Advertisement
Advertisement

Breaking News

ধর্ষণ, পণপ্রথা এবং কিছু নারী

দু-চারটি ফেসবুক পোস্ট, কিছু জ্বালাময়ী স্টেটাস – তারপর?

Rape, dowry and some women!
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:December 24, 2016 4:22 pm
  • Updated:December 24, 2016 4:22 pm  

যেই নাড়ি ছিঁড়ে সমাজের উৎপত্তি৷ সমাজ কি পেরেছে তাঁকে স্বাধীনতা দিতে? সমাজ কি পেরেছে তাঁকে ধর্ষণ, শ্লীলতাহানি, অ্যাসিড, পণ থেকে মুক্তি দিতে? উত্তর খুঁজলেন সুপর্ণা মজুমদার৷

উনিশবারের ম্যাট্রিক ফেল৷ এদিকে মুখের গঠন পেঁচার মতন৷ তার উপরে আবার পিলের জ্বর ও পান্ডু রোগে কাহিল শরীর৷ তবে গঙ্গারাম পাত্রটি অতি ‘সৎ’৷ বংশ উচ্চ যে! বাকি এমনিতে পুরুষ-মানুষের মধ্যে একটুআধটু দোষ তো থাকেই৷ ও মেয়ে-মানুষের একটু মানিয়ে গুছিয়ে নিতে হয়৷ এটাই তো নারীর ধর্ম, কর্তব্য ইত্যাদি ইত্যাদি৷

Advertisement

একটা সমাজ আর তার স্রোতে বয়ে আসা কিছু নিয়মের জঞ্জাল৷ এই জঞ্জালেই আটকে নারী৷ তাই আজও মেয়েদের জন্মের আগেও মরতে হয়, আর জন্ম হলেও মরতে হয়৷ কেন? মেয়ে সন্তান তো বোঝা৷ এবার বংশ নামক সলতেটিতে বাতি কে দেবে শুনি? দন্ডায়মান পুরষত্বের কদর জান! সেই তো ‘লিগ্যাসি’ নামক লেজটি বহন করবে৷ এই মেয়ে আবার বড় হবে৷ তার আবার বিয়ে দিতে হবে৷ হ্যাঁপা কম নাকি বাব্বা!

এই হ্যাঁপার চক্করেই প্রাণ গেল মিতা, কাজল, মানসী, পায়েলদের৷ কিছু চেনা, কিছু অচেনা নাম৷ কেউ ঠাঁই পেয়েছিলেন খবরের কাগজের প্রথমের পাতায়, কেউ গুরুত্ব অনুযায়ী ভিতরের পাতায়৷ ব্যস, ওইটুকুই৷ আর কেউ মনে রাখবে না যাদবপুরের ডানপিটে মেয়েটার কথা, কিংবা সোদপুরের শান্তশিষ্ট মেয়েটাকে৷ ভুলতে পারাটা যে মানুষের অভ্যাসজাত গুণ৷ দু-চারটি ফেসবুক পোস্ট, কিছু জ্বালাময়ী স্টেটাস – তারপর? তার আর পর নেই৷ নেই কোনও ঠিকানা৷ জীবন আবার চলতে শুরু করবে স্বাভাবিক ছন্দে৷

ভারতবর্ষে নারীর স্থান সর্বদাই উপরে৷ দেবী হিসেবে পূজা পায় নারীরা৷ কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, কচ্ছ থেকে পশ্চিমবঙ্গ – সব জায়গাতেই রয়েছে কোনও না কোনও দেবীর বিশেষ কৃপা৷ কিন্তু এই দেবীই যখন মর্ত্যে জন্ম নেন সে তো তুচ্ছ মেয়েমানুষ৷ ভোগের বস্তু মাত্র৷ যার জিন্স পড়া অপরাধ, যার রাত অন্ধকারে বাইরে বের হওয়া অপরাধ, যার ইচ্ছে থাকা অপরাধ, যার অনিচ্ছে থাকাও অপরাধ৷ যাঁকে সময়মত বিয়ে নামক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে দিতে হয়৷ এর জন্য প্রয়োজন ‘সৎ’ পাত্র৷

এই ‘সৎ’ পাত্রের তালিকাটিও বেশ লম্বা৷ এই বাজারে মোটা মাইনে কিংবা সরকারি চাকুরে পাত্র পাওয়া কি সোজা কথা? পেলেই গছিয়ে দাও৷ বাকি জীবনটা নাকি সুখে কাটবে মেয়েটার৷ কিন্তু কাটল কি? কাজলও তো একরাশ স্বপ্ন নিয়ে গিয়েছিল শ্বশুরবাড়িতে৷ আশাভঙ্গ হয়ে বাড়িতে ফোন করে জানিয়েওছিল মেয়েটা৷ কেউ শুনেছিলেন কী? তা আবার শোনার কী আছে? স্বামী-স্ত্রী তো একটু-আধটু ঝগড়া হয়েই থাকে৷ কাজলের তো না হয় দেখেশুনে বিয়ে হয়েছিল৷ মিতা মণ্ডল? যাদবপুরের মেধাবি ছাত্রী দারিদ্রকে হারিয়ে করেছিল পড়াশোনা৷ ভালবেসে সাধারণ এক ছেলেকে বিয়ে করেছিল৷ চোখে শুধু ছিল ভালবাসার স্বপ্ন৷ সেই স্বপ্নও তো শেষ হয়ে গেল৷ কিছুদিনের উত্তেজনা, আলোচনা-পর্যালোচনা, হা-হুতাশে স্থির জলে তরঙ্গ উঠেছিল বটে, আবার সব শান্ত৷

গোটা দেশে অপরাধের হার যেখানে ৮.২ শতাংশ, পশ্চিমবঙ্গে সেই হার ২১.৬ শতাংশ। তাও সবাই চুপ। কিন্তু আর কতদিন? চুপ। দোষই বা কার? চুপ। বাবা-মায়ের উচ্চাকাঙ্খার? মেয়ে সন্তানের বেড়ে চলা বয়সের? তার শারীরিক বৈশিষ্ট্যের? না কিছু মানুষের লোভের? নাকি সমাজের গতে বাঁধা কিছু লিখিত-অলিখিত নিয়মের? সবাই চুপ। এই নিঃশব্দের কোনও প্রতিধ্বনি নেই। সীতার সময়ও ছিল না, মিতা-কাজলের সময়েও নেই।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement