সর্বজয়া রায়: পাঁচবারের চেষ্টার শেষে অবশেষে সোমবার সন্ধ্যায় আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠক মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এবং সেই বৈঠকের পর জানা গিয়েছে, আন্দোলনকারীদের দাবি মেনে সিপি বিনীত গোয়েল, ডিসি নর্থ অভিষেক গুপ্তা, স্বাস্থ্য অধিকর্তা দেবাশিস হালদার ও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা কৌস্তুভ নায়েককে বর্তমান পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের ওই বৈঠকের শেষে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন, কেন সব মেনে নিলেন মমতা? আন্দোলনকারীদেরও দাবি, তাঁদের আন্দোলনই মুখ্যমন্ত্রীকে এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে।
কিন্তু সত্যিই কি তাই? মমতার এমন পদক্ষেপ তথা ‘পিছিয়ে আসা’ কি বাধ্যত নতিস্বীকার? নাকি এর পিছনে রয়েছে সুচিন্তিত পা ফেলা? নেত্রী হিসেবে নিজের অবস্থানকেই আরও শক্তিশালী করলেন তিনি। এগিয়ে যাওয়ার জন্যই এই পিছু হটা। এমনটাই মনে করছেন বহু বিশেষজ্ঞ। আর এপ্রসঙ্গে তাঁরা তুলে ধরছেন একটি বিখ্যাত বইয়ের কথা। ‘দ্য পজ প্রিন্সিপাল’। বিখ্যাত বিশ্বচিন্তক ও বহু বেস্ট সেলারের লেখক কেভিন ক্যাশম্যানের এই বইয়ে বিস্তারিত আলোচিত হয়েছিল এমন ধরনের রাজনৈতিক পদক্ষেপের ভিতরে থাকা গহীন তত্ত্ব। সহজ ভাবে বললে সামনে এগিয়ে যেতে পিছু হটাই হল ‘দ্য পজ প্রিন্সিপাল’। একটি তির যখন ছোড়া হয়, তখনও কিন্তু ধনুকের ছিলায় লাগানো দড়িকে টেনে পিছিয়ে আনা হয়। তবেই প্রবল শক্তিতে তিরটি সামনে এগতে পারে। সেক্ষেত্রে এই পিছিয়ে আনা আসলে শক্তি সঞ্চয়েরই উদ্দেশ্যে। ভেবে দেখলে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রেও এই ‘পজ’ তথা থমকানো ও প্রয়োজনমতো পিছু হটাও আগামিদিনে তীব্রগতিতে সামনে এগনোরই পথকে নির্মাণ করে।
ক্যাশম্যান লিখছেন, ‘আজকের এই দ্রুতগতির, এখনই-সব-চাই সংস্কৃতিতে না থমকানোর সম্ভাব্য ক্ষতি মহামারীর আকার ধারণ করেছে। যদি আজকের নেতারা পিছিয়ে না আসতে জানেন… তাহলে আমরা আর্থিক, ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত ভাবেই পতনের সম্মুখীন হব।’ আসলে এই গুরুত্বপূর্ণ বইয়ে আগাগোড়াই তুলে ধরা হয়েছে একটি সরল সত্যিকে। আর সেই সত্যি হল দ্রুত চিন্তা হয়তো ম্যানেজমেন্ট স্তরে খুব জরুরি, কিন্তু নেতৃত্বের ক্ষেত্রে ধীর ও সুস্থির চিন্তাভাবনাই আসল কথা। কেননা তার মাধ্যমেই কৌশলগত, উদ্ভাবনী রূপান্তর সম্ভব। ক্যাশম্যানের বিশ্বাস, প্রত্যেক নেতা এমন এক যাত্রার শরিক যেখানে কখন, কোথায় থমকানো কিংবা পিছিয়ে আসাও জরুরি তা জানল চলবেই না। আজকের বহুমাত্রিক, জটিল বিশ্বে নেতৃত্বের এটাই আসল চাবিকাঠি। মূলত তিনটি ক্ষেত্রে সময়মতো পিছিয়ে আসার পক্ষে জোরাল সওয়াল করেছেন ক্যাশম্যান। সেগুলি হল- ব্যক্তিগত নেতৃত্ব, অন্যদের উন্নয়ন এবং উদ্ভাবনের সংস্কৃতির বিকাশ।
ক্যাশম্যানের এই বিশ্ববন্দিত তত্ত্বের আলোয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সোমবাসরীয় বৈঠক ও বৈঠক পরবর্তী সিদ্ধান্তকে দেখতে চাইছেন বিশেষজ্ঞরা। এবং একেও সুচিন্তিত পদক্ষেপ বলেই মনে করছেন তাঁরা। গতকাল রাতে মমতাকে বলতে শোনা গিয়েছে, “আমরা ওদের দাবি বেশি মেনেছি। কারণ ওরা ছোট। তোমাদের কাছে আমাদের দাবি থাকবে তোমরা হয়তো ফিরে গিয়ে আলোচনা করবে। করো।” আপাতভাবে এই মন্তব্যকে ‘পিছু হটা’ বলে চিহ্নিত করতে চাইতেই পারে বিরোধীরা। কিন্তু প্রায় ৩৮ দিনের জট ছাড়াতে এমনই সিদ্ধান্ত জরুরি ছিল বলে নিশ্চিত ওয়াকিবহাল মহল। যা নেত্রী মমতার ভাবমূর্তিকেই আরও শক্তিশালী করল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.