Advertisement
Advertisement

Breaking News

‘মকরক্রান্তির ম্যাপ ছিঁড়ে’ চিরবিদায় কবি পিনাকির

আর্থিক সাকুল্য প্রশ্রয় না দিয়েল পিনাকির শিরদাঁড়া ছিল ঋজু।

Pinaki Thakur didn't argue with creativity
Published by: Utsab Roy Chowdhury
  • Posted:January 3, 2019 9:11 pm
  • Updated:January 3, 2019 11:28 pm  

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিনয়ের মর্মস্পর্শে মাথা নত করতেই হবে। শত্রু হোক বা বন্ধু, সবার শুভাকাঙ্খী। সহজাত প্রতিভায় পুরস্কারের ঝুলি ভরেছিল ঠিকই। তবু আর্থিক মজবুতির অভাব নিয়ে বাঁচেন। অনটন না হলেও সচ্ছলও বলা যায় না। বাঙালি তো প্রতিভায় বাঁচে, আর কবিতায় মরে। কবি পিনাকি ঠাকুরও ছিলেন ঠিক সেই বাঙালি। ছোটবেলায় চোখের সামনে বাবার হত্যা ও প্রত্যক্ষ রাজনীতির অন্ধকার দিনগুলো খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন। তাই জীবন বারবার দুমড়ে মুচড়ে ওঠে আর হাত থেকে বেরিয়ে আসতে থাকে একের পর মাস্টারপিস। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পালটেছেন নিজেকে। অর্থের পিছনে না ছুটে বেঁচেছেন আদর্শ নিয়ে।

[মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের জেরে মৃত্যু কবি পিনাকি ঠাকুরের]

কৃত্তিবাসের সহযোগী সম্পাদক ছিলেন। তখনই পরিচয় শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে। কবি পিনাকি ঠাকুরকে সন্তানস্নেহে দেখতেন শক্তি চট্টোপাধ্যায়। সমাদৃত হয়েছেন নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, শঙ্খ ঘোষ, সুবোধ সরকার বা সমসাময়িক কবিদের কাছেও। কিন্তু কখনও তা কাউকে বুঝতে দেননি। সাহিত্যমহলে বলা হত, বিনয় ও প্রতিভার সহবাসে বাঁচেন পিনাকি। চোখের সামনে বাবার মৃত্যুকে ভুলতে পারেননি। তাই মাঝে মাঝে কলমে উঠে এসেছে আগুন। প্রতিশোধের অস্ত্র হয়ে উঠেছে কবিতার ভাষা। আর কী বা করবেন! আঁকড়ে ধরেছেন শব্দ, ছন্দ, মাত্রার মিশেলকে – “কবিতা তোমার কাছে চাকরি খুঁজতে গেছি কতবার/ নিজের কলিজা বেচে চলে গেছি জুয়ার আসরে।”  আর্থিক সাকুল্য প্রশ্রয় দেননি, শিরদাঁড়া ছিল ঋজু। আর সেই শক্তি জুগিয়েছে তাঁর নির্মল কবিসত্তা। কবিতার জন্য বাঁচেন আর কবিতাতেই জেগে ওঠেন। সঙ্গে ছিল মনুষ্যত্ব। ভাল মানুষ না হলে যে সৃষ্টিশীল হওয়া যায় না, সেটা এযুগে দাঁড়িয়েও বারবার প্রমাণ করেছেন কবি পিনাকি। ছোট-বড়, কোনও প্রকাশকের অনুরোধ ফেরাননি। টাকা আসুক বা না আসুক, বিলিয়ে দিয়েছেন আপন সৃষ্টি। সেই সৃষ্টি তাঁকে এনে দিয়েছে তৃপ্তি। আর তৃপ্ত কবি যে সম্মান পেয়েছেন, তা হয়তো তাঁর প্রতিভার কাছে সামান্য। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘একদিন অশরীরী’। নিজের জীবনের প্রত্যেক মুহূর্তগুলো তুলে এনেছেন কবিতায়। আর আনন্দ পুরস্কার পেলেন ‘চুম্বনের ক্ষত’ লেখার পর। এরপর দুই বাংলার সাহিত্যেই পরিচিত হয়ে ওঠেন পিনাকি ঠাকুর।

Advertisement

[সাহিত্য জগতে নক্ষত্রপতন, প্রয়াত কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী]

আনন্দ পুরস্কার পাওয়ার পর পাঠকমহলেও সুখ্যাতি হয়। নয় ও শূন্য দশকের কবিতা যাঁদের হাত ধরে এগিয়েছে, তাঁদের অন্যতম কাণ্ডারী। মাত্র ৫৯-এ চিরবিদায় নিলেন অকৃতদার এই কবি। বছরের শুরুতেই সাহিত্যজগত হারাল এক প্রকৃত কবি, প্রকৃত মানুষকে। সময়ের উথালপাতাল স্রোতের প্রত্যেক মুহূর্তগুলো যাঁর হাতে শব্দ, ছন্দ, মাত্রার অনুপুঙ্খ মিশেল হয়ে পাঠকের কাছে পৌঁছে গেছে। আর কবি? “মকরক্রান্তির ম্যাপ ছিঁড়ে ছিঁড়ে হেঁটে গেছে- যে যার কুয়াশায়”।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement