Advertisement
Advertisement

Breaking News

climate change

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে জলবায়ুর খবর কি আদৌ গুরুত্ব পায়?

কতগুলো চ্যানেল রাজনৈতিক বিবাদ ছেড়ে সুন্দরবনের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করছে?

Indian media mute on climate change | Sangbad Pratidin
Published by: Monishankar Choudhury
  • Posted:November 11, 2021 10:29 am
  • Updated:November 11, 2021 10:29 am  

কার্বন এমিশনের ক্ষেত্রে আমরা ‘জিরো টলারেন্স’-এ যেতে চাইছি- এই কথাটা নরেন্দ্র মোদি বলেছেন। যদিও বেশ কিছু আমলা চাইছিলেন না যে, এই কমিটমেন্ট ২০৩০ সালের মধ্যে ভারত করুক। বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে এই ধরনের প্রতিশ্রুতি না রাখাই বাঞ্ছনীয় বলে তাঁরা মনে করেন। আমলারা বেশি সাবধানী। কিন্তু নরেন্দ্র মোদি ঝুঁকি নিয়েই কথাগুলো বলে এসেছেন। লিখছেন জয়ন্ত ঘোষাল

ভার্জিন আটলান্টিকের রাতের বিমান। দিল্লি থেকে লন্ডন। বিমানে উঠে জিনিসপত্র গোছগাছ করে বসতে না বসতেই এয়ার হোস্টেস এসে জানতে চাইলেন, আপনারা ডিনার করতে চান, না কি আপনাদের শোয়ার ব্যবস্থা করে দেব? কিছুক্ষণের মধ্যে দেখলাম, অনেকে ডিনার না করেই পানীয় গ্রহণ করে বিছানা-বালিশ নিয়ে খুপরিতে ঘুমিয়ে পড়েছেন।

Advertisement

ঘুম আসছিল না। বই পড়তে শুরু করলাম। খেয়াল করিনি, এক ব্রিটিশ যুবক খুব মনোযোগ দিয়ে দূর থেকে আমার বইটার প্রচ্ছদ দেখছিল। বইটার নাম ‘ইন্ডিয়া ভার্সেস ইউকে’ (India versus UK: The Story of an Unprecedented Diplomatic Win)। লেখক ভারতীয় কূটনীতিক সৈয়দ আকবরউদ্দিন। ২০১৭ সালে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ জাস্টিসের ভোটাভুটিতে কীভাবে ব্রিটেনকে পরাস্ত করে ভারত জিতেছিল, তার কাহিনি। আকবরউদ্দিন ফরেন সার্ভিসের অফিসার। ২০১৬ থেকে ২০২০ পর্যন্ত ইউনাইটেড নেশনসে কর্মরত ছিলেন। এখন অবসর নিয়ে হায়দরাবাদে ‘কৌটিল্য স্কুল অফ পলিসি’-র ডিন হয়েছেন।

[আরও পড়ুন: জ্বালানির দাম কমিয়েছে সরকার, এতদিন পর এই সামান্য তৎপরতা কি কাজে দেবে?]

ব্রিটিশ যুবকটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি করে, মাঝে মাঝেই দিল্লি আসে। নাম জন লেভিন। সে বলল, তুমি এখন লন্ডনে যাচ্ছ কোন লড়াই লড়তে? আমি বললাম, এবার লড়াই স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে, জলবায়ু নিয়ে। আমাদের ক্লাইমেট ঠিক করার জন্য আমেরিকা এবং তোমাদের দেশের মতো কয়েকটি দেশ আমাদের উপর যেভাবে চাপ সৃষ্টি করছে- সেটাও ঠিক নয়। জলবায়ুকে দূষণমুক্ত করতে হবে, তা না হলে সমূহ বিপদ, ঠিক কথাই। কিন্তু তোমাদের এতদিন সে কথা মনে ছিল না? এখন, হঠাৎ করে খেয়াল হতে আমাদের ঘাড়ে দায় চাপিয়ে দিচ্ছ যে, এখনই সবকিছু করতে হবে?

ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে আমাদের পূর্বসূরিরা অনেক লড়াই করেছেন- সিপাহি বিদ্রোহ থেকে স্বাধীনতা আন্দোলন পর্যন্ত। আকবরউদ্দিনের কাহিনি তো ২০১৭ সালের। সে-ও এক স্বাধীনতা সংগ্রামই হয়ে দাঁড়িয়েছিল, এ-কথা আকবরউদ্দিন নিজেই বলেছেন। সবাই যখন কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে, তখন আমি আর জন লেভিন তুমুল তর্কবিতর্ক চালিয়ে গেলাম এই নিয়ে। তবে, ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই বেশ বন্ধুত্ব হয়ে গেল। তর্ক করতে কিন্তু খারাপ লাগেনি।

আমি বললাম, ১৮৫৩ সালের ১৬ এপ্রিল তোমরা ভারতে রেলগাড়ি চালু করলে। আর, তোমরা নিজেদের দেশে রেল চালু করেছিলে ১৮২৫ সালে। তারপর আমাদের দেশ থেকে কাঁচামাল নিয়ে গিয়ে তোমরা ফ্যাক্টরি বানালে, নিজেরাই শিল্পায়ন করলে, আর এত বছর ধরে কার্বন এমিশন করলে, নিজেরাই এখন তার ভুক্তভোগী। আমরাও ভয়ংকরভাবে ভুক্তভোগী। কিন্তু তাই বলে আমাদের শিল্পায়ন তো এখনও শেষ হয়ে উঠতে পারেনি। ‘উন্নত’ আর ‘উন্নতিকামী’ দেশের এটাই তো তফাত। আর আমাদের যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে অনুন্নত ছোট ছোট দেশের কী হবে! অথচ তোমরা বিশ্ব সম্মেলন করে ফরমান জারি করছ!

জন বলল, এই হচ্ছে তোমাদের সমস্যা। তোমরা ‘ব্যাগেজ অফ হিস্ট্রি’ নিয়ে বসে আছ। কবে কী হয়েছিল, সেই ইতিহাসের দিকে না তাকিয়ে ভবিষ্যতের কথা ভাবো। আমরা চলে যাব। পরবর্তী প্রজন্মের কী হবে? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কেন হয়েছিল, সে-কথা না ভেবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধটা যাতে না হয়, সেই চেষ্টাটা করা উচিত নয় কি? আমি বললাম, মানছি, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে তিন-চারবার যুদ্ধ হওয়ার ফলে কী কী হয়েছিল, সেসব আলোচনা করতে গিয়ে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের ভবিষ্যৎ আরও কণ্টকাকীর্ণ হয়। তাই বলে আমাদের দেশে এককথায় সমস্ত কয়লাখনি এখনই যদি বন্ধ করে দেওয়া হয়, এখনই যদি দেশের সমস্ত কলকারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়- তাহলে দেশের অর্থনীতি তো আরও ভেঙে পড়বে। এমনিতেই করোনায় লোকের চাকরি গিয়েছে। তার মধ্যে এখনই যদি ডি-ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশন (De-industrialisation) চালু করতে হয়, তাহলে আমাদের দেশের বেকারত্ব, কর্মহীনতা আরও বেড়ে যাবে। সেটা হবে আরও বড় কেলেঙ্কারি! এর উত্তরে জন লেভিন বলল, তোমরা যদি এগিয়ে না আসো তাহলে এই যে ভয়ংকরভাবে উষ্ণায়ন হচ্ছে- তার ফলে কিন্তু তোমাদের কাশ্মীরও আর থাকবে না। তোমাদের সুন্দরবনও জলের নিচে চলে যাবে। সমুদ্রের উচ্চতা বাড়ছে, সমতল নিচে চলে যাচ্ছে। আর ছোট ছোট দেশ, যেগুলো উপকূলবর্তী এলাকায় রয়েছে, তা সে মালদ্বীপ হোক বা বাংলাদেশ- সেগুলো তো একেবারে বিপন্ন হয়ে যাবে!

আমি বললাম, মানছি, আর আমরা উষ্ণায়ন দমনে কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছি। এর জন্য আমাদের সৌরব্যবস্থা আরও বেশি করে নিয়ে আসতে হবে। সাবেকি শিল্পায়ন থেকে যতটা সম্ভব আধুনিক প্রযুক্তিতে যেতে হবে, যা দূষণ সৃষ্টি করে না। জল অপচয় কমাতে হবে। সার্বিকভাবে, পরিবেশ নিয়ে আমাদের সচেতনতা বাড়াতে হবে। এখনও খবরের কাগজ বা টেলিভিশন চ্যানেলে উষ্ণায়ন নিয়ে মানুষের খুব একটা উদ্বেগ দেখি না। উষ্ণায়ন নিয়ে আলোচনা করলেও খুব একটা টিআরপি কিংবা সার্কুলেশন বাড়ে না। সেটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। এসব কথা স্বীকার করছি, কিন্তু জন, তুমি আমাকে বলো- তোমাদের দেশে তোমরা কয়লাখনি বন্ধ করতে পারছ না। এই তো ‘দ্য গার্ডিয়ান’ কাগজে পড়ছিলাম যে, লেবার পার্টি এবং অন্যান্যরা ব্রিটেনের সংসদে বরিস জনসনকে রীতিমতো কোণঠাসা করে দিয়েছে যে, কেন নতুন কয়লাখনির প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে, যেখানে তা ভয়াবহভাবে কার্বন এমিশন ঘটাবে? বরিসকে বলতে হয়েছে যে, আমি এই প্রকল্পে ইচ্ছুক নই। এখন, বরিস যদি ইচ্ছুক না হন, তাহলে কে ইচ্ছুক? তাঁর দল এদিকে বলছে, এই প্রকল্প চালু হলে অনেক বেশি লোকের চাকরি হবে, লন্ডনকে আর বিদেশ থেকে কয়লা আমদানি করতে হবে না। তোমরা ১৮৮০-তে শিল্পায়ন শুরু করেছ। আর এখনও তোমরা কয়লাখনি বন্ধ করতে পারছ না! তোমরা আগে ক্যামব্রিয়ার কয়লাখনি প্রকল্পটা বন্ধ করো, তারপর আমাদের বলবে।

গ্লাসগোতে সম্মেলন শুরু হওয়ার পর বারবার জনের সঙ্গে লম্বা ঝগড়ার কথা মনে পড়ছিল। বেশ মজাই পেয়েছিলাম। জন বারবার বলেছে, এখন কিন্তু আমাদের প্রত্যেকের উচিত, ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তিকে মেনে চলা। বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়তে বাড়তে যে কোথায় গিয়ে পৌঁছবে, তা কেউ জানে না। সুতরাং, প্রোটোকল মানতে হবে। প্যারিসে ২০১৫ সালে এই চুক্তি হওয়ার পর ১৯০টা দেশ যখন একটা ঐকমত্যে এল, তখন ট্রাম্পবাবু বললেন, এসব ক্ষতিপূরণের টাকাপয়সা দিতে পারব না। আমি জনকে এটাই বলছিলাম যে, আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাবাহিনী কত বছর ধরে কত টাকা খরচ করল, অথচ বিশ্ব উষ্ণায়ন বন্ধ করার জন্য বিভিন্ন দেশকে প্রতি বছর একশো বিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ট্রাম্প না রেখে সেই সম্মেলন থেকে বেরিয়ে গেলেন! বয়কট করলেন। তার মধ্যে এই সম্মেলন পিছিয়ে গেল। করোনা পরিস্থিতি তৈরি হল। এখন অবশ্য বরিস জনসন এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। তিনি বুঝতে পেরেছেন, এই সম্মেলনে যোগ না দিলে তিনি বিশ্ব-রাজনীতি থেকে বহিষ্কৃত হয়ে যাবেন, অতএব যোগ দিতেই হবে।

তাপমাত্রাকে কমাতে হবে, তার জন্য একমত হওয়ার কাজটা কিন্তু সহজ নয়। গ্লাসগো সম্মেলনেও তেমনটা হয়নি। সবাই বলেছে যে, উষ্ণায়ন রুখতে হবে। তা সত্ত্বেও কোনও ঐকমত্যের শপথ এই সম্মেলনে নেওয়া সম্ভব হয়নি।

বিষয়টি জটিল। আমি বিজ্ঞান-বিশেষজ্ঞ নই। ব্রিটেনের আমন্ত্রণে আমরা কয়েকজন রাজনৈতিক সংবাদদাতা বিভিন্ন দেশ থেকে এখানে এসেছি। কেননা, গ্রেট ব্রিটেন এবারের ‘হোস্ট’। তাদের বক্তব্য হল, শুধু বিজ্ঞান-বিশেষজ্ঞ নয়, সাধারণভাবে যাঁরা রাজনৈতিক সংবাদদাতা, তাঁদেরও বিষয়টা জানা এবং বোঝা প্রয়োজন। তাই এই সমস্যাটাকে গভীরভাবে বোঝার চেষ্টা করেছি, উৎসুক ছাত্র হিসাবে। বুঝতে পেরেছি যে, কার্বন এমিশন (carbon emission), গ্রিনহাউস গ্যাস (Greenhouse gas), ফসিল ফুয়েল (fossil fuel)- এসব পৃথিবীর উপর যে মোটা আস্তরণ তৈরি করেছে, তাতে সূর্যের আলো ঢুকছে, কিন্তু সেই তাপটা বেরতে পারছে না, আর বের হতে না পারার ফলে ঘটে যাচ্ছে ‘গ্লোবাল ওয়ার্মিং’। এত ঝড়, এত বৃষ্টি, এত যে ঋতু বিপর্যয় হচ্ছে, যখন বৃষ্টি হওয়ার কথা নয় তখন বৃষ্টি হয়ে যাচ্ছে, যখন-তখন বন্যা হচ্ছে, সমুদ্রের উচ্চতা বাড়ছে- সবই উষ্ণায়নের ফল। যেসব দেশে প্রচুর খাদ্য উৎপাদন হয়, প্রচুর ট্র্যাক্টর চলে- সেসব দেশে আরও বেশি করে উষ্ণায়ন হয়েছে।

মালদ্বীপের বহু দ্বীপে মানুষ থাকতে পারছেন না। দ্বীপগুলো জলের তলায় চলে যাচ্ছে। তখন অন্য দ্বীপে চলে আসতে হচ্ছে সেই দ্বীপের বাসিন্দাদের। তাতে জনবসতির রকমফের হচ্ছে। ইমিগ্রেশনের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। আর, পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, অনেক কম ভৌগোলিক আয়তনে অনেক বেশি মানুষের বসবাস। রাজস্থান বা গুজরাতের সঙ্গেও পশ্চিমবঙ্গের অনেক ফারাক।

কিন্তু আমেরিকা-ব্রিটেন-সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশকে ক্লাইমেট ফান্ডের টাকাটা তো দিতে হবে! জোয়ার-ভাটার এমব্যাঙ্কমেন্ট (embankment) করতে হয়, তার জন্য টাকা দেব না- অথচ বলব যে, এক্ষুনি সমস্ত কিছু পালন করো, তা কী করে হয়! দাবি উঠছে, উন্নত দেশগুলোর একশো বিলিয়নের পরিবর্তে পাঁচশো বিলিয়ন দেওয়া দরকার। এমন তো নয় যে, ভারত সেই টাকাটা নিয়ে অন্যদের দেবে না! ভারত টাকাটা পেলে সেই টাকা থেকে বাংলাদেশ-নেপালের মতো রাষ্ট্রগুলোকেও টাকা দিতে পারবে। সুতরাং, একটা শৃঙ্খলা তৈরি হবে, যে শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত প্রত্যেকটা দেশ টাকা পাবে। এখানে আর-একটা সমস্যা হচ্ছে, যেটা আমি জনকে বলছিলাম বলে সে খেপে গেল- টাকাটা যে দেওয়া হবে, সেখানে আমেরিকা শর্ত আরোপ করছে, টাকাটা কোথায় খরচ হবে, কীভাবে খরচ হবে তা নিয়ে গবেষণা পর্যন্ত করবে তারা। তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম, সেটা করবে বস্টন গবেষণা কেন্দ্র। ভারত একটা সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে সেটা মানবে কেন? ভারত বলবে যে, এই গবেষণা মানব না, আমাদের অগ্রাধিকার আছে। আমরা জানি, কোথায় খরচ করব, কোথায় করব না। অথবা, কীভাবে করা হবে। সার্বভৌমকে আঘাত করে টাকা নেওয়া হলে সেটা তো এক ধরনের ফাঁদে ফেলে দেওয়া। যেরকমভাবে চিন করে। তা নতুন করে ভারতের পক্ষে বিপর্যয় হয়ে দেখা দিতে পারে।

ফলে, ঋণ হিসাবে নয়, ক্লাইমেট ফান্ডে সম্পূর্ণ অনুদান হিসাবে অর্থ দিতে হবে। এই টাকাটা কেন্দ্র রাজ্যকে দেবে আর সেখানেই অভ্যন্তরীণ যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর কার্যকারিতা থাকবে। এবার গ্লাসগো সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এটাই বলতে চেয়েছেন যে, আমরা ইতিমধ্যেই কিছু কাজ করেছি। যেমন, জল কীভাবে বাঁচানো যায়, কীভাবে আমরা আমাদের বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে কার্বন এমিশন কমাতে পারি, কীভাবে সৌরশক্তিকে বাড়াতে পারি। সর্বোপরি, কার্বন এমিশনের ক্ষেত্রে আমরা ‘জিরো টলারেন্স’-এ যেতে চাইছি- এই কথাটা নরেন্দ্র মোদি বলেছেন। যদিও বেশ কিছু আমলা চাইছিলেন না যে, এই কমিটমেন্ট ২০৩০ সালের মধ্যে ভারত করুক। বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে এই ধরনের প্রতিশ্রুতি না রাখাই বাঞ্ছনীয় বলে তাঁরা মনে করেন। আমলারা বেশি সাবধানী। কিন্তু নরেন্দ্র মোদি ঝুঁকি নিয়েই কথাগুলো বলে এসেছেন। কিন্তু এরকম টার্গেট নির্ধারিত করা সত্ত্বেও আমেরিকা টাকাটা দিতে রাজি হচ্ছে না। লন্ডনও কি দিতে রাজি হয়েছে?

গ্লাসগোতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশের সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছেন। চাপের মুখে নতি স্বীকার করেননি। তিনি বলেছেন, এই উষ্ণায়নের জন্য সবরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কিন্তু আগে ভারতের অগ্রাধিকারও ঠিক করতে হবে। অর্থাৎ, আমরা অনেকগুলো কাজ করেছি, সেই কাজগুলোর পুনরাবৃত্তি না করে অন্য জায়গায়, অর্থাৎ যেখানে বেশি প্রয়োজন, সেখানে কাজগুলো করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে যথেষ্ট সাড়া পড়ে গিয়েছে।

[আরও পড়ুন: ছ’টি যুদ্ধ লড়তে প্রস্তুত হচ্ছে চিন, তৈরি থাকতে হবে ভারতকেও]

এখানে যতটা নীতি, তার চেয়ে বেশি রাজনীতি হল। তার কারণ, চিন, ব্রাজিল, রাশিয়া, তুরস্ক- এসব দেশের রাষ্ট্রনায়ক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এলেনই না। চিনে আমেরিকার চেয়েও দ্বিগুণ কার্বন এমিশন হচ্ছে। চিন রেজোলিউশন গ্রহণের ক্ষেত্রে অনেক বিষয়েই ভারতের সঙ্গে একমত। কিন্তু চিন এখানে এসে তর্কাতর্কি করল না। অনেকে বলছেন, শি জিনপিং অনেক দিন থেকেই দেশের বাইরে বেরচ্ছেন না। করোনা-কালে থেকে তিনি দেশের বাইরে বেরনো ছেড়েই দিয়েছেন। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারেন, কিন্তু সশরীর কোথাও আসছেন না।

অমিতাভ ঘোষ থেকে রামচন্দ্র গুহ- অনেকেই লেখার মধ্য দিয়ে আমাদের বোঝানোর চেষ্টা করছেন যে, কী ভয়াবহভাবে এই বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রকোপ আমাদের দেশে আঘাত হানতে চলেছে। কিন্তু আমি লন্ডনে বসে বুঝতে পারছি, ভারতের সংবাদমাধ্যমে এই ক্লাইমেট সেশনের উপযোগিতা খুবই কম এখনও। ক’টা খবরের কাগজের প্রথম পাতায় গ্লাসগো সামিটের খবর ছাপা হয়েছে? কতগুলো সংবাদ চ্যানেল বিজেপি-তৃণমূলের বিবাদ ছেড়ে দিয়ে সুন্দরবনের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করছে?

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement