Advertisement
Advertisement

Breaking News

Mamata Banerjee

বকেয়া মিটবে না, সংঘাত বাড়বে, কোন পথে কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক?

যাঁরা ‘সেটিং তত্ত্ব’ আনছেন, তাঁরা হয় পরিস্থিতি বুঝছেন না নতুবা অন্য রাজনৈতিক অঙ্কে বলছেন।

Here is why the Modi-Mamata 'setting' theory is wrong | Sangbad Pratidin

ফাইল ছবি

Published by: Monishankar Choudhury
  • Posted:August 10, 2022 9:26 pm
  • Updated:August 10, 2022 9:26 pm  

মোদি-মমতার এই সাক্ষাৎ নিয়ে যাঁরা ‘সেটিং তত্ত্ব’ সামনে আনছেন, তাঁরা হয় পরিস্থিতি বুঝছেন না নতুবা অন্য রাজনৈতিক অঙ্কে বলছেন। দু’জন রাজনৈতিক নেতৃত্ব যখন মুখোমুখি বসেন, তখন তাঁদের মধ্যে অনেক বিষয় নিয়ে কথা হয়। লিখছেন কিংশুক প্রামাণিক

ঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী দিল্লি গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে তথ্য দিয়ে বলেছেন, নানাবিধ ক্ষেত্রে রাজ্যের বকেয়া টাকা বাড়তে বাড়তে এক লক্ষ কোটি ছাড়িয়েছে। টাকা দিন, না হলে সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে। ২১ জুলাইয়ের সমাবেশের মঞ্চেই দিল্লি যাওয়ার ইঙ্গিত দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেদিন তাঁর সাফ অভিযোগ ছিল, রাজনৈতিক কারণে বাংলার বিরুদ্ধে এই অর্থনৈতিক অবরোধ। পরাজয়ের প্রতিশোধ নিচ্ছে বিজেপি।

Advertisement

গত ৫ আগস্ট মোদির সঙ্গে দেখা করে কোন খাতে কত টাকা কেন্দ্র দিচ্ছে না সেই পরিসংখ্যানটি তুলে ধরেন মমতা। পরে সেই তালিকাটি সংবাদমাধ্যমকেও দেওয়া হয়। দেশের সমস্ত চ্যানেল ও কাগজ সাক্ষাৎপর্বটি গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করে। যদিও অনেকের অভিমুখ ছিল ভিন্ন। সে বিষয়ে পরে আসছি।

[আরও পড়ুন: ফের অর্থনৈতিক মন্দার মুখে দাঁড়িয়ে বিশ্ব! কোন পথে ভারত?]

মজার বিষয় হল, মোদি-মমতা সাক্ষাতের পর প্রায় সাতদিন হতে চলল কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে কেউ বলেননি রাজ্যের তথ্য ভুল। বিজেপির কোনও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অথবা নেতা বলেননি, মমতার দাবি অন্যায্য। বরং সংসদে স্বীকার করে নেওয়া হয়, বাংলায় ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, মমতার অভিযোগে সিলমোহর। এই রাজ্যের বিজেপি নেতৃত্বের আচরণেও স্পষ্ট হয়েছে অস্বস্তি। তারা রাখঢাক না রেখেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি করেছে, একটি পয়সাও যেন বাংলাকে দেওয়া না হয়।

অতএব, বঙ্গবাসীর উন্নয়ন খাতের বিপুল অর্থ দিল্লি যে আটকে দিয়েছে, এর মধ্যে আর লুকোছাপা নেই। তর্কের খাতিরে যদি এক লক্ষ কোটি মেনে নাও নিই, তদুপরি বহু কোটি টাকা যে আটকে তাতে আর সন্দেহ নেই। স্বভাবতই রাজ্যে তীব্র আর্থিক সংকট। ভাঁড়ে মা ভবানী। উন্নয়ন থমকে যাচ্ছে কোষাগারে টান পড়ায়। মুখ্যমন্ত্রী বিকল্প আয়ে জোর দিয়েছেন।

বস্তুত সরকারি কর্মীদের মাসের শেষে বেতন দেওয়া বিরাট চাপ। এর মধ্যে প্রকল্পের টাকা আটকে গেলে যে কোনও রাজ্য সরকার সমস্যায় পড়বে। আমাদের যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় রাজ্যগুলি অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কেন্দ্রের উপর নির্ভরশীল। টাকা না এলে কল্যাণমূলক কাজে বাধা আসে।

প্রশ্ন হচ্ছে, টাকা কার?

এই নিয়ে চূড়ান্ত চাপানউতোর রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘কেন্দ্রের টাকা’ কথাটাই ভুল। কেন্দ্র কী করে টাকা পাবে? রাজ্যগুলির ট্যাক্স ও সম্পদ থেকে যে-অর্থ তারা তুলে নিয়ে যায় তার একাংশ উন্নয়ন খাতে ফেরত দেয়। ফলে টাকা রাজ্যেরই। কেন্দ্র ঘুরিয়ে নাক দেখায়। দিল্লি অবশ্য এই যুক্তি মানবে না। বিজেপির দাবি, কেন্দ্রীয় প্রকল্প রাজ্যের নাম দিয়ে কেন করা হবে? কেন্দ্রের নামই রাখতে হবে। খরচের হিসাবও দেয় না রাজ্য। উন্নয়নের নাম করে টাকা নয়ছয় হয়। এর পাল্টা তৃণমূলের সাফ কথা, রাজনৈতিক কারণেই এই বিমাতৃসুলভ আচরণ। যেহেতু বিজেপি বাংলার ভোটে জয় হাসিল করতে পারেনি, সেই জন্য হাতে না মেরে ভাতে মারার চক্রান্ত হচ্ছে। সামনে পঞ্চায়েত ভোট। গ্রামের সাধারণ মানুষ যাতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে সেই জন্য ১০০ দিনের কাজের বেতন আটমাস বন্ধ। টাকা আটকে থমকে দেওয়া হয়েছে বাড়ি ও গ্রামীণ রাস্তা তৈরির কাজ।

রাজ্যের শাসক দলের এই অভিযোগ সারবত্তাহীন তা মনে করার কোনও কারণ নেই। গ্রামের মানুষ অত কেন্দ্র-রাজ্য বোঝে না। তারা বুঝে নেবে পঞ্চায়েত তাদের পাড়ার রাস্তাটা করল কি করল না। ১০০ দিনের বেতন পঞ্চায়েত দিল কি দিল না। বাড়ি তৈরির টাকা মিলল কি মিলল না। খরা-বন্যা-ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতিপূরণ এল কি এল না। না পেলেই তারা বিরূপ হবে। এখন সব পঞ্চায়েত তৃণমূলের দখলে। জবাবদিহি তাদের করতে হয়।

সেই প্রেক্ষিতে অশনি সংকেত দেখছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা মনে করছেন, বাংলার প্রতি অর্থনীতির এই বঞ্চনা আগামী দিনে আরও বড় আকার নেবে। বাংলার পক্ষে কেন্দ্রীয় দেয় আদায় করা খুব সোজা হবে না। কারণ, ২০২৪-এর আগে বাংলার সরকারের সঙ্গে কোনও সমঝোতায় যাবে না কেন্দ্র। বরং নানা দিক থেকে অবরোধ আরও তীব্র হবে। একদিকে যেমন ইডি সিবিআই তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে সক্রিয় থাকবে, তেমন রাজ্যের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ করে সরকারকে পঙ্গু করার চেষ্টা হবে। মহারাষ্ট্রীয় ছকে সরকার ভাঙারও ষড়যন্ত্র চলতে থাকবে। তবে এখানে যেহেতু তৃণমূল বিজেপির বিধায়ক সংখ্যার ফারাকটি অনেক বেশি, সেই জন্য সরকার না ভাঙলেও তার ইমেজকে আঘাত করাই প্রাথমিক লক্ষ্য বিজেপির। যাতে ২০২৪-এর ভোটের আগে মমতা মাথা তুলতে না পারেন। বিজেপি বুঝে গিয়েছে আগামী লোকসভা ভোটে মমতার ইমেজ বড় ফ্যাক্টর। তিনি বিরোধীদের এক করে দিতে পারেন। সেটা যাতে না হয় সেজন্য তৃণমূল নেত্রীকে নানা দিক থেকে দুর্বল করে দেওয়ার প্ল্যান চলছে। চাপে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে। এই রাজ্যে অর্থনৈতিক অবরোধের মধ্যে যেভাবে তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে এজেন্সি সক্রিয় হয়ে উঠেছে, তার জল কতদূর গড়াবে কেউ জানে না।

আসলে মমতার জনপ্রিয়তা, তাঁর ভোটব্যাংক নিয়ে বিজেপির মাথাব্যথা। ৪২টির মধ্যে ৩৬টি লোকসভা আসন ফরাক্কার এপারে। দক্ষিণবঙ্গে তৃণমূলের ভোট গড় করলে কমবেশি ৫০-৫৫ শতাংশ। জোড়াফুলের সাফল্যের মূল কারণ–

মমতার মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি। তাঁর অসাম্প্রদায়িক ইমেজ। বহুমুখী সামাজিক প্রকল্প গড়ে মানুষকে খানিক স্বস্তি দিয়েছেন তিনি। সরকারের বিপুল দানখয়রাতি আছে। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, নানা পেনশন প্রকল্পে হাজার হাজার কোটি চলে যাচ্ছে। পড়ুয়াদের বিনা পয়সায় সাইকেল, ট্যাব, ‘কন্যাশ্রী’-র টাকা, স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড, প্রাথমিকে জামা-জুতো দেওয়া, শিক্ষা ফ্রি, স্বাস্থ্য ফ্রি। ৭৬ শতাংশ রাজ্যবাসী সরকারি হাসপাতালে বিনা পয়সায় চিকিৎসা ও ওষুধ পান। বাইপাস থেকে কিডনি, লিভার প্রতিস্থাপন মুফ্‌তে হয়। মেয়ের বিয়ে হোক বা মৃতদেহ সৎকার, এই রাজ্যে তাতেও অনুদান মেলে। এর ফলে বিশাল বোঝা রাজ্য সরকারের ঘাড়ে।
তাঁর গরিব-দরদি ইমেজ তৈরি করেছেন মমতা। বিজেপি এবার আঘাতটা সেখানেই হানতে চাইছে। সরকারের আর্থিক ভিত পঙ্গু করে দিলে প্রকল্পসমূহ মুখ থুবড়ে পড়বে। মানুষ ভাতা-দান না পেলে আনুগত্য ছাড়বে। সেই অঙ্ক কষে শুরু হয়েছে বঞ্চনা। সামনে পঞ্চায়েত ভোট বলে আপাতত লক্ষ্য- গ্রাম। মমতার তথ্য বলছে, শুধু ১৭ হাজার কোটি আটকে ১০০ দিন, বাড়ি ও গ্রামীণ সড়ক প্রকল্পে। আমফান, বুলবুল, যশ- তিন বড় ঘূর্ণিঝড় থেকে কেন্দ্রীয় অনুদান এসেছে সামান্য। ত্রাণ ও পুনর্গঠনে ৩০ হাজার কোটি বেরিয়ে গিয়েছে রাজ্যের। বকেয়া দেয়নি দিল্লি।

স্বভাবতই মুখ্যমন্ত্রী জানেন, বিজেপি বাংলার সরকার যেহেতু ভাঙতে পারবে না সেই জন্য অবরোধ আরও বাড়াবে। টাকা মেটাতে কেন্দ্র একটুও সদয় হবে না। তাই হাটে হাঁড়ি ভাঙতে বঞ্চনার তথ্য রাজধানীতে দিয়ে গেলেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বকেয়া দাবি করার পর যোজনা কমিশনের বৈঠকেও চাইলেন প্রাপ্য।

এই প্রেক্ষিতে মোদি-মমতার এই সাক্ষাৎ নিয়ে যাঁরা ‘সেটিং তত্ত্ব’ সামনে আনছেন, তাঁরা হয় পরিস্থিতি বুঝছেন না নতুবা অন্য রাজনৈতিক অঙ্কে বলছেন। দু’জন রাজনৈতিক নেতৃত্ব যখন মুখোমুখি বসেন, তখন তাঁদের মধ্যে অনেক বিষয় নিয়ে কথা হয়। বিশেষ করে সেই আলোচনা যদি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একজন মুখ্যমন্ত্রীর হয়, তাহলে নানা জল্পনা উসকে যায়। কখনও কখনও সৌজন্যের গোলাপটা সামনে থাকে, কাঁটা লুকয় আস্তিনে। বুঝতে হবে, বাংলায় তৃণমূল-বিজেপির যুদ্ধটা এখন সম্মুখসমরে। তৃণমূলকে শেষ করতে দিল্লিতে ছক চলছে। সব নেতৃত্বকে দুর্নীতি মামলায় জড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। স্বভাবতই মমতার পক্ষে বিজেপিকে এক ইঞ্চি জমি ছাড়ার সুযোগ নেই। সামনে সংঘাত বরং আরও তীব্র। বিজেপি সব বিরোধী রাজ্যে দখল করতে চায়। কিন্তু তারা সর্বশক্তিমান নয়। মহারাষ্ট্রের ছকে ঝাড়খণ্ডে টাকা নিয়ে তিন কংগ্রেস বিধায়ক গ্রেপ্তারে পর্দা ফাঁস। বিপদের আঁচ পেয়ে বিহারে নীতীশ কুমারেরও প্রত্যাঘাত। মমতাও তাই কৌশলী ঘুঁটি সাজাচ্ছেন।

[আরও পড়ুন: ঝোপ বুঝে কোপ, আগামী দিনে বিজেপির ‘টার্গেট’ দাক্ষিণাত্য]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement