Advertisement
Advertisement
L&T

রবিবারও কাজ করতে হবে! মানুষ কি যন্ত্র হতে পারবে?

‘ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্স’ নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে।

L&T chairman asks employees to work 90 hours a week
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:January 10, 2025 4:10 pm
  • Updated:January 10, 2025 4:10 pm  

নারায়ণমূর্তি সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টা কাজের পক্ষে যুক্তি দিয়েছিলেন। এবার ‘লারসেন অ্যান্ড টুব্রো’-র চেয়ারম্যান এস এন সুব্রহ্মণ্যম জানালেন, তিনি চান সংস্থার কর্মীরা রবিবারও কাজ করুক। তাঁর যুক্তি ঘিরে বিতর্ক।

মানুষ যন্ত্র নয়। যন্ত্রের সঙ্গে প্রধান পার্থক্য, তার মন রয়েছে, সত্তা রয়েছে। যন্ত্র যে খারাপ হয় না, তা তো নয়। কিন্তু মানুষ কখনওই যন্ত্রের মতো নিরলস কাজ করতে পারে না। তার বিশ্রামের প্রয়োজন। বিনোদনের প্রয়োজন হয়। তবেই সৃষ্টিশীল কাজে দক্ষতা বাড়ে। বিশেষজ্ঞরাও বলতে শুরু করেছেন, এমন সময় আসন্ন, যেখানে বাঁধাধরা সময় কাজের প্রয়োজন ফুরবে।

Advertisement

আমেরিকায় প্রথম চালু হয় দৈনিক ৮ ঘণ্টা বা সপ্তাহে ৫ দিনের কর্মসংস্কৃতি। যা এখনও বিশ্বে কম-বেশি স্বীকৃত। তার আগে, শিল্পবিপ্লবের সময়, সপ্তাহে ৮০ থেকে ১০০ ঘণ্টা কাজের নজিরও খুঁজে পাওয়া যায়। ১৯২৬ সালে হেনরি ফোর্ডের সংস্থা দিনে ৮ ঘণ্টা ধরে ৫ দিনের কর্ম-সপ্তাহ চালু করে। দেখা যায়, কাজ করার গতি বাড়ছে, সঙ্গে উৎপাদনও। অতঃপর অন্য সংস্থাও সেই পদাঙ্ক অনুসরণ করে। তারপর বিশ্বের বহু দেশ শ্রম আইন সংশোধন করে।
কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেই আইন লঙ্ঘনের প্রবণতা বাড়ছে। ‘আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা’-র রিপোর্ট বলছে, ব্রিটেন-আমেরিকার তুলনায় ভারতে অনেক বেশি সময় কাজ করেন কর্মীরা। সপ্তাহে গড়ে ৪৬.৭ ঘণ্টা। তাতেও রেহাই নেই।

কয়েক দিন আগেই ‘ইনফোসিস’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণমূর্তি সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টা কাজের পক্ষে যুক্তি দিয়েছিলেন। এবার সপ্তাহে ৯০ ঘণ্টা কাজের নিদান দিয়েছেন ‘লারসেন অ্যান্ড টুব্রো’-র চেয়ারম্যান এস. এন. সুব্রহ্মণ্যম। তিনি চান, কর্মীরা, রবিবারও কাজ করুক। এবং সে-কথা বলতে গিয়ে খুব আপত্তিকর মন্তব্যও করেছেন। কর্মীদের প্রতি তঁার কটাক্ষ, ‘বাড়িতে থেকে কী করো তোমরা? কতক্ষণ বউয়ের দিকে তাকিয়ে থাকবে?’ তঁার দাবি, আমেরিকাকে ছাপিয়ে যেতে চলেছে চিন, কারণ, তারা সপ্তাহে ৯০ ঘণ্টা কাজ করে। আর, আমেরিকা ৫০ ঘণ্টা। তবে এর উলটো যুক্তিও রয়েছে। শিল্পপতি গৌতম আদানির মত, প্রত্যেকের উচিত পরিবারকে সময় দেওয়া। নিজের কাজ যদি পছন্দের হয়, তবে কাজ ও ব্যক্তিগত জীবনের ভারসাম্য এমনিই বজায় থাকবে।

সুব্রহ্মণ্যমের মন্তব্যে ‘ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্স’ নিয়ে বিতর্ক আরও জোরদার হয়েছে। একই সঙ্গে তঁার রুচিবোধ, কট্টর পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। পাশাপাশি প্রশ্ন উঠেছে, কর্মীদের বিশ্রাম ও বিনোদনের প্রয়োজনীয়তা কি মালিকপক্ষ স্বীকার করে না! পারিবারিক দায়বদ্ধতা সামলে কেউ নিজস্ব অভিরুচি অনুযায়ী, অফিসে দীর্ঘ সময় কাটাতেই পারে। তাতে তার সমস্যা না-হলেও সহকর্মী বা অধস্তনের সেই সুবিধা হয়তো নেই। তাকে কি বাধ্য করা যাবে? আইনত, তেমন সুযোগ না-থাকলেও, পরিস্থিতির চাপে অনেকেই বাধ্য। কিন্তু ভারতের মতো দেশে যেখানে গণ পরিবহণ অপ্রতুল, পারিবারিক সম্পর্কে জটিলতা, সেখানে এই ধরনের ভাবনা কি আদৌ বাস্তবোচিত? এরপর রয়ে যায়, বেতন পরিকাঠামোর কথা। বেতন যদি সন্তোষজনক না-হয়, বাৎসরিক মূল্যায়ন পদ্ধতি যদি সক্রিয় না-নয়, তবে কেন একই বেতনে কর্মীরা অতিরিক্ত ঘণ্টার বাড়তি কাজ করবে?

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement