Advertisement
Advertisement

মধ্যস্বত্বভোগীদের মৌচাকে ঢিল, লাইসেন্স-রাজ খতম করবে কৃষি বিল

ফড়ে ও একশ্রেণির ব্যবসায়ীর নিয়ন্ত্রণে থাকে কৃষি বাজারগুলি।

Here is why the new farm bill is a game changer | Sangbad Pratidin
Published by: Monishankar Choudhury
  • Posted:September 22, 2020 3:24 pm
  • Updated:September 22, 2020 3:24 pm  

সুতীর্থ চক্রবর্তী: ‘এপিএমসি’ ও ‘চুক্তিচাষ’ নামক যে-দু’টি শব্দকে ঘিরে দেশ তোলপাড়, সেই দু’টি শব্দের সঙ্গে আমরা রাজ্যবাসী বহু আগেই পরিচিত। কারণ, বাম আমলে এই দু’টি শব্দকে নিয়ে প্রায়শই উত্তপ্ত হত রাজ্যের রাজনীতি। ‘এপিএমসি’ তথা কৃষিপণ্যের নিয়ন্ত্রিত বাজারগুলির (এগ্রিকালচারাল প্রডিউস মার্কেট কমিটি) ক্ষমতা খর্ব করতে চাইত সিপিএম। চুক্তিচাষের পক্ষেও ছিল তারা। কিন্তু এই দুইয়ের প্রবল বিরোধিতা করত শরিক দল ফরওয়ার্ড ব্লক। বামফ্রন্ট সরকারে কৃষি ও কৃষি বিপণন দপ্তর দু’টি থাকত ফরওয়ার্ড ব্লকের হাতে। ফলে, বাম আমলে এই শরিকি দ্বন্দ্ব প্রায়শই প্রকাশ্যে আসত।

[আরও পড়ুন: পুজোর মুখে কলকাতাবাসীর জন্য সুখবর, উৎসবের মরশুমে চালুর পথে মাঝেরহাট ব্রিজ]

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অর্ডিন্যান্সের পথে কৃষিতে সংস্কার সংক্রান্ত যে দু’টি বিল এনেছেন, তার একটি এপিএমসি-র ক্ষমতা খর্ব সংক্রান্ত এবং অপরটি প্রধানত চুক্তিচাষ চালুর বিষয়ে। ফলে এই দু’টি বিল ঘিরে যে বিতর্ক দানা বেঁধেছে, তা বাম আমলের সেই শরিকি দ্বন্দ্বের স্মৃতি ফিরিয়ে আনছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জুন মাসে অর্ডিন্যান্স দু’টি করার পর থেকে অর্থনীতিবিদদের একাংশ বলতে শুরু করে– ‘কৃষিতে এল ১৯৯১-এর মুহূর্ত।’ ১৯৯১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পি. ভি. নরসিমা রাও তাঁর অর্থমন্ত্রী মনমোহন সিং-কে নিয়ে দেশের শিল্প ও বৈদেশিক বাণিজ্যে লাইসেন্স-রাজ খতম করেছিলেন। আমরা যাকে ‘উদারীকরণ নীতি’ নামে চিনি। মোদির এই বিল দু’টি কৃষিতে লাইসেন্স-রাজ খতম করতে চায় বলে বলা হচ্ছে। অর্থাৎ কৃষিতে উদারীকরণ।

Advertisement

এপিএমসি মূলত কৃষিতে লাইসেন্স-রাজের দ্যোতক। এপিএমসি-র লাইসেন্স মেলেনি বলেই এই শতকের গোড়ায় রাজ্যে ব্যবসা শুরু করেও পাততাড়ি গোটাতে হয়েছিল রিলায়েন্সের কৃষিপণ্য বিপণন সংক্রান্ত ব্যবসাকে। দেশের কৃষকরা এখন তাঁদের উৎপাদিত পণ্য সরকার নিয়ন্ত্রিত কৃষি বাজারগুলিতে বিক্রি করতে বাধ্য থাকেন। এই বাজারগুলিতে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ থাকে ফড়ে ও একশ্রেণির ব্যবসায়ীর। একজন কৃষক তাঁর নিজের খেতে উৎপন্ন এক বস্তা বেগুন নিয়ে এপিএমসি-তে হাজির হলে তাঁকে বলে দেওয়া হয় কত দাম মিলবে। ধরে নেওয়া যাক, এক বস্তা বেগুনের দাম কৃষক পেলেন ১০০ টাকা। কিন্তু একঘণ্টার মধ্যে তিন-চার হাত ঘুরে যেই সেই এক বস্তা বেগুন এপিএমসি থেকে বেরিয়ে গেল, তখন তার দাম হয়ে গেল বস্তায় ৩০০ টাকা। অর্থাৎ নিয়ন্ত্রিত বাজারগুলিতে একদল ফড়ে কোনও কাজ না করে নিলামের নামে এইভাবে পয়সা লোটে। এপিএমসি-র বাইরে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি সবজি-ফসল কিনতে লাইসেন্সের প্রয়োজন হয়। ফরওয়ার্ড ব্লকের বাধায় লাইসেন্স না পেয়ে এই রাজ্যের কৃষিক্ষেত্র থেকে যখন রিলায়েন্স মুখ ঘুরিয়েছিল, তখন একটি বেসরকারি সমীক্ষায় তথ্য মেলে, এপিএমসিগুলিতে শুধু কৃষিপণ্যের হাতবদল করে ফড়ে ও ব্যবসায়ীদের সারা বছর লাভ হয় ৩২ হাজার কোটি টাকা। তাহলে এখন এই অঙ্কটা কত হতে পারে? বলা বাহুল্য, এই লাভের গুড় বিভিন্ন জায়গায় বণ্টিত হয়। কৃষিতে এপিএমসি-র এই একচেটিয়া কর্তৃত্ব যে খর্ব হওয়া প্রয়োজন, তা নিয়ে বিতর্ক থাকা উচিত নয়। বেসরকারি সংস্থা যদি সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ফসল ও সবজি কেনার অনুমতি পায়, অর্থাৎ কৃষকরা যদি সরাসরি কর্পোরেট সংস্থাকে তাঁদের উৎপন্ন ফসল বিক্রি করতে পারেন, তাহলে তাঁদের ক্ষতি হবে– এইভাবে আগাম বলে দেওয়া যায় না। কর্পোরেট সংস্থা শাক-সবজির বাজারের দখল নিলে আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতারা যে কিছুটা উপকৃত হব, তা নিয়ে সংশয় নেই, কারণ বাজারে গিয়ে আমরা হাজার হাজার বিক্রেতা দেখলেও কৃষিপণ্যের দাম কিন্তু নিয়ন্ত্রিত হয় একটা অদৃশ্য সুতোয়, যেটা থাকে এপিএমসি-র নিয়ন্ত্রকদের হাতে।

কর্পোরেট সংস্থা কৃষিপণ্যের বাজারে এলে স্বাভাবিক নিয়মেই প্রতিযোগিতা হবে। এই প্রতিযোগিতায় কৃষকও ফসলের দাম এখনকার চেয়ে বেশি পাওয়ার জায়গায় থাকতে পারবেন, এবং উপভোক্তাদেরও আরও একটু কম দামে কৃষিপণ্য পাওয়ার সুযোগ থাকবে। কৃষিপণ্যের বাজারে বেসরকারি সংস্থা এলে তার সঙ্গে সঙ্গে বেসরকারি লগ্নিও আসবে। বিশেষ করে খুব স্বাভাবিক নিয়মেই দেশে গড়ে উঠবে হিমঘরের শৃঙ্খল। হিমঘরের শৃঙ্খল গড়ে উঠলে শাক-সবজির পচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না, অপচয় বন্ধ হবে, দামও কমবে। অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় সরকারের চুক্তিচাষ সংক্রান্ত বিলটিতে চুক্তিচাষের আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। আমরা চাই, বা না-চাই চুক্তিচাষ এখন ভারতীয় কৃষিতে বাস্তব। মৌখিক চুক্তির জায়গায় বিষয়টি লিখিত-পঠিত হলে কৃষকদেরই স্বার্থ সুরক্ষিত থাকবে। সুতরাং খুব একটা স্পষ্ট হচ্ছে না, কৃষি বিল দু’টির বিরুদ্ধে আন্দোলনে পথে নামা জনতার মধ্যে ‘প্রকৃত’ কৃষক কতজন রয়েছেন। বিল দু’টি লোকসভা ও রাজ্যসভায় পাশ হয়ে গিয়েছে। এগুলি এখন আইন হওয়ার পথে। নয়া আইনগুলি যদি রাজ্যে রাজ্যে রূপায়িত হয়, তাহলে কৃষকদের কতখানি ক্ষতি হবে, তাও স্পষ্ট নয়। তবে মধ্যস্বত্বভোগীদের মৌচাকে ঢিল পড়তেই পারে।

[আরও পড়ুন: মুসলিম হওয়ার শাস্তি! ১০ মাদ্রাসা শিক্ষককে ঘর দিল না সল্টলেকের গেস্ট হাউজ]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement