নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ পাবে আগামী কাল। তারপরও কি অপেক্ষা ফুরবে? আসলে কীসের অপেক্ষায় থাকে ভারত ভূখণ্ডের মানুষ?
‘গোডো’-র জন্য অপেক্ষায় ছিল ডিডি এবং গোগো, আলাপে, কথায় তাদের কতটা সময় কেটে গেল, তবু তো গোডো আসেনি! স্যামুয়েল বেকেটের নাটক ‘ওয়েটিং ফর গোডো’-র সেই অপেক্ষারতদের কি দেখা যায় না আশপাশে? হয়তো তাদের চোখে পড়বে আয়নাতেও। গণতন্ত্রের এত বড় উৎসব, এত অংশগ্রহণের পর আপাতত আর সামান্যই অপেক্ষা, তারপর জানা যাবে জন-রায়। তারপর আবারও পরবর্তী নির্বাচনের অপেক্ষা, কোথাও পঞ্চায়েত, কোথাও বিধানসভা, কোথাও পুরসভা। এইভাবেই কাটবে পাঁচ বছর, আরও একটা সাধারণ নির্বাচনের দোরগোড়ায় এসে পৌঁছে যাওয়া। আবারও গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করা, আঙুলে লেগে থাকা কালো কালির দিকে চেয়ে অপেক্ষা।
এই অপেক্ষা কীসের? ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’-র গানের সেই পঙ্ক্তি ভেসে ওঠে– ‘সেদিন, (পরে ‘সুদিন’ গাওয়া হয়েছিল) কাছে এসো, ভালবাসি একসাথে এই সবকিছু’। এমন কোনও ‘সেদিন’-এর অপেক্ষাতেই কি কেটে যায় গণতন্ত্রের অংশীদার এই কোটি কোটি ভারতবাসীর? যেখানে ভোট নেহাতই আনুষ্ঠানিকতা, যাদের দৈন্য, সংকট, আশঙ্কা কমে না কোনও ফলাফলেই, যাদের জীবনের স্রোত কোথাও বাঁক নেয় না, অথবা চাতকের মতো চেয়ে থাকাতেই কেটে গিয়েছে যাদের স্বাধীনতার সাড়ে সাত দশক– তারা আসলে কীসের অপেক্ষায় থাকে? ‘গোডো’-র মতোই কি এসে পৌঁছবে না সেই ‘সেদিন’ বা ‘সুদিন’, অলীক পথ চাওয়াই কি নিয়তি?
অপেক্ষার মূলে কী থাকে? বোধহয়, আকাঙ্ক্ষা। অপেক্ষা আসলে সেই আশ্চর্য জাদুকাঠি, যা নিরন্তর অপ্রাপ্তি, নিশ্ছিদ্র অন্ধকারের থমথমে রোজনামচার গাছে জল দেয়, সার দেয়। সেই গাছ বাড়ে, বটবৃক্ষর মতো। ছায়া বাড়ে, ছায়া দীর্ঘ হয়ে ওঠে। ছিন্নমূল হয় মানুষ, তবু অপেক্ষার গাছ শিকড়ে গেঁথে থাকে, অটুট। সেই অপেক্ষা প্রাণের মানুষের জন্য কখনও, কখনও বা ঈশ্বর নামে কোনও ধারণার জন্য, কখনও স্বস্তির, সামান্য শান্তির জন্য, কখনও ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধেভাতে’-র সামান্য সুখের জন্য। মানুষ কি সরকারের থেকে খুব বেশি কিছু চায়? শিক্ষা, চাকরির নিশ্চয়তা থেকে মূল্যবৃদ্ধির নিশ্চয়তা, জীবনের নিরাপত্তা, বাক-স্বাধীনতা, মৌলিক অধিকারের সুরক্ষা– এসবের মধ্যেই কি আসলে একটু ভালভাবে বাঁচতে চাওয়ার আর্তি নেই? ‘আমি তো চাহিনি কিছুই, শুধু আপন নীড়ের ছায়া’– সলিল চৌধুরীর সেই গানের মতোই অল্প চাওয়া ও অল্প পাওয়াতেই এখনও দেশের বহু প্রান্তে প্রান্তরে মানুষ খুশি হয়।
একটি অপেক্ষার অবসান হয়তো হবে আগামী কাল, কিন্তু অন্য কত অপেক্ষা জমা হবে, তার কোনও ইয়ত্তা আছে কি? শুধুই টিভির পর্দায়, সংবাদমাধ্যমে ভেসে ওঠা সংখ্যার জন্য তো সেই অপেক্ষা নয়। সেই অপেক্ষা ‘ভারত’ নামে এক বিপুল ভূখণ্ডের আবহমানের শুভার্থীদের নয় কি?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.