সাহেবের গালে থাপ্পড়, কখনও বা সোজাসুজি নাশকতা– সাহসে ভর করেই এগিয়েছেন তাঁরা, পিছপা হননি কখনও। জেল খাটা অথবা সেনেট হলে ঢুকে গুলি চালানো, তাঁরা নিজেরাই তৈরি করেছিলেন নিজেদের দিন, আলাদা করে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’-এর প্রয়োজন হয়নি তাঁদের। কলমে অশোককুমার মুখোপাধ্যায়
তাঁদের জন্য কোনও ৮ মার্চ, ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’, ছিল না। তাঁরা নিজের দিন নিজেরাই ঠিক করে নিয়েছিলেন। যেমন, অবিভক্ত বাংলার প্রথম ‘স্টেট প্রিজনার’ ননীবালা দেবী। অথবা, ভারতের অস্ত্র-আইনে দণ্ডিত প্রথম নারী দুকড়িবালা দেবী। সূর্যকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় আর গিরিবালার কন্যা ননীবালার বিবাহ ১১ বছরের মাথায়, ১৬ বছরে তিনি বিধবা। তাতে কি শ্রমজীবী সমবায় পরিচালনার কাজে যুক্ত, বাঘাযতীনের স্নেহভাজন অমরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মেজপিসিমা ননীবালা বিষাদগ্রস্ত মুখে বাকি জীবন কাটিয়েছিলেন? মোটেই না, তাঁর অদম্য সাহস। ১৯১৫ সালের অগাস্ট মাসে শ্রমজীবী সমবায় তল্লাশির সময় অমরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় পলাতক, গ্রেপ্তার হয়ে গেলেন রামচন্দ্র মজুমদার। ৩ নম্বর রেগুলেশনের স্টেট প্রিজনার।
দেখা গেল, একটি মাউজার পিস্তল যে কোথায় রাখা আছে, তার সন্ধান উনি কাউকে বলে যেতে পারেননি। কী করা? রামচন্দ্রের স্ত্রী সেজে ননীবালা সোজা চলে গেলেন জেলে, নিয়ে এলেন পিস্তলের খবর। তবে কি ওই অগাস্ট মাসের দিনটিই ননীবালার দিন? আবার সেই দিনটি সেপ্টেম্বর মাসেও হতে পারে, যখন গৃহকর্ত্রী ননীবালা, রিষড়ার একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে, সেখানে আশ্রয় দিচ্ছেন যাদুগোপাল মুখোপাধ্যায়, অমরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, অতুল ঘোষ, ভোলানাথ চট্টোপাধ্যায়, নলিনীকান্ত কর, বিনয়ভূষণ দত্ত, বিজয় চক্রবর্তী প্রমুখ পলাতক বিপ্লবীদের। তার পর চন্দননগরেও গৃহকর্ত্রীর ভূমিকা। ব্রিটিশ পুলিশ এসে পড়ার আগেই, পালান। পালাতে পালাতে পেশোয়ার। কলেরায় শয্যাশায়ী না থাকলে, পেশোয়ার থেকেও ওঁকে গ্রেপ্তার করা সহজ ছিল না।
পেশোয়ার থেকে ধরা পড়ার পর ননীবালাকে পাঠানো হল কাশীর জেলে। জেরা করে কোনও খবর আদায় করতে না পেরে, ব্রিটিশ পুলিশ দুই জমাদারণিকে (ওয়ার্ড্রেস) আদেশ করল তাঁর শরীরের অভ্যন্তরে লঙ্কাবাটা প্রবেশ করাতে। কাজটি করেই আবার জেরা শুরু হল। ওই বর্বরতার পরেও, তীব্র দহনজ্বালা সহ্য করে, ননীবলা জানালেন– তিনি কিছু বলবেন না। কাশী থেকে কলকাতায় আনা হল ননীবালাকে। ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের স্পেশাল সুপারিনটেন্ডেন্ট গোল্ডি তাঁকে জেরা করত। কিন্তু কিছুই উদ্ধার করতে পারেনি। উপরন্তু অনশন করতে শুরু করে দিলেন। গোল্ডি জিজ্ঞেস করলেন, কী করলে তিনি খাবেন? উত্তর এল, ‘রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের স্ত্রী-র পদতলে রেখে দিন, তাহলে।’‘ঠিক আছে দরখাস্ত লিখুন।’লিখলেন ননীবালা। দরখাস্ত হাতে নিয়ে ছিঁড়ে বাজে কাগজের টুকরিতে ফেলে দিলেন সাহেব। কী স্পর্ধা! তৎক্ষণাৎ লাফিয়ে উঠে সাহেবের গালে থাপ্পড় কষিয়ে দিলেন বীরাঙ্গনা!ওই দিনটিই ননীবালার দিন!
বীরভূমের ঝাউপাড়া গ্রামের বাসিন্দা নীলমণি চট্টোপাধ্যায়-কমলকামিনী দেবীর কন্যা, ফণিভূষণ চক্রবর্তীর স্ত্রী, বিপ্লবীদের ‘মাসিমা’ দুকড়িবালাকে ননীবালা পেয়েছিলেন জেলে। ওঁর সশ্রম কারাদণ্ড; তৃতীয় শ্রেণির বন্দি হিসাবে ওঁকে প্রত্যেক দিন ডাল ভাঙতে হত আধমণ। সিউড়ির দুকড়িবালার জেল হয়েছে বাড়িতে সাতটা মাউজার পিস্তল আর হাজারের উপর কার্তুজ লুকিয়ে রাখার অপরাধে। কে দিয়েছিল রাখতে? বোনপো নিবারণ ঘটক। শুধু নিজের ঘরে লুকিয়ে রাখা নয়, পুলিশ যেদিন তাঁর বাড়িতে তল্লাশি করতে ঢুকছে, নির্বিকার দুকড়িবালা অস্ত্রবোঝাই বাক্সটি নিয়ে পাঁচিল ডিঙিয়ে পাশের বাড়ি রেখে এলেন। ধরা পড়তেন না, যদি না এক মদ্যপ টাকার লোভে অস্ত্র-রাখা ঘরটিকে চিহ্নিত করে দিত। ওই পাঁচিল ডিঙানোর দিনটিই দুকড়িবালার।
সুনীতি চৌধুরী আর শান্তি ঘোষ নামের দুই চোদ্দো-পনেরো বছরের স্কুল-বালিকা ঠিক করে নিয়েছিল, তাদের দিন হবে ১৪ ডিসেম্বর। মুখোমুখি সাক্ষাতের অনুরোধ পাঠিয়ে দুই বালিকা গায়ের চাদরের তলায় আগ্নেয়াস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে। সুনীতির তর্জনী পিস্তলের ঘোড়া ছুঁতে পারে না বলে সে মনে মনে ঠিকই করে নিয়েছিল মধ্যমা দিয়ে তর্জনীর কাজ সারবে। সাহেব ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট সামনে আসতেই দু-একটি সাজানো কাজের কথা বলেই, সুনীতি ঘোড়া টিপল। গুলিবিদ্ধ সাহেব টলতে-টলতে অন্য ঘরে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়লেন। সঙ্গী অফিসারটি ওদের দিকে তেড়ে আসতেই শান্তির পিস্তল থেকে বুলেট ছুটল। পালিয়ে বাঁচলেন, সাদা হাতির কালা মাহুত! অর্থাৎ, ১৪ ডিসেম্বর দিনটি ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট চার্লস জিওফ্রে বাকল্যান্ডের দিনও বটে। মৃত্যুদিন।
১৯৩২ সালের ১৮ জানুয়ারি থেকে বাকল্যান্ড-হত্যার মামলা শুরু হলে আলিপুর সেন্ট্রাল জেল থেকে বালিকা দুজনকে নিয়ে আসা হল বিচারালয়ে। ওরা হাসি-তামাশা-তেজস্বিতায় ভরিয়ে রাখল কোর্ট। পরদিন দেখা গেল, ওদের বসার জন্য কোনও চেয়ার দেওয়া হয়নি। দুই বালিকা বিচারপতির দিকে পিছন করে দাঁড়িয়ে রইল! তার মানে ১৯ জানুয়ারিও শান্তি-সুনীতির দিন! আর এক স্কুল-বালিকা, কাছাকাছি বয়সের হলেও, অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী হয়েও, শান্তি-সুনীতির যে গুরুস্থানীয়, যার স্বপ্নকথা শুনে এই দুই বালিকার অগ্নিপথ বেছে নেওয়া– রজনীকান্ত ব্রহ্ম এবং বঙ্গবাসীর কন্যা সেই প্রফুল্লনলিনী কারাগারে নিক্ষিপ্ত হওয়ার সময়েই বুঝে গিয়েছিল, কবে তার দিন।
অতএব, কে সাহেবদের পরোয়া করে! কুমিল্লা শহরে অন্তরিন করে রাখার সময়েই পেটে তীব্র ব্যথা। তার বাবার হাজার অনুরোধেও কলকাতায় বড় ডাক্তার দেখানোর সুযোগ দিল না কর্তৃপক্ষ। পড়াশোনা করা মেয়ে প্রফুল্লনলিনী হয়তো অনুভব করতে পেরেছিল, কী হতে চলেছে। যখন বোঝা গেল অ্যাপেন্ডিসাইটিস এবং গম্ভীর অবস্থা, অস্ত্রোপচারের সময় নেই। ১৯৩৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মারা গেলেন কিশোরী। ২২ ফেব্রুয়ারি প্রফুল্লনলিনীর দিন।
কৃষ্ণনগরের বীণা দাস ঠিক করেছিলেন, তাঁর তারিখ ১৯৩২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি। ওই দিন সেনেট হলে ডিগ্রি দেওয়ার কনভোকেশন, গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসন অভিভাষণ পাঠ শুরু করেছেন। বীণা গুলি চালালেন। লক্ষ্যভ্রষ্ট হল। আবারও চালালেন, আবারও তা-ই। কিন্তু অন্য লক্ষ্যটি পূরণ হল– ব্রিটিশ ঘেরাটোপের মধ্যে ঢুকে শত্রুকে খতম করার অদম্য সাহসের প্রদর্শনী দেখিয়ে দিলেন! ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের পরে অনন্ত সিং, গণেশ ঘোষ, লোকনাথ বল, আনন্দ গুপ্ত, জীবন ঘোষাল– একে একে চলে আসেন ভূপেন্দ্রকুমার দত্তর কাছে কলকাতায়।
তাঁরই নির্দেশে, ১৯৩০ সালের মে মাসে রসিকলাল দাস সুহাসিনী গাঙ্গুলিকে পাঠালেন চন্দননগরে, আশ্রয়দাত্রী রূপে। শশধর আচার্য নামে আরেকজন বিপ্লবীকে সেখানে পাঠানো হল আশ্রয়দাতা হিসাবে। এমনভাবে থাকতে হবে সুহাসিনীকে, যেন তিনি শশধরবাবুর স্ত্রী! এই কাজের জন্য যে মানসিক শক্তি, সংস্কারমুক্ত মন লাগে, পূর্ণমাত্রায় ছিল সুহাসিনীর। দিনে চন্দননগরের স্কুলে শিক্ষয়িত্রীর কাজ করেন সুহাসিনী, রাত্রে আশ্রয়ে থাকা সব কজনের জন্য রান্না। ৯০ বছরেরও আগে যে সংস্কারমুক্ত মনের পরিচয় দিয়েছেন সুহাসিনী দেবী, তাঁর জন্য কোনও নারী দিবসের প্রয়োজন নেই! মে মাসের যে কোনও দিনই তাঁর দিন।
রানিগঞ্জের কয়লা খাদান অঞ্চলে যে ঘোড়সওয়ার নারীর পরিচয় ‘হান্টারওয়ালি’,যে মালিকদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিজে ঘোড়া ছুটিয়ে চাবুক হাতে তাদের কাছে পৌঁছে যায়, ‘প্রবর্তক সংঘ’-র সুরেন্দ্রনাথ মুখার্জি আর ইন্দুমতীর কন্যা সেই বিমলপ্রতিভা দেবীর বিবাহ হয়েছিল বিখ্যাত অভিজাত জে. সি. বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবারের ডাক্তার চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। ব্যানার্জি পরিবারের নিয়মকানুন খুব কড়া। কিন্তু যার রক্তে লেগেছে সর্বনাশের নেশা, সে কী করে আর সংসারের গণ্ডির মধ্যে থাকতে পারে? পরিবারের অজ্ঞাতে ১৯২১ সালে ‘দেশবন্ধু’ চিত্তরঞ্জন দাশের বোন ঊর্মিলা দেবী প্রতিষ্ঠিত ‘নারী কর্মমন্দির’ নামে এক মহিলা সংঘে যোগ দেন বিমলপ্রতিভা। তাঁর কাজ দেখে এতটাই খুশি হয়েছিলেন বিপ্লবী ভগৎ সিং যে, বিমলপ্রতিভাকে ডেকে পাঠিয়ে তাঁর নিজস্ব প্রতিষ্ঠান ‘নওজোয়ান সভা’-য় যোগ দিতে আহ্বান জানালেন। ১৯২৭ সালে, বিমলপ্রতিভা দেবী ওই প্রতিষ্ঠানের বাংলার সভানেত্রী। এরপর লবণ আন্দোলনের সময় গড়ে তুললেন, ‘নারী সত্যাগ্রহ সমিতি’। তিনি যুগ্ম-সম্পাদক।
বরাবর অহিংসপন্থীদের সঙ্গে কাজ করলেও পরবর্তীতে তিনি গোপনে সশস্ত্র বিপ্লবীদের সাহায্য করতে শুরু করলেন। ১৯৩১ সালের ২ অক্টোবর, রাত্রি সাড়ে আটটা নাগাদ চারজন সশস্ত্র বিপ্লবী মানিকতলার ২৪/৪, ক্যানাল ওয়েস্ট রোডের এক গদি থেকে ৩০০ টাকা লুঠ করে নেয়। পালিয়ে যাওয়ার সময়, দুর্ভাগ্যবশত, তাদের গাড়ির সঙ্গে অন্য একটি গাড়ির ধাক্কা লাগে। চারজন– নোয়াখালি, নাগপাড়া ও সিএমসি কলেজের জানে আলি হোস্টেলের নরহরি সেন, ত্রিপুরা সাতগাঁও, ব্রাহ্মণবেড়িয়ার কালিপদ রায়, কলকাতার পি২৩৮, লেক রোডের ধীরেন চৌধুরী এবং পি২৩৮, লেক রোডের বিমলপ্রতিভা গ্রেপ্তার হন। তাঁদের গাড়ি থেকে ছটি ছোট রিভলভার, একটি দেশি রিভলভার, ছুরি, উনিশটি রিভলভারের কার্তুজ উদ্ধার করা হয়। অভিযুক্ত নরহরি সেনের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে নোয়াখালির প্রফুল্লচন্দ্র ভট্টকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
কেউ কেউ মনে করেন যে, এই ডাকাতিতে বিমলপ্রতিভা দেবী তাঁদের পারিবারিক গাড়িতে পাঁচজন সহ-যোদ্ধাকে সঙ্গে নিয়েছিলেন এবং ডাকাতির পরে তাঁদের সঙ্গে চলে যান। ডাকাতি করা এবং বেআইনিভাবে অস্ত্রশস্ত্র রাখার জন্য বিমলপ্রতিভা দেবী ও অন্য চারজনকে অভিযুক্ত করে পুলিশ স্পেশাল ট্রাইবুনালে বিচারের জন্য চালান দেয়। বিচারে ধীরেন চৌধুরী ও কালিপদ রায় ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে এবং নরহরি সেন ৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। বিমলপ্রতিভা দেবী এবং প্রফুল্ল ভট্ট মুক্তি পান।
দণ্ডিত ব্যক্তিরা হাই কোর্টে আপিল করলেও, ১৯৩২ সালের ২৮ এপ্রিল বাতিল হয়। মামলায় বিমলপ্রতিভাকে মুক্তি দেওয়া হলেও, সেইদিনই তাঁকে আবার গ্রেপ্তার করে ‘ডেটিনিউ’ হিসাবে ৬ বছর সিউড়ি, হিজলি এবং প্রেসিডেন্সি জেলে রাখা হয়। কলকাতা পুলিশ স্পেশাল ব্রাঞ্চের তদানীন্তন ডেপুটি কমিশনারের মতে বিমলপ্রতিভা দেবী ওই রাজনৈতিক ডাকাতির ‘মস্তিষ্ক’। অতএব ২ অক্টোবর যতটা গান্ধীর, ততটাই বিমলপ্রতিভা দিবস! জেলমুক্তির পর, ১৯৪০ সাল থেকে শুরু হল এক নতুন অধ্যায়। তিনি সমাজতন্ত্রের দিকে আকৃষ্ট হলেন। কংগ্রেস দল সম্পর্কে তিনি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন, আবার ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির কাজকর্মেও তাঁর আস্থা ছিল না। এই সময় ‘রেভোলিউশনারি কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া’-র নেতা সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে যোগাযোগ হলে, তাঁর সাধারণ মানুষের মতো জীবনযাপন এবং উন্নত ভাবধারার কথা শুনে প্রভাবিত হন।
এর পর, দলের নির্দেশে তিনি সোজা চলে যান রানিগঞ্জের খনি অঞ্চলে। অনুভব করলেন যে, শ্রমিক বস্তির কাছাকাছি না থাকলে কাজের অসুবিধা হবে। সেই কারণে বার্নপুরের সুর্যনগরের দক্ষিণে, দামোদর নদের ধারে কয়েক বিঘা জমি কিনে একতলা বাড়ি বানিয়ে সেখানেই থাকতে শুরু করলেন। আশপাশে, বেশ কয়েকটি কয়লাখনি, ‘ইসকো’ কারখানার আর ‘ঢাকেশ্বরী কটন মিল’-এর শ্রমিকদের বস্তি। বিমলপ্রতিভা দেবীর লক্ষ্য ছিল এই শ্রমিকদের শোষণের হাত থেকে মুক্ত করা। শ্রমিক আন্দোলনে সঙ্গে পেয়েছিলেন সন্তোষকুমারী দেবী, ড. প্রভাবতী দাশগুপ্ত, কমলাদেবী চট্টোপাধ্যায়, সুহাসিনী জাম্বেকর প্রমুখ সহ-যোদ্ধাদের।
সরলা দেবী চৌধুরাণী, বাসন্তী দেবী, নেলী সেনগুপ্ত, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, কল্পনা যোশীর কথা আমাদের অনেকেরই কম-বেশি জানা। যেহেতু বিখ্যাতদের সবসময়ে ব্যতিক্রম হিসাবে ভাবতে ভালোবাসি আমরা, ওই বহুচর্চিত নাম-সকল সরিয়ে রেখে তুলনায় কিঞ্চিৎ অনামী নারীদের কথা তুলে যে উচ্চারণ অনিবার্য, তা হল– এঁদের, অর্থাৎ এই বীরাঙ্গনাদের, কোনও নারী দিবসের প্রয়োজন হয়নি। এঁদের অনেকেই লড়াইয়ের সঙ্গে সংসারও সামলেছেন কৃতিত্বের সঙ্গে, সংসারে থেকেও ধ্বনিত করেছেন, নিজেদের স্বতন্ত্র কণ্ঠস্বর। বিমলপ্রতিভা-বীণা-সুনীতি, শান্তি-কমলা তো আবার বইও লিখেছেন, অতীব আটপৌরে স্বাদু গদ্যে! কত যে আয়ুধ ছিল তাঁদের হাতে! কী জাদু ছিল তাঁদের যে, এত বিবিধ রকমের কাজ সামলাতে পারলেন? স্বাধীনতার যুদ্ধে এই অধুনা-বিস্মৃত বাঙালি নারীদের থেকে এখন কিছুই কী শেখার নেই আমাদের? এই আন্তর্জাতিক নারী দিবসে?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.