Advertisement
Advertisement

Breaking News

Ram Mandir

রামমন্দির আবেগের জনক, তবু মোদিময় অযোধ্যায় ‘অদৃশ্য’ আডবাণীরা

শনিবার মোদির ভাষণে একবারও উচ্চারিত হল না তাঁদের নাম।

Ram Mandir: Absence of Lal Krishna Advani in Modi driven Ram Mandir event। Sangbad Pratidin
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:December 30, 2023 5:26 pm
  • Updated:December 30, 2023 6:22 pm  

মোদি জমানার নতুন ভারতের ভিত্তিভূমি তৈরি হয়েছিল আডবাণীদের হাতে। মোদি তাঁদের পিছনে ফেলে অনেক, অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছেন। তাঁকে রোখার মতো কেউ নেই। বিজেপিতে (BJP) মোদি-শাহ জমানায় আডবাণীরা সুদূর অতীত, প্রাক্তন। লিখছেন অরূপ কর

অযোধ্যা আজ রামময়। হওয়ারই কথা। পাশাপাশি মোদিময়ও বটে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বিপুল আয়োজনে ২২ জানুয়ারি রামলালার মূর্তি স্থাপিত হবে। আর এর মাধ্যমে অযোধ্যার বিতর্কিত জমিতে রামমন্দির প্রতিষ্ঠার ঘোষিত গেরুয়া এজেন্ডা শেষ পর্যন্ত যাঁর হাত ধরে বাস্তবায়িত হতে চলেছে, তিনি ‘হিন্দু হৃদয় সম্রাট’ নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদি। ২০২৪-এর ভোটে আরও একবার জিতে টানা তৃতীয়বার যাঁর প্রধানমন্ত্রী হওয়া একপ্রকার নিশ্চিত বলা যায়। মন্দিরের (Ram Mandir) সূচনাকে উপলক্ষ্য করে অযোধ্যার জন্য বিপুল অর্থের প্রকল্প ঘোষণার পাশাপাশি স্টেশন, নতুন বিমানবন্দর সবই উদ্বোধন করলেন তিনি। মন্দিরকে ঘিরে উন্নয়নের জোয়ার। দাবি করলেন, অযোধ্যা পুরো বদলে যাবে, ক্ষমতায় ১০ বছর প্রায় পূর্ণ করার পর! প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে এল ‘মোদি কি গ্যারান্টি’ প্রসঙ্গও। মোদি যা বলেন, প্রতিশ্রুতি দেন, তার জন্য নিজের জীবন পর্যন্ত বাজি রাখেন, এটাই ‘মোদি কি গ্যারান্টি’র শক্তি, ব্যাখ্যাও করলেন।

Advertisement

কিন্তু মোদির (PM Modi) গোটা ভাষণে দু-একজনের নাম কি একবারও উচ্চারিত হল? হওয়ারও ছিল না সম্ভবত। লালকৃষ্ণ আডবাণী (Lal Krishna Advani), মুরলীমনোহর জোশী। দুজনেই এককালে বিজেপি সভাপতি হয়েছেন। বিজেপিতে (BJP) মোদি-শাহ জমানায় ওঁরা অতীত, প্রাক্তন। এতটাই সুদূর অতীত যে রামমন্দির ট্রাস্ট পর্যন্ত দুজনকে পরিবারের ‘প্রবীণ’ বলে সম্মান জানিয়েও অনুরোধ করেছে, বয়স হয়েছে, ২২ জানুয়ারি মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রী রাম জন্মভূমি মন্দিরের উদ্বোধনে তাঁরা কষ্ট করে যেন না আসেন। আডবাণী এখন ৯৬, জোশী ৯০ ছুঁইছুঁই। স্বাভাবিক যুক্তিতে ভাবলে ওঁদের আসতে বারণ করায় অন্যায় কিছু নেই।

[আরও পড়ুন: রাইমার সিনেমা দেখতে বলছেন মোদি, লোকসভা ভোটের আগে কেন এই টোটকা প্রধানমন্ত্রীর?]

কিন্তু গভীরে ভেবে দেখলে কি মনে হবে না, মোদির সর্বময় অধিনায়কত্বের গায়ে মার্গ দর্শকমণ্ডলীতে পাঠিয়ে দেওয়া আডবাণীদের ছায়াটুকুও যাতে না পড়ে, সেজন্যই এই উদ্যোগ? প্রশ্নটা আরও দানা বাঁধে যখন আসরে নামে সঙ্ঘ পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ শরিক বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। তারা সরাসরি আডবাণীদের ২২ জানুয়ারির অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণই জানিয়ে বসে! এমনকী প্রাক্তন বিজেপি এমপি ও রামমন্দির আন্দোলনে সরাসরি যুক্ত রামবিলাস বেদান্তিও যোগী আদিত্যনাথকে অনুরোধ করেন, ‘আডবাণীকে নিয়ে আসুন মন্দির উদ্বোধনে। কেননা রামলালা নিজ সিংহাসনে অধিষ্ঠিত, আডবাণীর স্বচক্ষে তা দেখা উচিত। এটা শুধু দেশের নয়, দুনিয়াব্যাপী হিন্দুদের বাসনা। কেননা রামমন্দির আন্দোলনে আডবাণীর বিরাট অবদান।’

৯০-এর দশকে ফেরা যাক। টয়োটায় চেপে এক বৃদ্ধ রথযাত্রায় বেরলেন। অযোধ্যায় রামমন্দিরের সমর্থনে দেশব্যাপী উন্মাদনার ঝড় তুলতে যাত্রায় নামলেন। দেশের নানা শহরে অশান্তির আগুন জ্বলে উঠল। বিপুল হিন্দু ভাবাবেগের জোয়ারে ভর করে ১৯৯২-এর ৬ ডিসেম্বর পতন হল অযোধ্যার বাবরি মসজিদের। করসেবকদের গাঁইতি, শাবলের আঘাতে গুঁড়িয়ে গেল ৪০০ বছরের পুরনো নির্মাণ। কে ভুলতে পারে, চোখের সামনে বাবরির পতন দেখতে দেখতে জোশী, উমা ভারতীদের উচ্ছ্বাসের ছবি?

[আরও পড়ুন: কলকাতায় ভাগবত, দুর্গাপুরে দত্তাত্রেয়, হিন্দুত্বের হাওয়া তুলতে লোকসভার আগে তৎপর RSS?]

হিন্দু আবেগের ফসল প্রথম বিজেপি ঘরে তোলে ১৯৯৫ সালে মহারাষ্ট্রে বাল ঠাকরের শিব সেনার হাত ধরে। ১৯৯৬ এ সোজা দিল্লি দখল বিজেপির। অটলবিহারী বাজপেয়ীর বিজেপি সরকার ২০০৪ পর্যন্ত ক্ষমতায়। ২০১৪য় মোদীর হাতে দিল্লির ক্ষমতার রাশ। এরপর সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়ে অযোধ্যার সেই জমি হিন্দু পক্ষের হাতে হস্তান্তর। বাবরির ধ্বংসাবশেষের ওপর রামমন্দির নির্মাণ আইনি বৈধতা পেল। রামমন্দির আন্দোলনের এই সাফল্যের কারিগর কিন্তু আডবাণী।

বলা যায়, মোদীর উত্থানের পিছনেও কারিগর ‘লৌহ পুরুষ’ই। কিন্তু ব্র্যান্ড মোদির দুনিয়ায় আডবাণীর জায়গা হতে পারে কি? হয়নি। সেই কারিগরের স্বীকৃতি পাননি আডবাণী। এমনকী, ২০০২-এ গুজরাট দাঙ্গার পর যখন বিজেপি নেতৃত্ব মোদিকে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে সরানোর ভাবনাচিন্তা করছিল, তাঁর পাশে দাঁড়ালেন আডবাণী! কিন্তু মোদী প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসার পর আডবাণীর মতো প্রাক্তনদের ঠাঁই হয় মার্গ দর্শকমণ্ডলী, যার কী কাজ, কী ভূমিকা, কেউ জানে না। সেই যে আডবাণী-জোশী পাবলিক লাইফ থেকে সরে গেলেন, আর সামনে আসতে পারলেন না কখনও। চিরতরে অতীত হয়ে গেলেন।

কিন্তু যে ভারতীয় সমাজে প্রবীণ নাগরিকদের প্রাপ্য মর্যাদা দেওয়ার কথা, সেখানে আডবাণীদের এহেন উপেক্ষাকে কি চোখে উচিত? একটু ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখলে স্পষ্ট হবে, আজ ভারতে ধর্ম, মন্দির ঘিরে যে উন্মাদনা তৈরি হয়েছে, তাতে কি আডবাণীদের দিকেও আঙুল উঠবে না? শুধু জনজীবনে অশান্তি, হিংসাই নয়, ‘গর্ব সে বোলো হাম হিন্দু হ্যায়’, এই বাস্তবের দুনিয়ায় অপ্রয়োজনীয় ভাবাবেগের গোড়াপত্তন কি ৯০ এর রথযাত্রায় হয়নি? আমরা-ওরা মানসিকতার সূচনা হয়নি? সেটাই তো কালে কালে ফুলে-ফলে বিকশিত হয়ে মারাত্মক চেহারা নিয়েছে আজ। বেকারি, গরিবি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যের বেহাল দশা, বিচার ব্যবস্থায় শাসকের হস্তক্ষেপের অভিযোগে বিতর্কের চেয়ে অগ্রাধিকার পাচ্ছে ধর্মীয় আবেগ! এটাই মোদি জমানার নতুন ভারত, যার ভিত্তিভূমি তৈরি হয় আডবাণীদের হাতে। মোদি সেই পথে আডবাণীদের পিছনে ফেলে অনেক, অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছেন। তাঁকে রোখার মতো কেউ নেই।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement