Advertisement
Advertisement

Breaking News

opposition Unity

সম্পাদকীয়: বিরোধী ঐক্যের প্রধান সূচক মমতাই

এবার মমতা অনেক পরিণত, সতর্ক, ধীর গতিতে সজাগ দৃষ্টি নিয়ে এগোচ্ছেন।

Mamata Banerjee is the main pillar of opposition Unity | Sangbad Pratidin

ফাইল ছবি

Published by: Subhajit Mandal
  • Posted:April 29, 2023 3:54 pm
  • Updated:April 29, 2023 9:36 pm  

জয়ন্ত ঘোষাল: দিল্লির চিত্তরঞ্জন পার্কের ভবনের লাউঞ্জে রবিবারের আড্ডা। প্রতিনিয়ত আলোচনা ২০২৪ লোকসভা নির্বাচন। এবার কী হবে? বিরোধীরা তো এখনও ছত্রভঙ্গ!

সাধারণভাবে মনে হচ্ছিল, এ অবস্থায় আবার মোদিই (Narendra Modi) ক্ষমতায় ফিরে আসবেন। কিন্তু হঠাৎ দিল্লির দৃশ‌্যপট গেল বদলে। রাহুল গান্ধীকে লোকসভা থেকে বহিষ্কার করা হল। আদানিকে নিয়ে সংসদে আলোচনা করতেই পারল না বিরোধীরা। উলটে শাসকদল বিজেপি রাহুল গান্ধীকে (Rahul Gandhi) নিয়ে হইচই করে সংসদ চলতে দিল না। রাহুল লন্ডনে গিয়ে কী বলেছেন, তাই নিয়ে দিল্লির সংসদ তুলকালাম। শাসকদল সংসদ চলতে দিচ্ছে না, এমনটা কখনও দেখিনি। এসব কাণ্ডকারখানার মধ্যে এসে গিয়েছে কর্ণাটক বিধানসভা ভোট (Karnataka Assembly Election), যেখানে বিজেপি বেশ প্রতিকূল পরিস্থিতিতে। কলকাতার সংবাদ চ‌্যানেল খুললেই সিবিআই-এনফোর্সমেন্ট (CBI-ED) তদন্ত। অনুব্রত মণ্ডলের (Anubrata Mandal) কন‌্যা গ্রেপ্তার। কর্ণাটক নির্বাচনে কী হচ্ছে, তা নিয়ে বাঙালির আগ্রহ আছে বলে মনে হচ্ছে না। ভোটের ফলে যদি বিজেপি ক্ষমতাচ্যুত হয় তখন হয়তো হইচই শুরু হবে। আর বিজেপি যদি আবার থেকে যায় তবে তাতে আর তেমন নতুনত্ব কী?

Advertisement

[আরও পড়ুন: নিতে হবে ২০১৮ সালের ভাড়া, বাস মালিকদের জানিয়ে দিলেন পরিবহণমন্ত্রী]

এরকম এক প্রেক্ষাপটে বাংলা চ‌্যানেল দেখলে বুঝতে পারবেন না যে, দিল্লিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) এবং নবান্ন এই মুহূর্তে আগ্রহ ও কৌতূহলের অন‌্যতম বিষয় হয়ে উঠেছে। এক শীর্ষ বিজেপি নেতাও সেদিন আমাকে জিজ্ঞেস করছিলেন, মমতাদি ক্যায়া কর রহি হ‌্যায়? ইরাদা ক্যায়া হ‌্যায়? মোদি (Narendra Modi) এবং জাতীয় রাজনীতি নিয়ে মমতা কথা বলছেন কম। আগের চেয়ে কম। কিন্তু দেখা যাচ্ছে অন‌্য অ-বিজেপি, অ-কংগ্রেসি আঞ্চলিক নেতারা এক-এক করে অনেকেই মাথা ঠুকতে যাচ্ছেন নবান্নে। উত্তরপ্রদেশ আর বিহার–হিন্দি বলয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজ‌্য। দুই রাজ্যের বিশিষ্ট আঞ্চলিক নেতারা, বিহারের মুখ‌্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার, উপ-মুখ‌্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব এবং অখিলেশ যাদব সম্প্রতি মমতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন কলকাতায় এসে। তার আগে দক্ষিণ ভারতের একমাত্র যে-রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতাসীন, সে-রাজ্যের আঞ্চলিক দল ‘জেডিএস’-এর নেতা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী দেবগৌড়ার পুত্র কুমারস্বামী (HD Kumaraswamy) কলকাতায় এসে মমতার সঙ্গে দেখা করলেন। কুমারস্বামী এখন কার্যত বিজেপির সঙ্গে, কারণ তিনি কংগ্রেস-বিরোধী। কিন্তু রাজনীতি মানেই সম্ভাবনার কলাবিদ‌্যা। তাই তিনিও কলকাতায় মমতার কাছে এসে ইট পেতে রেখে গেলেন। স্ট‌্যালিন, কেজরিওয়াল, উদ্ধব ঠাকরে, কেসিআর এমনকী, নবীন পট্টনায়কও এখন ওঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।

দিল্লির রবিবারের মজলিশে প্রবীণ অবসরপ্রাপ্ত, কর্মরত নানা ব‌্যক্তিত্ব। ওঁদের প্রশ্নের মুখে বলি, মমতা কী করতে চাইছেন, কী রণকৌশল সেটা তো কাউকেই বলেন না। কাজেই আলাদা করে কিছুই জানি না। আপনারা যা জানেন, আমিও তা-ই জানি। তবে অনেক দিন ধরে সাংবাদিক হিসাবে, তা প্রায় ৪০ বছর হল, ওঁর রাজনীতি কাছ থেকে দেখেছি। দেখেছি তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) বৃত্তের বাইরে থেকে মানে একজন ‘আউটসাইডার’ হিসাবে। এই হল ব‌্যাখ‌্যা ও বিশ্লেষণ। এই গৌরচন্দ্রিকা প্রবীণ প্রবাসী মানুষদের পছন্দ হল না। সিধুদা জিজ্ঞেস করলেন, মোদ্দাকথাটা বলো, বিরোধী জোট হচ্ছে? না কি হচ্ছে না? তপনদা বললেন, আরে বাবা, এ তো রবীন্দ্রনাথের পঞ্চভূতের আড্ডা নয়, আসল কথাটার জবাব দিন। যেন কোর্ট রুম। জবানি দিতে হচ্ছে বিচারপতিদের সামনে।

প্রথমত, মমতা চান মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপির বিরুদ্ধে সমস্ত আঞ্চলিক দল একত্র হোক। নিজেদের মধ্যে সমন্বয় তৈরি করা, যাকে বলে ‘লিভিং কনট‌্যাক্ট’, তৈরি করে ফেলা। এ হল ‘শর্ট টার্ম গোল’। ‘লং টার্ম গোল’ কী? এক নতুন ফ্রন্ট গঠন, অ-বিজেপি, অ-কংগ্রেসি ফ্রন্ট, সেটা ভোটের আগে হলে ভাল, না হলে জোর করে কার্বাইড দিয়ে পাকানোর দরকার নেই। সেটা হোক ২০২৪-এর ভোটের ফলাফল দেখে। যাকে বলে অবস্থা বুঝে ব‌্যবস্থা, ‘নেসেসিটি ইস দ‌্য মাদার অফ ইনভেনশন’। প্রয়োজন হলে, সংখ‌্যা থাকলে, ফ্রন্ট গঠনের জন‌্য সময় লাগবে পাঁচ মিনিট। দ্বিতীয়ত, এবার মমতা অনেক পরিণত, সতর্ক, ধীর গতিতে সজাগ দৃষ্টি নিয়ে এগচ্ছেন। কী সম্ভব, কী সম্ভব নয় জানেন। কথায় কথায় তিনি দিল্লি যাচ্ছেন না। রাষ্ট্রপতি ও উপ-রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় তিনি দেখে নিয়েছেন বিরোধী নেতাদের ঐক‌্যর বাস্তব ছবি। বিশেষত, রাহুল গান্ধী এবং কংগ্রেসের ভূমিকা নিয়ে তিনি নির্মোহ। তৃতীয়ত, নীতীশ কুমারকে সামনে রেখে এগনোর একটা চেষ্টা শুরু হয়েছে। এই চেষ্টার পিছনে প্রধান চরিত্র তেজস্বী যাদব। অখিলেশ থেকে কেসিআর-এর মতো নেতাকে সঙ্গে রাখার চেষ্টা অব‌্যাহত। কংগ্রেস সূত্র বলছে, সোনিয়া গান্ধী এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর সঙ্গে নীতীশের সম্পর্ক ভাল। কথাও হয়েছে। রাহুল গান্ধীকে বিরোধীদের নেতা ঘোষণা করলেই যে বিরোধী ফ্রন্ট জন্মানোর আগেই ভেঙে যাবে, তা সোনিয়া গান্ধীও (Sonia Gandhi) এখন বুঝছেন। এ কথা বুঝতে হবে রাহুল গান্ধীকেও। আবার স্ট‌্যালিন মনে করেন, কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে বিরোধী জোট হয় না। মমতাও মনে করেন, নকশালদের মতো ‘নো ভোট টু বিজেপি’ এই কৌশলে কংগ্রেস-সিপিএম সকলকে এক মঞ্চে আনতে হবে। বিজেপির অমিত মালব‌্য অ‌্যান্ড কোংয়ের আপাতত প্রধান প্রচার, একজন অন‌্যজনের সঙ্গে বৈঠক করছেন খুব ভাল কথা, কিন্তু বিরোধীদের প্রধান নেতাটি কে?

[আরও পড়ুন: বিছানার হারানো উষ্ণতা ফেরাবে ‘তিন মিনিটের খেলা’, পার্টনারকে খুশি করতে জেনে রাখা জরুরি]

মমতা বলেছেন, এই ব‌্যাপারে তাঁর কোনও ইগো নেই। এমনকী এ-কথাও বলেছেন, জয়প্রকাশ নারায়ণের ভিটেমাটি পাটনাতেই শুরু হোক বিরোধীদের একত্র হওয়ার প্রথম বৈঠক। কংগ্রেস নেতারাও বুঝতে পারছেন, হিন্দি বলয়ের একজনকে সামনে রাখলে বিজেপির মোকাবিলা সহজ হবে, কারণ, আজও বিজেপি মূলত হিন্দি-পার্টি। চতুর্থত, তার মানে এই নয় যে, নীতীশ কুমার বিরোধীদের সর্বসম্মত প্রধানমন্ত্রীর ছায়া-প্রার্থী। তার বদলে ইউপিএ-র চেয়ারপার্সন যদি সোনিয়া গান্ধীই থাকেন, কনভেনর হতে পারেন নীতীশ কুমার। প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী যে ‘গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল’ তত্ত্ব। দেবগৌড়া বা বিশ্বনাথ প্রতাপ, এমনকী, মোরারজি দেশাইও প্রধানমন্ত্রী হন শেষ মুহূর্তে। আগে থেকে ঘোষণা করে নয়। সময়ের হাত ধরে আন্দোলনের মাধ‌্যমে নেতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে উত্থাপিত হবে। সমস‌্যা হল, নীতীশ কুমার কনভেনর হলে কেজরিওয়াল কি তা মেনে নেবেন? চুপ করে আছেন শরদ পাওয়ার। তিনি নিজেও প্রবীণ ব‌্যক্তিত্ব। তিনি কনভেনর হতে পারতেন। তবে তিনি এখন ব‌্যস্ত মহারাষ্ট্রের রাজনীতি নিয়ে। কিছুদিনের মধ্যেই সুপ্রিম কোর্ট একনাথ শিন্ডে-সহ ১৬ জন বিধায়কের সদস‌্য পদ খারিজ করে দিলে সরকারের পতন হতে পারে। অজিত পাওয়ারের নেতৃত্বে এনসিপি ভেঙে বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকার গড়বে কি না, এসব নিয়ে শরদ পাওয়ার এখন ব‌্যস্ত।

পঞ্চমত, সর্বশেষ প্রশ্ন, কংগ্রেসের সঙ্গে মমতার সমঝোতা হবে? অবস্থা এমন যে বিরোধীরাই যেন দু’ভাগে বিভক্ত। একপক্ষ কংগ্রেসের সঙ্গে, যেমন তেজস্বী-স্ট‌্যালিন-নীতীশ। আবার অন‌্যদিকে কংগ্রেস-বিরোধী নেতাদের মধ্যে অগ্রগণ‌্য কেজরিওয়াল, দেবগৌড়া, অখিলেশ। মমতাকে এই দুই শিবিরের মধ্যে মিলন ঘটানোর দায়িত্ব দিতে চান নীতীশ-তেজস্বী। কিন্তু মমতার বক্তব‌্য, রাজ্যে কংগ্রেস কমিউনিস্টদের সঙ্গে জোট বেঁধে সকাল-বিকেল মমতা বিরোধিতা করছে আর রাহুল আশা করছেন– মমতা দিল্লিতে কংগ্রেসকে সমর্থন করবে? এটা হয়? রাজ্যে বিজেপি ‘কংগ্রেস-সিপিএম’ জোটের মমতা-বিরোধিতাকে উসকাতে সক্রিয় যাতে বিরোধী ঐক‌্য না আসে। স্বাভাবিক।

ষষ্ঠত, মমতা মনে করছেন, আসল প্রয়োজন আসন সমঝোতা। ‘ইউপিএ থ্রি’ হল, না কি ‘ফেডারেল ফ্রন্ট’ গঠন হল, এসব অবান্তর। আসল প্রয়োজন রাজ‌্যওয়াড়ি আসন বোঝাপড়া। প্রত‌্যক্ষ না হলেও পরোক্ষ। পাঞ্জাব, পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, দিল্লি, তেলেঙ্গানা– এসব রাজ্যে রাহুল গান্ধীকে ত‌্যাগ স্বীকার করতে হবে আঞ্চলিক দলের জন‌্য। তামিলনাড়ু নিয়ে সমস‌্যা কম, সেখানে স্ট‌্যালিন-কংগ্রেস ইতিমধ্যেই বোঝাপড়া আছে। গুজরাটেও কংগ্রেস কেজরিওয়ালের সঙ্গে জোট বেঁধে লড়তে পারে। কিন্তু কংগ্রেসের কিছু নেতা এখনও রাহুলকে বোঝাচ্ছেন, কংগ্রেস সর্বভারতীয় দল। ১০০টা আসনের লক্ষ‌্য নিয়ে কি লোকসভা ভোট লড়া যায়?তবে আপাতত সোনিয়া-ঘনিষ্ঠ নেতারা অনেকে বলছেন, রাহুল আবার ভারত ভ্রমণের কর্মসূচি নিন। ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ পার্ট টু করুন, ঘোষণা করুন যে, তিনি বিরোধী নেতা হতে চান না। প্রধানমন্ত্রীও হতে চান না। এতে রাহুলেরও মর্যাদা বাড়বে। আপাতত লড়াই দেশ বাঁচানোর। রাহুল কি এই প্রস্তাব মেনে নিতে প্রস্তুত? আর এই যুদ্ধের আগে আপাতত নবান্ন হয়ে উঠেছে বিরোধী নেতাদের প্রধান গন্তব‌্য। দিল্লির রাজনীতি মমতার কাছে নতুন নয়। তিনি সাতবারের লোকসভা সদস‌্য। একাধিকবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। ২০২৪ ভোটের আগে তিনিই বিরোধী ঐক্যের প্রধান সূচক।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement