রাজনৈতিক ভোটপ্রার্থী প্রচারে বেরিয়ে চুম্বন করেছেন এক নারীকে। বিতর্ক চলছে, চলবে। অবকাশে ফিরে দেখা চুম্বনের ঐতিহাসিকতা।
“ইন ওয়ান কিস, ইউ নো অল আই হ্যাভন’ট সেড।” পাবলো নেরুদার (Pablo Neruda) এই একটি কথা থেকে চুম্বনের সারাৎসার যেন-বা শুষে নেওয়া যায়। অকথিত অনুভূতির প্রবাহ একটিমাত্র চুম্বনের সুবাদে সঞ্চারিত হতে পারে পার্টনারের চেতনায়– অন্তত নেরুদা সেরকমই চিত্রল কবিতা তুলে ধরেছেন। ‘বিটল্স’-খ্যাত পল ম্যাকার্টনি লিখেছেন– ‘ক্লোজ ইওর আইয়েজ অ্যান্ড আই উইল কিস ইউ, টুমরো আই উইল মিস ইউ।’ এখানে চুম্বন ও সম্ভাব্য বিচ্ছেদের কারুণ্য যেন একাকার হয়ে যায়। অন্যদিকে, ইনগ্রিড বার্গম্যান বলেছেন, ‘আই ডোন্ট নো হাউ টু কিস, অর আই উড কিস ইউ। হোয়্যার ডু দ্য নোজেস গো?’
তরজমার আশ্রয় নিলে মজার যে-কথাটি সবচেয়ে বিস্ময়কর তারার মতো মনের আকাশে ফুটে ওঠে, তা হল– চুম্বনের সময় মাঝে নাক চলে আসে না তো? রাজকুমার হিরানির ‘থ্রি ইডিয়টস’ সিনেমার নায়ক তো এই শঙ্কাতেই ভুগত। আবেগতাড়িত চুম্বনের মুূহূর্তে এত কেন প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়? সিনেমার শেষে অবশ্য নায়িকা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নায়ককে চুম্বন করে সহাস্যে বলেছিল– মাঝে নাক চলে আসে না, বোকা। গুগ্লের শরণাপন্ন হলে জানা যাবে– চুম্বনের প্রায় দুই ডজন প্রকারভেদ হয়। ‘স্পাইডারম্যান কিস’ থেকে ‘দ্য সুগার কিস’, ‘এস্কিমো কিস’ থেকে ‘ক্যান্ডি কিস’– কেতা ও কায়দায়, মাহাত্ম্য ও সুখানুভূতিতে কোনওটি কারও থেকে কম যায় না। তবে তালিকায় সবার উপরে রয়েছে ‘ফ্রেঞ্চ কিস’। আন্তরিক প্যাশন ও ইরোটিক রসে আচ্ছন্ন এই গোত্রীয় চুম্বনের খুব কাছে থাকবে ‘আমেরিকান কিস’, তবে তাতে জিভের ব্যবহার সিদ্ধ নয়।
ভারতীয় সিনেমায় এখন চুম্বন-দৃশ্যে এসেছে সাবলীল উন্মাদনা। একসময় কিন্তু সামাজিক দৃষ্টিকোণে যথেষ্টই পিছুটান ছিল, তাই ক্যামেরার সামনে রাখঢাকেরও অন্ত ছিল না। চুম্বন ও যৌন-অন্তরঙ্গতা বোঝাতে ঢালাওভাবে ব্যবহার করা হত ফুলের গায়ে ফুলের ঢলে পড়ার চিত্রকল্প। অন্যদিকে, হলিউড বা ইউরোপীয় সিনেমায় অত আগল ছিল না। সেই কারণে চুম্বনের সামান্য অঁাশ-গন্ধ থাকলেই গোল্লার ভিতরে ‘এ’ লিখে প্রাপ্তমনস্কতার আভাসকে প্রকট করে তোলা হত। চুম্বন নিয়ে হালে ভারতীয় সমাজের আড় ভেঙেছে– ভাল কথা।
তবে স্মরণে রাখতে হবে, চুম্বন প্রেমের স্মারক হলেও কখনও কখনও তা ‘কনসেন্ট’ বা অনুভূতিসাপেক্ষ হয়ে পড়ে। ভালবাসার অজুহাতে অন্যকে অগাধ চুম্বন করার লাইসেন্স নেওয়া অনুচিত, কাজটি গর্হিতও। ‘#মিটু’ আন্দোলন এই বিষয়ে সচেতন করতে চেয়েছিল আপৃথিবীর পুরুষ-মনকে। সম্প্রতি, বঙ্গের একটি রাজনৈতিক দলের ভোটপ্রার্থী প্রচার চলাকালীন একজন নারীকে চুম্বন করে খবরের শিরোনামে এসেছেন। চুম্বনদৃশ্য ভাইরালও হয়েছে। রাজনৈতিক তর্ক-বিতর্কের মাঝের অবকাশে আপাতত বলার: প্রকৃত প্রেমিক-পুরুষ তিনিই, নারীর কপালে চুম্বনে করেও যিনি তঁাকে স্পন্দিত করে তুলতে পারেন। কথাটি অদ্বিতীয়া মেরলিন মনরোর (Marilyn Monroe)!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.