কুণাল ঘোষ: ইদানীং যে কোনও অপরাধের ঘটনা ঘটলেই রাজনীতির দেউলিয়া অংশ রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার কথা তুলে ৩৫৬ চাইছে। মহা সমস্যা। জনবিচ্ছিন্ন হতে হতে সব ভুলে খেই হারাচ্ছেন বিরোধী শিবিরের কিছু নেতা। মনে রাখুন, বামফ্রন্ট জমানায় প্রতিবাদ হয়েছিল বিজন সেতুর আনন্দমার্গী সন্ন্যাসীদের পুড়িয়ে হত্যা, বানতলা, নেতাই, নানুর, সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম-সহ বহু হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণের ঘটনার। কিন্তু নোয়াপাড়া বা দমদমে একই পরিবারের তিন-চার জন করে সদস্য হত্যা নিয়ে বিন্দুমাত্র রাজনীতি হয়নি। এমনকী, এমএলএ হস্টেলে শাসকদলের এমএলএ খুন নিয়ে প্রাথমিক আকস্মিকতায় কংগ্রেস (Congress) এবং ফরওয়ার্ড ব্লক সরব হলেও তারপর থেমে যায়।
কারণ, ডিমার্কেশন লাইন। যে অপরাধে জমিদখল ছিল, আধিপত্যবাদ ছিল, কোনও গোষ্ঠী বা এলাকার উপর দখলদারির চেষ্টা ছিল, রাজনৈতিক শত্রুতা ছিল, সেগুলি নিয়ে রাজনীতি হয়। আইনশৃঙ্খলার কথা তোলা যায়। ৩৫৬ বলা যায়। কিন্তু যে অপরাধ ব্যক্তিগত বা পারিবারিক সম্পর্কজনিত, তা নিয়ে কেন রাজনীতি হবে? সেই কারণেই নোয়াপাড়া, দমদমের মতো অসংখ্য ঘটনা নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) রাজনীতি করেননি।
অথচ আজ এখনকার বিরোধীরা সেটাই করছেন। প্রেমজনিত কারণে খুন, ৩৫৬ চাই। কে কার সঙ্গে কথা বলছে না, খুন। ৩৫৬ চাই। এই ধরনের সব অপরাধও অনভিপ্রেত। কিন্তু সমাজের প্রতি মানুষের ব্যক্তিগত সমীকরণসত্তাকে নিয়ন্ত্রণের আইন এখনও মানবসভ্যতাতেই কার্যকর হয়নি, বাংলা তো একটি রাজ্য মাত্র। দুই বাড়ির রেষারেষির ঝগড়া, বিরোধী দলনেতা হাজির, শেষে ওই বাড়ি থেকেই শুনতে হল—— এখানে রাজনীতি নেই। কেন এসেছেন। চলে যান। তবু, বিরোধীরা অতীত ভুলছেন। দেশের অন্য রাজ্যের বেহাল থেকে চোখ বুজে থাকছেন। ডিমার্কেশন লাইন ভুলে যে কোনও ঘটনায় রাজনীতি, কুৎসা।
এই যে আনিসের বাড়ি গেলেন সিপিএমের (CPM) এক নেতা। মৃত্যু দুঃখের। কিন্তু শকুনের রাজনীতি চলবে? কমরেড সেলিম বিজন সেতুতে পুড়িয়ে মারা সন্ন্যাসীদের বাড়ি আপনি বা আপনার মুখ্যমন্ত্রী গেছিলেন? মরিচঝাঁপি থেকে সাঁইবাড়ি কিংবা পরে একাধিক গণহত্যা, ধর্ষণ—— কমরেড, আপনাদের মুখ্যমন্ত্রী বা প্রথম সারির কোনও নেতা গিয়েছিলেন? বর্ধমানের পূর্ব করন্দায় পুড়িয়ে মারা হল নকশালপন্থীদের, বা কোচবিহারে বুদ্ধবাবুর পুলিশের গুলি প্রাণ নিল ফরওয়ার্ড ব্লকের পাঁচজনের, গিয়েছিলেন তাঁদের বাড়ি? বাংলা অতীতের থেকে ভাল আছে। বাংলা এখন অন্য রাজ্যের থেকে ভাল আছে।
জনবিচ্ছিন্ন বিরোধীরা দেউলিয়া রাজনীতি করছেন। সব ডিমার্কেশন লাইন ভুলে কুৎসার পথে হাঁটছেন। খারাপ ঘটনা সবসময়ই খারাপ। কমলেও যেন একটিও না হয়। সংবেদনশীল রাজ্য সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে। তাতে দিশেহারা বিরোধীপক্ষ। কমরেড, মনে আছে সত্যজিৎ রায়ের শেষকৃত্যে নগরপালকে সেই বিখ্যাত ‘সাহাদা’ ডাক? সেদিন ফাঁস হয়েছিল আপনাদের জমানায় মৃতদেহের খাট, বালিশ, চাদরেও সিন্ডিকেট খুলেছিলেন।
শ্মশানটাও দখলদারির রাজনীতিতে ফেলেছিলেন। এখন, আপনাদের মুখ থেকে যদি আজকের সরকারকে জ্ঞান শুনতে হয়, তা বড়ই হাস্যকর। কী ভেবেছেন কমরেড? সবাই সব ভুলে গেছেন? অন্ধ তৃণমূলবিরোধিতা থেকে সিপিএম, বিজেপি, কংগ্রেসের মিলিত কুৎসার অপচেষ্টা যত বাড়বে, বাংলার মানুষ তত বেশি তুলনা করবেন অতীত ও বর্তমানের। তুলনা চলবে ভিনরাজ্য ও এই রাজ্যের। তুলনা চলবে। আর তুলনা যত চলবে, ততই তৃণমূলের প্রতি জনসমর্থন বাড়বে। অন্যদিকে আরও দিশেহারা নিম্নরুচির রাজনীতি করার দিকে যাবেন এই বিরোধীরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.