Advertisement
Advertisement

Breaking News

Language

ভাষার সজীব যাত্রা

জীবন্ত ভাষায় শব্দের স্বাগত-বিদায় চলতেই থাকে।

Natural processing of language
Published by: Kishore Ghosh
  • Posted:April 23, 2025 9:04 pm
  • Updated:April 24, 2025 11:56 am  

যে কোনও ভাষাই নিজের বেঁচে থাকার প্রবাহকে সজীব রাখতে পরিবর্তনশীলতাকে আপন করে। শব্দের স্বাগত-বিদায়ও ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখে।

সম্প্রতি সংবাদপত্রে প্রকাশিত একটি খবর অনুসারে, সুপ্রিম কোর্টে ধাক্কা খেয়েছেন এক মামলাকারী আইনজীবী। সংশ্লিষ্ট আইনজীবী তাঁর আবেদনপত্রে ‘আপত্তিকর’ শব্দ ব‌্যবহার করার ফলে তাঁর আরজিই খারিজ হয়ে গিয়েছে। তবে ওই আইনজীবী ‘আপত্তিকর’ শব্দবন্ধ বাদ দিয়ে আবার নতুন করে মামলা দায়ের করতে পারবেন। আইনি আবেদনপত্রে কোনও শব্দবন্ধ আপত্তিকর হলে আরজি খারিজ হয়ে যেতে পারে এবং ওই আইনজীবী তিরস্কৃত হতে পারেন। তবে এই বিচারের জন‌্য সূক্ষ্ম ও জটিল আইনি জ্ঞান প্রয়োজনীয়, যা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। প্রাত‌্যহিক ব‌্যবহারের শিথিল ভাষা যে আদালতের মামলার ভাষা হতে পারে না, তা সাধারণ মানুষ হাড়ে-হাড়ে জানে। তাই আইন-আদালতের ভাষাকে মানুষ খানিক ত্রাস এবং সম্ভ্রমের চোখে দেখে বইকি।

Advertisement

তবে পৃথিবীর সব দেশের ভাষার প্রাণ তার ঘটমান পরিবর্তনের প্রবণতায়। যে-ভাষা অপরিবর্তিত থেকেছে, তার প্রাণস্রোতও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ভাষাটি হয়তো ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা ও সুদূর প্রাচীনতায় উত্তীর্ণ– যেমন: সংস্কৃত, প্রাচীন ল‌াতিন, দূরায়ত গ্রিক। কিন্তু এসব ভাষায় আর কোনও পরিবর্তন ঘটে না। জীবন্ত ভাষার প্রধান অভিজ্ঞান তার পরিবর্তনশীলতা। এই কারণেই এখন যে-শব্দবন্ধ অনায়াসে চলতি, আগামীতে তা-ই হয়ে উঠতে পারে ‘আপত্তিকর’। এমনই এক ইংরেজি শব্দ ‘ব‌্যাটসম‌্যান’। মেয়েদের ক্রিকেট যতই হয়ে উঠেছে জনপ্রিয়, ততই ‘ব‌্যাটসম‌্যান’ শব্দটি খটকা জাগিয়েছে।

শেষ পর্যন্ত ওই শব্দ জায়গা ছাড়তে বাধ‌্য হয়েছে ‘ব‌্যাটার’-কে। চাকরির জগতে নারীর আগ্রাসী ভূমিকা ও উন্নতি ‘চেয়ারম‌্যান’ শব্দটিকেও ছুড়ে ফেলে আসনে দিয়েছে ‘চেয়ারপার্সন’-কে। ‘অ‌্যাক্টর’ এখন উভলিঙ্গ। অভিনেত্রীরা প্রত্যেকে এখন ‘অ‌্যাক্টর’ বা ‘অভিনেতা’। ‘অ‌্যাকট্রেস’ বা ‘অভিনেত্রী’ অবশ‌্যই ‘আপত্তিকর’ শব্দ। ‘লেখিকা’ শব্দটি হয়তো এখনও ‘আপত্তিকর’ হয়ে ওঠেনি। তবে অনেক মহিলা-লেখক ‘লেখিকা’-পরিচিতির প্রতি অনীহ।

জীবন্ত ভাষায় শব্দের স্বাগত-বিদায় চলতেই থাকে। এখন যে-শব্দ অশ্লীলতার অপবাদে ব্রাত‌্য, অভিধান-অযোগ‌্য, ভদ্রসমাজ-বর্জিত; সমাজ, মূল‌্যবোধ, বাক্‌স্বাধীনতার প্রসারের সঙ্গে সেসব শব্দ কখনও হয়ে উঠতে পারে প্রাত‌্যহিক ব‌্যবহারের অঙ্গ। যেমন: চার অক্ষরের যে-ইংরেজি শব্দটি ছিল ‘নিষিদ্ধ’, এখন তা টিভির পর্দায় হরির লুটের মতো ছড়ানো। আবার বঙ্কিমের উপন‌্যাসে যেসব শব্দ অনর্গল, সেগুলি এখন নারীবিদ্বেষী! শব্দের এই স্বাগত-বিদায়ই তো ভাষাকে বঁাচিয়ে রাখে। রবীন্দ্রনাথ ‘শেষের কবিতা’-য় বাঙালিকে দিলেন রো‌ম‌্যান্টিক ‘আড়ালের ভাষা’। সমরেশ বসু সাহিতে‌্য নিয়ে এলেন অপরাধ অন্ধকার ‘বিবর’-এর ভাষা। বাংলা ভাষার প্রাণশক্তি গ্রহণ করল দুটোই, জলজ‌্যান্ত বেঁচে থাকার মধ্যে। তার জীবন্ত ক্রমান্বয়ের জন‌্য।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement