মাথা ঘামানোটাই কি এখন উচিত নয়?
না হয় কাশ্মীরে যাব না! ঘুরতে যাওয়ার কি আর আমাদের জায়গার অভাব আছে?

Advertisement

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement