Advertisement
Advertisement

Breaking News

হালফিলের লক্ষ্মীর পাঁচালি

ঘরে ঘরে কে জাগে? প্যাঁচায় চেপে খোঁজ নেবেন স্বয়ং মা লক্ষ্মী। ফেসবুকে ‘ফেস’ দেখানো বাঙালি আদৌ জাগছেন কি?

New Age Lakshmi puja
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:October 15, 2016 3:38 pm
  • Updated:October 15, 2016 3:38 pm  

দুগ্গা দুগ্গা বারোয়ারিকে বারো মাসের অপেক্ষায় রেখে মা বিদায় নিয়েছেন এবার মেয়ের পালা ঘরে ঘরে কে জাগে?  প্যাঁচায় চেপে খোঁজ নেবেন স্বয়ং মা লক্ষ্মী ফেসবুকে ফেস দেখানো বাঙালি আদৌ জাগছেন কি? খোঁজ নিলেন সুপর্ণা মজুমদার

“এসো মা লক্ষ্মী, বোসো ঘরে”। লক্ষ্মী মা আমার চঞ্চলা হয়ো না, শান্ত হয়ে বোসো। টুনি বাল্ব গুলো বের করেছে কি না কে জানে! পুরুত মশাইকে তো চারটের সময় আসার কথা বলা ছিল। কেউ নিশ্চয়ই আগে ভাগে নিয়ে চলে গিয়েছে। তুমি একটু বোসো লক্ষ্মীটি। ধান্য, গুয়া, পান সব দেব, শুধু একটু অধিষ্ঠান করো।

Advertisement

বৈকুণ্ঠে তো হামেশাই অবস্থান করো। ক’টা দিন একটু মর্ত্যের বাছাদের দেখো। বৈকুণ্ঠ নাহয় এই ক’দিন একটু নারায়ণ সামলে নিন। সারা বিশ্ব সামলানোর ‘এক্সপেরিয়েন্স’ তো আছেই, নিজের ঘর এই ক’টা দিন একটু দেখে নিতে পারবেন না? তাছাড়া স্বর্গে তো তেত্রিশ কোটি দেব-দেবী রয়েছেনই। আর নরকের অসুর কুল একটু বিশ্রামেই থাক। দুর্গাপুজায় যা ধকল গিয়েছে বেচারাদের। ভরা পূর্ণিমায় এবার একটু মর্ত্যের দিকে তাকাও মা। “এসো মা লক্ষ্মী, কমলবরণী, কমলালতিকা দেবী কমলিনী।”

মানছি পরিবর্তনের বাজারে আগুন। এখন আর অত খেটে আলপনা দেয় না বাঙালি। বাজার থেকে রেডিমেড  লক্ষ্মীমন্ত পায়ের স্টিকারেই তাঁদের ভরসা। নাড়ুও এখন প্যাকেটজাত। ফলের দাম তো আকাশছোঁয়া। অগত্যা একটি করে কিনে নিয়ম সারে মধ্যবিত্ত। ফুলের বাজার আর কীই বা বলব মা! কোনও মতে একটা পদ্মফুল পাওয়া গেল। ৫০ টাকার কমে দোকানদার কিছুতেই দিল না। নেহাত কমলনয়না নই, প্রদীপের আলো সারা রাত জ্বলার রিস্ক না নেওয়াই ভাল, টুনি লাইট তো রয়েছেই। একটু মানিয়ে-গুছিয়ে নাও লক্ষ্মী মা আমার।

শিল্পে নামে আন্দোলন আছে, কিন্তু বিনিয়োগ নেই। কৃষকের ফসল আছে, কিন্তু তাজা রাখার হিমঘর নেই। স্কুল আছে, মিড ডে মিলও রয়েছে। কিন্তু কোথাও শিক্ষক নেই, তো কোথাও পড়ুয়ার অভাব। দেশের অবস্থাও তথৈবচ। একদিকে যুদ্ধের হল্লা চলছে, অন্যদিকে না খেতে পাওয়া দেশবাসীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এখন তো মা গ্লোবাল হাঙ্গার ইন্ডেক্সে বাংলাদেশও ভারতকে টেক্কা দিয়েছে। মর্ত্যের এই শ্রীহীন দশা তুমি ছাড়া আর কেই বা ঘোচাবে মা?

পরিবর্তনের বাজারে প্রদীপের আলো না হয় নাই পেলে, ফেসবুকে ‘সেলফি’ অবশ্যই থাকবে। এই বাজারেও গ্যারান্টি দিচ্ছি। সোশ্যাল মিডিয়ায় গোটা দিন তুমিই ট্রেন্ডিং থাকবে। নাড়ু যদিও নাও থাকে, চকোলেট সন্দেশের অভাব হবে না। খিচুড়ি ভোগ না হয় নাই পেলে, ভোগের অত্যাধুনিক খিচুড়ি মেনু অবশ্যই পাবে। কোজাগরীতে জেগে থাকা বাঙালি কম পেতে পার, তবে হুজুগে বাঙালির ভারচুয়াল স্ট্যাটাস কম পাবে না।

বাজার একটু মন্দা যাচ্ছে বটে। ভক্তির রূপও একটু পাল্টে গিয়েছে। তবু এই বাজারেও তুমি না থাকলে মা শ্রী থাকবে না। তুমি না থাকলে, শান্তি থাকবে না। আর তুমি না থাকলে, বচ্ছরকার দিন শাড়ি পড়ার অজুহাতও থাকবে না। তাই একটু মানিয়ে নিয়ে “এসো মা লক্ষ্মী, বোসো ঘরে, আমার এঘরে থাকো আলো করে”।

ছবি – শুভাশিস রায়

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement