Advertisement
Advertisement

Breaking News

Indian economy

দেশের অর্থনীতি কি সত্যি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে?

অর্থনীতি নিয়ে কেন্দ্রকে তোপ দেগেছেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র।

Is Indian economy recovering from economic downturn | Sangbad Pratidin
Published by: Monishankar Choudhury
  • Posted:September 14, 2021 6:03 pm
  • Updated:September 14, 2021 6:03 pm  

রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র কেন্দ্রীয় সরকারের দিকে যে পত্রবোমা ছুড়েছেন, তার নিশানায় ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব। বেহাল অর্থনীতির মধ্যেও কেন্দ্র বর্তমান আর্থিক বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকের আর্থিক বৃদ্ধি নিয়ে যে ঢাক পেটাচ্ছে এবং অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বলে দাবি করছে, তা একেবারেই অবান্তর বলে মত অমিতবাবু-সহ অধিকাংশ অর্থনীতিবিদের। লিখছেন সুতীর্থ চক্রবর্তী

রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র সম্প্রতি দু’টি গোলা ছুড়েছেন কেন্দ্রীয় সরকারের দিকে। অমিতবাবুর নিশানায় দেশের ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব। বেহাল অর্থনীতির মধ্যেও কেন কেন্দ্র বর্তমান আর্থিক বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকের আর্থিক বৃদ্ধি নিয়ে ঢাক পেটানো শুরু করেছে এবং অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বলে দাবি করছে, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তিনি। বণিকসভা ‘ফিকি’-র প্রাক্তন কর্তা, অর্থনীতিবিদ ও এক দশকের উপর রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রর এই দুই প্রশ্নের জবাব কেন্দ্র দেবে কি না, জানা নেই। তবে, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণকে লেখা অমিতবাবুর চিঠি এবং দু’দিন পরের টুইট নিয়ে যে সাধারণ মানুষের মধ্যে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে, তা নিয়ে সংশয় নেই। জাতীয় পরিসংখ‌্যান দফতর তথা ‘এনএসও’-র জিডিপি সংক্রান্ত তথ‌্য গত কয়েক দিন ধরে অর্থনীতিবিদদের মধ্যে তুমুল বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

Advertisement

[আরও পড়ুন: তালিবানের উত্থানে দুনিয়াজুড়ে ফের বাড়ছে সন্ত্রাসবাদ! তবে পরিস্থিতির মোকাবিলা করাটাই সভ্যতা]

২০২১-’২২-এর প্রথম তিনমাস, অর্থাৎ এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে দেশের জিডিপি বৃদ্ধি ২০.১ শতাংশ হয়েছে বলে তথ‌্য এনএসও-র। এই বৃদ্ধিকে দেখা হয়ে থাকে ঠিক তার এক বছর আগের একই সময়ের প্রেক্ষিতে। বর্তমান বছরের এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধে্য ২০.১ শতাংশ জিডিপি বৃদ্ধির অর্থ হল, ২০২০-’২১-এর প্রথম ত্রৈমাসিক, মানে এপ্রিল থেকে জুনের আর্থিক অবস্থার তুলনায় এই বৃদ্ধি ঘটেছে। ২০২০-’২১-এর এপ্রিল থেকে জুনে দেশে লকডাউন ছিল, ফলে ওই তিনমাসে তার আগের বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকের তুলনায় জিডিপি কমেছিল ২৪.৪ শতাংশ। যেহেতু ২০২০-’২১-এ ভিতটা অনেক নিচুতে নেমে গিয়েছিল, তাই ২০২১-’২২-এ যে বৃদ্ধি দেখানো হচ্ছে, তা আদৌ কোনও বৃদ্ধি কি না- সেই প্রশ্ন উঠেছে।

অমিতবাবু কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনকে যে পত্রবোমা ছুড়েছেন, তাতে দাবি করেছেন, ২০১৯-’২০-র প্রথম ত্রৈমাসিকের সঙ্গে তুলনা করলে ২০২১-’২২-এ জিডিপি কমেছে ৭.৭৯ শতাংশ। অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসুর হিসাবে, এই হ্রাস ৯.২ শতাংশ। রিজার্ভ ব‌্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর সি. রঙ্গরাজন ও অর্থনীতিবিদ ডি. কে. শ্রীবাস্তব তাঁদের এক যৌথ নিবন্ধে দাবি করেছেন, বর্তমান আর্থিক বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে অর্থনীতিকে যদি কোভিড-পূর্ববর্তী ২০১৯-’২০-র প্রথম ত্রৈমাসিকের স্তরে পৌঁছতে হত, তাহলে ৩২.৩ শতাংশ আর্থিক বৃদ্ধির প্রয়োজন ছিল। কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে ২০.১ শতাংশ। ২০১৯-’২০-র প্রথম ত্রৈমাসিকে দেশের মোট যা আয় ছিল, ২০২১-’২২-এ প্রথম ত্রৈমাসিকে তা তিন লক্ষ ৩০ হাজার কোটি টাকা কম। মোদ্দাকথা, বর্তমান আর্থিক বর্ষে প্রথম তিনমাসে অর্থনীতি কোভিড-পূর্ববর্তী অর্থনীতির চেয়ে ঢের পিছিয়ে। ফলে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, এই দাবি একেবারেই অবান্তর বলে মত অমিতবাবু-সহ দেশের অধিকাংশ অর্থনীতিবিদের। তাছাড়া, কোভিড-পূর্ববর্তী ২০১৯-’২০-এ দেশের অর্থনীতি চাহিদার অভাবে ঝিমিয়ে পড়েছিল। তখনই সরকারের সামনে চ‌্যালেঞ্জ ছিল, চাহিদা বাড়িয়ে অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড় করানো। কোভিড এসে যাওয়ায় সেই কাজ হয়নি। উলটে ২০২০-তে অর্থনীতি প্রবলভাবে মুখ থুবড়ে পড়ে।

লকডাউনের মধ্যে ও তারপরে কেন্দ্রীয় সরকার যে অস‌ংখ‌্য পদক্ষেপ করেছে, তাতে যে অর্থনীতি বিন্দুমাত্র ঘুরে দাঁড় করানো সম্ভব হয়নি, সেই দাবি বারবার তুলেছেন অমিতবাবু। তাঁর বক্তব্যে যে সারবত্তা রয়েছে, তা অস্বীকারের জায়গা নেই। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে চিঠিতে অমিতবাবু রিজার্ভ ব্যাংকের পরিসংখ‌্যান উল্লেখ করে জানিয়েছেন, কেন্দ্রের ঋণের জোগান বাড়ানো সংক্রান্ত বিভিন্ন পদক্ষেপের পরেও দেশে এক বছরে বেসরকারি লগ্নি কমেছে ২.১ লক্ষ কোটি টাকা। 

অর্থনীতিতে চাহিদা কী হারে বাড়ছে, তা পরিমাপের ক্ষেত্রে ভোগ‌্যপণ্যের উপর বেসরকারি ব‌্যয়ের পরিমাণ একটি উল্লেখযোগ‌্য নির্ধারক। একে অর্থনীতির পরিভাষায় আমরা বলি, ‘প্রাইভেট ফাইনাল কনজাম্পশন এক্সপেন্ডিচার’ (পিএফসিই)। ২০২১-’২২-এর প্রথম ত্রৈমাসিকে পিএফসিই ১৯.৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু, ২০২০-’২১-এ তা ২৬.২ শতাংশ কমে গিয়েছিল। ২০১৯-’২০-র প্রথম ত্রৈমাসিকের স্তরে পৌঁছতে পিএফসিই-র ৩৫.৫ শতাংশ বৃদ্ধি প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তা ঘটেনি। এই না ঘটার নেপথ্যে মূল কারণ অব‌শ‌্যই দেশে বেকারত্ব বৃদ্ধি। লোকের যদি চাকরি না থাকে, তাহলে সে ব্যয় করার জন্য টাকা কোথা থেকে পাবে? কোভিডে তো বহু মানুষের সেই অবস্থা হয়েছে। অর্থনীতিতে চাহিদা তৈরি করে সরকারি ব‌্যয়ও। ব‌্যক্তিগত বা বেসরকারি ব‌্যয় ২০১৯-’২০-র স্তরে না বাড়লেও, তা-ও অনেকটা বেড়েছে। কিন্তু সরকারি ব‌্যয় ২০২০-’২১-এর প্রথম তিনমাসের তুলনাতেও ২০২১-’২২-এর প্রথম তিন মাসে ৪.৮ শতাংশ কমে গিয়েছে। যে পরিস্থিতিতে চাহিদা বাড়ানোর জন‌্য সরকারি ব‌্যয়বৃদ্ধির প্রয়োজন ছিল, সেখানে যদি সরকারি ব‌্যয় কমতে থাকে, তাহলে অর্থনীতির পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো কীভাবে সম্ভব? এই মৌলিক প্রশ্ন তুলেছেন অমিতবাবু। প্রসঙ্গক্রমে রাজ‌্য সরকারের ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’-এর মতো প্রকল্পের কথাও টেনেছেন। যে-প্রকল্পে সাধারণ মানুষের হাতে টাকা তুলে দিয়ে অর্থনীতিতে চাহিদা তৈরির চেষ্টা হচ্ছে।

কোভিড-পরবর্তী সময়ে অর্থনীতিতে সবচেয়ে বেশি আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে পরিষেবা ও উৎপাদন ক্ষেত্র। ২০২০-’২১-এ পরিবহণ, ব‌্যবসা ইত‌্যাদি পরিষেবা ক্ষেত্রে ৪৮.১ শতাংশ সংকোচন হয়েছিল। ২০২১-’২২-এও দেখা যাচ্ছে, প্রথম ত্রৈমাসিকে পরিষেবা ক্ষেত্রে বৃদ্ধি কাঙ্ক্ষিত হারে নয়। ২০২০-’২১-এ লকডাউনের জেরে পরিবহণ, ব‌্যবসা-বাণিজ‌্য কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ২০২১-’২২-এ কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে অধিকাংশ রাজ্যে এপ্রিল-মে মাসে ব‌্যবসা-বাণিজ‌্য ও পরিবহণ ক্ষেত্র ভীষণভাবে মার খায়। ফলে, ২০২১-’২২-এ পরিষেবা ক্ষেত্র থেকে আয় ২০১৯-’২০-র প্রথম ত্রৈমাসিকের তুলনায় ৩০.২ শতাংশ কম রয়েছে। একমাত্র বৃদ্ধি রয়েছে দেশের কৃষিক্ষেত্রে। ২০২১-’২২-এর প্রথম ত্রৈমাসিকেও কৃষিক্ষেত্রে বৃদ্ধি ঘটেছে ৪.৫ শতাংশ। লকডাউনের মধ্যে ২০২০-’২১ অর্থবর্ষে সামগ্রিকভাবে কৃষিতে বৃদ্ধির হার ৩.৬ শতাংশ ছিল। কিন্তু মনে রাখতে হবে, আমাদের জাতীয় আয়ে কৃষির অবদান মাত্র ১৫ শতাংশ। ফলে শিল্প-পরিষেবা ক্ষেত্রকে বাদ দিয়ে শুধু কৃষি দিয়ে অর্থনীতির শ্রীবৃদ্ধি সম্ভব নয়।

দেশের এই বেহাল আর্থিক অবস্থার মধ্যে যেটা সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ তা হল, সরকারের কর রাজস্ব আদায় কিন্তু যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২০-’২১-এর প্রথম ত্রৈমাসিকের তুলনায় ২০২১-’২২-এ প্রথম ত্রৈমাসিকে কর রাজস্ব আদায়ের বৃদ্ধি ঘটেছে ৮৩.১ শতাংশ। ২০১৯-’২০-র প্রথম ত্রৈমাসিকের তুলনায় বিচার করলে কর রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি ২৯.১ শতাংশ। ২০২১-’২২-এর প্রথম ত্রৈমাসিকে কোষাগার ঘাটতিও তেমন উদ্বেগজনক নয়। বাজেটে গোটা অর্থবর্ষ যে কোষাগার ঘাটতির উল্লেখ রয়েছে, তার মাত্র ২১.৩ শতাংশ ঘটেছে প্রথম তিন মাসে। ফলে এই পরিস্থিতিতে দেশের সামগ্রিক চাহিদা বাড়াতে সরকারের হাতে কিন্তু সুযোগ রয়েছে খরচ বৃদ্ধির। অমিত মিত্র প্রশ্ন তুলেছেন, গত দু’বছরে যেখানে সরকারি হিসাবে দেশে কাজ হারিয়েছে তিন কোটি ৬০ লক্ষ মানুষ, যেখানে সংগঠিত ক্ষেত্রে কাজ প্রায় নেই বললেই চলে, শহরের মানুষকে যেখানে কাজের সন্ধানে গ্রামে যেতে হচ্ছে, সেখানে সরকার কেন এগিয়ে আসবে না চাহিদা বাড়াতে? অমিতবাবুর মতে, চাহিদা বাড়িয়েই একমাত্র লগ্নিকারকদের আস্থা পাওয়া যেতে পারে। বাজারে তার পণ‌্য বিক্রি হবে- এই আশ্বাস পেলেই লগ্নিকারকরা এগিয়ে আসে। অমিতবাবুর এই যুক্তি অকাট্য। যদি রাজস্ব বৃদ্ধির কারণে কেন্দ্র সরকারের ব্যয় বাড়ানোর সুযোগ থাকে, তাহলে তারা কেন এই বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে ৪.৮ শতাংশ ব্যয় কমিয়েছে? কেন্দ্রের থেকে এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া কিন্তু জরুরি।

[আরও পড়ুন: তালিবানের শাসনে কেমন হওয়া উচিত ভারতের আফগানিস্তান নীতি?]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement