লোকসভা ভোটের শেষ পর্বে বিভেদমূলক প্রচার বন্ধের আরজি জানিয়ে বিজেপি ও কংগ্রেসকে পাঠানো নির্বাচন কমিশনের চিঠি হাস্যকর।
ভোট পর্বের শেষ লগ্নে এসে নির্বাচন কমিশন বিজেপি সভাপতি জে. পি. নাড্ডা ও কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গেকে চিঠি দিয়ে বিভেদমূলক প্রচার বন্ধের আরজি জানাল। কমিশন চিঠিতে জানিয়েছে, বিভাজনমূলক ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক প্রচার আদর্শ আচরণবিধির পরিপন্থী। দলের তারকা প্রচারকরা যেন কোনওভাবেই ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায় ও ভাষার ভিত্তিতে প্রচার না চালান। কংগ্রেসের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে বলা হয়েছে, সংবিধান কিংবা দেশের প্রতিরক্ষা নিয়ে কোনও বিরূপ কথা বলা যাবে না।
প্রথম দফার ভোটের পরেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি খুল্লম খুল্লা মেরুকরণের লক্ষে্য প্রচার শুরু করেছেন। ধর্ম ও সম্প্রদায়ের বিষয়টি এসেছে বিজেপির অন্য তারকা প্রচারকদের মুখেও। এ নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে একাধিক দলের তরফে নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জমা পড়েছে। কমিশন একবারের জন্যও আদর্শ আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জবাবদিহি চায়নি। এমনকী, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকেও কমিশন সরাসরি শো-কজ করেনি। জবাবদিহি চাওয়া হয়েছিল কংগ্রেস ও বিজেপির সভাপতিদের কাছে। অবশেষে সেই জবাবদিহির ভিত্তিতে কমিশন দুই দলের সভাপতিকে একটি নির্দেশ দিয়েছে। ভোটের শেষ পর্বে এসে কমিশনের তরফে এই ধরনের নির্দেশের কী মূল্য তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জোর চর্চা।
কমিশন দলের সভাপতিকে সতর্ক করে চিঠি দেওয়ার পরও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তঁাদের প্রচারের ধরন বা ভাষ্য বদলাননি। সমস্ত সীমা অতিক্রম করে প্রধানমন্ত্রী একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, তঁার জন্ম জৈবিকভাবে হয়নি। মায়ের মৃতু্যর পর তিনি উপলব্ধি করেছেন ঈশ্বরপ্রেরিত দূত হিসাবেই তিনি মর্তে্য এসেছেন। সেই জন্য তঁার এত প্রাণশক্তি। ঈশ্বর তঁাকে প্রেরণ করেছেন ২০৪৭-এর মধে্য ‘বিকশিত ভারত’-এর লক্ষ্য পূরণের জন্য। কংগ্রেস প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যকে কটাক্ষ করে বলেছে, ২০৪৭ সালে মোদির বয়স হবে ৯৬ বছর। অর্থাৎ, মোদি ৯৬ বছর পর্যন্ত দেশের প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকার স্বপ্ন দেখছেন। ভারতের প্রায় ৭৫ বছরের সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে কোনও নির্বাচনে এই ধরনের হাস্যকর চাপানউতোর দেখা যায়নি।
ধর্ম, বর্ণ, ঈশ্বর, সম্প্রদায়– কোনও কিছুই এবার ভোটের প্রচারে বাদ থাকেনি। নির্বাচন কমিশন নীরব দর্শক হয়ে প্রত্যক্ষ করেছে। প্রথম দফার ভোটের পর যখন মোদি মেরুকরণের তাস খেলতে শুরু করেন, তখনই যদি কমিশন কঠোর হস্তক্ষেপ করে ভোটপ্রচারে এই ধরনের কথাবার্তা বন্ধের উদে্যাগ নিত, তাহলে বিষয়টি এত দূর গড়াত না। একাধিক অভিযোগ পাওয়ার পর শেষ পর্বে এসে নাড্ডা ও খাড়গেকে ধরানো দু’টি চিঠি আদতে কমিশনের লোকদেখানো, গুরুত্বহীন, হাস্যকরও। নাড্ডা ও খাড়গে ওই চিঠি পেয়ে কমিশনের আরজিকে কতটা সংযত করবেন নিজেদের দলকে, সে-বিষয়টিও প্রশ্নের মুখে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.