Advertisement
Advertisement

Breaking News

Durga Puja

৭০ হাজারের হিসাব

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুজোয় ক্লাবগুলিকে সাহায্য দেন। ক্রমশ এর পরিমাণ বেড়েছে।

Here is why Mamata's Durga Puja donation to clubs matters | Sangbad Pratidin
Published by: Monishankar Choudhury
  • Posted:September 4, 2023 6:37 pm
  • Updated:September 4, 2023 6:37 pm  

দুর্গাপুজোর খাতিরে মুখ্যমন্ত্রী ৪৩ হাজার ক্লাবকে পুজোয় ৭০ হাজার টাকা করে দিলেন, পরিবর্তে এই টাকায় অনেক চাকরি হতে পারত, সম্প্রতি এমন একটা ধুয়ো উঠেছে সর্বত্র! নিন্দুকরা ভুলে যাচ্ছে– দুর্গাপুজো বাংলার সবচেয়ে বড় শিল্প, যার সঙ্গে শুধু ধর্ম বা সংস্কৃতি নয়, একটি বৃহৎ অর্থনীতি জড়িত। ক্লাবগুলিতে পুজো তহবিল বাবদ কেন্দ্রীভূত টাকা বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে সমাজের প্রতিটি ধমনীতে ছড়িয়ে পড়ে। কলমে কুণাল ঘোষ

 

Advertisement

দানীং সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি আঁতেলমার্কা পোস্ট নানা ভাষায় খুব ঘুরপাক খাচ্ছে। সেটা হল ৪৩,০০০ × ৭০,০০০ = ৩০,১০,০০০,০০০; অর্থাৎ ৩০১ কোটি টাকায় ক’টি চাকরি হতে পারত? কেউ কেউ মাসে ৩০ হাজার টাকা বেতন ধরে বছরে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা হিসাবে প্রায় ৮ হাজার ৩৬১ জনের চাকরির হিসাব দিয়েছেন। বক্তব্য এই যে, মুখ্যমন্ত্রী ৪৩ হাজার ক্লাবকে পুজোয় ৭০ হাজার টাকা করে দিলেন। তার বদলে এই টাকাটা চাকরি দিতে ব্যবহার করলে ৮ হাজারের কিছু বেশি চাকরি হতে পারত। যাঁরা এই তত্ত্বটি ছড়াচ্ছেন, তাঁরা নিশ্চিতভাবেই মুখ্যমন্ত্রী, রা‌জ্যক সরকার এবং তৃণমূল কংগ্রেসের বিরোধী। আর এই ধরনের প্রচারে তাল দিচ্ছেন বিরোধী নেতারা, বিভ্রান্ত হচ্ছেন আরও কিছু মানুষ।

এ বিষয়ে স্পষ্ট করে বিশ্লেষণ প্রয়োজন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুজোয় ক্লাবগুলিকে সাহায্য দেন। ক্রমশ এর পরিমাণ বেড়েছে। করোনার অচলাবস্থার সময় একধাক্কায় অনেকটা বেড়েছিল। এখন আবার কিছুটা বাড়ল। কেন সাহায্য দেন, এর ব্যাখ্যা মুখ্যমন্ত্রী নিজে দিয়েছেন। কিন্তু আমার মনে হয়, রাজ্যের একজন নাগরিক হিসাবে, পুজো সংগঠক হিসাবে, রাজনৈতিক কর্মী হিসাবে এবং সচেতন লেখক হিসাবে বিষয়টি বারবার আলোচনা দরকার।
দুর্গাপুজোর আয়োজক ক্লাবগুলিকে টাকা দেওয়া মানে ‘অপচয়’– এই সম্পূর্ণ ভুল ধারণাটি কেউ বা কারা পরিকল্পিতভাবে ছড়িয়ে দিতে চায়। এটা হতে দেওয়া যাবে না। পুজো বাংলার সবচেয়ে বড় শিল্প, যার সঙ্গে শুধু ধর্ম বা সংস্কৃতি নয়, একটি বৃহৎ অর্থনীতি জড়িত। ক্লাবগুলিতে পুজো তহবিলে জমা যে-টাকাটি কেন্দ্রীভূত হয়, সেটিই বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে সমাজের প্রত্যন্ত প্রান্তর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। বহু শিল্প, মূলত ক্ষুদ্র ও মাঝারি হস্তশিল্প, কৃষিভিত্তিক শিল্প, কুটির শিল্পে এই টাকা অক্সিজেনের কাজ করে। ঠান্ডা মাথায় ভাববেন। কুমোরটুলি বা জেলায় জেলায় মৃৎশিল্পীদের যে পাড়া, সারা বছর অপেক্ষায় থাকেন মূলত দুর্গাপ্রতিমার বিক্রির জন্য। ঠিকঠাক প্রতিমা বিক্রি হলে সারা বছর তাঁদের ঘরে আলো জ্বলে। মৃৎশিল্পী, অলংকার শিল্পী, অস্ত্র শিল্পী, রঙের শিল্পী, মণ্ডপ শিল্পী, আলোক শিল্পী, থিমের শিল্পী থেকে শুরু করে ঢাকি, পূজারি এমনকী, পুজোর ফুল, ফল, মালার কৃষক পর্যন্ত সবাই তাকিয়ে থাকেন এই উৎসবের দিকে। সারা বছর প্ল্যাটফর্মে যাঁরা কুলি, রাস্তায় যাঁরা রিকশা বা ঠেলা চালান, বিসর্জনের তাসা পার্টিতে মহাত্মা গান্ধী রোডের ব্যান্ডে ঝলমলে পোশাক পরেন, তাঁরা-ই একসন্ধ্যার বাদশা। বড় নজরকাড়া পুজোয় ভিড় বাড়লে তাকে ঘিরে ঘুগনি, বেলুন, ফুচকার সারি- এরকম অসংখ্য বিক্রেতার পরিবারে হাসি ফোটে যদি বিক্রি ঠিকঠাক হয়। পুজোর মরশুমে আনুষঙ্গিক আরও কিছু। এই ইন্ডাস্ট্রিগুলোর বার্ষিক বিক্রির ৮০ শতাংশ শুধু এই মরশুমে হয়। এঁরাও আবার পুজোর বিজ্ঞাপনদাতা হন। বিজ্ঞাপনের বাজেট তখনই বাড়ে, যখন প্রোডাক্ট বিক্রি হয়। এটি একটি শৃঙ্খল। বাংলার এই অপূর্ব অর্থনীতিটি বড় কোনও কারখানার উপর নির্ভর করে না। অথচ অসংখ্য কারখানাকে শ্বাসপ্রশ্বাসে সাহায্য করে। যঁারা বছরে ৩০১ কোটি টাকার হিসাব দিয়ে মাত্র ৮ হাজারের চাকরির কথা বলছিলেন, তঁারা কি ভেবে দেখবেন, যদি পুজোর মরশুমে পরিবার পিছু ১০ হাজার টাকা ধরা যায়, তাহলে ৩ লক্ষ ১ হাজার পরিবার উপকৃত হতে পারে? যদি ২০ হাজার টাকা ধরা যায়, তাহলে ১ লক্ষ ৫০ হাজার ৫০০টি পরিবার উপকৃত হতে পারে! এবং ভেবে রাখবেন, পুজোর মরশুমে এই যে পরিবারগুলি উপকৃত হচ্ছে, তারা মূলত নিম্নবিত্ত, গরিব, অসংগঠিত শ্রমিক, পুজো অর্থনীতির উপর নির্ভরশীল শ্রমজীবী। যাঁরা শুধু মাসমাইনের শিক্ষক, অধ্যাপকের বেতন ধরে ৮ হাজার চাকরির কথা বলছেন, কী অবলীলায় তাঁরা এই সমাজের আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া অংশটিকে এড়িয়ে যাচ্ছেন, সেটা ভেবে অবাক হয়ে যাচ্ছি।

[আরও পড়ুন: চাঁদকেও হিন্দু রাষ্ট্রের দাবি! চন্দ্রাভিযান ঘিরে ক্রমেই প্রকট হিন্দুত্বের রাজনীতি]

করোনা-কালের ভয়ংকর অভিজ্ঞতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, ক্লাস বন্ধ থাকলেও এ রাজ্যে নিয়মিত বেতন পেয়েছেন শিক্ষক, অধ্যাপকরা।কিন্তু, বাকিদের অনেকক্ষেত্রেই, বিশেষত অসংগঠিত শ্রমিকদের ক্ষেত্রে, বহু শিল্পে হাহাকার পড়ে গিয়েছিল। এই পুজো অর্থনীতি অনেক পরিবারকে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। এই সরাসরি পুজোকেন্দ্রিক অর্থনীতির বাইরেও রয়েছে পুজোর জামা, জুতো, শাড়ি, নানা পোশাক, বাড়ির নানা জিনিসপত্র ইত্যাদি। কেনাকাটা মূলত এই সময়ই হয়। এই শিল্পগুলিরও ৮০ থেকে
৯০ শতাংশ ব্যবসা পুজোর সময়। এটাও পুজো অর্থনীতির মধ্যেই পড়ছে। একটি পোশাকের দোকান ভাবুন। পোশাক তৈরির কারিগরের পরিবার থেকে বিক্রেতা দোকানের মালিক থেকে কর্মীর পরিবার– কতজন জড়িত এই অর্থনীতিতে, ভাবতে হবে। অথচ আমরা উপেক্ষা করে থাকি। এর আরও কয়েকটি দিক আলোচনার উপযুক্ত।

প্রথমত, বাংলার সরকারে বিভিন্ন সামাজিক স্কিম পরিবারগুলির প্রয়োজনে পাশে দঁাড়ায় বলেই এ রাজ্যে মাথাপিছু আয় বেড়েছে। দ্বিতীয়ত, এই দুর্গোৎসব এক বিরল অর্থনীতি। হয়তো এটি হিন্দু ধর্মের পুজো। কিন্তু, এর উৎসবের আলো সব পরিবারে গিয়ে পৌঁছয়। যখন আপনি মহাষ্টমীর সকালে স্নান করে নতুন একটি জামা পরে মাতৃমূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে অঞ্জলি দিতে যাচ্ছেন, আপনি একবারও ভাববেন আপনার জামাটি কেষ্টপুরের রমাকান্ত তৈরি করেছে, না কি, মেটিয়াবুরুজের রহিম? এই মিলনটাই তো আমাদের উৎসবে মিশে আছে। উৎসবের প্রতিটি ধাপে সম্প্রীতি। এর মধ্যে ইউনেসকো আন্তর্জাতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দিয়ে উচ্চতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সেই ইভেন্টটাও একদিকে উচ্চমানের এক সংস্কৃতি, অন্য‌দিকে, এক পুজোরই সম্প্রসারিত এক অর্থনীতি।

ফলে, পুজো কমিটিগুলির যে তহবিল, তা যেদিক দিয়েই খরচ হোক, তা ঘুরে-ফিরে কর্মসংস্থানজনিত কাজেই ব্যবহৃত হয়। পুজোর পর আপনি হয়তো মঞ্চে গানবাজনা দেখে ভাবলেন, অনুষ্ঠান করে টাকা ওড়াচ্ছে। আপনি জানেন না, করোনার সময় এই শিল্পী, যন্ত্রশিল্পী, শব্দযন্ত্রী– গোটা মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিটার কী হাল ছিল। নামী গায়ক-গায়িকারা পর্যন্ত টাল খেয়ে গিয়েছিলেন। কপি-সিংগার বা উঠতিরা তো অথৈ জলে। পুজোকেন্দ্রিক যে কর্মসূচিই আপনি দেখবেন, সেখানেই খুঁজে পাবেন কেউ না কেউ, কোনও না কোনওভাবে উপকৃত হচ্ছেন। হয়তো মা দুর্গা এইভাবেই কোনও মাধ্যম দিয়ে কাউকে আশীর্বাদ করেন। পুজো কমিটির আপাতত আয় বলতে তিনরকম। এক, ক্লাবের সদস্যপদ এবং পাড়ার চাঁদা। দুই, বিজ্ঞাপন। তিন, রাজ্য সরকারের এই টাকা। বাস্তব হল– যতদিন যাচ্ছে, শহরে বা জেলায় মধ্যাবিত্ত, নিম্নবিত্ত পাড়ার পুজোয় লোকবল, অর্থবল– দুটোই কমে যাচ্ছে। কিছু বড় পুজোর নামধাম হয়ে গিয়েছে। ধারে-ভারে, হেভিওয়েট পৃষ্ঠপোষকতায় তারা এগিয়ে যায়। কিন্তু, অধিকাংশ পুজো কমিটিই পুজো করে খুব কষ্ট করে। সেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই সাহায্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ফলে সরকারের ইতিবাচক কাজ, সামাজিক প্রকল্প, সচেতনতা নিয়ে ক্লাবগুলি যেমন প্রচার করে, তাতে এলাকারও উপকার হয়, আবার পুরোদস্তুর পাড়ায় পাড়ায় পুজো অর্থনীতিটাও সচল থাকে। এটা একটা বড় কাজ।

এবার দেখুন, আপত্তি তুলছে কারা? সিপিএম? এরা নাকি পুজো মানে না। এরা নাকি নাস্তিক। পুজোর নামে এদের নাকি এদের বড় বড় কথা। অথচ, পুজোর সময় পুজোর মণ্ডপে ঢিল ছোড়া দূরত্বে নিজেদের বইপত্তর নিয়ে স্টল খুলে বসতে সিপিএমের লজ্জা নেই। পুজো মানব না, কিন্তু পুজো দেখতে মানুষ বেরলে, সেই ভিড়ে নিজেদের রাজনীতি করব। চিরকাল দ্বিচারিতা করে গেল এরা। এখন বলতে শুরু করেছে, কেন পুজোয় টাকা দেওয়া হবে? আর এদের চ্যালা-চামুন্ডারা সোশ্যাল মিডিয়ায় বিপ্লব করতে ব্যস্ত। প্রত্যেকে পুজো মানে। প্রত্যেকে পুজো উপভোগ করে। অথচ মুখে বড় বড় কথা। আরেকটা দল বিজেপি। এদের নেতারা জীবনে পাড়ায় মেশেনি। ক্লাব করেনি। সিপিএমেরই মতো। তাই পুজো করার ইচ্ছা হলে, সল্টলেকে হল ভাড়া করে পুজো করতে হয়। তাই নিয়েও তাদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। পরে দলবদলু হয়ে আসা কিছু ভিনদলীয় নেতাদের পুজোকে ভর করে এখন পুজোর ক’দিন মণ্ডপ ভিজিট করার রাজনীতি হচ্ছে। ভোটের বছর, তাই দিল্লি থেকে দু’-একজনকে আনার চেষ্টাও হচ্ছে। এরা এতদিন মিথ্যাচার করে বলত, বাংলায় নাকি দুর্গাপুজো হয় না। আবার এরাই বলে, পুজোয় কেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টাকা দেবেন? এই দুটো মিলতে পারে? মানুষ স্পষ্ট বুঝতে পারেন পরস্পরবিরোধী দ্বিচারিতা। আসলে তাঁরাও বুঝতে পারছেন, পুজো কমিটি এবং পাড়ায় পাড়ায় মানুষ অনুভব করছেন দুর্গাপুজোয় পৃষ্ঠপোষকতা দরকার। এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেটা অনুভব করে সঠিক সময়োপযোগী পদক্ষেপ করেছেন।

এবার আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকটা দেখি। তিনি শুরু থেকেই মাটির কাছাকাছি, মানুষের মধ্যে। তাঁর জনসংযোগ প্রবল, মানুষের মন বুঝতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। পাড়া, ক্লাব এসব তিনি দারুণ বোঝেন। মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত পাড়ার পুজো কমিটিগুলোর সামনে যে ক্রমশ প্রতিকূলতা এসে যাচ্ছে, তিনি বুঝেছিলেন অনেক আগেই। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর অভিভাবকের মতো তাঁদের পাশে এসে দাঁড়ান। একেবারে মানুষের মন বোঝা নেত্রী না হলে এই ধরনের ভাবনা এবং পদক্ষেপ করা অসম্ভব। যার ছাপ মমতাদির অন্যান্য বেশ কিছু সামাজিক প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে। তিনি প্রয়োজন মনে করেছেন। এবং করেছেন। আগের কোনও মডেল দেখেননি, অভিধান মানেননি। মানুষ কীভাবে নিচ্ছেন, উপকার হচ্ছে কি না, সাড়া দিচ্ছে কি না– সেটাই একমাত্র বিবেচ্য। পাশাপাশি, আমি যদি খুব ভুল না বুঝি, মমতাদি জানেন, বাংলায় জমির যা চরিত্র, রাতারাতি বড় বড় শিল্প আনতে সময় লাগবে। মূলত ক্ষুদ্র, মাঝারি, হস্ত, কুটির শিল্প দিয়ে এগতে হবে। বড় শিল্প আসবে, কিছু চলতি কারখানা সম্প্রসারিত হবে, িকন্তু আজকের প্রযুক্তির কারণে তাতে আগের মতো ঢালাও কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকবে না। সংখ্যাটা কমবে। ফলে বছরের এই একটা সময় দুর্গোৎসব, যখন একটা বিরাট অঙ্কের টাকা কেন্দ্রীভূত হয় পুজো কমিটিতে, আবার বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে সমাজের প্রতিটি ধমনীতে পৌঁছে যায়, গরিবতম মানুষও উপকৃত হন– এই অর্থনীতিটিকে মানুষের উপকারে আরও বেশি করে লাগাতে টাকা পাম্পিং করার কথা ভেবেছেন তিনি। সীমিত সামর্থে সেই কাজটিই করছেন। মানুষ এটা অনুভব করছেন এবং মমতাদিকে আশীর্বাদও করছেন। ফলে যাঁরা শুধু ৮ হাজার চাকরির হিসাব দিয়ে লক্ষ-লক্ষ মানুষের উপকারকে অস্বীকার করতে চাইছেন, তাঁদের সংকীর্ণ মানসিকতা কোনও অবস্থাতেই যুক্তিগ্রাহ্য হিসাবে বিবেচিত হবে না।

[আরও পড়ুন: দাগী নেতাদের ভাতায় কোটি টাকা খরচ, অথছ বিজ্ঞানীদের ঝুলি খালি!]

বাস্তব হল, কার্যত অধিকাংশ পাড়ায় লোকবল যত কমছে, চাঁদার বলও কমে যাচ্ছে। একেবারে প্রত্যন্ত স্তরের গরিবতম মানুষ সরকারের সামাজিক স্কিমে সুরক্ষিত থাকলেও মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত ঘরানায় চাঁদার প্রবণতা কমছে। নতুন প্রজন্ম পাড়া কালচারের বাইরে। হয় বাইরে থাকে। অথবা পুজোর সময় বাইরে যায়। ক্লাবের মেম্বারশিপ জোগাড় করতেই নাজেহাল অবস্থা। কন্ট্রাক্ট ফর্ম হাতে বিজ্ঞাপনদাতাদের অফিসে অফিসে দৌড়নোর লোকও প্রায় উধাও। এরকম একটা পরিস্থিতিতে পুজো কমিটিগুলি, বিশেষত জেলার বা গ্রামের পুজো কমিটিগুলি, শহরের মাঝারি বা ছোট পুজো কমিটিগুলি পুরোপুরি সরকারের উপর নির্ভরশীল। সেখানে এই ৭০ হাজার টাকা বা বিদু‌্যতের বিলের ব্যাপক ছাড় কিংবা লাইসেন্স ব্যবস্থায় তুমুল সরলীকরণ বিরাট অংশের পুজো কমিটিকে নিশ্চিন্ত করছে।

যাঁরা এসব ভাবতে চান না, তাঁরা ভাবুন, ভাবা প্র্যাকটিস করুন, অনেকের কাছে পুজো মানে আনন্দ, অঞ্জলি, নতুন জামা, বোনাসের টাকা, রাত জেগে ঠাকুর দেখা। আবার হয়তো সমসংখ্যক মানুষের কাছেই পুজো মানে এক অর্থনৈতিক স্রোত থেকে আসা ন্যূনতম রোজগারের অপেক্ষা।

ভাববেন, বহু ক্লাব-ই পুজোর বাইরেও পুজোর সময় বহু সেবামূলক কাজ করে। চোখ বুজে থাকলে দেখতে পাবেন না। উদাহরণ, বৃদ্ধাবাসে উপহার, বা তাঁদের ঠাকুর দেখতে নিয়ে যাওয়া। বৃদ্ধাবাসের অনেককে পুজোর সময় আত্মীয়রা ক’টা দিনের জন্য বাড়ি নিয়ে যান। আবার অনেককে এই ক’টা দিনও কেউ নিতে আসেন না। বহু ক্লাব পাশে থাকে। অনেক অনাথ আশ্রম, প্রতিবন্ধী আশ্রমের আবাসিকদের ঠাকুর দেখাতে নিয়ে যেতে এনজিও-দের সাহায্য করে ক্লাবগুলো। আনন্দ ভাগ করে নিতে। এগুলো যদি কেউ কেউ দেখতে না পান, তাহলে তঁারা চোখ থেকেও অন্ধ, হৃদয়ের দরজা বন্ধ। ফলে লাভক্ষতির হিসাবের খাতার পাতাটি অনিঃশেষ মহাকালের চালচিত্রে মেলে ধরে দেখুন, পড়ুন। কেন মুখ্যমন্ত্রী দুর্গাপুজোয় ক্লাবকে টাকা দিচ্ছেন, এই প্রশ্ন তোলার আগে সেই টাকা কোন কোন কাজে কত মানুষের উপকারে ব্যবহার হচ্ছে, জানুন, বুঝুন।
জয় মা।

 

(মতামত নিজস্ব)

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement