রাশি রাশি টাকার স্তূপের নিচে আটকে খবরের প্রাণভোমরা৷ খবর আছে, তবে শিরোনামে ঠাঁই নেই৷ কারণ মানুষ এখন খবর পড়তে কম, টাকা দিতে-নিতে বেশি ব্যস্ত৷ আর ব্যস্ততার এই হিড়িকে হারিয়ে যাওয়া কিছু গুরুত্বপূর্ণ খবরের খোঁজে সুপর্ণা মজুমদার৷
Advertisement
সপ্তাহ শেষ৷ এই দিনটা আমার কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ৷ গুরুত্ব কাজের দিক থেকে৷ কাজটি হল একটি সম্পাদকীয় লেখা৷ এই লেখার তাগিদেই একটি বিষয় সাধারণত আগে থেকেই নির্বাচন করে রাখি৷ যাতে অফিসে এসেই লেখাটি শুরু করে দিতে পারি৷ চেষ্টা থাকে সপ্তাহের একটি গুরুত্বপূর্ণ খবরকে বিষয় হিসেবে বেছে নেওয়া৷ কিন্তু নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের ভাবনার চাকাটা হঠাৎ আটকে গেল৷
আটকে গেল রাশি রাশি টাকার স্তূপে৷ যার নিচে আটকে খবরের প্রাণভোমরা৷ সকালে খবরের কাগজের পাতা খুললেই টাকা৷ ইন্টারনেটে যে কোনও সংবাদমাধ্যমের সাইট খুললেই টাকা৷ ফেসবুক খুললেও সবার স্টেটাসে ভিন্ন ভিন্ন রূপে টাকা৷ হোয়্যাটসঅ্যাপ মেসেজের হাসি-ঠাট্টা-মস্করায় টাকা৷ ট্রেনে উঠলে কাউন্টারে চাই টাকা৷ বাসে উঠলে আলাপচারিতায় টাকা৷ কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী সর্বত্র এখন একটাই শব্দ উচ্চারিত হচ্ছে৷ টাকা, টাকা আর টাকা৷
প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করে জাপানে পাড়ি দিয়েছেন৷ এদিকে দেশ টাকা নিয়ে উত্তাল৷ নিতে কম মানুষ এখন দিতে ব্যস্ত৷ আর এই ব্যস্ততার হিড়িকেই তলিয়ে গিয়েছে দেশপ্রেম৷ অশান্ত কাশ্মীরের শান্তির দাবি করা দেশপ্রেমীদের আর দেখা মিলছে না সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে৷ পাকিস্তানে ভারতীয় সেনার সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের প্রমাণ আর চাইছে না বিরোধী দলগুলি৷ ঘরের ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট ভাঙাতে ব্যস্ত তারা৷ টাকা বদলের লাইনে দাঁড়িয়ে পড়েছেন স্বয়ং কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধী৷
এদিকে আজও খোঁজ মেলেনি জেএনইউ-র বায়োটেকনোলজি বিভাগের ছাত্র নজিব আহমেদের৷ রাজধানীর বিভিন্ন দুয়ারে ছেলেকে খুঁজে দেওয়ার আর্জি জানিয়ে চলেছেন নাজিবের মা৷ কোথায় পুলিশ? কোথায় নেতা? কেউ নেই তাঁর পাশে৷ এক সংবাদমাধ্যম থাকলেও থাকতে পারত৷ যদি একটু টিআরপি থাকত৷ কিন্তু এখন যে টিআরপি মানেই টাকা, আর টাকা মানেই টিআরপি৷ কার সাত রাজার ধন এক মানিক কোথায় গেল, তাতে আর কার কীই বা এলগেল!
বিশ্বসেরা হয়ে উঠল রাজধানী দিল্লি৷ কোনও মহান কীর্তির জন্য নয়, এই কেরামতি দূষণের৷ বায়ু থেকে বিষ নির্মূল করতে নাজেহাল কেজরিওয়ালের বাঘা বাঘা মন্ত্রী-আমলারা৷ কৃত্রিম বৃষ্টি ঝরিয়েও লাভ বিশেষ হয়নি৷ জনৈক ‘পরিবেশ বাবা’ও দূষণ প্রতিরোধে যজ্ঞের দাওয়াই দিয়েছিলেন৷ সবই এখন অতীত৷ দূষণ আছে দূষণেই, তবে মানুষ এখন এটিএম আর ব্যাঙ্কে৷ জমা, তোলা, পুরনো-নতুনের আদান-প্রদানে মত্ত৷
হিসেবের মধ্যে ছিলেন মার্কিন মসনদে বসা ডোনাল্ড ট্রাম্পও৷ ‘অনিশ্চিত’ শব্দটিকে পাশ কাটিয়ে রিপাব্লিকান নেতা আমেরিকার নিশ্চিত প্রেসিডেন্ট হয়ে যাবেন, এই বিশ্বাস খুব কম মানুষেরই ছিল৷ কিন্তু, এই অঘটন যখন ঘটল, সব হিসেব উল্টেপাল্টে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ মাত্র কয়েক মিনিটের ভাষণে রাতের ঘুম কেড়ে নিলেন ১২৫ কোটির৷ ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসের যেখানে খুশি বসুন, তাতে আর কিছু এসে যায় না ভারতবাসীর৷ এখন তাঁদের একটাই চিন্তা, ব্যাঙ্ক কখন ফাঁকা থাকবে৷
প্রধানমন্ত্রীর এই মাস্টার স্ট্রোকের ভাল-মন্দ নিয়ে যখন নানা মুনির নানা মত, তখন তিনি জাপানে কুটনৈতিক আদান-প্রদানে ব্যস্ত৷ সম্ভবত সেখানে ভারতীয় মিলিটারি ব্যান্ডের প্রথম পারফরম্যান্স দেখবেন৷ তবে মহামান্য ‘টাকা’কে সরিয়ে শিরোনামে সেই খবর উঠে আসার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.