Advertisement
Advertisement
কোয়ারেন্টাইন

জাহাজের কেবিন থেকে ঘরের চার দেওয়ালে বন্দি, বিবর্তনের ‘কোয়ারেন্টাইন’

জানেন কি, স্বামীজিকেও সইতে হয়েছিল কোয়ারেন্টাইনের যন্ত্রণা?

Looking back the history of Quarentine and its ongoing significance
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:April 4, 2020 9:25 pm
  • Updated:April 13, 2020 6:00 pm  

সুচেতা সেনগুপ্ত: সংস্পর্শে বা স্পর্শে এক দেহ থেকে আরেক দেহে ছড়িয়ে পড়ে জীবাণু। তাই সংক্রমিত রোগী সে অর্থে সকলের সঙ্গে থাকতে পারেন না। তাঁর ঠাঁই হয় না ঘরে, প্রিয়জনদের সঙ্গে। আবার শুধুমাত্র সন্দেহের বশেই কেউ দূরে ঠেলে দেন আত্মীয়কে। যেমনটা হয়েছে মালদহে। বাড়িতে স্থান হয়নি। বাড়ি থেকে দূরে একফালি নৌকা, সেখানে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন এক বৃদ্ধ। এই ঘটনা আমাদের অবাক করেছে। কিন্তু জানেন কি কোয়ারেন্টাইনের সূত্রপাত এই জলেই? আসুন, সেই শুরুর সময়ে একবার ফিরে দেখা যাক।

কোয়ারেন্টাইনের ধারক এবং বাহক কিন্তু মূলত জাহাজ। ত্রয়োদশ-চতুর্দশ শতকে সমুদ্রপথে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য হত। সেসময় কোনও ছোঁয়াচে রোগ (প্লেগ, কলেরা) ঠেকাতে সফরের মাঝপথে জাহাজ থামিয়ে নাবিক, যাত্রীদের জাহাজের মধ্যে আটকে রাখা হত। সেটাই ‘কোয়ারেন্টাইন’ (Quarentine)। এর মূল শব্দ কোয়ারেন্টেন, অর্থাৎ ৪০ দিন। সেসময় রোগ থেকে সুস্থ হয়ে উঠতে মোটামুটি এরকম দীর্ঘ সময় লেগেই যেত। সংক্রামক ব্যাধি হলে তো কথাই নেই। আরও সাবধানতার জন্য ৪০ দিনের একটা পৃথক জীবনযাপনে অভ্যস্ত হচ্ছিলেন নৌযাত্রীরা।

Advertisement

[আরও পড়ুন: COVID-19 কি তাহলে জৈব রাসায়নিক যুদ্ধের মহড়া?]

পরবর্তী সময়ে অষ্টাদশ শতকে এশিয়ায় কলেরা, উনবিংশ শতকে স্পেনে পীতজ্বর (Yellow fever) সংক্রামক হয়ে ছড়িয়ে পড়তেই ফের কোয়ারেন্টাইনের বেড়াজালে বন্দি হয়ে পড়ে মানুষের জীবন। সেই থেকে আজও এ ধরনের কোনও রোগের ক্ষেত্রে এই ধাপ পেরতেই হয়। বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, ৪২ বা ৪৯ দিনই কোয়ারেন্টাইনের সম্পূর্ণ সময়সীমা। আজকের যুগে তা কমে ১৪ বা ২১ দিনে দাঁড়িয়েছে। তখনকার বাণিজ্যতরী থেকে আজকের প্রমোদতরী – ডায়মন্ড প্রিন্সেস, ‘কোয়ারেন্টাইনড শিপ’-এর তকমা লাগছে সবকটির গায়ে।

Quarentine-Ship-New

বাংলা সাহিত্যেও কিন্তু এই ভেনিশিয়ান শব্দের প্রয়োগ মেলে। স্বয়ং স্বামী বিবেকানন্দ এই শব্দ ব্যবহার করেছিলেন তাঁর সুবিখ্যাত গ্রন্থ ‘পরিব্রাজক’-এ। যদিও স্বামীজির স্কটিশ উচ্চারণে ইউরোপিয়ান শব্দটি একটু অন্যরকম ছিল – কারাঁটীন। স্কটিশচার্চ কলেজের ছাত্র নরেন তাঁর স্কট অধ্যাপকদের থেকে এ ধরনের উচ্চারণই শিখেছিলেন। সে যাই হোক, ১৮৯৯ সালে দ্বিতীয়বার তিনি যখন ইউরোপ ভ্রমণে যান, সেসময়
প্লেগের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। সুয়েজ বন্দরে আটকে যায় তাঁর জাহাজ। কোয়ারেন্টাইন করা হয় যাত্রীদের। সেই অভিজ্ঞতার কথা স্বামীজি প্রতিদিন লিখে পাঠাতেন এখানে। তাঁর সেই দিনলিপি ‘বিলাতযাত্রীর ডায়েরি’ নামে প্রকাশিত হয় ‘উদ্বোধন’ পত্রিকায়। পরবর্তী সময়ে এই সংকলনই বই আকারে বেরয়। বহুবিখ্যাত সেই বইয়ের নাম – ‘পরিব্রাজক’।

Swamiji-Quarentine

তো সেখানে স্বামীজি লিখছেন – “রাত্রিতে জাহাজ অনায়াসেই খাল পার (পডুন সুয়েজ ক্যানাল) হতে পারে যদি সামনে বিজলী-আলো পায়, কিন্তু সে আলো পরাতে গেলে সুয়েজের লোককে জাহাজ ছুঁতে হবে। বস্, দশদিন কারাঁটীন (quarentine)।” এই লেখা থেকেই স্পষ্ট, তাঁকেও দশদিনের কোয়ারেন্টাইনের যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছিল সুয়েজ বন্দরে জাহাজে বন্দি থেকে।

[আরও পড়ুন: করোনার মারে অনিশ্চিতের পথে ভারতের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ]

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিখ্যাত উপন্যাস ‘শ্রীকান্ত’র দ্বিতীয় পর্বে জলপথে শ্রীকান্তর রেঙ্গুন যাত্রার বর্ণনায় উঠে এসেছে ‘কোয়ারেন্টাইন’ শব্দটি। সেখানে লেখা – “পরদিন বেলা এগার-বারটার মধ্যে জাহাজ রেঙ্গুনে পৌঁছিবে; কিন্তু ভোর না হইতেই সমস্ত লোকের মুখচোখে একটা ভয় ও চাঞ্চল্যের চিহ্ন দেখা দিল। চারিদিক হইতে একটা অস্ফুট শব্দ কানে আসিতে লাগিল, কেরেন্টিন্‌। খবর লইয়া জানিলাম, কথাটা quarantine: তখন প্লেগের ভয়ে বর্মা গভর্নমেন্ট অত্যন্ত সাবধান। শহর হইতে আট-দশ মাইল দূরে একটা চড়ায় কাঁটাতারের বেড়া দিয়া খানিকটা স্থান ঘিরিয়া লইয়া অনেকগুলি কুঁড়েঘর তৈয়ারি করা হইয়াছে; ইহারই মধ্যে সমস্ত ডেকের যাত্রীদের নির্বিচারে নামাইয়া দেওয়া হয়। দশদিন বাস করার পর, তবে ইহারা শহরে প্রবেশ করিতে পায়।”

এভাবেই ‘কোয়ারেন্টাইন’ শব্দের সঙ্গে ধীরে ধীরে পরিচিত হয়েছি আমরা, আজ যে শব্দ মুখে মুখে ঘুরছে। 

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement