বিশিষ্ট লেখক চেতন ভগতের বিরুদ্ধে হ্যারাসমেন্টের কথা শনিবার ভাইরাল হয়। এবং চেতন ভগত এদিনই সোশ্যাল মিডিয়ায় বিবৃতি দিয়ে তা মেনে নেন। ক্ষমা চান নিজের স্ত্রীর কাছেও। সত্য বলা সবসময়ই কঠিন। প্রতিক্রিয়ায় কলম ধরলেন প্রসিদ্ধ কবি শ্রীজাত।
‘গোপন কথা’-র নানারকম ফলাফল আছে। তার চেয়েও বড় কথা, আমাদের সভ্যতার অনেক কিছুই আসলে দাঁড়িয়ে আছে এই গোপন কথার উপর। অর্থাৎ তুমি সত্য গোপন করছ। তাও জেনে-শুনে। কিন্তু যদি দেখা যায়, সেই গোপনতা আর বহাল থাকছে না, সত্য স্বতঃই প্রকাশ পাচ্ছে, তাহলে পৃথিবীর সিস্টেম অনিবার্যভাবে ধসে যেতে বাধ্য। এবার পুজোর মরশুমে আমার একটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে এই ‘ধারণাটা’-ই লেখার উপজীব্য। আরও মজার কথা- চেতন ভগতের বিরুদ্ধে আনা নিগ্রহের অভিযোগ উনি নিজেই স্বীকার করে নেওয়ায় এবং নিজের স্ত্রীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার ঘটনার সঙ্গে অামার উপন্যাসের বিষয়বস্তু ও ভাবনায় অদ্ভুতরকম সমাপতন পেলাম।
কী সেই ‘সমাপতন’?
তা বলার আগে আমি উপন্যাসের প্লটটা আরেকটু বলে নিতে চাই। সেটা আমার উপন্যাসের গরিমা জ্ঞাপন করার জন্য মোটেও নয়। সেটা বরং কাজে লাগবে আমি কী বলতে চাইছি ‘সমাপতন’ অর্থে সেটা প্রকাশ করতে।
ওই উপন্যাসে আমি বলেছি- পৃথিবী আর সাত বছর পরে ধ্বংস হবে এরকম একটা অবস্থার মধ্যে দাঁড়িয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় চ্যালেঞ্জ শুরু হয় ‘বক্স অফ সিক্রেট’ বলে। প্রত্যেককে আহ্বান করা হয় গোপন সত্য প্রকাশ করার জন্য। পৃথিবী তো কয়েক দিন পরে ধ্বংস হয়েই যাবে, অতএব বলে ফেলো যা বলার। জীবনের গোপন, গূঢ়, না-বলা তোমার সেরা তিনটে সিক্রেট বলতে হবে। তাতে মনের ভার লাঘব হবে। গোপন কথা বলে ফেলায় যে ‘রিলিফ’ আছে, তা অনেক সময়ই তার ফলাফলের চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
[ ‘আমৃত্যু গীতাই ছিল গান্ধীজির প্রিয়তম বই’ ]
আমি এই বলে দেওয়ার পক্ষেই। কারণ, আমি যা করেছি, তার দায়ভার যদি আমি নিতে পারি এবং ক্ষমা চেয়ে নিতে পারি, তার চেয়ে তো বড় কিছু হতে পারে না। কারণ, অন্যায় করতে সাহস লাগে না, ক্ষমা চাইতেই সাহস লাগে। সেটা অনেক কঠিন কাজ।
চেতন ভগতের নিউজটা ভাইরাল হতে শুরু করেছিল বিকেল থেকে। আর, এ লেখাটা নিয়ে বসার সময় থেকেই আমি ভাবছিলাম যখন অামি গোপনতা প্রকাশ করে দেওয়া নিয়ে উপন্যাস লিখেছি, তখনই উনি একটা কনফেশন দিলেন নিজের কৃতকর্ম নিয়ে। এটাই ‘সমাপতন’।
চেতন ভগত তাঁর কৃতকর্ম সকলের সামনে স্বীকার করায় ও ক্ষমা চেয়ে নেওয়ায় ওঁর মনের ভার নিশ্চিতভাবে অনেকটাই লাঘব হবে। কিন্তু এরপরেও ওঁর কিছু পাঠক হয়তো ভাববেন যে সত্যি তাহলে এরকম করেছিলেন! তাতে অনেকে অযাচিত আঘাতও পাবেন। আবার পরক্ষণে হয়তো এও ভাববেন তাঁরা, যে-লোকটার লেখা আমরা এত পছন্দ করি, তাঁর অন্তত সৎসাহস আছে ভুল করলে তা মেনে নেওয়ার। ক্ষমা চাওয়ার।
এটাই কিন্তু আমার মতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
(মতামত নিজস্ব)
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.