Advertisement
Advertisement

Breaking News

Dooars

ডুয়ার্সে হরিণের মুখে চিপ্‌সের প্যাকেট! প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণের আর কত ক্ষতি করবে মানুষ?

এরপরেও বলা যাবে, বন্যেরা বনে সুন্দর!

Packet of chips in the mouth of a deer in the Dooars' Chapramari forest creates controversy
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:April 17, 2025 6:40 pm
  • Updated:April 17, 2025 6:40 pm  

ডুয়ার্সের চাপড়ামারি জঙ্গলে হরিণের মুখে উঠে এসেছে চিপ্‌সের প্যাকেট। এটি যে প্রকৃতির প্রতি কত বড় উদাসীনতা, তা নতুন করে বলার নয়। পর্যটনরত মানুষই তো ফেলেছে ওই প্যাকেট, একবারও ভাবেনি, এতে বন্যপ্রাণের কী ক্ষতি হতে পারে। এরপরেও বলব, বন্যেরা বনে সুন্দর!

২০-২৫ মাইল হাঁটা, সারা দিনে, কোনও ব্যাপারই ছিল না জিম করবেটের কাছে। বিশেষত, যখন কোনও ‘ম্যান-ইটার’ বাঘ কি লেপার্ডের পিছু ধাওয়া করতেন। প্রকৃষ্ট শিকারির বায়োডাটায় ‘গুণাবলি’ রূপে উল্লেখ করেছেন অব্যর্থ নিশানা লাগানোর ক্ষমতা এবং অধ্যবসায়কে। অপেক্ষা– একজন শিকারির অন্তর্গত রক্তের মধ্যে খেলা করে। নড়াচড়ার করা যাবে না একচুলও। নিশ্চল ও নীরবে প্রতীক্ষা করতে হবে কখন ‘টার্গেট’ সামনে আসবে।

Advertisement

গাছের উপরেও দিনের পর দিন কাটিয়েছেন তিনি। লিখে রেখেছেন সেসব অভিজ্ঞতা। বাঘ এসেছিল, গোপনে, জিম করবেটের সজাগ চোখে ধরা পড়ে সেই চিহ্ন, দূর থেকে– ঘাসের দঙ্গলে কিছু ঘাস তখনও খাড়া হতে পারেনি, নুইয়ে আছে। এসব অভিজ্ঞান তঁার পর্যবেক্ষণ ক্ষমতার পরিচয়। প্রকৃতির মধ্যে বড় হয়েছিলেন। অনাবিল প্রকৃতির মধ্যেই পরিচালিত করেছেন শিকারিজীবন। সাধারণ মানুষের থেকে পেয়েছেন অকৃপণ ভালবাসা। ব্রাহ্মণ সমাজের মেয়ে-বউরা তঁার এঁটো বাসন মাজতে দ্বিধা করতেন না– জাতপাতে বিভক্ত বিশ শতকের প্রথম দিকের ভারতীয় সমাজ-প্রবাহে কম বড় কথা নয়!

‘ম্লেচ্ছ’ এ সাহেবের আদর-যত্নে ত্রুটি যাতে না-হয় সেজন্য গ্রামের হতদরিদ্র মানুষেরা উদ্‌গ্রীব হয়ে থাকত। গুড় দিয়ে গ্লাসের পর গ্লাস কালো চা খেতেন। সেটুকু হাতে তুলে দিতে পারলেও মানুষের আনন্দ। জিম করবেট এত লোকপ্রিয় হয়েছিলেন কেন? নরখাদকদের হাত থেকে গ্রামের খেটেখাওয়া মানুষদের বঁাচাতেন বলে? তা অবশ্যই একটি বড় কারণ, তার চেয়েও জাগ্রত একটি উপলক্ষ রয়েছে। জিম করবেট বিশ্বাস করতেন প্রকৃতির সংরক্ষণে, প্রকৃতির অকৃত্রিমতা বজায় রাখায়। শিকার করা তঁার নেশা ছিল না, শখ তো নয়ই। বাঘের মধ্যে সন্ধান পেয়েছিলেন এমন এক ‘সিংহহৃদয়’ প্রাণীর, যে রাজসিক ও অভিজাত। এরপরেও বাঘ মেরেছেন, তারা নরখাদকে রূপান্তরিত হয়েছিল বলে।

জিম করবেটে ভারতীয় বনাঞ্চলের আত্মাকে ছুঁয়ে গিয়েছেন তঁার লেখার মাধ্যমে– বহু বর্ণনার বিস্তৃত বিবরণে। আর, চেষ্টা করছেন সবসময় প্রকৃতির বিন্যাসে জোর করে কোনও পরিবর্তন সাধিত না-করতে। সভ্যতার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে, বনপ্রাণের সঙ্গে বিনোদনকে যুক্ত করার মোহে, আমরা ক্রমশ এত পয়জারের আশ্রয় নিয়েছি যে, অরণ্যের আত্মার কথা আর আমাদের স্মরণে রাখা সম্ভব হয়নি। পর্যটনের ভিতর দিয়ে হরিল্লুটের আনন্দ কুড়িয়ে নেওয়ার অভিপ্রায়ে আমরা বন্যপ্রাণের ভাল-মন্দের কথা বিসর্জন দিয়েছি ভাবলেশহীন হয়ে।

সম্প্রতি, ‘খবর’ হয়েছিল, ডুয়ার্সের চাপড়ামারি জঙ্গলে হরিণের মুখে উঠে এসেছে চিপ্‌সের প্যাকেট। এটি যে প্রকৃতির প্রতি কত বড় উদাসীনতা, তা নতুন করে বলার নয়। পর্যটনরত মানুষই তো ফেলেছে ওই প্যাকেট, একবারও ভাবেনি, এতে বন্যপ্রাণের কী ক্ষতি হতে পারে। এরপরেও বলব, বন্যেরা বনে সুন্দর!

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement