সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভাত-কাপড়ের চিন্তা করেই তাঁর দিন কাটে৷ শিল্প-সাহিত্য সমেত আরও অনেক কিছুর সঙ্গেই তাঁর দেখা হয় না৷ তবু তিনিই সেই ‘পাওয়ার স্টেশন’ যিনি সন্তানকে রসদ জুগিয়ে চলেন৷ কবিতায় এভাবেই বাবার কথা তুলে ধরেছিলেন কবি রনজিৎ দাস৷ কবিতা তো ব্যক্তিগত হয়েও সার্বজনীন৷ বাবাকে নিয়ে আপামর বাঙালিই মনের কথাটিই কলমে তুলে এনেছিলেন কবি৷
প্রতিটি সংসারেই বাবা ‘বনস্পতি’৷ বাবার জন্য অব্যর্থ ও অমোঘ এই বিশেষণটি তুলে এনেছিলেন নাগরিক কবিয়াল৷ সত্যি এর বাইরে কী-ই বা আর বলা যায়! যতখানি গাম্ভীর্যের ঘেরাটোপ বাবাদের ঘিরে থাকে, যতখানি দূরত্বের আভাস জড়িয়ে থাকে বাবার সঙ্গে, ততখানিই নিবিড় হয়ে তাঁর স্নেহ-শাসন-দায়িত্বপালনের ছায়াটুকু ঘিরে থাকে আমাদের৷ মা বললেই হলুদ-জিরের গন্ধমাখা যে অন্তরঙ্গ আঁচলের ছায়া পড়ে বাঙালির ঘর-দুয়ারে, বাবা বললে কিন্তু তেমনটা নয়৷ বরং একটু শাসন, একটু দূরত্বের ওপারে কোনও রাশভারি চরিত্রই ঠাঁই পায় বাঙালির মনে৷ তাই তো বাংলা সিনেমা জুড়ে কমল মিত্র, ছবি বিশ্বাসের মতো জাঁদরেল বাবাদের দাপট৷ তবে বাইরে যাই হোক না কেন আসলে কিন্তু অন্তরে সকল বাবাই বিভূতিভূষণের হরিহর৷ সন্তানকে দুধে-ভাতে রাখতে ঈশ্বরী পাটনির প্রার্থনা আর হরিহরের কামনায় তাই আদতে কোনও তফাত থাকে না৷ বাবার সঙ্গে সন্তানের সম্পর্কের এই এক অদ্ভুত রসায়ন৷ ভয় থাকে, শাসন থাকে তবু কাজলকে কাঁধে নিয়ে অপূর্বকুমার রায় যতক্ষণ না ফ্রেমের ওপারে চলে যাচ্ছেন, ততক্ষণ সম্পূর্ণ হয় না পথের পাঁচালি৷ আর তাই বাবার আসনের সঙ্গে ভয়ে মেশানো দূরত্ব মেনেও সব সন্তানই বালক রবীন্দ্রনাথের মতো হয়ত বাবার মতো বড় হওয়ার ইচ্ছে নিয়েই বড় হয়ে ওঠে৷
এই বাবার জন্যই একটা দিন ধার্য করা হয়েছে গোটা দুনিয়ায়৷ যে দিনটাকে শুধু বাবাদের জন্যই সেলিব্রেট করা হবে৷ ওয়ার্ল্ড ফাদার্স ডে-তে বাবার কথা যখন বিশ্বজুড়ে মনে করা হচ্ছে, তখনন প্রশ্ন উঠতে পারে একদিনের যৌক্তিকতা নিয়ে৷ প্রশ্ন তোলা সোজা, উত্তরও তো জানা৷ তাই একদিন না প্রতিদিন, সে প্রশ্ন তুলে রেখে বরং খেয়াল করলে দেখা যাবে প্রতিদিন নানাভাবে কথায় কথায় আমরা বাবা বলে থাকি৷ সে আমরা মনে রাখি বা না রাখি মুখের কথা কিন্তু বাবাকে ভোলে না৷ কীরকম? নিচের কথাগুলো মিলিয়েই দেখুন-
ওরে বাবা- পিলে চমকানো কিছু ঘটলে এ কথা যেন স্বাভাবিক প্রতিবর্ত ক্রিয়াতেই বেরিয়ে আসে৷
না বাবা- কেউ আর কোনও কিছুর সঙ্গে যুক্ত থাকতে চান না বলতে গিয়ে স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া বশে এ কথাই আসে৷
হুঁহুঁ বাবা- সব জানো আর এটা জানো না-এহেন অভিব্যক্তিতে এই লবজই অমোঘ৷
বাবা রে বাবা- ভয় হোক বা বিস্ময় কথাতেও সেই বাবা-ই ভরসা৷
যাহ বাবা- বোঝাতে চাইছেন অথচ পারছেন না, অথচ এটা বললেই বোঝা যাবে আপনি কী বোঝাতে চাইছেন৷
আপনি বাঁচলে বাপের নাম- এ কথার সারসত্য পাগলেও বোঝে, ব্যাখ্যা নিষ্প্রয়োজন৷
এই মুহূর্তে নিশ্চয়ই আরও এমন কথা আপনারও মনে পড়ছে৷ এই লিস্ট তো বাড়িয়ে তুলবেন আপনিও৷ এক একা সব কথা বলা যায় নাকি রে বাবা!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.