স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর সমর্থন বাক্য সোশাল মিডিয়ায় জ্বলজ্বল করছে। জাল্লিকাট্টুর ঐতিহ্য ফিরে আসা আর মাত্র কিছু সময়ের অপেক্ষা। প্রথা-সংস্কৃতি-ঐতিহ্য-ইতিহাস সবই ফিরবে। কিন্তু মানবিকতা কোথায় থাকবে? প্রশ্ন তুললেন সুপর্ণা মজুমদার
বিশ্বাস। করলেই মিলবে, নচেত নয়। তর্ক-বিতর্ক, আলাপ-আলোচনা, পর্যালোচনা-সমালোচনা সবই থাকবে। কিন্তু বিশ্বাস সেই শক্ত ভিত যার উপর নির্ভর করে সনাতন কালেও মানুষ বেঁচে ছিল, আজও মানুষ বেঁচে রয়েছে। এই বিশ্বাসে সামান্যতম আঘাতও যে কত বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। তা সাম্প্রতিককালে কেন্দ্রীয় সরকার হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে। সেই সৌজন্যেই ফিরে আসতে চলেছে তামিল সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী উৎসব জাল্লিকাট্টু।
জাল্লি অর্থাৎ মুদ্রা। আর কাট্টু অর্থাৎ উপহার। এই দুই শব্দের সমন্নয়েই তৈরি জাল্লিকাট্টু। শোনা যায়, খ্রিস্ট জন্মের অনেক আগে থেকেই নীলগিরির পাদদেশে খেলা হয় এই ঐতিহ্যবাহী খেলা। সাধারণত নতুন ধানের খুশি উদযাপনের জন্যই এই খেলায় মাতেন তামিল পুরুষরা। সযত্নে লালনপালন করা হয় এর বিশাল ষাঁড়কে। তারপর তার মাথার শিংয়ে বেঁধে দেওয়া হয় উপহারের মূল্য। পুরুষদের গায়ের জোরে শিং ধরে বশ মানাতে হয় এই হিংস্র প্রাণীটিকে। যিনি পারেন, তিনিই পান মহার্ঘ পুরস্কার।
দিনের পর দিন চলতে থাকা এই খেলা কবে প্রথার আকার নিয়েছে। ঠিক করে কেউ বলতে পারবেন না হয়তো। কিন্তু নিরীহ প্রাণীর উপর নির্যাতন নিয়ে অনেকেই অনেকরকম প্রশ্ন তুলেছিলেন। বিশেষ করে পেটা (PETA)। প্রাণীদের প্রতি মানবিক আচরণের সমর্থকরা প্রশ্ন তুলেছিলেন কেন সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, প্রথার নামে একটি পশুকে নির্যাতন করা হবে? তাকে খেপানোর জন্য লাল মরিচের গুড়ো চোখে দেওয়া হবে? কেন অবলা পশুকে মাদক খাওয়ানো হবে? এমনই প্রশ্নের জেরে নড়চড়ে বসেছিল সরকার। প্রাচীন এই খেলাটি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এখানেই ঘটল বিপত্তি। বিবিধের মাঝে যেই দেশ মহান মিলনের সাক্ষী। সেই দেশ দেখল ঐতিহ্যের খাতিরে গণ অভ্যুত্থান। যা টলিয়ে দিল সরকারের রাজদণ্ডকেও। হাজার হাজার মানুষ জমায়েত হয়েছিলেন চেন্নাইয়ের মেরিনা সৈকতে। নিজেদের ঐতিহ্য রক্ষার জন্য শুরু করেছিলেন আন্দোলন। ফেসবুক, টুইটার, ব্লগে উপচে পড়েছে নানাবিধ প্রতিবাদের ভাষা। আন্দোলনের স্রোতে গা ভাসিয়েছিলেন রজনীকান্ত, কামাল হাসানরা। প্রতিবাদের পথে একধাপ এগিয়ে অনশন শুরু করেছিলেন এ আর রহমানের মতো ব্যক্তিত্বও।
I’m fasting tomorrow to support the spirit of
Tamilnadu!— A.R.Rahman (@arrahman) January 19, 2017
প্রতিবাদের এই ঝড় টলিয়ে দিয়েছে দিল্লির রাইসিনা হিলস পর্যন্ত। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আসরে নেমে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য বলতে হয়েছে, তালিনাড়ুর এই সমৃদ্ধশালী সংস্কৃতি নিয়ে আমরা গর্বিত। তামিল সম্প্রদায়ের এই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষার জন্য সমস্ত রকম পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
We are very proud of the rich culture of Tamil Nadu. All efforts are being made to fulfil the cultural aspirations of Tamil people.
— Narendra Modi (@narendramodi) January 21, 2017
পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছেও। জাল্লিকাট্টুকে ফিরিয়ে আনতে যে ড্রাফট অর্ডিন্যান্স জারি করা হয়েছিল রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে, তাতেই সম্মতি দিয়েছে কেন্দ্র। এখন শুধু রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় সম্মতির অপেক্ষা। তারপর আর কোনও বাধা থাকবে না মুখ্যমন্ত্রী পন্নিরসেলভমের প্রজাদের। সাধারণতন্ত্র দিবসের প্রাক্কালে প্রজার জোরেই আবার নীলগিরি পাদদেশে উপহারের জন্য শুরু হবে তীব্র লড়াই। যুদ্ধ জয়ের লড়াই। ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখার লড়াই। জানা গিয়েছে, লড়াই চালিয়ে যাবে পেটাও (PETA)। সেই লড়াই মানুষের জন্য নয়, এক নিরীহ পশুর জন্য। মানবিকতার জন্য। আপনি কাকে সমর্থন করবেন?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.