প্রথমে জাফার এক্সপ্রেস এবং পরে পাক সেনার কনভয়ে আক্রমণ যেন প্রমাণ করে দিল– বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।
১১ মার্চ জাফর এক্সপ্রেসে দুষ্কৃতী আক্রমণ এবং ১৬ মার্চ তাফতানের অদূরে পাকিস্তানি সেনার কনভয়ে চড়াও হওয়া– সম্প্রতি একাধিক জঙ্গি-হামলার ঘটনা পাকিস্তানের সবচেয়ে অস্থির প্রদেশ বালুচিস্তানের নিরাপত্তা-সংকট যে কতটা গুরুতর, তাই যেন তুলে ধরল। জেলবন্দি বালোচ জঙ্গিদের মুক্তির দাবিতে ‘বালোচ লিবারেশন আর্মি’ (বিএলএ) যে দু’টি দুঃসাহসিক হামলা চালিয়েছে, তাতে সামনে এসেছে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের শক্তিবৃদ্ধি এবং সামরিক পন্থায় বালোচ-বিদ্রোহ দমনে পাকিস্তানের সার্বিক ব্যর্থতা। পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া হল বহিরাগত শক্তিকে দোষারোপ করা। প্রতিবেশী রাষ্ট্রটিতে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিংসা মাথাচাড়া দিলেই ভারত ও আফগান প্রশাসনের দিকে আঙুল তোলা হয়। বলা হয়, দু’-পাশের দু’টি দেশ বালোচ বিদ্রোহীদের মদত দিচ্ছে।
সে-বার্তায় পাকিস্তান যেভাবে নিজেদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা ও ত্রুটি-বিচ্যুতি আড়াল করার চেষ্টা করে, তাতেই অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েনের অন্তরকথা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বালোচিস্তানের সবচেয়ে শক্তিশালী বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী ‘বিএলএ’, সাম্প্রতিক কয়েক বছরে তারা বারবার হামলা চালিয়েছে। যেমন, গত বছরের নভেম্বরে, বালোচিস্তানের রাজধানী কোয়েটায় রেল স্টেশনে আত্মঘাতী হামলায় কমপক্ষে ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল। লক্ষণীয়, পরিকাঠামো প্রকল্পে কর্মরত চিনা শ্রমিকরাই বালোচ-বিদ্রোহীদের ‘টার্গেট’। এর উদ্দেশ্য- এ অঞ্চলে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ও কৌশলগত স্বার্থকে ব্যাহত করা।
বালুচিস্তানের জনগণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অভিযোগাদি উপেক্ষা করে সামরিক শক্তির উপর নির্ভর করার কৌশল বিদ্রোহীদের আরও বেপরোয়া করে তুলেছে বলে মনে করা হচ্ছে। বালোচ জাতীয়তাবাদীরা দীর্ঘ দিন এ অঞ্চলের উন্নয়নে কোনও বিনিয়োগ না-করে সেখানকার প্রাকৃতিক সম্পদ শোষণের অভিযোগ করে আসছে। পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা জোরপূর্বক গুম, নির্যাতন, ও বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ সংকট বাড়িয়েছে যেমন– তেমনই তা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আরও শক্তিশালীও করেছে। প্রথমে আফগান তালিবানের সঙ্গে পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে কৌশলগত সুবিধা হিসেবে দেখা হয়েছিল।
কিন্তু ‘বিএলএ’ এবং ‘তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান’ (টিটিপি) উভয়ই তালিবান-নিয়ন্ত্রিত আফগানিস্তানে আশ্রয় নেওয়ায় সম্পর্কে জটিলতা আসে। পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার সঙ্গে তা মিলিত হয়ে– ইসলামাবাদকে কেবল সামরিক উপায়ে বিদ্রোহ মোকাবিলা করার জন্য অক্ষম করে তুলেছে। যদি বালোচিস্তানে স্থিতিশীলতা আনতে সত্যিই সচেষ্ট হয় পাকিস্তান, তবে সামরিক প্রতিক্রিয়ার বাইরে গিয়ে গভীর মনোনিবেশ-সহ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান করতে হবে। বালোচ নেতাদের সঙ্গে রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনা হওয়া দরকার– পরিকাঠামো, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিষেবায় আর্থিক বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য এবং ভিন্নমত দমনের চেষ্টার অবসানে। কিন্তু এগুলি কি বালোচের দীর্ঘ দিনের সমস্যার স্থায়ী সমাধান হতে পারবে?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.