Advertisement
Advertisement
Districts

দেশের প্রাচীনতম আইনেই আজও জন্ম হয় নতুন নতুন জেলার, জানুন এর ইতিহাস

ব্রিটিশ আমলের আইনটি এতদিনেও বাতিল হয়নি কেন?

Here is the details of the Act of British era, by which new districts being set up| Sangbad Pratidin
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:November 22, 2020 4:33 pm
  • Updated:November 22, 2020 4:39 pm  

বিবেক দেবরায়: আমাদের দেশে এখন ৭৪০টি জেলা (Districts)। পুরনো জেলা বিভাজনের ফলে জেলার সংখ‌্যা বেড়েছে এবং পরে বাড়বেও। উন্নততর প্রশাসনের তাগিদে জনসংখ‌্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলা গঠিত হচ্ছে নিত‌্যনতুন। ইংরেজ আমলের সঙ্গে সরাসরি তুলনা করা যায় না। ১৯৫১-এর জনগণনার সময় জেলার সংখ‌্যা ছিল ৩০৮। সকলেই কাগজে পড়েছি, ২০১৪ সালের পর অনেক পুরনো ব্রিটিশ আমলের আইন বাতিল করা হয়েছে। আইন প্রত্যাহারের পর এখনও বলবৎ সবচেয়ে পুরনো আইন কী? আইনটির নাম হল ‘বেঙ্গল ডিসট্রিক্টস অ্যাক্ট’(Bengal Districts Act) – ১৮৩৬ সালে জারি করা হয়েছিল। সমগ্র আইনটিতে একটিমাত্র বাক‌্য: আইন দ্বারা পশ্চিমবঙ্গ। রাজ‌্য সরকার ইচ্ছামতো নতুন জেলা সৃষ্টি করতে পারে।

জেলা তো অনবরতই প্রশাসনিকভাবে সৃষ্ট হচ্ছে। তার জন‌্য বিশেষ আইনের কী প্রয়োজন? সদুত্তর দিতে পারব না। আমি ঐতিহাসিকও নই, ফলে উত্তর দিতে পারব না। ১৮৩৬ সালে কোনও কারণ থেকে থাকবে। অবশ‌্য ১৮৩৬ সালে ‘পশ্চিমবঙ্গ’ শব্দটা ছিল না। তখনকার ভাষা ছিল ‘প্রেসিডেন্সি অফ ফোর্ট উইলিয়াম ইন বেঙ্গল’। ১৯৪৮ সালের সংশোধনের ফলে ভাষা বদলে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল’ করা হয়েছে। এত পুরনো আইন যখন বাতিল করা হয়েছে, এই আইনটি থেকে গিয়েছে কেন? কারণটা সাংবিধানিক। ১৯৫০ সালে সংবিধান প্রণীত হওয়ার পর কেন্দ্রের অধিকার ও রাজ্যের অধিকার স্বতন্ত্রভাবে স্বীকৃত। কেন্দ্রের অধিকার যেসব ক্ষেত্রে, সেই ধরনের পুরনো আইন রদ‌ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার।‘বেঙ্গল ডিসট্রিক্টস অ্যাক্ট’ থাকবে না যাবে, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার পশ্চিমবঙ্গ রাজ‌্য সরকারের।

Advertisement

[আরও পড়ুন: করোনা মোকাবিলায় পথ দেখাতে পারে থাইল্যান্ড মডেল

১৯৯৮ সালের কথা। তখনকার দিনে প্লেনে যাতায়াত কেমন ছিল, তা আমরা ভুলে গিয়েছি। বিভিন্ন এয়ারলাইন্‌স ছিল না, ঘটেনি এয়ারপোর্টের আধুনিকীকরণ। দিল্লির পুরনো এয়ারপোর্টে তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা করছি – কখন প্লেন ছাড়বে। হঠাৎ দেখা এক পরিচিতের সঙ্গে! তাঁর নাম নিচ্ছি না। তখন তিনি একটি চেম্বারে কর্মরত। চেম্বারটিরও নাম নিচ্ছি না। কুশল বিনিময়ের পর প্রশ্ন উঠল, চেম্বারটির জন‌্য কী ধরনের গবেষণা করতে পারি? আজকাল বিভিন্ন স্টেটের র‌্যাংকিং যত্রতত্র পাওয়া যায়। অনেকেই রাজ্যের র‌্যাংকিং করে চালাচ্ছেন। প্রথমে, কয়েকটি ভ্যারিয়েবল্‌ শনাক্ত করি। সেসব ভ্যারিয়েব‌লের ডেটা জোগাড় করি। কোন ভ্যারিয়েবলকে কতটা গুরুত্ব দেওয়া হবে, তা নির্ধারণ করি। সামগ্রীকরণের (aggregation) ফরমুলা ব‌্যবহার করে তৈরি হয়ে গেল ইনডেক্স। প্রস্তুত র‌্যাংকিং। রাজ্যের র‌্যাংকিং মূলত দু’ধরনের – হয় নৈর্ব‌্যক্তিক ডেটা ব‌্যবহার করা হয়, নয় বিভিন্ন রেসপনডেন্টকে দেওয়া হয় সাবজেক্টিভ কোয়েশ্চেনেয়ার। আজকাল এমন র‌্যাঙ্কিং ডাল-ভাত হয়ে গিয়েছে। ১৯৯৮ সালে প্রস্তাবটির মধ্যে অভিনবত্ব ছিল। চেম্বারটি সানন্দে প্রস্তাবের অনুমোদন করল। সতীর্থ লভিশ ভাণ্ডারী ও আমি শুরু করলাম স্টেট র‌্যাংকিংয়ের কাজ।

বছর দুয়েক কাটল। তৃতীয় বছরেই সমস‌্যা। অনেক ক্ষেত্রেই চেম্বারের প্রিয় মুখ‌্যমন্ত্রী ও প্রিয় রাজ‌্য থাকে। তৃতীয় বছর এমন এক প্রিয় মুখ‌্যমন্ত্রী ও প্রিয় রাজ‌্য র‌্যাংকিং তেমন ভাল করেনি। আমাদের কাজ হয়ে গিয়েছে, অথচ চেম্বার র‌্যাংকিং প্রকাশ করছে না! ধৈর্যে‌র বাঁধ ভাঙার পর রাগ চড়ে গেল। লভিশ ও আমি দ্বারস্থ হলাম ‘ইন্ডিয়া টুডে’ পত্রিকার কাছে। ‘ইন্ডিয়া টুডে’-ও সানন্দে মেনে নিল প্রস্তাবটি। শুরু হল বাৎসরিক ‘স্টেট অফ দ্য স্টেটস’ (SOS), যা এককালে প্রচুর জনপ্রিয় হয়েছিল। অনেক মুখ‌্যমন্ত্রীর দপ্তরে দেখেছি, এসওএস-এ প্রাপ্ত স্মারকচিহ্ন সগর্বে প্রদর্শিত। সব মিলিয়ে সম্ভবত লভিশ ও আমি ১২ বছর এসওএস করেছিলাম ইন্ডিয়া টুডে-র জন‌্য। প্রথমে ছাড়লাম আমি। কয়েক বছর একা এসওএস করে লভিশও ছেড়ে দিল। ছাড়ার বিশেষ কোনও কারণ ছিল না। বিষয়টি একঘেয়ে হয়ে উঠেছিল।

আমরা এসব করার আগে অন‌্য কারও মাথায় এমন ধরনের গবেষণা করার কথা কেন আসেনি? আজকাল তথ্যের যুগ, খুব সহজেই তথ্য পাওয়া যায়। তথ্য, মোটামুটি নির্ভরযোগ‌্য তথ্যসংগ্রহে দীর্ঘ সময়ব‌্যাপী টাইম ল্যাগ-ও নেই। ১৯৯৮ সালে কিন্তু তেমন ছিল না। স্বাস্থ‌্য বা শিক্ষা সম্বন্ধীয় ক্ষেত্রকে ‘সোশ্যাল সেক্টর’ বলা হয়। বিশেষ করে সোশ্যাল সেক্টরের জন‌্য রাজ‌্যস্তরীয় তথ্য জোগাড় করা ছিল এক দুঃসাধ‌্য ব‌্যাপার! শুধুমাত্র সেই অর্থেই লভিশ ও আমি পথিকৃৎ। রাজ্যের সীমানা তো প্রশাসনিক সীমা। উন্নয়ন বা অবদমন কি আর প্রশাসনিক সীমানা মেনে চলে? অর্থাৎ কিনা, বৃহত্তর রাজ্যে বিভিন্ন জেলার মধ্যেও আছে প্রভূত প্রভেদ।

[আরও পড়ুন: ‘নিঃশব্দ’ ভোটারদের উপস্থিতি গুরুত্ব পেল মার্কিন প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে]

ছোট রাজ‌্য অনেক বেশি সমজাতীয় (homogeneous)। বড় রাজ‌্য মাত্রই ভিন্নধর্মী (heterogeneous)। তাই রাজ্যে ভ্যারিয়েবল ব‌্যবহার না করে জেলাস্তরীয় ভ্যারিয়েবল ব‌্যবহার করাটা যুক্তিসংগত। সমস‌্যা ওই তথ্য। রাজ্যের ক্ষেত্রে যা-ও বা তথ্য পাওয়া যায়, জেলার ক্ষেত্রে অনুরূপ তথ্যসংগ্রহ করা প্রায় অসম্ভব! তবু, কিছু তথ্য জোগাড় করে ২০০৩ সালে লভিশ আর আমি একটি প্রয়াস করেছিলাম। নাম ছিল ‘District Level deprivation in the New Millennium’. তাতে বিভিন্ন সূচক ব‌্যবহার করে ৬৯টি জেলাকে ‘অনগ্রসর’ (backward) বলে শনাক্ত করা হয়েছিল। মনে রাখবেন, জেলার সংখ‌্যা ক্রমবর্ধমান। আজ জেলার সংখ‌্যা ৭৪০। তখন জেলার সংখ‌্যা ছিল ৬০০ মতো। এই ৬০০ জেলার মধ্যে, এক-তৃতীয়াংশ, অর্থাৎ কিনা ৬৯টি জেলা, অপেক্ষাকৃত অনগ্রসর। এই কাজটি করতে গিয়ে দেখি, আমাদের আগে আনুমানিক ১২টি সরকারি কমিটি এমন প্রচেষ্টা করেছে। সর্বপ্রথম ১৯৬০ সালের ‘Committee on Dispersal of Industries’. প্রত্যেকটি কমিটিই তথ্যর অভাব অনুভব করেছে। তা সত্ত্বেও, কোনও এক ধরনের শনাক্তকরণ করা হয়েছে।

‘Absolute’ উন্নয়ন ও আপেক্ষিক (relative) উন্নয়নের মধ্যে পার্থক‌্য আছে। স্বভাবতই স্বাধীনোত্তর ভারতে প্রত্যেকটি জেলাতেই এসেছে সার্বিক absolute উন্নতি। তা না হওয়াটাই আশ্চর্যের কথা হত। আপাতত আমি আপেক্ষিক উন্নতির কথা বলছি। ২০০৩ সালে আমরা ৬৯টি জেলাকে শনাক্ত করলাম। ১৯৬০ সালের কমিটি ১০০টি জেলাকে শনাক্ত করেছিল। আমাদের চিহ্নিত ৬৯টি জেলাই ওই ১৯৬০ সালের ১০০-র তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। যে কোনও কমিটির শনাক্তীকরণ বেছে নিন, যে কোনও মানদণ্ড ব‌্যবহার করে। আপেক্ষিক অর্থে ৭৫টির মতো জেলা থাকবে সর্বনিম্নে। এই সর্বনিম্ন স্থান থেকে সচরাচর তারা বিচ্যুত হবে না। যে কোনও ক্লাসের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া ছাত্রছাত্রীর মতো।

এমন পিছিয়ে-পড়া ছাত্রছাত্রীদের একটু খোঁচা দেওয়ার জন‌্য ২০১৮ সালে একটি কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প শুরু হয়। নাম ‘Aspirational District Programme’. এই ৭৫টির মতো জেলার সঙ্গে যোগ করা হয় এমন কয়েকটি জেলা, যেখানে আছে ‘Left wing extremism’-এর প্রকোপ। দেশের ৭৩৯টি জেলার মধ্যে ১১২ জেলা বেছে নেওয়া হয় Aspirational প্রকল্পের জন‌্য। উদ্দেশ‌্য: ফোকাস আনা। যেহেতু সরকারের আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা সীমিত। উদ্দেশ‌্য: ব‌্যয়কুশলতা আনা। উদ্দেশ‌্য: বেসরকারি উদ‌্যমের ব‌্যবহার। উদ্দেশ‌্যর: তথ্য ব‌্যবস্থার উন্নতিকরণ। সদ্য প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পড়লাম। প্রস্তুত করেছে ‘Institute for Competitiveness’. প্রতিবেদনে ‘Aspirational District Programme’-এর মূল‌্যায়ন করার চেষ্টা হয়েছে। প্রকল্পটি সফল না বিফল? সত্যি বলতে কী, এখনও মূল‌্যায়ণের সময় আসেনি। যথেষ্ট সময় অতিবাহিত হয়নি। তা সত্ত্বেও, মনে হচ্ছে কোনও কোনও রাজ্যে আশার কিরণ দেখা যাচ্ছে। অবশ‌্য কোনও কোনও রাজ্যে এখনও ঘন অন্ধকার। নাম নাই-বা করলাম!

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement