Advertisement
Advertisement

Breaking News

INDIA

‘ইন্ডিয়া’-র পুনরুত্থান?

সমীক্ষা বলছে, বিজেপির অবস্থা বেশ নড়বড়ে!

India alliance is getting stronger। Sangbad Pratidin

ফাইল ছবি

Published by: Biswadip Dey
  • Posted:February 27, 2024 1:52 pm
  • Updated:February 29, 2024 6:37 pm  

যখন একটা বড় গিঁট খুলে যায়, তখন ধীরে ধীরে অন‌্য গিঁটগুলিও হালকা হতে থাকে। চণ্ডীগড়ে মেয়র নির্বাচনে শেষমেশ ‘ইন্ডিয়া’ জোটের জয় দিয়ে ঠিক সেটাই সূচিত হচ্ছে। চণ্ডীগড় রাস্তা তৈরি করে দিল দিল্লি, হরিয়ানা, গোয়া ও গুজরাটে আপ-কংগ্রেস জোটের। সমীক্ষাও বলছে, বিজেপির অবস্থা রাজ‌্যজুড়ে বেশ নড়বড়ে! কী হবে এবার? লিখলেন সুতীর্থ চক্রবর্তী

মাত্র ১২০০ কোটি টাকা বাজেটের চণ্ডীগড় (Chandigarh) পুরসভার মেয়র নির্বাচন নিয়ে টানাপোড়েন এত দূর গড়াল কেন, তা নিয়ে স্বাভাবিকভাবে কৌতূহল জাগার কথা। হাই কোর্টে চার-চারটি মামলার পর বিষয়টির ফয়সালা হল সুপ্রিম কোর্টে। মামলায় জয় হয়েছে ‘ইন্ডিয়া’ (INDIA) জোটের। চণ্ডীগড়ের মেয়রের পদ গিয়েছে ‘অাম অাদমি পার্টি’-র ঝুলিতে।

Advertisement

বস্তুত, ‘ইন্ডিয়া’ জোটের প্রথম জয় ঠেকাতেই এতটা মরিয়া ছিল বিজেপি (BJP)। কংগ্রেসের দুর্নীতির বিরোধিতা করে জন্ম হয়েছিল আপের। যে-কারণে আপ-কে অনেকেই বিজেপির ‘বি’ টিম বলে মনে করেন। আপ-বিরোধী জোটে যোগ দেওয়ার পর সংশয় ছিল আদৌ অরবিন্দ কেজরিওয়ালরা গান্ধী পরিবারের সঙ্গে চলতে পারবে কি না। চণ্ডীগড়ে মেয়র নির্বাচন ছিল কার্যত আপ ও কংগ্রেস জোটের অ‌্যাসিড টেস্ট। মেয়র ভোটে কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে আপ প্রার্থী দঁাড়িয়েছিলেন। লোকসভা ভোটের মুখে এই অ‌্যাসিড টেস্টকে ভঙ্গ করতেই ছিল বিজেপির যত তৎপরতা। শেষ বিন্দু অবধি জয় ছিনিয়ে এনেছে আপ-কংগ্রেস তথা ‘ইন্ডিয়া’ জোট।

[আরও পড়ুন: উত্তরপ্রদেশে জোড়া দুর্ঘটনা, পরীক্ষা দিতে যাওয়ার পথে মৃত ৪ স্কুল পড়ুয়া-সহ ১০]

মেয়র ভোটে যে-স্তরের কারচুপি করে বিজেপি প্রথমটায় জয় হাসিল করেছিল, তা দেশের নির্বাচনী ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কিত অধ‌্যায় বলা যেতে পারে। মেয়র ভোটের রিটার্নিং অফিসার পেন দিয়ে আপের ৮টি ব‌্যালট নষ্ট করেছেন। পরে সেই ব‌্যালটগুলিকেই বাতিল করে তিনি বিজেপিকে জিতিয়ে দেন। ভারতের গণতন্ত্র ভোটে রিগিং অনেক দেখেছে। কিন্তু খোদ রিটার্নিং অফিসারের মতো একজন উচ্চপদস্থ সরকারি আধিকারিক ক্লোজটিভি ক‌্যামেরার সামনে লজ্জার মাথা খেয়ে এভাবে একটি দলের ব‌্যালট নষ্ট করে অন‌্য আরেকটি দলকে জিতিয়ে দিচ্ছেন, স্বাধীনতার পর বোধহয় এই স্তরের ভোট-কারচুপি দেশ প্রত‌্যক্ষ করেনি। বোঝাই যাচ্ছে, বিজেপি এই কাজ করেছিল স্রেফ লোকসভা ভোটের আগে আপ-কংগ্রেস জোটের প্রথম মহড়াটিকে ভন্ডুল করার লক্ষে‌্য।

আপ-কংগ্রেসও নাছোড় মনোভাব দেখিয়েছে বিষয়টিকে আইনি লড়াইয়ের পথে নিয়ে গিয়ে। সুপ্রিম কোর্ট পুনর্ভোটের সিদ্ধান্ত না নিয়ে এজলাসেই পুনর্গণনা করে। পুনর্গণনার আগে সিসি ক‌্যামেরার ফুটেজ দেখে ৮টি ব‌্যালটকে বৈধ ঘোষণা করা হয়। রিটার্নিং অফিসারের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। ইতিমধে‌্য বিজেপি আপের তিনজন কাউন্সিলরকে সওদা করে ফেলেছিল। ঘোড়া কেনাবেচা ঠেকাতেই সুপ্রিম কোর্ট পুনর্ভোটের ঝুঁকি নেয়নি। ৮টি ব‌্যালট বৈধ ঘোষণা হতেই সহজে মেয়র ভোটে আপের জয় হয়। লোকসভা ভোটের আগে ‘ইন্ডিয়া’ জোট বিরাট নৈতিক জয় পায়।

[আরও পড়ুন: কানাডা হোক বা আমেরিকা, ভারতীয় কূটনীতিকদের উপর হামলা বরদাস্ত নয়, হুঁশিয়ারি জয়শংকরের]

যখন একটা বড় গিঁট খুলে যায়, তখন ধীরে ধীরে অন‌্য গিঁটগুলিও হালকা হতে থাকে। এক্ষেত্রেও ঠিক সেটাই হয়েছে। চণ্ডীগড় রাস্তা তৈরি করে দিল দিল্লি, হরিয়ানা, গোয়া ও গুজরাতে আপ-কংগ্রেস জোটের। যা কয়েক দিন অাগেও চিন্তা করা যাচ্ছিল না। পাঞ্জাবে আপ ও কংগ্রেসের মধে‌্য জোট হওয়া মুশকিল। কারণ, পাঞ্জাবে আপ হল শাসক দল এবং কংগ্রেস প্রধান বিরোধী দল। কেরলে যেমন বামেরা শাসক দল ও কংগ্রেস বিরোধী দল। কেরলে ইন্ডিয়া জোট হওয়া সম্ভব নয়। পাঞ্জাবেও পরিস্থিতি একইরকম। কেরল ও পাঞ্জাব ছাড়া বাকি সর্বত্রই ‘ইন্ডিয়া’ জোট তার রূপ পেয়ে গিয়েছে। বাংলায় কংগ্রেস ও তৃণমূলের মধে্য জোট হল কি না, সেটা ‘ইন্ডিয়া’ জোটের ভবিষ‌্যতের ক্ষেত্রে খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারণ এখানে বিজেপির সঙ্গে সরাসরি লড়াই তৃণমূলের। বিহার, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু ও ঝাড়খণ্ড– এই চার রাজে‌্য অনেকদিন আগে থেকেই ‘ইন্ডিয়া’ জোট হয়ে রয়েছে। এসব রাজে‌্য আসন রফা নিয়েও কোনও সমস‌্যা নেই। উত্তরপ্রদেশ ও মধ‌্যপ্রদেশে অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে কংগ্রেসের জোট সম্পূর্ণ। উত্তরপ্রদেশে বারাণসীর অদূরে ভাদোই কেন্দ্রটি সমাজবাদী পার্টি ছেড়েছে তৃণমূলের জন‌্য।

অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, দেশের প্রায় সব রাজে‌্যই ‘ইন্ডিয়া’ জোট সম্পূর্ণ। বিহারে নীতীশ কুমার ও উত্তরপ্রদেশে আরএলডি-র নেতা জয়ন্ত চৌধুরি জোট ছাড়ার পর যেভাবে ‘ইন্ডিয়া’ জোট বিলীন হয়ে যাওয়ার আখ‌্যান সংবাদমাধ‌্যমের একাংশে প্রচার করা হচ্ছিল, তা এখন ভ্রান্ত মনে হচ্ছে। বরং, বিজেপি কোথা থেকে ৩৭০টি আসন পাবে, সেটা এক বড় রহস‌্য মনে হচ্ছে।

উত্তর ও পশ্চিম ভারতে গত লোকসভা ভোটে বিজেপি অধিকাংশ আসনে জিতেছিল। এই রাজ‌্যগুলিতে অনেকটা নীরবে ‘ইন্ডিয়া’ জোট সম্পূর্ণ হয়ে যাওয়ার পর এখন প্রশ্ন উঠছে, আদৌ বিজেপি এই উত্তর-পশ্চিম ভারতে গতবারের ফলের পুনরাবৃত্তি করতে পারবে তো? দক্ষিণ ভারতে পঁাচ বছর আগের তুলনায় বিজেপির শক্তি বাড়েনি তো বটেই, বরং কর্নাটক ও তেলেঙ্গানায় বিধানসভা ভোটের পর তাদের শক্তিক্ষয় হয়েছে। কেরলে তারা এখনও একটা আসন জেতার জায়গাতে নেই। একই পরিস্থিতি তামিলনাড়ুতে। রামমন্দির উদ্বোধনের আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রামেশ্বরমে সাগরে ডুব দিয়েছিলেন।

সেখান থেকে তিনি এবার প্রার্থী হতে পারেন বলেও একটা জল্পনা বিভিন্ন মহলে রয়েছে। িকন্তু তাতেও তামিলনাড়ুতে বিজেপির খাতা খুলবে– এমন নিশ্চয়তা নেই। কর্নাটকে গতবার ২৮টির মধে‌্য ২৬টি আসনে বিজেপি জয় পেয়েছিল। বিধানসভা ভোটের পর থেকে কর্নাটকে কংগ্রেসের হাওয়া চলছে। নেতৃত্বহীনতার সমস‌্যায় ভুগছে বিজেপি। জেডিএসের সঙ্গে জোট করেও এবার তাদের পক্ষে গতবারের সংখ‌্যার ধারে-কাছে পৌঁছনো এককথায় অসম্ভব। অন্ধ্রে বিজেপি নেই। উত্তর-পূর্ব ভারতে গতবারই বিজেপি অধিকাংশ আসনে জয় পেয়েছিল। এবার সেখান থেকে বাড়তি কিছু লাভের সম্ভাবনা নেই। একই কথা পূর্ব ভারতের ক্ষেত্রেও। সুতরাং, ৩৭০ আসনে জয়লাভ করা একটা অলীক কল্পনা ছাড়া কিছু নয়। সেক্ষেত্রে বিজেপিকে একাই ৬৭টি অাসন বাড়াতে হয়। এই অবস্থায় সেটা কীভাবে সম্ভব? এমন কোনও রাজে‌্যর কথা এখন নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না, যেখানে বিজেপির অাসন এবার বাড়বেই। কিন্তু বেশ কয়েকটি রাজ‌্যকে দেখা যাচ্ছে যেখানে বিজেপির অাসন কমার সম্ভাবনা প্রবল।

কেন্দ্রওয়াড়ি চুলচেরা বিশ্লেষণ করলে বোঝা যাবে উত্তর, পশ্চিম এবং মধ‌্যভারতে ‘ইন্ডিয়া’ জোট বিজেপিকে ধাক্কা দিয়ে দিলে মোদির পক্ষে তৃতীয়বারের জন‌্য সরকারে আসাটাই কঠিন হয়ে যেতে পারে। গত কয়েক দিন হল ভোট সমীক্ষা নিয়ে কিছু কিছু বিশেষজ্ঞর আলোচনায় এই সম্ভাবনার কথাটা উঠে আসছে। ‘ইন্ডিয়া’ জোটের ধীরে অথচ দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাওয়া রাজনৈতিক মহলকেও চমকে দিয়েছে। চণ্ডীগড়ের মেয়রের ভোটে জয় ‘ইন্ডিয়া’ জোটের এই অগ্রগতিকেই সূচিত করছে বলে উল্লেখ করা শুরু হয়েছে। রামমন্দিরের উন্মাদনা গত একমাসে অনেকটাই থিতিয়ে গিয়েছে। ময়ূর পুচ্ছ লাগিয়ে দ্বারকায় সমুদ্রের তলায় গিয়ে কৃষ্ণ মন্দিরে মোদির পুজো দেখেই বোঝা যাচ্ছে শুধু রামে ভরসা হচ্ছে না। ধীরে ধীরে কৃষকদের বিক্ষোভ উত্তর ও পশ্চিম ভারতের জনমানসে ছায়া বিস্তার করছে। নির্বাচনী বন্ড নিষিদ্ধ করে সুপ্রিম কোর্টের রায় একাংশের ভোটারের মনে চাঞ্চল‌্য তৈরি করেছে। ১৩ মার্চের মধে‌্য নির্বাচন কমিশন টাকার হিসাব প্রকাশ করে কি না, সেদিকে অনেকে তাকিয়ে। যদি টাকার হিসাব প্রকাশিত হয়, তাহলে রাজনীতিতে আরও একটি বিতর্ক সামনে চলে আসবে, যা বিজেপিকে অস্বস্তিতে ফেলতে পারে। মার্চের ১০-১১ তারিখ ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে ভোট যত এগিয়ে আসবে তত আখ‌্যান কিন্তু বদলাবে। ‘ইন্ডিয়া’ জোটকে কয়েক দিন অাগে গায়ের উপর বসা পোকাকে তাড়ানোর মতো অাঙুলের টোকায় উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছিল। ক্রমশ ছবিটা বদলে যাচ্ছে। উত্তেজনাটা যে বিজেপির ঘরে পৌঁছে গিয়েছে, তা মোদির দেশজুড়ে দৌড়ঝঁাপ থেকে স্পষ্ট হচ্ছে। না হলে তিনি মার্চের প্রথম অাট দিনেই বাংলায় তিনদিন সভা করেন!

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement