১৯৪৩-এর ২১ অক্টোবর সিঙ্গাপুরের ক্যাথে সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল প্রথম ‘স্বাধীন’ ভারতীয় সরকার৷ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু হয়েছিলেন সেই সরকারের ‘প্রথম’ প্রধানমন্ত্রী৷ নেতাজির জন্মদিনেই ইতিহাসের সেই পাতা তুলে ধরলেন পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়৷
১৯৪১-এর ১৬ জানুয়ারি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ব্রিটিশ ইন্টেলিজেন্সের চোখে ধুলো দিয়ে ছদ্মবেশে পালিয়েছিলেন৷ নানা জায়গা ঘুরে, অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে, ইতালীয় দূতাবাসের সহায়তায় তিনি রাশিয়া হয়ে জার্মানিতে গিয়ে পৌঁছন৷ গঠন করেন যুদ্ধবন্দিদের নিয়ে এক বাহিনী, যাঁরা ইন্ডিয়ান রিজিয়নের সদস্য হলেন৷ কিন্তু ভৌগোলিকভাবে অত দূর থেকে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নিয়োজিত থাকা যে বেশ কঠিন! এটা উপলব্ধি করে নেতাজি পূর্ব-এশিয়ায় চলে আসতে চান৷ রাসবিহারী বসু তখন জাপানে৷ সাবমেরিন করে জাপানে পৌঁছলে রাসবিহারী বসু নেতাজির হাতে তুলে দেন ‘আজাদ হিন্দ ফৌজ’-এর ভার৷
ডিজিটাল লেনদেনে আধার নম্বরই আপনার নতুন পাসওয়ার্ড
জাপান সরকার সর্বতোভাবেই এই স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতকে সাহায্য করে ব্রিটিশ-শাসনমুক্ত করতে প্রস্তুত ছিল৷ কিন্তু একইসঙ্গে তারা বাহিনীকে রাখতে চেয়েছিল আজ্ঞাধীন৷ সুভাষচন্দ্র জাপান কর্তৃপক্ষকে বোঝাতে সক্ষম হন যে, শুধুমাত্র মিলিটারি কার্যক্রম ভারতের স্বাধীনতার জন্য পর্যাপ্ত নয়৷ চাই আলাদা প্রচার কার্যক্রম৷ এজন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, একটি স্বাধীন সরকারের প্রতিষ্ঠা– যাকে ‘অক্ষশক্তি’ প্রয়োজনীয় স্বীকৃতি প্রদান করবে৷ নেতাজি পূর্ণ উদ্যমে নতুন স্বাধীন সরকার গঠনের উদ্যোগ নিলেন৷
আন্দোলনে ফিরছে জাল্লিকাট্টু, কিন্তু মানবিকতা কোথায়?
১৯৪৩-এর ২১ অক্টোবর সিঙ্গাপুরের ক্যাথে সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে প্রতিষ্ঠিত হয় তথাকথিত প্রথম ‘স্বাধীন’ ভারতীয় সরকার: ‘Provisional Government of Free India’৷ গঠিত হয় পূর্ণ মন্ত্রিসভা৷ আর রাষ্ট্রপ্রধান, প্রধানমন্ত্রী ও বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হিসেবে প্রথমেই শপথ নেন সুভাষচন্দ্র বসু৷ নিজের হাতে রাখেন পররাষ্ট্র ও যুদ্ধবিষয়ক দফতর৷ অর্থমন্ত্রী এ. সি. চট্টোপাধ্যায়, নারীবিষয়ক মন্ত্রী লক্ষ্মী সেহগল, প্রচার ও প্রপাগান্ডা দফতরের প্রধান এস. এ. আইয়ার৷ এ. এন. সরকার-সহ আরও ১৫ জন ছিলেন মন্ত্রিসভায়৷ রাসবিহারী বসু মনোনীত হন এই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা৷
সে রাতেই প্রধানমন্ত্রী সুভাষচন্দ্রের বাসভবনে মন্ত্রিসভার পূর্ণাঙ্গ বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ইঙ্গ-মার্কিন শক্তির বিরুদ্ধে অবিলম্বে যুদ্ধ ঘোষণা করতে হবে৷ রাত বারোটার পর সিঙ্গাপুর রেডিও মারফত প্রধানমন্ত্রী নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ইঙ্গ-মার্কিন শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন৷
বাংলার এই সৌন্দর্য আপনি আগে দেখেছেন কি?
একবছর দশ মাস এই স্বাধীন সরকার দেশ শাসন করেছিল৷ আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ও ভারতের মূল ভূখণ্ডের পূর্ব সীমান্ত ছিল এই সরকারের শাসনাধীন৷ কিন্তু ১৯৪৫-এর ৬ ও ৯ আগস্ট আমেরিকা অ্যাটম বোম নিক্ষেপ করায় আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয় জাপান এবং প্রধান সাহায্যকারীর অনুপস্থিতিতে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিকল্পিত পথে পূর্ণতা লাভ করতে ব্যর্থ হয়৷
কিন্তু ২১ অক্টোবর ১৯৪৩-এ যে অন্তর্বর্তীকালীন ‘স্বাধীন’ ভারত সরকার স্থাপিত হয়েছিল তাকে স্বীকৃতি জানিয়েছিল ইউরোপ ও এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশ৷ ক্রোয়েশিয়া, আয়ারল্যান্ড, ইটালি, জার্মানি, জাপান, ফিলিপাইন্স, মায়ানমার, তাইল্যান্ড, মাঞ্চুকুয়ো(চিন)- সহ ১০টি দেশের স্বীকৃতি লাভ করে প্রধানমন্ত্রী নেতাজি সুভাষের নেতৃত্বে এই সরকার প্রকাশ করেছিল ডাকটিকিট৷ চালু রেখেছিল নিজস্ব ডাকব্যবস্থা, কারেন্সি নোট৷ স্থাপিত হয়েছিল আজাদ হিন্দ ব্যাঙ্ক (রিজার্ভ ব্যাঙ্ক)৷ আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ পরিদর্শন করে নেতাজি এ দু’টি জায়গার নাম বদলে রেখেছিলেন ‘শহিদ’ ও ‘স্বরাজ দ্বীপ’৷ নিয়োগ করেছিলেন প্রশাসক৷ এই সরকার বিদেশে দূতাবাসও স্থাপন করে৷
‘প্রধানমন্ত্রী’ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর এই কথা বর্তমান প্রজন্ম কেন সেভাবে জানে না, তা এক বিস্ময়!
(মতামত নিজস্ব)
‘আমেরিকার অর্থনীতি ধ্বংস হয়েছে বেহিসাবি যুদ্ধের জন্য’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.