কুণাল ঘোষ: একান্ন সতীপীঠের পঞ্চাশটি ঘোরা হয়েছে। বাকি শুধু মরুতীর্থ হিংলাজ। সরকারি স্তরে অনুমতির আবেদন চলছিল। তার মধ্যেই কোভিডের উৎপাত। ঘরবন্দি হয়েও উতলা চিত্তে নিজেকে ফিট রাখছেন তিনি। করোনা কমলেই ফের চেষ্টা করবেন হিংলাজ যেতে। পঞ্চাশ পার করে একটি তীর্থ বাকি! এটুকু অসম্পূর্ণ রাখতে মন যে চাইছে না।
তিনি, অর্থাৎ প্রভঞ্জন দত্ত। বিধাননগরের বর্ষীয়ান বাসিন্দা। একদা জেশপে কাজ করতেন। তারপর ক্রমশ এক অদ্ভুত নেশায়। একান্ন সতীপীঠ দর্শন। ঘোরা শুরু। প্রথমে স্ত্রী সঙ্গে যেতেন। তাঁর মৃত্যুর পর একাই। এক এক করে একাধিক দেশ মিলিয়ে পঞ্চাশটি পীঠ স্পর্শ করা শেষ। বাকি হিংলাজ। এদিকে বয়স তো এই ২৩ জানুয়ারি ৯০ হবে।
প্রভঞ্জনবাবুর জেদ, “আমি ফিট। আমাকে আরও ফিট থাকতে হবে। হিংলাজ আমি যাবই। ওটা কেন বাকি থাকবে?” হঠাৎ সতীপীঠ সফরের নেশা বা শখ বা জেদ কেন? প্রভঞ্জনবাবুর জবাব, “বুঝলেন, এটা আমার ঠাকুরমার অবদান। অসাধারণ মহিলা ছিলেন। নিজে প্রবল ঘুরতেন। আমাকে এই সব গল্প বলতেন। শৈশব থেকেই আমার এনিয়ে আকর্ষণ তৈরি হয়ে যায়। এই দেবদেবীদের চরিত্র, ঘটনা, বিভিন্ন জায়গার সঙ্গে এই কাহিনিগুলির সম্পর্ক।
ঠাকুরমা নারায়ণদাসী দত্ত আমতার খোড়ো গ্রামের মেয়ে। দারুণ জেদ। তেমনি এই সবের জ্ঞান। ১৯৪৬ সালে হিংলাজ গিয়েছিলেন। গোলমালের আগে ফিরে আসেন। পায়ে হেঁটে হরিদ্বার থেকে কেদারবদ্রী গিয়েছেন। আমাকে পরে গল্প করতেন। একদিকে দেবতাদের কথা। তার সঙ্গে এই জায়গাগুলোর গল্প। আমার ভাল লাগতে শুরু করল। নেশা ধরে গেল। পরে আমিও এসব বইপত্র এনে চর্চা শুরু করলাম। তারপর বেরিয়ে পড়লাম। লক্ষ্য, একান্ন সতীপীঠ দর্শন করব। মায়ের কৃপায় পঞ্চাশটি হয়ে গিয়েছে। আটকে গিয়েছি হিংলাজে।” পঞ্চাশ সতীপীঠ বড় কম কথা নয়।
পড়াশোনা, আবেগ, সময়, খরচ। প্রভঞ্জনবাবু সবটা সামলেছেন। শুক্রবার দুপুরে কথা বলার সময়ও তিনি প্রবল উৎসাহী, “সেই কবে থেকে হিংলাজের অনুমতি পাচ্ছি না। আবেদন চলছেই। বাজপেয়ী, মনমোহন সিংয়ের সরকার গেল। মোদির সরকারকে লিখলাম। একবার সরাসরি ইমরান খানকে লিখলাম। অনুমতি আসছে না। এখন বালুচ অস্থির। কিন্তু আমাকে তো যেতেই হবে। করোনা কমলেই আবার চেষ্টা করব। এখন প্রথম কাজ শরীর ফিট রাখা। রসুন, লেবু, কাঠবাদাম, খেজুর খেয়ে যাচ্ছি। সংযমে আছি। হিংলাজ মাতার দর্শন বাকি রাখতে পারব না।” শাস্ত্র ধরে ধরে একান্নর মধ্যে পঞ্চাশটি সতীপীঠ দর্শন করেছেন প্রভঞ্জন।
সাধারণভাবে একান্নটি পীঠের কথাই বলা হয়। পীঠনির্ণয় তন্ত্র বইটিও তাই বলছে। শিবচরিত, কুব্জিকাতন্ত্রে কিছু উপপীঠ আছে। জ্ঞানার্ণবতন্ত্র বইতে পীঠ পঞ্চাশ। তবে সতীর দেহের নানা অঙ্গ প্রস্তরীভূত অবস্থায় শক্তিপীঠ হিসাবে থাকার প্রশ্নে প্রভঞ্জন দত্ত একান্নর মূল হিসাবেই চলছেন। বাংলায়, ভিনরাজ্যে, দেশবিদেশের নানা প্রান্তে পঞ্চাশটি পীঠ ঘোরা শেষ। একটি বাকি। মরুতীর্থ হিংলাজ। কাগজপত্র তৈরি করছেন প্রভঞ্জন। করোনা কমলেই আবার আবেদন শুরু করবেন তিনি। আর তার ফাঁকে ২৩ জানুয়ারি কাটিয়ে ফেলবেন নিজের ৯০তম জন্মদিনটি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.