জমা টাকা উইতে খায়৷ কখনও ছারপোকায়৷ কপাল মন্দ হলে একের টাকায় অন্যের কপাল খোলে৷ পাঁচশো-হাজার বাতিলের ধাক্কায় অক্কার নানা রং মিলান্তিতে তরুণকান্তি দাস৷
“এই খাবার? এ তো খাবে আর মরবে৷ উঃ! এটাকে এখুনি তাড়াও৷ বুঝলে৷ এর হাতের রান্না মুখে তোলা? ছ্যা, ছ্যা, ছ্যা! মাগো!” রাতে খাওয়ার টেবিলে বসে কর্তা বোমা মারেন রোজ৷ কর্তা বলতে নরনারায়ণ হালদার৷ দক্ষিণের মানুষ৷ লাট অঞ্চল থেকে এসে শহরতলিতে জাঁকিয়ে বসেছেন৷ ব্যবসাপাতি শুরু করেছেন ইঁদুর ও ছারপোকা মারার তেল দিয়ে৷ একখানা ধেড়ে ইঁদুর ধরে তারের খাঁচার মধ্যে নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন৷ নধরকান্তি দেহপটের সঙ্গে মস্তকে জলজ্যান্ত চলমান ক্রিকেট পিচ৷ মাথায় চুল তোলার জন্য কত তেল যে মালিশ হল৷ দুই হাতে এত তেল আর ক্রিম ঘষেছেন যে তালুতে চুল গজিয়ে যাওয়ার জোগাড় হল এবং মাথায় যে দু’চার গাছি আছে, সেটুকুও উপড়ে যাওয়ার উপক্রম৷ শালা, হকারগুলো হেব্বি জালি৷ কিন্তু সবই তো স্বজাত৷ তাদের বজ্জাতি তো আরও খুল্লম খুল্লা৷ সে থাক গে৷ মনের দুঃখ বুকের ময়লা স্যান্ডো গেঞ্জি দিয়ে চেপে হাঁকেন, “খাবে আর মরবে…৷” খাঁচার মধ্যে জলজ্যান্ত ধেড়ে ইঁদুর আরও চাগিয়ে ওঠে৷
বিষ বিক্রি৷ লোকে তো তা-ই বলে৷ সত্যি বটে৷ সে আর কী করা যাবে? ওই যে শ্মশানের ডাক্তার৷ এত পড়াশোনা করে লাভটা কী হল? যত মরা মানুষের নাড়ি দেখা কাজ৷ মানুষটা মরেছে কি না ছাড় কোনওদিন জ্যান্ত মানুষের পেট টেপার সৌভাগ্যি হল না৷ আর সে তো সামান্য হকার৷ তবে?
তা ভগবান যখন যাকে দেয় তখন ছপ্পড় ফাড়কে দেয়৷ একদিন ট্রেনে বসা আর এক টাকওয়ালা আদমিকে দেখে তাঁর কেমন চেনা-জানা ঠেকল৷ দুরু দুরু বুকে কাছাকাছি গিয়ে চেষ্টা করলেন মনের ধন্দ মোচনের৷ এবং নিশ্চিত হলেন, এ তাঁর স্কুলের ইয়ার রাম পুরকায়েত৷ চেহারাটা ভারী হয়েছে৷ চোখে ভারী চশমা৷ ‘রাম না?’ সাহসে ভর করে প্রশ্নটা ছুড়েই দিলেন নারায়ণ৷ থুড়ি নরনারায়ণ৷ এবং কয়েক সেকেন্ড তাঁর দিকে রামের দৃষ্টিপাত ও পরক্ষণে টাকে এক থাপ্পড়৷ অন্য কেউ টাকে হাত দিলে খেপে যান তিনি৷ কারণ ভগবান তাঁকে নাম দিয়েছেন নারায়ণ, বিশাল টাক দিয়েছেন কিন্তু ক্ষমতা বা অর্থ কিছুটি দেননি৷ রামনারায়ণকে চিনতে পারেন, হাতে ইঁদুর দেখেন এবং ঘাবড়ে-টাবড়ে গিয়ে সিট ছেড়ে বেরিয়ে আসেন৷ সেই সন্ধিক্ষণে মোড় ঘুড়ে যায় ইঁদুর-বিষ বিক্রেতার৷ রাম এখন একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার পারচেজ ম্যানেজার৷ তাঁকে আলপিন টু এলিফ্যাণ্ট অর্থাৎ হাতা থেকে হাতি সবই কিনতে তাঁর হাত ভরসা৷ অবশ্যই কেনার আগে সবকিছু পরখ করতে হয়৷ তাই বাড়িতে একপিস করে আনতে হয়৷ দায়িত্বশীল পদে থেকে সংস্থার ক্ষতি হোক এমন জিনিস তো আর কেনা চলে না৷ তাঁর তো ইঁদুর থেকে আরশোলা মারা বিষও চাই৷ তবে ওটি আর পরখ করতে চান না তিনি৷ সংস্থার স্বার্থে আরও অনেকদিন বাঁচতে হবে কি না৷ তাঁর বুদ্ধির জল পেয়ে নরনারায়ণ এগিয়ে চলে৷ ট্রেডিং ফার্ম খোলেন৷ লাইসেন্স জোগাড় করেন৷ অসাধারণ প্যাকেজিং করেন বিষের৷ ইঁদুর-আরশোলা-ছারপোকার ছবি একদিকে, উল্টোপিঠে তাঁর টাকমাথা হাসিমুখ৷ নারায়ণ বিষ-বিষয়ের অপচয়নাশ৷ একবারেই রাম তাঁর কোম্পানি থেকে এক বছরের বরাত পাইয়ে দেন৷ রাম বুঝিয়ে দেন কীভাবে বিল করে কোম্পানির টাকার গাছে ঢিল মারতে হবে৷ এবং এরপর নারায়ণ সেই কোম্পানির নাম ভাঙিয়ে মার্কেটিং শুরু করেন৷ সঙ্গী রাম৷ ট্রেনে উঠেই রাম খান চারেক প্যাকেট কেনেন৷ বলেন, “এই যে ভাই, পাড়ায় দু’জন তোমার এই মালই নিয়ে যেতে বলেছে৷ দাও হে৷ গত-তিন-চার দিন খুঁজছি৷”
নারায়ণের বউ খুব ভাল মহিলা৷ একটু হাতটান আছে বটে স্বামীর টাকার উপর৷ তবে সে তো লঘু দোষ৷ সব বউদের থাকে৷ নারায়ণ টাকা রাখেন বিছানার তলায়৷ ডিপ ফ্রিজে প্যাকেট করে৷ ঘুম ভাল হয়৷ খাবারে স্বাদ বাড়ে৷ কিন্তু এই রান্নার মহিলাটিকে সহ্য হয় না তাঁর৷ যেমন ইঁদুরের বেজি বা নেউলকে৷ তাই রোজ গজগজ করেন ব্যবসায়ী থুড়ি শিল্পপতি নরনারায়ণ৷ রাত্তিরে খেতে বসেন এবং টিভিতে খবর দেখে ধপাস হওয়ার জোগাড়৷ বলে কী? পাঁচশো, হাজার বাতিল৷ “আমাকে ইঁদুর মারা বিষ দাও৷” বলে ওঠেন নারায়ণ বিষ কোম্পানির মালিক৷ সারা রাত জেগে কাটে৷ পরদিন সকালে পরামর্শ করতে ল’ইয়ারের কাছে৷ কাগজে খবর বার হচ্ছে, ড্রাইভার, কাজের লোকদের অ্যাকাউণ্টে টাকা সরানো যাচ্ছে৷ যেমন ভাবা তেমন কাজ৷ রাঁধুনি মহিলা, পিঙ্কিকে একলাখ ধরিয়ে দেন৷ তোমার ওই কী যোজনা আছে, সেখানে রাখো৷ পরদিন রাতে খেতে বসে রান্না নিয়ে গজগজ করেন নারায়ণ৷ তাঁর বউ বলেন, “আর গজগজ করতে হবে না৷ ও কাজ ছেড়ে দিয়েছে আজ থেকে৷ আর শোনো৷ কতবার বলেছিলুম, দু’চার প্যাকেট বিষ ঘরেও এনো৷ শীত আসছে বলে কাঁথা-তোশক বার করছিলুম৷ দেখলুম, তোমার সব টাকা, ইয়ে ছারপোকায়…৷”
পুনশ্চ: কারও মুখ কালো করতে গেলে হাতে গোপনে লাগিয়ে দিন কালি৷ কেল্লা ফতে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.